সন্তান জন্ম নেয়ার পর একজন মা ও শিশুর জীবন পুরোপুরি পাল্টে যায়। এই আর্টিকেলটি শুধু নতুন মায়ের নয়, সন্তানসম্ভবা মায়ের আশেপাশে যারা থাকেন, সবার পড়া প্রয়োজন। বিশেষ করে শিশুর বাবা সন্তান জন্মের পরের অবস্থা সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখলে সবার জীবন সহজ ও সুন্দর হয়।
প্রেগনেন্সির সময়টা প্রতিটি মায়ের জন্য অনেক দীর্ঘ ও কষ্টকর একটি যাত্রা। আপনি যখন মনে করবেন আপনার হয়তো গর্ভাবস্থার শেষ সময়ে পৌঁছেছেন ঠিক তখনই আবিষ্কার করবেন যে আরও একটি ‘ত্রৈমাসিক’ বাকি আছে। এই ত্রৈমাসিককেই মূলত ‘৪র্থ ত্রৈমাসিক’ বলা হয়। এই সময়টাকে আপনার খুব ঘোলাটে মনে হবে। অচেনা কিছু অনুভূতি তৈরি হবে। কারণ আপনি তখন সবেমাত্র ডেলিভারির ধকল কাটিয়ে উঠতে শুরু করবেন একইসাথে শিখবেন কীভাবে একজন মা হতে হয়। আপনার শিশুও মায়ের গর্ভ থেকে বেরিয়ে বাইরের দুনিয়ার সাথে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করতে থাকবে।
৪র্থ ত্রৈমাসিকের সময় আপনি এবং আপনার ছোট্ট শিশু কী অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, কীভাবে এই সময়টাকে সর্বোচ্চ উপভোগ করবেন এবং কখন আপনার জীবন আবার একটু স্বাভাবিক হতে শুরু করবে তা এখানে জানবেন।
৪র্থ ত্রৈমাসিক কী
আপনার শিশুর জন্মের দিন থেকে শুরু করে তার বয়স ৩ মাস হওয়া পর্যন্ত অর্থাৎ প্রসব পরবর্তী ৩ মাস সময়কালকে ‘৪র্থ ত্রৈমাসিক’ বলা হয়।
ধারণা করা হয়, একটি শিশু মায়ের পেটে ৯ মাস থাকার পরেও সে কিন্তু বাইরের দুনিয়ার সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য যথেষ্ট পরিপক্ক হয় না। তাই তাদের পৃথিবীতে টিকে থাকার জন্য আরও ১২ সপ্তাহ সময় লাগে, যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে উঠতে। যে কারণে আপনার শিশুকে এই অল্প সময়ে অনেক বড় ধরনের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এই সময়টা সে কখনো ঘুমিয়ে কাটাবে, কখনো কখনো অনেক অস্থির থাকবে, কখনো শান্ত থাকবে আবার কখনো সুখী। যে কারণে এই প্রথম ৩ মাসে মাকে অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে।
১২ সপ্তাহের মধ্যেই আপনার ছোট্ট শিশুটি তার মাথা কিছুটা সোজা করে ধরে রাখতে শিখবে এবং বাইরের দুনিয়ার সম্পর্কে আরও আগ্রহী হয়ে উঠবে ও বোঝার চেষ্টা করবে।
আপনার শিশুর শারীরিক এবং মানসিক বিকাশের জন্য এই ৪র্থ ত্রৈমাসিক সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ সময়। তবে একজন নতুন মায়ের জন্যেও এটা একটা বড় পরিবর্তনের সময়। বাচ্চা হওয়ার পর আপনার শরীরেও অনেক ধরণের পরিবর্তন আসবে। সেইসাথে আপনি শিখবেন কিভাবে একটি নবজাতক শিশুর যত্ন নিতে হয়। আর সে জন্য জীবনের যে বড় পরিবর্তনগুলো আসে সেগুলো খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করতে থাকবেন।
যেমন ধরুন, আপনার হয়তো ঘুমের কোনো ঠিক-ঠিকানা থাকবেনা, সময় মতো খেতে পারবেন না, গোসল করতে পারবেন না। এগুলোর সাথে মানিয়ে নিতে নিতে একজন মায়ের অনেক ধরনের মানসিক হতাশাও তৈরি হয়।
৪র্থ ত্রৈমাসিকের সময় কী ঘটে
আপনি এবং আপনার শিশু দুজনই জন্মের পরের প্রথম ৩ মাসে বড় ধরনের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাবেন। কখনও কখনও এটি বেশ কষ্টকর মনে হতে পারে।
এই সময়টাতে আপনাকে অনেক ধৈর্য ধরতে হবে এবং খুব বেশি কিছু আশা করা যাবে না। সময়টা পার করার জন্য আপনার মানসিকভাবে শক্ত থাকা জরুরি। মানসিক শক্তিই পারে আপনাকে দ্রুত সারিয়ে তুলতে এবং দিনগুলো উপভোগ করতে।
সন্তানের জন্মের পর প্রথম সপ্তাহগুলোতে ধীরে ধীরে শিশুর জন্মের আগে নতুন মায়ের শরীরে যে পরিবর্তনগুলো হয়েছিল তা ঠিক হতে শুরু করবে।
হরমোন তার স্বাভাবিক ধারায় ফিরতে শুরু করবে, শরীরের অঙ্গগুলো আগের মতো হতে শুরু করবে এবং আপনার বুকে দুধ আসবে।
একইসঙ্গে, ডেলিভারির পরে রক্তপাত হওয়া শুরু হবে। আপনার যদি সি-সেকশন বা সিজারিয়ান ডেলিভারি হয় তবে আপনার শরীরের পেরিনিয়াল অংশে ব্যথা থাকবে।
অনেক মায়েদের, সন্তান জন্ম দেয়ার ৬ সপ্তাহ পর থেকে এই শারীরিক পরিবর্তনগুলো দেখা দিতে শুরু করে। তবে এর অর্থ এই না যে আপনি গর্ভাবস্থার আগে যেমন ছিলেন হুট করে তেমনই হয়ে যাবেন। আপনার শরীরে, আপনার শিশুটির বড় হতে ৯ মাস সময় লেগেছে। তাই আপনি ধরে নিতে পারেন যে, আপনার শরীর আবার ‘স্বাভাবিক’ অবস্থায় ফিরে যেতেও কমপক্ষে এমন সময়ই নেবে।
সাধারণত শিশুকে বুকের দুধ ছাড়ানোর পরই নতুন মা তার আগের অবস্থায় ধীরে ধীরে ফিরে যেতে পারেন।
শিশুর জন্মের পর তাকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিতে গিয়ে কখনো কখনো আপনার নিজের শরীরকে নিজের না বলেও মনে হতে পারে। নতুন মা হিসেবে আপনার শিশুর যত্ন নিতে গিয়ে আপনি অনেক ক্লান্ত হয়ে যাবেন। শিশুর রুটিনের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে নিতে আপনি মানসিকভাবেও অনেক হতাশাগ্রস্ত হয়ে যেতে পারেন।
শিশু যখন মায়ের পেটে থাকে তখন একজন মা অনেক কিছু কল্পনা করেন, শিশুকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু বাস্তবে এমনটা নাও হতে পারে। আপনি হয়তো বা মা হওয়ার আগের জীবনটা অনেক মিস করবেন। এতটা ধকল একবারে নেয়া অনেক কষ্টদায়ক।
কিন্তু মনে রাখবেন আপনি একা নন, প্রত্যেক নতুন মা ঠিক একইভাবে এই দিনগুলো পার করে, একইরকম অনুভূতি তাদেরও হয়। এই সময়টা খুব বেশিদিনের না, শিশুরা খুব তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যায় তখন এই দিনগুলো অনেক মিস করবেন। তাই যতটা সম্ভব সময়টা উপভোগ করুন। আপনার শিশুর সাথে হাসিখুশি থাকুন।
৪র্থ ত্রৈমাসিকে শিশুর বিকাশ
সন্তান জন্ম নেয়ার পর প্রথম ৩ মাস নতুন মায়ের পাশাপাশি ছোট্ট শিশুটির কাছেও সবকিছুই নতুন। ৯ মাস মায়ের পেটের ভেতরের উষ্ণতা , অন্ধকার ও তরলের মাঝে থাকার পর, বাইরের দুনিয়ার সাথে শিশুটির খাপ খাইয়ে নেওয়া অনেক চ্যালেঞ্জিং হতে পারে।
প্রথম কিছুদিন আপনার শিশুটিকে দেখে মনে হতে পারে যে সে এখনও মায়ের পেটের ভেতরেই আছে, সত্যিকারের পৃথিবী সম্পর্কে সে কিছুই বুঝে উঠতে পারেনি। সে যখন মায়ের পেটের ভিতরে ভ্রুণ অবস্থায় ছিল তখন যেভাবে হাত-পা গুটিসুটি করে রাখত, পৃথিবীতে আসার পরেও প্রথম কিছুদিন সে হয়তো সেভাবেই গুটিসুটি হয়ে থাকবে, ঝাঁকুনি দিবে, এবং অনেক বেশি অস্থির হয়ে যেতে পারে।
শিশুটির কাছে এখন দিন-রাত সমান মনে হবে। সে আলাদা করে কোনটা দিন, আার কোনটা রাত চিনতে পারবে না। সে হয়তো ২৪ ঘণ্টাই খেতে চাইবে, আর খাওয়ার মাঝখানে বাকি সময় ঘুমাবে। এই মুহূর্তে সে আসলে খাওয়া, ঘুম এবং প্রস্রাব পায়খানা, এই তিন কাজই করতে থাকবে।
কিন্তু আপনার শিশু এই অবস্থায় খুব বেশি দিন থাকবেনা। ৩-৪ মাসের মধ্যে তার কিছুটা ওজন বৃদ্ধি পাবে, সে ১ থেকে ১.৫ ইঞ্চি লম্বা হবে এবং তার শরীরের আরও অনেক বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটবে। তার বাহু হাত-পা এবং পায়ের পাতা খুলতে শুরু করবে। এবং শিশুর পেশীর বিকাশ হওয়ার সাথে সাথে সে নিজে নিজে অনেক নড়াচড়া করতে পারবে।
শিশু ধীরে ধীরে তার মাথা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে এবং উঁচু করে ধরে রাখতে পারবে। ৩ মাসের মধ্যে আপনার শিশু পেটের ওপর শুয়ে থাকবে এবং বাহুতে ভর দিয়ে চারপাশে তাকিয়ে দেখবে। আর কিছুদিন পরই দেখবেন সে তার বাহু দিয়ে কিছুটা ধাক্কা দিতে শুরু করছে।
আপনার শিশুর চোখের দৃষ্টিশক্তি যতবেশি পরিষ্কার হতে থাকবে সে তত বেশি সবাইকে দেখবে, সবার দিকে তাকাবে। আপনার শিশুর আকারও পরিবর্তন হতে শুরু হবে। এসময় সে খেলাধুলা করবে, আপনার কিছু নাড়াচাড়া অনুকরণ করার চেষ্টা করবে, এমনকি হাসতেও শুরু করবে।
শিশুকে দিনরাত বিরতিহীনভাবে খাওয়ানোর জন্য আপনার হয়তো নির্ঘুম রাত কাটছে বা টানা কয়েক ঘণ্টা ঘুমানো আপনার কাছে স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। চতুর্থ ত্রৈমাসিকে শেষের দিকে এ অবস্থার কিছুটা হলেও উন্নতি হবে। আপনার শিশুর খাওয়া এবং ঘুম এ সময়ে কিছুটা রুটিনের মধ্যে চলে আসবে।
৪র্থ ত্রৈমাসিকের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করার কিছু টিপস
এত কষ্টের এই ক্লান্তিকর দিনগুলো চিরদিন থাকবে না। কিছু কৌশল রয়েছে যা দিয়ে আপনার এসময়ের কষ্ট কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব।
- সাহায্য চান
সবকিছু নিজেকেই করতে হবে এমনটা মনে করবেন না। আপনার সঙ্গী বা কাছের বন্ধু বা আত্মীয়স্বজনদের সাহায্য চান।
আপনি যদি বুকের দুধ খাওয়ান তাহলে বাকি সময়টা শিশুকে অন্য কারো কাছে দিয়ে আপনি কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিতে পারেন। আপনি ভরসা করতে পারেন এমন কারো কাছে আপনার শিশুর গোসল এবং ডায়পার পরিবর্তন করার দায়িত্ব দিতে পারেন।
যদি কেউ আপনার বাসায় দেখা করতে আসে তাহলে তাকে দিয়েও কিছু কাজ করিয়ে রাখতে পারেন। যেমন— বাজার করে দেয়, কাপড় ধোয়া, হাড়ি পাতিল পরিষ্কার করা অথবা আপনার শিশুকে কিছু সময়ের জন্য রাখতে বলুন যেন আপনি গোসল কিংবা কোনো ব্যক্তিগত কাজ সারতে পারেন।
- ‘স্বাভাবিক’ না লাগাটাই স্বাভাবিক
বাচ্চা হওয়ার পরে আপনার ঘন ঘন মেজাজ পরিবর্তন বা মুড সুইং হতে পারে। যেমন ধরুন মেজাজ এখন খুব ভালো, আবার মুহূর্তেই সেটা খুব খারাপ হয়ে যেতে পারে। কিছুক্ষণ পর পর কান্না পাওয়াটাও এ সময় খুবই স্বাভাবিক। প্রসব পরবর্তী মায়েদের মেজাজের এই অবস্থা ‘বেবি ব্লুজ’ নামে পরিচিত। ঘুম না হওয়া মুড সুইংয়ের একটি বড় কারণ। একজন মা এ সময় সবথেকে বেশি ঘুমাতে না পারার কষ্ট অনুভব করেন। যে কারণে এসময় আপনি অনেক বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়বেন।
আপনি আপনার শিশুর জন্য যথেষ্ট করছেন না, এমনটা মনে করে নিজেকে দোষারোপ করবেন না। নিজের জন্য কিছুটা সময় বের করা, কিছুটা বিশ্রাম নেয়া বা ভাল কিছু খাওয়া আপনাকে মানসিক শক্তি দিবে। আপনি তখন আরও বেশি শিশুর যত্ন নিতে পারবেন। শিশুকে ভালো রাখতে হলে একজন মাকে অবশ্যই ভালো থাকতে হবে।
শিশুর জন্মের ঠিক পরের সপ্তাহগুলোতে একজন মায়ের বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু মা যদি লম্বা সময় ধরে দুঃখ অনুভব করে, হতাশাগ্রস্ত হয়, অতিরিক্ত উদ্বিগ্ন বোধ করে অথবা নিজের বা শিশুর ক্ষতি করার চিন্তাভাবনা করে, তাহলে সেটাকে পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন বা প্রসব পরবর্তী উদ্বেগের লক্ষণ বলা হয়।
এর অর্থ এই নয় যে আপনি মানসিকভাবে পাগল হয়ে যাচ্ছেন বা আপনি একজন খারাপ মা বা আপনি কোনো ভুল করছেন। ডেলিভারির পর পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশনের মতো মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো কখনোই আপনার দোষ নয়। এই সমস্যারও চিকিৎসা রয়েছে। আপনি যদি মনে করেন আপনি পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন বা অন্য কোনো রোগে ভুগছেন, তাহলে খুব দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।
- নিজের যত্ন নিন
আমাদের দেশের মায়েরা এই ভুলটি সবচেয়ে বেশি করে। শিশুর যত্ন নিতে গিয়ে নিজের কথা ভুলে যায়। আর এর বিরুপ প্রভাব শিশুর ওপরেই পড়ে।
মৌলিক চাহিদাগুলো ঠিকঠাকমতো পূরণ হলে আপনার নিজেকে অনেক শক্তিশালী মনে হবে এবং মনের জোর পাবেন। যেমন ধরুন ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করতে পারা, বিশ্রাম নেয়া বা লম্বা সময় নিয়ে ঘুমানো আপনার শরীর এবং মন ভালো রাখতে সাহায্য করে।
ফল, সবজি, চর্বিহীন প্রোটিন এবং শস্যদানার মতো স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। চিনিজাতীয় কোনো খাবার খাবেন না। সেইসঙ্গে প্রচুর পানি পান করুন। যখনই সময় পাবেন একা অথবা শিশুকে নিয়ে বাইরে থেকে ঘুরে আসুন।
যখন আপনার শিশু ঘুমাবে তখন চেষ্টা করবেন বাড়ির কাজগুলো না করে, শিশুর সাথে সে সময়টা একটু ঘুমিয়ে নিতে।
- নতুন মায়েদের কোনো গ্রুপ খুঁজুন
একজন সাহায্যকারী সঙ্গী, পরিবারের মানুষ বা কাছের বন্ধুদের সাথে থাকার পরেও আপনার মনে হতে পারে আপনি একাই এই সময়টার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। অন্য নতুন মায়েদের সঙ্গে কথা বললে আপনার অনুভূতিগুলো শেয়ার করার একটা জায়গা তৈরি হবে, তারা আপনাকে বুঝতে পারবে যে আপনি কেমন অনুভূতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। কারণ তারাও ঠিক এই সময়ের মধ্যে রয়েছে।
নতুন মায়েদের খোঁজ পেতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করতে পারেন। ফেসবুকে নতুন মায়েদের বিভিন্ন গ্রুপ থাকে। এ ছাড়া, আপনার শিশুকে যদি ডে-কেয়ারে দেন তখন একই বয়সী বাচ্চার মায়েদের সাথে দেখা হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। আপনার প্রতিবেশী বা পরিচিতদের মধ্যে যারা নতুন মা হয়েছে তাদের সাথেও কথা বলতে পারেন। তাহলে আপনার সময়টা ভালো কাটবে।
- প্রসব পরবর্তী অ্যাপয়েন্টমেন্টে যান
ডেলিভারির পরে আপনার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করুন। এতে আপনার উদ্বেগ বা চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কে কথা বলার একটা জায়গা তৈরি হবে। আপনি শারীরিক বা মানসিকভাবে কোনো সমস্যা বোধ করলে সেগুলো সমাধানের উপায় খুঁজে পাবেন।
৪র্থ ত্রৈমাসিক কখন শেষ হয়
৪র্থ ত্রিমাসিক প্রসবের দিন থেকে ৩ মাসের কাছাকাছি সময়ে শেষ হয়। তবে এরপর আপনি গর্ভাবস্থার আগে যেমন দেখতে ছিলেন বা যেমন অনুভব করতেন আবার তেমন হয়ে যাবেন কিংবা দিনরাত ২৪ ঘণ্টা শিশুর যত্ন নেওয়া বন্ধ হয়ে এমনটা নাও হতে পারে।
এখন আপনার জীবনের সাথে একটা নতুন জীবন জড়িয়ে আছে। তার সাথে সামঞ্জস্য করেই আপনাকে চলতে হবে— সেটা প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় বা যেকোনো সময়েই হোক না কেন। ধীরে ধীরে পরিবর্তন আসবে। সম্ভবত প্রথম বছর বা তারপরে পরিবর্তন আসতে থাকবে।
সত্যি কথা বলতে, শিশুর জন্মের আগের সময়গুলো আপনি যেভাবে কাটাতেন ঠিক সেই জীবনটি আপনি আর কখনো ফিরে পাবেন না। একবার বাবা-মা হয়ে গেলে কেউই আর আগের মতো জীবন কাটাতে পারেন না।
কিন্তু সময়ের সাথে সাথে আপনার পুরোনো দিনগুলো অনেক মিস করবেন। তবে শিশুর বয়স ৩ মাস হয়ে যাওয়ার পর আপনার শারীরিক এবং মানসিক কষ্ট কিছুটা কমে যাবে। দিনগুলো শুরুর দিকের মতো এত কঠিন মনে হবে না। আপনার শিশুও আপনার সাথে খেলাধুলা করবে এবং সময়টা আরও মজাদার হবে।
সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এই মাতৃত্বের জার্নিটার মধ্য দিয়ে আপনি অনেক কিছু শিখবেন এবং আত্মবিশ্বাস অর্জন করবেন যা থেকে ধীরে ধীরে আপনার প্যারেন্টিং স্কিল গড়ে উঠবে।
এ লেখাটি আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব পিডিয়াট্রিকস (AAP) এর গাইডলাইনের উপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছে।
তাদের ওয়েবসাইট লিংক: https://www.aap.org