২ বছর বয়সী বাচ্চার বিকাশ

এ আর্টিকেলে যা থাকছে

দুই বছর বয়সের মধ্যেই বাচ্চার বিকাশের বিভিন্ন মাইলফলক বা মাইলস্টোন পূরণ হয়ে থাকে। ২ বছর বয়সী বাচ্চার শারীরিক, মানসিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের বিভিন্ন মাইলস্টোন নিয়ে এ লেখায় বিস্তারিত আলোচনা করা হল।

আমার খুব অবাক লাগে যে মাত্র দুই বছরে একটা ছোট্ট বাচ্চা কত বড় হয়ে যায়, কত কিছু শিখে ফেলে! ছোট ছোট পা ফেলে হাঁটা থেকে শুরু করে বাতাসের মতো জোরে দৌড়ানোতে ওস্তাদ হয়ে যায়! এছাড়া কোনোকিছুর দিকে আঙুল তাক করে দেখানো এবং কোনো কিছুকে নকল করে দেখানোর মতো কিছু জটিল ব্যাপারও শিখে যায়৷ 

কী দারুণ ব্যাপার, তাই না! 

এই লেখাটিতে ২ বছর বয়স হতে হতে বাচ্চা কী কী জিনিস শিখতে পারে, আর কোন কোন দিকে বেড়ে উঠে বা বিকাশ হয় এ ব্যাপারে আলোচনা করা হলো। আমার অভিজ্ঞতা ও বিভিন্ন কাজ এমিলকে কিভাবে শিখিয়েছি তা সংক্ষেপে বলার চেষ্টা করেছি।

দুই বছর বয়সী বাচ্চার ডেভেলপমেন্টাল মাইলস্টোন বা বিকাশের মাইলফলক
২ বছর বয়স বাচ্চার জীবনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ
২ বছর বয়স বাচ্চার জীবনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ
২ বছর বয়সী বাচ্চার চলাফেরার মাইলফলক (movement milestones)

দুই বছর পর্যন্ত শিশুর শরীর খুব দ্রুত বড় হতে থাকে। এ কারণেই শরীরের বাড়তে থাকা শক্তি ও গঠনের সাথে নিজেকে অভ্যস্ত করতে গিয়ে তার একটু আকটু হোঁচট খাওয়া, পড়ে ব‍্যথা পাওয়াটা খুব স্বাভাবিক। 

  • হাঁটা সাধারণত ১২ মাস বয়সের মধ্যেই  একটু ধরে সাহায্য করলে  বাচ্চা ছোট ছোট পা ফেলতে পারে আর বয়স ১৮ মাস হয়ে গেলে শিশু বেশ ভালোভাবে নিজে নিজে হাঁটতে শিখে যায়।
    এমিল ১২ মাসে একটু একটু হাঁটতে হাঁটতে পারতো। পুরোপুরি হাঁটা শিখতে প্রায় ১৪ মাস সময় লেগেছে। এরপরে উঁচু নিচু, ঢালু জায়গায় হেঁটে ও দৌড়ে অনেক প্র‍্যাকটিস করেছে। ১৮ মাস থেকে সে বেশ ভারসাম‍্য রক্ষা করে হাঁটতে ও দৌড়াতে পারে।
  • সিড়ি বেয়ে ওঠা ১৮ মাস থেকেই বাচ্চা কিছু ধরে সিড়ি বাইতে পারার কথা। আর বয়স দুই বছর হতে হতে শিশু রেলিং ধরে একাই সিড়ি বেয়ে ওপরে ওঠা ও নিচে নামাতে অভ্যস্ত হয়ে যায়।এই ক্ষেত্রে বাচ্চার দিকে একটু খেয়াল রাখতে হবে। বাচ্চা হয়তো আপনার হাত ধরে রাখতে চাইবে না। তবে বেশি দুশ্চিন্তার কারণ নেই কারণ শিশু নিজে নিজেই আশপাশের অবস্থানের সাথে তাল মিলিয়ে শরীরে ভারসাম্য রাখা শিখে নেবে।
    এমিল ৮ মাসে হামাগুড়ি দিয়ে সিড়ি বেয়ে উঠতো। কিন্তু সিড়ি থেকে নামা তাকে শেখানো যায়নি। ১৮ মাসের কাছাকাছি সময়ে রেলিং ধরে ধরে সিড়ি দিয়ে উঠতে শিখেছে। আমাদের সিড়িতে ওর উচ্চতার সমান রেলিং নেই। তাই ওকে নামা শিখিয়েছি উল্টো হামাগুড়ি দিয়ে। ২ বছর বয়সের মধ‍্যে এইভাবে ওঠা ও নামা– দুটোই ভালোভাবে করতে পারছে। তবে অনুশীলন করেছে ২১/২১ মাস বয়সে। 
  • ধাক্কা ও টান দিতে হয় এমন খেলনা দিয়ে খেলা বয়স ১৮ মাস হলেই দেখবেন বাচ্চা  যা পায় তা নিয়ে টানাটানি করা ও ঠেলাগাড়ি ঠেলা শুরু করেছে। দেখবেন সারাক্ষণ সে তার খেলনা সাথে নিয়ে ঘুরছে, এমনকি সারাঘরে খেলনা ছিটিয়ে রাখছে।
    এমিল হঠাৎ করেই ঝুড়ির সব খেলনা ছিটানো শুরু করেছিল। তাই আমি ওর খেলনা একেবারেই কমিয়ে দিয়েছি। ভারী ঝুড়ি, বালতি বা গাড়ি টাইপ খেলনা নিয়ে সারাক্ষণ বাড়ির এক জায়গা থেকে আরেকজায়গায় দৌড়ানো– এগুলো শুরু হয়েছে ১৮/১৯ মাস থেকে। তাই ওকে আমরা কুরিয়ার সার্ভিসের চাকরি দিয়েছি। একেকটা জিনিস এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ওকে দিয়ে পাঠাই। আমার কাছ থেকে ওর বাবার কাছে। ওর বাবার কাছে থেকে আমার কাছে। আবার যে কোন কিছু টেনে টেনে চালানো (ঠেলাগাড়ির মত) এরকম খেলনাও দিয়েছি।
বাচ্চার পটি ট্রেনিং কিভাবে করব
আরো পড়ুন: বাচ্চার পটি ট্রেনিং কিভাবে করব
  • কাপ ও চামচের ব্যবহার বয়স ১৮ মাস হতে হতে বেশিরভাগ বাচ্চাই কাপ ও চামচ ব্যবহার করে খাবার খাওয়া শিখে ফেলে। তবে কিছু ক্ষেত্রে বোতলের অভ্যাস ছাড়তে সময় লাগতে পারে। 
    আমাকে ১২ মাসের চেক আপে ডাক্তার বলেছিল এমিলকে বোতল বাদ দিয়ে সবসময় গ্লাসে পানি খেতে দিতে। আমি ওকে ৮ মাস থেকে কাপে পানি দেই। খুব অল্প। মাঝে মাঝেই সামলাতে পারে না। বিষম খায়। তবে ১৮ মাস হতে হতে কাপে পানি খাওয়া শিখে গেছে। এবং ২ বছর হতে হতে কোনদিকে না ফেলেই চামচ ব‍্যবহার করে ভাত, তরকারি খেতে পারে। কাঁটা চামচ ব‍্যবহার করে খেতে জানে। আমাকে ১৮ মাসের চেক আপে ডাক্তার বলেছিল ওকে চামচ দিয়ে খেতে দিতে। তখন আমার বিশ্বাস হয় নি যে এ ৬ মাসে সে একজন দক্ষ চামচ ব‍্যবহারকারী হতে পারবে। আমি ওকে যেমন খেতে দিয়েছি, তেমন চামচ দিয়ে নানারকম খেলা খেলতেও দিয়েছি। 
  • কাপড় খোলা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাচ্চার বয়স ১৮ মাস হলে কাপড় খোলার সময় সে নিজেও সাহায্য করতে চায়, আর ২০-২২ মাস বয়স হলে শিশু নিজেই কাপড় খুলতে পারে। শিশুর এই দক্ষতা অর্জন তার বাড়তে থাকা স্বাধীনতা নির্দেশ করে।
    ১৮ মাস থেকে যখন এমিল ডায়পার টানাটানি করা শুরু করেছে তখন এমন কাপড় এনেছি যেন ও সহজে টানতে পারে। জুতা পরার জন‍্য ওর খুব আগ্রহ দেখে সহজে পরতে পারে এমন বেল্ট ছাড়া জুতা এনে ওকে অনেক প্র‍্যাকটিস করতে দিয়েছি। এখন ও বেল্ট ছাড়া স‍্যান্ডেল সহজেই পরতে পারে। এবং ডান বামের ভুল খুব কমই করে।
    এখন ও নিজে মোজা পরতে ও খুলতে চায়। কিন্তু পারে না। তাই আমি অর্ধেক, মানে গোড়ালি পর্যন্ত মোজা পরিয়ে বলি–তুমি টেনে তুলো। এটা করতে দিলে ও নিজে মোজা পরার আনন্দ পায়।
  • দৌড়ানো এবং লাথি দেয়া এগুলো মোটর স্কিল অর্থাৎ, বাচ্চার শরীরের নড়াচড়ার দক্ষতা। বাচ্চা ১৮ থেকে ২৪ মাস বয়সের মধ্যেই এই দারুণ ব্যাপারগুলো শিখে নেয়। বাচ্চার বয়স দুই বছর হতে হতে দেখবেন সে খুব সহজেই দৌড়াচ্ছে, লাথি দিচ্ছে। 

        ফুটবলে লাথি দেয়ায় এমিলের দারুণ দক্ষতা দেখে ওকে গরমকালে ২ মাসের ফুটবল স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছি। লাথি দেয়া, দৌড়ানো কিংবা শারীরিক অ‍্যাকটিভিটির পাশাপাশি নিয়ম মেনে চলা, দল বা অন‍্যের জন‍্য অপেক্ষা করা, বল শেয়ার করা এগুলো ফুটবল ক্লাসের ফলে ও শিখতে পারছে। 

  • আসবাবপত্র বেয়ে ওঠা বাচ্চারা যখন ফার্নিচার বেয়ে উঠতে শুরু করে তখন তাদের আনন্দের সীমা থাকে না। আর বাবা মায়েরও ভয়ের সীমা থাকে না এটা ভেবে যে পড়ে গিয়ে যদি হাত পা ভাঙে! 
    আসবাবপত্র বেয়ে ওঠার কাজটা কিন্তু মাসল বা পেশীর বিকাশের জন‍্য করে। এমিল প্রথম সোফা বেয়ে পিয়ানোর উপরে উঠতো। এবং উঠেই নাচতো। ধীরে ধীরে টিভি ক‍্যাবিনেট, কম্পিউটার টেবিলে চড়া যখন শুরু করল আমরা দুটো কাজ করলাম।
    ১. দুর্ঘটনা হতে পারে এমন সব জিনিস সরিয়ে নিলাম। টিভি, কম্পিউটার সব এক রুমে নিয়ে তালা লাগিয়ে দিলাম। কাঁচের জিনিস ওর নাগালের বাইরে রেখে দিলাম। 
    ২. বেয়ে ওঠা, স্লাইড করার জন‍্য ওকে একটা জিম কিনে দিলাম। কারণ শীতের পুরো ৬ মাস বাচ্চাকে বাইরে খেলতে দেয়াটা কঠিন। পার্কে বেয়ে ওঠার জন‍্য অনেক খেলনা থাকলেও বাসায় এরকম কিছু না থাকায় বাচ্চারা চেয়ার টেবিলের ওপরেই উঠে এসব অনুশীলন করে। 
    আরেকটা কাজ আমরা সবসময় করতাম। সেটা হলো ওর দিকে তীক্ষ্ন দৃষ্টি রাখা। এমনকি বাথরুমেও আমি ওকে নিয়ে যেতাম। কারণ চোখের আড়াল করলেই ও একা পিয়ানোতে উঠে আছাড় খেতে পারে। ওই সময়টা খুব কঠিন। তবে কোনো দুর্ঘটনা ছাড়াই ৬ মাস পার করে এই দুই বছরে এখন এসব প্রবণতা অনেক কম দেখি। এখন আর টেবিল বা চেয়ার বেয়ে ওঠার কাজ এমিল করে না। 
  • লাফ দেওয়া বাচ্চা লাফাতে শিখলেই বারবার শুধু লাফ দিয়ে দেখাতে চায়। আপনার শিশুও দেখবেন বয়স ২ বছর হতে না হতেই লাফালাফি শুরু করে দিয়েছে।
    তবে এমিল এখনো সেভাবে লাফাতে পারে না। বাবার ভুড়ির ওপরে থপথপ করে লাফাতে পারলেও, লাফিয়ে পার হওয়ার মত দক্ষতা এখনো ওর তৈরি হয়নি। 
বাচ্চার দাঁত ক্ষয় রোধে করণীয় কী
বাচ্চার দাঁত ক্ষয় রোধে করণীয় কী
২ বছর বয়সী বাচ্চার বুদ্ধিবৃত্তিক মাইলফলক (cognitive milestones)

বাচ্চার ভালো-মন্দ বিচার করা, শেখা এবং সমস্যার সমাধান করার দক্ষতা বেশ খানিকটা পরিণত হয়ে যায়। 

  • আঙুল তাক করা ৯ মাস বয়স হলেই বাচ্চা কোনোকিছুর দিকে আঙুল তাক করা শিখে যায়।
    এ কাজটা এমিল অনেক দেরি করে শুরু করেছে। তবে ১৮ মাস থেকে দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য এবং শরীরের কোনো অঙ্গের ব্যাপারে কিছু বোঝাতে ঘন ঘন আঙুল তাক করে দেখানো শুরু করেছিলো। 
  • অনুকরণ দক্ষতা বয়স ১৮ মাসের কাছাকাছি হলেই দেখবেন সে অন‍্যদের বিভিন্ন আচরণ নকল করছে।যেমন কাল্পনিক ফোনে কথা বলা,  বা খেলনা পুতুলকে খাওয়ানো, চুল আঁচড়ানোর চেষ্টা করা। বাচ্চার এমন করার মানে হলো সে দৈনন্দিন জীবনের কাজগুলো দেখে দেখে অনুকরণ করতে শিখছে। এই ধরনের কল্পনাপ্রবণ খেলার মাধ্যমে শিশুর বুদ্ধি দারুণভাবে বাড়তে থাকে।
    দাদী কিভাবে রুটি বানায়, মা কিভাবে হাত ধোয়, বাবা কিভাবে গাড়ি চালায় এসব অনুকরণের পাশাপাশি কোন প্রাণী কিভাবে হাঁটে ও আওয়াজ করে এগুলি খেলার ছলে এমিলকে শিখিয়েছি। 
  • নির্দেশনা বোঝা শিশুরা সাধারণত চারপাশের সবকিছুকে খুব মনোযোগ দিয়ে বোঝার চেষ্টা করে। ধীরে ধীরে দেখবেন সে আদেশ পালন করতে শিখছে। ১৮ মাস বয়সী শিশুরা সাধারণত এক ধাপের আদেশগুলো পালন করতে পারে। যেমনঃ পুতুলটা এদিকে আনো। বয়স দুই বছরের কাছাকাছি হলে সে দুই ধাপের নির্দেশনাও বুঝতে পারে। যেমন– চেয়ারে বসে জুতা পরো।
    এমিল এখন মোটামুটি সব ধরনের নির্দেশনা বুঝতে পারে। তার মানে এই না যে সব আদেশ ও মেনে চলে। 😛
বাচ্চার স্পিচ ডিলে আছে কিনা কিভাবে বুঝবো
  • ব্লক দিয়ে টাওয়ার তৈরি করা  ২ বছর হতে হতে দেখবেন আপনার ঘরে একজন ছোট্ট ইঞ্জিনিয়ার আবির্ভূত হয়েছেন।চার বা এর চেয়ে বেশি ব্লক দিয়ে বাচ্চা টাওয়ার/ বিল্ডিং বা দুর্গ বানিয়ে ফেলছে। এ সময় একটার উপর আরেকটা জিনিস বসিয়ে খেলা বাচ্চারা বেশ পছন্দ করে।এমিলের অনেক রকম ব্লক আছে। আর ঘরের জিনিস দিয়েও আমরা খেলি। যেমন বাটির ওপর বাটি বসানো, কিংবা কাগজের গ্লাসের উপরে গ্লাস বসিয়ে খেলা।
  • ছন্দ, গল্প পূরণ করা বাচ্চা কোনো বই খুব পছন্দ করে? তাহলে দেখবেন আপনি কোনো গল্প বা ছড়া পড়তে গেলে সে নিজেই ছন্দ বা শব্দগুলো বলতে শুরু করবে। এছাড়া, এই বয়সের বাচ্চারা বইয়ের পাতায় বিড়াল, বল, পাখি এসব কিছুর ছবি দেখে চিনতে পারে। 
    আমি ১৮ মাস থেকে এমিলকে বলি কোন বইটা পড়বে নিয়ে আসতে। ও ওর বুকশেলফ থেকে পছন্দের বই নিয়ে আসে। কোন বয়সে কোন বই কিভাবে পড়িয়েছি আমার ইউটিউবে এ সংক্রান্ত ভিডিও পাবেন। 
  • মনে রাখার ক্ষমতা বাড়া এখন বাচ্চা কম্বলের নিচে রাখা বা উল্টে রাখা বাক্সের নিচে লুকিয়ে রাখা জিনিস বের করে ফেলতে পারবে। লক্ষ্য করলে দেখবেন বাচ্চা যা দেখে, পরিচিত হয়, সেসব মানুষ, জায়গা আর ঘটনা আগের চেয়ে অনেক বেশি মনে রাখতে পারছে, আর সেগুলো নিয়ে আপনার সাথে গল্প করছে। আপনিও রাতে ঘুমানোর সময় সারাদিন কী কী ঘটেছে সেগুলি গল্প আকারে বলে ওকে ওর মেমোরি ভালো রাখতে সাহায‍্য করতে পারেন।
  • জিনিসের আকার ও রঙ চিনতে পারা  ২ বছর বয়সে বাচ্চা জিনিসের আকার, আকৃতি চিহ্নিত করতে পারবে। অর্থাৎ সে তিনকোনা, চারকোনা এবং গোল জিনিসকে গুলিয়ে ফেলবে না, আলাদা করতে পারবে। এছাড়া বেশিরভাগ শিশু রঙের নামও শিখে ফেলে দুই বছরের মধ্যেই। অনেকের রঙ আলাদা করে চিনতে সময় লাগতে পারে। 
    আমি এমিলের ৬/৭ মাস বয়স থেকে ঘরের সব জিনিস, ওর পোশাক, আমার পোশাক, জুতাসহ যত জিনিস দেখি সবকিছুর রঙ সবসময় ওকে কথায় কথায় বলেছি। ২০ মাস থেকেই ও সাদা, কালো, ব্রাউন, সবুজ,লাল, হলুদ, কমলা ও সবুজ রঙ আলাদা করে চিনতে পেরেছে। 
২ বছর বয়সী বাচ্চার ভাষা ও যোগাযোগ দক্ষতা (language and communication milestones)

বাচ্চা যে কতকিছু নিয়ে প্রশ্ন করবে আপনাকে!  ঘুম পাড়ানোর জন্য বিছানাতে শোয়ালেই দেখবেন সে কত লম্বা আদুরে সব গল্প শুরু করে দিয়েছে। এই বয়সে বাচ্চার ভাষা ও যোগাযোগের দক্ষতা খুব দ্রুত বাড়ে।

  • এক সাথে একটার বেশি শব্দ বলা  সবেমাত্র যখন বাচ্চা ‘মা’, ‘বাবা’ বা এ ধরনের একটা শব্দ বলা শুরু করল, তখন কী খুশি লাগতো তাই না? শিশু বড় হতে হতে দেখবেন কত দ্রুত সে নতুন নতুন শব্দ শিখে নিচ্ছে। ১৮ মাস বয়স হতে হতে বেশিরভাগ বাচ্চাই বেশ কয়েকটি শব্দ শিখে ফেলে। আর  বয়স ২ বছর হতেই দেখবেন বাচ্চা প্রায় ৫০ টি শব্দ, এমনকি ২ থেকে ৪ শব্দের বাক্যও বলতে পারছে।১৮ মাসের দিকে এমিলের তেমন কথা বলা শুরু হয়নি। খুব কমই বলতো। যেমন– দাদীর সুতা। নানার চা। কিন্তু ২১/২২ মাসের দিকে তার শব্দ বলা ১০০০ গুণ বেড়ে গেছে। কী খাবে জিজ্ঞাসা করলে উত্তরে ‘ক্রোসান্ত দিয়ে ব্লুবেরি’ এমন তিন শব্দের কথাও এখন ও বলছে। ওর কথা বলাকে উৎসাহিত করার জন‍্য আমরা ওর সাথে একদম বড়দের মত করে সবকিছু বলি। প্রতিদিন নতুন শব্দ শেখাই। আর বিভিন্ন গল্পে গল্পে শব্দের ব‍্যবহার, অর্থ বোঝানোর চেষ্টা করি। 
  • মাথা নাড়িয়ে না বলা– বাচ্চার বেড়ে ওঠার  মাইলফলকের ক্ষেত্রে এইটাই সবচেয়ে প্রশংসার আবার একই সাথে ভয়েরও। হ্যাঁ, বাচ্চা আপনার কথা বোঝে, উত্তর দিতে পারে- এটা খুব ভালো ব্যাপার। কিন্তু ১৮ মাস হতেই যখন দেখবেন খাবার খেতে বললে মাথা নাড়িয়ে না বলতে তা শুরু করেছে, তখন নিশ্চয়ই একটু কঠিন লাগবে।
    মনে রাখবেন, যেসব বাচ্চা বেশি না শোনে, তারা বেশি না বলে। আমরা বাচ্চাকে না বলাটা খুবই কমিয়ে অন‍্যভাবে নিষেধ বা বারণ করি। তাই এমিল খুব কমই না বলতে শিখেছে। 
বারবার 'না' শুনলে শিশুর মানসিক বিকাশ ব‍্যাহত হয়
আরো পড়ুন: বাচ্চাকে না এর বদলে কী বলা যায়
  • শব্দ নকল করার চেষ্টা– বাচ্চা হযতো ‘আপেল’কে ‘আবা’ বলছে, কিন্তু সে চেষ্টাতো করছে! বয়স বাড়ার সাথে সাথে কথা বলার সময় গলার স্বরের ওঠানামাও আয়ত্ত্ব করে ফেলতে পারে বাচ্চারা।
    পশুপাখির আওয়াজ অনুকরণ করার পাশাপাশি এমিল গলার স্বর চিকন মোটা করে নানারকম আওয়াজ করে। মাঝে মাঝে এসব করতে করতে কেশেও ফেলে। আর শব্দ এখন সবই বলার চেষ্টা করে। তাই আমরা নিজেদের কথাবার্তা খুব সাবধানে বলি। যেমন আমার একটা অ‍ভ‍্যাস কথায় কথায় ‘শালা’ বলা। এ অ‍ভ‍্যাস এখন একদম বন্ধ। নাহলে এমিল কী শিখে ফেলবে জানেন তো! 😂
  • শোনা কথার পুনরাবৃত্তি করা– বাচ্চার বয়স ২ বছরের কাছাকাছি হয়ে গেলে তার আশেপাশে কথা বলার সময় একটু সতর্ক থাকতে হবে। কারণ এই বয়সের শিশুরা বড়দের কথা শুনে বেশ ভালোই নকল করতে পারে।
    বাচ্চার সামনে তার সম্পর্কে সবসময় ভালো ভালো কথা বলা, সেই সঙ্গে অন‍্যদের সম্পর্কেও ভালো কথা বলাই এ সময় সবচেয়ে ভালো প্র‍্যাকটিস। আপনি হয়ত ফোনে কাউকে কারো সম্পর্কে গোপন কথা বলছেন। বাচ্চা আশেপাশে থাকলে এগুলি না বলাই ভালো। কার সামনে যে সে এ কথা প্রকাশ করে ফেলবে–কে জানে!
  • মানুষের নাম ও শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের নাম বলতে পারা-এই বয়সে শিশুরা পরিচিত মানুষের নাম ও শরীরের বিভিন্ন অংশ যেমন-চোখ, কান, পা ইত্যাদি বলতে পারে।
    এ দক্ষতা বাড়ানোর জন‍্য আপনি প্রতিটি জিনিসের নাম ধরে ডাকুন। শরীরের বিভিন্ন অংশ দেখিয়ে মজার খেলা ও গল্প বানান। এমিল ও আমার ‘কই কই খেলা’ হলো মাম্মির চোখ কই, এমিলের চোখ কই, পুতুলের চোখ কই এসব বলে বলে শরীরের অঙ্গপ্রত‍্যঙ্গ চেনানো। এ খেলার টুইস্ট হলো যেগুলো নেই সেগুলোও বলা। যেমন লেজ। মাম্মির লেজ? নেই। এমিলের লেজ? নেই। বিড়ালের লেজ? আছে! ইয়াহু!
২ বছর বয়সী বাচ্চার অনুভূতির মাইলফলক (social and emotional milestones)

আবেগের ক্ষেত্রে -চেঁচামেচি, কান্নাকাটি আর খুশির অনুভূতি দেখা যায় শিশুদের মানসিকতায়। ২ বছর বয়সী মধ্যে বাচ্চার এসব সামাজিক ও আবেগজনিত (ইমোশনাল) আচরণ খুবই স্বাভাবিক। 

  • জেদ ও চেঁচামেচি করা এই বয়সে রেগে চেঁচামেচি করাটা খুবই স্বাভাবিক। ১৮ মাস বয়স হতে হতে বাচ্চার তীব্র জেদ ও চেঁচামেচি দেখতে পাবেন।যতই খেলাধুলা করুক, পেট ভরা থাকুক, এ বয়সে কিছু সময় জেদ করবেই!
বাচ্চার জেদ কমানোর উপায়
বাচ্চার জেদ কমানোর উপায়
  • নির্দিষ্ট কিছু মানুষ ও নির্দিষ্ট খেলনা বেশি পছন্দ করা হয়তো দেখবেন বাচ্চা গোসলের সময় শুধু আপনার সাহায্যই চাইছে। অন্য কারো সাহায্যই সে নিতে চাইবে না। এই বয়সে শিশু তার পরিচিত মানুষগুলোর প্রতিই তুলনামূলক বেশি আদর প্রকাশ করে থাকে।কোনো কোনো খেলনা বা বই বারবার সে খেলতে, ধরতে, পড়তে চায়। এমনকি প্রিয় পোশাকও এসময়ের মধ‍্যে নির্ধারণ হতে পারে। 
  • অন‍্যের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা বাচ্চার বয়স দুই বছরের যত কাছাকাছি যাবে, লক্ষ্য করলে দেখবেন তার আচরণ ততই অবাধ্য হয়ে উঠছে। আপনি কী প্রতিক্রিয়া করেন তা দেখার জন্য বাচ্চা আপনার কথা না শুনে দেখবেন ঘরে খেলনা ছুঁড়ে মারছে।
    এজন‍্য আমি অযাচিত কাজগুলোতে কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখাই না। মন অন‍্যদিকে সরানোর চেষ্টা করি।
  • স্বাধীনতা প্রকাশ করা    মগ দিয়ে নিজের গায়ে পানি ঢালা বা নুডুলস নিজের হাতে খাওয়ার মতো কাজ করার সময় বাচ্চাকে বলতে শুনবেন “আমি করবো!“। এভাবে ২ বছর বয়সী শিশুরা নিজের স্বাধীনতা কিছুটা জাহির করার চেষ্টা করে।
    এ সময় তাকে স্বাধীনতা অনুভব করতে দিলে তার ইমোশনাল ম‍্যানেজমেন্ট সহজ হয়। এমিল যখন নিজে গোসল করতে চায়, আমরা ওকে উৎসাহ দেই। ও নিজে গায়ে পানি ঢালে, শেষে আমরাও একটু ঢেলে দেই। প‍্যান্ট অর্ধেক পরিয়ে বলি তুমি টেনে তুলো। ও বাকিটা টেনে তুলে নিজেকে দারুণ কাবিল মনে করে!
  • প্যারালাল প্লে এবং পিছু নেয়ার খেলা বাচ্চারা সাধারণত একটা নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত সমবয়সী বাচ্চাদের পাশে বসে খেলে কিন্তু তাদের সাথে মেশে না বা নিজের খেলনা অন্য বাচ্চাকে দিতে চায়না। এ ধরনের খেলাকে বলে প্যারালাল প্লে বা পাশাপাশি খেলা। বয়স ২ এর কাছাকাছি এলে বাচ্চারা তার খেলার সঙ্গীর সাথে মিশে একসাথে খেলতে শুরু করে। অর্থাৎ, প্যারালাল প্লে বাদ দিয়ে বন্ধুর সাথে খেলনা অদল বদল করে নিয়ে খেলতে শিখে। আর এই সময়ে শিশুদের সবচেয়ে পছন্দের খেলা কী ভাবছেন? একে অন্যের পেছনে দৌড়ে ধরা!
    তবে এমিল এগুলো এখনো শেখেনি। কারণ সমবয়সী দূরে থাক, কোন বয়সী বাচ্চার সাথেই খেলার সুযোগ ওর এখনো হয়নি। আমরা চেষ্টা করছি প‍্যারালাল প্লে করতে পারে এমন পরিবেশে মানে অন‍্য বাচ্চা আছে এমন জায়গায় ওকে নিয়ে যেতে।
কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন

প্রত্যেক বাচ্চাই নিজস্ব গতিতে বেড়ে ওঠে। তবে বাচ্চার শারীরিক, বুদ্ধিবৃত্তিক এবং ভাষাগত বৃদ্ধির ক্ষেত্রে দেরি হলে কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক হয়ে পড়ে। আপনার দুই বছর বয়সী শিশুর মধ্যে নিচের লক্ষণগুলো দেখতে পেলে ডাক্তার দেখিয়ে পরামর্শ নিন। 

  • নিত‍্য ব্যবহারের জিনিস, যেমন- চামচ, কাঁটাচামচ, চিরুনি অথবা ফোনের ব্যবহার না জানলে। 
  • শব্দ বা ভঙ্গিমা নকল না করতে না পারলে। 
  • ছোট, সহজ আদেশগুলোও বুঝতে না পারলে (যেমন এদিকে আসো)
  • দুই শব্দের কথা যেমন “আমি খাই” বলতে না পারলে
  • এখনো ঠিকঠাক হাঁটতে না পারলে
  • একবার শিখেছে এমন কোনো দক্ষতা ভুলে গেলে (যেমন জামার চেইন লাগানো, বল ছুঁড়ে মারা)

২ বছর বয়সের মধ্যে বাচ্চাদের শারীরিক, ভাষাগত ও বুদ্ধিবৃত্তিক দারুণ সব উন্নতি ঘটে। আরো খুশির ব্যাপার হলো পরের বছর বাচ্চার মধ‍্যে তিন চাকার সাইকেল প্যাডেল করা, গুছিয়ে গল্প করতে পারার মতো আরো অনেক পরিবর্তন ও বিকাশ দেখতে পারেন। ছোট্ট শিশুর এমন তরতরিয়ে বেড়ে ওঠা দেখতে কোন বাবা-মায়ের না ভালো লাগে!

রেফারেন্স:

  1. American Academy of Pediatrics, Emotional Development: 2 Year Olds, August 2009.
  2. American Academy of Pediatrics, Preventing Furniture and TV Tips-Overs, February 2018.
  3. American Academy of Pediatrics, Developmental Milestones: 2 Year Olds, June 2009.
  4. American Academy of Pediatrics, Cognitive Development in Preschool Children, November 2009.
  5. American Academy of Pediatrics, Cognitive and Verbal Skills Needed for Toilet Training , November 2009.
  6. Centers for Disease Control and Prevention, Milestone Moments, 2021.
  7. Centers for Disease Control and Prevention, Important Milestones: Your Child by Eighteen Months, August 2021.
  8. Centers for Disease Control and Prevention, Toddlers (1-2 Years of Age) Developmental Milestones, February 2021.

Comment (01)

  1. Maliha
    July 1, 2024

    My son Abid Khan is one month younger than your Emil. That’s your article helps me get the idea and helps me to do the right way to react to the activity of my son.

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *