এ আর্টিকেলে যা থাকছে
- নবজাতক থেকে ১ বছর বয়সী শিশুর পানিশূন্যতা
- বাচ্চার পানিশূন্যতার লক্ষণ (০-১২ মাস)
- ০-১২ মাস বয়সে কতটুকু পানি বা তরল দরকার?
- বাচ্চার পানিশূন্যতার চিকিৎসা (০-১২ মাস)
- বাচ্চার পানিশূন্যতা না হওয়ার জন্য কী করবো
- অসুস্থ অবস্থায় পানিশূন্যতা থেকে বাঁচানোর উপায়
- ১২ মাস+ বাচ্চার পানিশূন্যতা
- বাচ্চার পানিশূন্যতার লক্ষণ (১২ মাস+)
- বাচ্চার পানিশূন্যতা রোধের উপায় (১২ মাস+)
- পেটের অসুখ থেকে পানিশূন্যতা হলে তার চিকিৎসা(১২ মাস+)
- কখন হাসপাতালে যেতে হবে (১২ মাস+)
প্রচণ্ড গরমে বাচ্চার পানিশূন্যতা বেশ সাধারণ ঘটনা হলেও বাচ্চাদের বেলায় এটি সাংঘাতিক হয়ে উঠতে পারে। যেহেতু বাচ্চারা পিপাসা বুঝে পানি খাওয়ার কথা বলতে পারে না, তাই গরমে প্রতিটি বাবা মায়ের খেয়াল রাখা দরকার বাচ্চার শরীরে পানির অভাব হচ্ছে কিনা।
এ লেখাটি দুই বয়সের বাচ্চার জন্য আলাদা করে লেখা।
প্রথম ভাগে থাকছে ০-১২ মাস বয়সী বাচ্চা যাদের মূল খাবার বুকের দুধ বা ফরমুলা তাদের শরীরে পানিশূন্যতার লক্ষণ ও করণীয়।
দ্বিতীয় ভাগে ১২ মাস+ বাচ্চা, যাদেরকে ইংরেজিতে বলে টডলার, যাদের মূল খাবার সলিড খাবার, তাদের শরীরে পানিশূন্যতার লক্ষণ ও করণীয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
নবজাতক থেকে ১ বছরের কম বয়সী বাচ্চার পানিশূন্যতা
ছোট বাচ্চার ছোট শরীর বেশি পানি জমা করে রাখতে পারেনা, এজন্য তাদের শরীরে পানিশূন্যতাও হয় খুব সহজেই।
নবজাতকের প্রতিদিনের স্বাভাবিক কাজ হলো ঘুমানো, খাওয়া এবং পায়খানা করা।এসব কাজ ঠিকমতো করলেই বোঝা যায় বাচ্চা সুস্থ আছে। টডলারদের তুলনায়, ১ বছরের কম বয়সী শিশুর পেট খুবই ছোট থাকে।সেই ছোট পেটে তারা বেশি পানি জমা করে রাখতে পারেনা।
সেই সাথে মনে রাখতে হবে এ বয়সী বাচ্চার খাবার হজমও হয় তাড়াতাড়ি, ঠিক এ কারণেই তাদেরকে বারবার খাবার (বুকের দুধ বা ফরমুলা) খাওয়াতে হবে বা পান করাতে হবে।
১ বছরের কম বয়সী বাচ্চার পানিশূন্যতার লক্ষণ
যেসব বিশেষ পরিস্থিতিতে খেয়াল করে দেখতে হবে যে বাচ্চার মধ্যে পানিশূন্যতার লক্ষণ আছে কিনা–
- বাচ্চা যদি বমি করে (মুখ থেকে সামান্য কিছু দুধ ফেলে দেয়া বা স্পিট আউট না,বেশি পরিমাণে বমি)
- ডায়রিয়া হলে,
- গরমে বাচ্চাকে নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে বাইরে থাকলে
- ঘরেই তীব্র গরম থাকলে
- পানিশূন্যতার এসব লক্ষণের একটিও যদি বাচ্চার মধ্যে দেখা যায় তাহলে খুব দ্রুত ডাক্তারকে জানাতে হবে-
১. প্রস্রাব কম হওয়া ২/৩ ঘণ্টার মধ্যে একবারও যদি বাচ্চা প্রস্রাব না করে, তার মানে বাচ্চার শরীরে পানিশূন্যতা তৈরি হয়েছে। ২৪ ঘন্টার মধ্যে অন্তত ছয়বার প্রস্রাব না করাকে পানিশূন্যতার লক্ষণ বলে মনে করা হয়।
২. প্রস্রাবের রঙ প্রস্রাব যদি গাঢ় হলুদ এবং ঘন হয়।
৩. শুস্ক ঠোঁট শুস্ক, ফাটা ঠোঁট শুস্ক মিউকাস মেমব্রেনের লক্ষণ
৪. অশ্রুহীন কান্না বাচ্চা কান্না করলেও চোখে পানি না আসা পানিশূন্যতার লক্ষণ
৫. শুস্ক ত্বক বাচ্চার ত্বক সাধারণত চাপ দিলে বাউন্স করে আবার আগের মত হয়ে যায়। বাচ্চার পানিশূন্যতা হলে ত্বক শুস্ক এবং নরম হয়ে যাবে। চাপ দিলে আগের মত দ্রুত বাউন্স করবে না।
৬. চোখ বসে যাওয়া
৭. অনাগ্রহ বা অনীহা দুর্বল ভাব, হাত পা কম ছোঁড়া, কোনকিছুতে আগ্রহী না হওয়া পানিশূন্যতার কারণে হতে পারে
৮. মাথার নরম অংশ দেবে যাওয়া পানিশূন্যতার কারণে মাথার তালুতে যে নরম অংশ থাকে তা দেবে যাওয়া বা অতিরিক্ত নিচু হয়ে যেতে পারে যেটা সহজেই দেখা যায়।
ডিহাইড্রেশন খুব বেশি হলে রিহাইড্রেশন বা শরীরে পানি ঢোকানোর ব্যবস্থা করতে হয়। এবং এটা হাসপাতাল ছাড়া সম্ভব নয়। নিচের ৫টি লক্ষণ দেখলে বাচ্চাকে দ্রুত হাসপাতালে নিন।
- ১. ছয় ঘন্টার বেশি সময় ধরে যদি বাচ্চা প্রস্রাব না করে
- ২. যদি বাচ্চা অসম্ভব বিরক্ত করে। কাঁদে, জ্বালাতন করে, কিছুতেই শান্ত না হয়।
- ৩. যদি অতিরিক্ত বেশি ঘুমায়
- ৪. যদি বাচ্চার হাত-পা বেশি ঠাণ্ডা হয়ে থাকে এবং/অথবা হাত পায়ে ছোপ ছোপ লাল/কালো দাগ দেখা যায়
- ৫. চোখ, মুখ, ঠোঁট খুব বেশি শুস্ক থাকে
এক বছরের কম বয়সী শিশুর কতটুকু পানি বা তরল দরকার
যেসব বাচ্চা সলিড খাবার শুরু করেনি, তাদের জন্য বুকের দুধ বা ফরমুলা (যে যেটা খায়) তার বাইরে কোনো ধরনের অতিরিক্ত পানি দরকার হয় না।
কারণ সলিড খাবার শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত সমস্ত তরল এবং পুষ্টি বুকের দুধ বা ফরমুলা থেকেই পেয়ে থাকে।
তাই সলিড না খেলে তাকে পানি খাওয়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই।কিন্তু যদি প্রচণ্ড গরমে বাচ্চা শরীরের অনেকটা পানি হারিয়ে ফেলে বা ডায়রিয়া হয় কিংবা বারবার বমি করে তখন ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে বাচ্চাকে পানি খাওয়ানো যায়।
বাচ্চা সলিড খাবার শুরুর পর বিভিন্ন খাবার থেকে ধীরে ধীরে তরল এবং পানি পাওয়া শুরু করে। যেমন খাওয়ার সময় অল্প অল্প করে চুমুক দিয়ে পানি খেতে পারবে। ফলমূল থেকে রস পাবে, শাকসবজি থেকে পানি পাবে।
সলিড শুরুর পর ধীরে ধীরে বাচ্চা বুকের দুধ বা ফরমুলা খাওয়া কমিয়ে দেয়।তাই এই সময়ে খেয়াল রাখতে হবে তার দৈনিক তরল বা পানি খাওয়ার পরিমাণ যেন কমে না যায়।এর জন্য বাচ্চাকে যেমন খালি পানি খাওয়াতে হবে, সেই সাথে ফলমূল, শাক সবজিও খাওয়াতে হবে যাতে সেসবের রস থেকে পানির অভাব পূরণ হয়।
গরম বেড়ে গেলে পানি খাওয়ানোর পরিমাণও বাড়াতে হবে।তাই গরম বাড়লে বেশি বেশি দুধ ও পানি খাওয়াতে হবে।গরমে বাচ্চাকে নিয়ে বাইরে যাবার সময় অবশ্যই সাথে যথেষ্ট পানি নিয়ে বের হতে হবে।
১ বছরের কম বয়সী বাচ্চার পানিশূন্যতার চিকিৎসা
বুকের দুধ বা ফরমুলা খাওয়া বাচ্চা যদি বমি করে বা ডায়রিয়া হয়, তারপরও বুকের দুধ বা ফরমুলা খাওয়ানো বন্ধ করা যাবে না। প্রতিদিন যে পরিমাণ খায় অন্তত সেটুকু খাওয়াতে হবে।যদি সেটুকু বমি করে ফেলে না দিয়ে পেটে হজম করতে পারে, তবে সম্ভব হলে প্রতিদিনের তুলনায় একটু বেশি খাওয়াতে হবে।
বাচ্চা বমি করার এক ঘন্টার মধ্যে কিছু খাওয়ানো যাবে না।কিন্তু এরপর পরবর্তী এক ঘন্টা ১০ মিনিট পর পর ১ চামচ করে তরল খাবার খাওয়াতে হবে।যদি খাবার বমি না করে হজম করতে পারে তবে খাবারের পরিমাণ বাড়ানো যায়।
যেসব বাচ্চারা সলিড খাওয়া শুরু করেছে, মৃদু পানিশূন্যতায় তাদের জন্য পানিই যথেষ্ট।
শরীর থেকে যদি বেশি পরিমাণ পানি বের হয়ে যায়,বিশেষত যদি বমি আর ডায়রিয়া একসাথে হয় তখন ডাক্তাররা বড় শিশুদের জন্য তৈরি করা লিকুইড পেডিয়ালাইট (আমেরিকাতে), রাইস স্যালাইন (বাংলাদেশে) খেতে বলে। এ ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ পানীয় শরীরে সোডিয়াম আর পটাশিয়াম এর চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করে।এসব কিছুর পরিবর্তে অল্প অল্প করে পানি খাওয়ালেও অভাব পূরণ হয়।
প্রচণ্ড গরমে বাচ্চার পানিশূন্যতা না হওয়ার জন্য কী করবো
বাইরে গরম থাকা অবস্থায় বাচ্চাদের পানিশূন্যতা থেকে বাঁচানোর জন্য সবার আগে খেয়াল রাখতে হবে বাচ্চা যেন প্রচণ্ড রোদের মধ্যে না থাকে কিংবা সরাসরি সূর্যের আলো যেন গায়ে না লাগে (এভাবে বাচ্চার নরম চামড়াও সুরক্ষিত রাখা যায়),হালকা আর পাতলা জামাকাপড় পরাতে হবে,যার ভিতর দিয়ে বাতাস চলাচল করতে পারে।
রাতে ঘুমানোর সময় কোনোভাবেই কাঁথা দিয়ে ঢেকে রাখা যাবে না।এই বিষয়ে খেয়াল রাখা জরুরি কারণ শরীরে বেশি তাপ বেড়ে গেলে বাচ্চা মারাও যেতে পারে।
বাচ্চা অসুস্থ থাকা অবস্থায় পানিশূন্যতা থেকে বাঁচানোর উপায়
বাচ্চারা অসুস্থ থাকা অবস্থায় পানিশূন্যতা হয় সবচেয়ে বেশি।বমি হলে,ডায়রিয়া হলে কিংবা গলা বা মুখ ব্যথার কারণে খেতে না পারলে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি বের হয়ে যায়।
এসব লক্ষণ অবশ্য ভাইরাসের কারণে দেখা যায়।আর যত ব্যবস্থাই নেয়া হোক না কেন বাচ্চাদের মাঝে মাঝে একটু জ্বর বা ফ্লু(ভাইরাসের কারণে হওয়া জ্বর, কাশি,গলা ব্যথা) হবেই, এটা পুরোপুরি ঠেকানো যায় না।তবে বাবা মায়ের উচিত সবসময় হাত ধুয়ে রাখা।সেই সাথে যারা বাচ্চার দেখাশোনা করেন, বা কোলে নেন, সংস্পর্শে আসেন তাদেরও বাইরে থেকে এসে হাতমুখ ধুয়ে বাচ্চার কাছে আসা উচিত।
শিশুর মধ্যে যদি পানিশূন্যতার লক্ষণ দেখা যায়, যে কারণেই দেখা যাক না কেন যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারকে জানাতে হবে। যাতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা বাচ্চা তাড়াতাড়ি পেতে পারে।ডাক্তারের কাছে সঠিক নির্দেশনা পেলে শিশুর পানিশূন্যতা দ্রুত সেরে যাবে।
১২ মাস+ বাচ্চার পানিশূন্যতা কেন হয়
১ বছরের বেশি যেসব বাচ্চার বয়স তাদেরকে ইংরেজিতে এক কথায় টডলার বলা হয়। টডলাররা হাঁটতে পারে, দৌড়াতে পারে এবং সারাক্ষণই কোন না কোনো শারীরিক কাজ করতে থাকে যার ফলে তাদের শরীরে খুব সহজে পানিশূন্যতা হতে পারে।
এ বয়সের বাচ্চাদের মূল খাবার সলিড খাবার। সলিড খাবার হজমের জন্য যেমন পানি দরকার, তেমন সারাদিন ছোটাছুটি করার জন্যও তাদের শরীরে পানির দরকার হয়। আর উত্তেজনার কারণে, ছোটাছুটি-লাফালাফিতে ব্যস্ত থাকার কারণে অনেক সময় তৃষ্ণা পেলেও এ বয়সের বাচ্চারা তা বুঝতে পারে না। তাই সহজেই বাচ্চার পানিশূন্যতা দেখা দেয়।
যত আউন্স বা যত গ্লাস পানি বাচ্চারা সারাদিনে খায়,সেই পরিমাণ পানিতে পানির অভাব পূরণ হয়েছে কিনা, তা বলা সম্ভব না। কারণ পানি খেতে গিয়ে তারা অনেকটাই ফেলে দেয়,তাই সঠিক হিসেব পাওয়া যায় না। তাই পানির হিসেব না করে বারবার বাচ্চাকে পানি খাওয়াতে হবে।
খেয়াল রাখতে হবে কিছুক্ষণ পরপর পানি খাওয়ানো হচ্ছে কিনা।বাচ্চা যদি বার বার প্রস্রাব করে আর প্রস্রাবের রং সাদা থাকে তাহলে বুঝতে হবে শরীরে পর্যাপ্ত পানি আছে।শরীরে পানি থাকলে পায়খানাও করবে ঠিকমতো।
বাচ্চা যদি অসুস্থ থাকে তাহলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে পানিশূন্যতা হতে পারে (বমি হওয়া বা ডায়রিয়া হওয়ার কারণে বাচ্চাদের দ্রুত পানিশূন্যতা হয়),এছাড়াও গরমের দিনে বেশি খেলাধুলা করলেও পানিশূন্যতা হয়।
১২ মাস+ বাচ্চার পানিশূন্যতার লক্ষণ
১. প্রস্রাব কম হওয়া ৪/৫ ঘণ্টায় একবারও প্রস্রাব না করলে, সারাদিনে কমপক্ষে ৬ বার প্রস্রাব না করলে বাচ্চার পানিশূন্যতা হয়েছে বলে মনে করা হয়। ৭ ঘণ্টার মধ্যে একবারও প্রস্রাব না করলে তা তীব্র পানিশূন্যতার লক্ষণ।
২. প্রস্রাবের রঙ প্রস্রাব যদি গাঢ় হলুদ এবং ঘন হয়।
৩. শুস্ক ঠোঁট শুকনো, ফাটা ঠোঁট, শুস্ক চোখ এবং মুখ শুস্ক মিউকাস মেমব্রেনের লক্ষণ
৪. দুর্বলভাব বা কম খেলাধুলা করা বাচ্চা অন্যান্য সময়ের তুলনায় কম লাফালাফি করলে, বা কম খেলাধুলা করলে হতে পারে ওর শরীরে পানির অভাব হয়েছে।
৫.. অশ্রুহীন কান্না বাচ্চা কান্না করলেও চোখে পানি না আসা পানিশূন্যতার লক্ষণ
৬. পোড়া/লাল চামড়া পানিশূন্যতার কারণে বাচ্চার ত্বকে লাল বা গোলাপি ছোপ দেখা যায়
৭. পাতলা পায়খানা যদি ডায়রিয়ার কারনে পানিশূন্যতা হয়
৮. কম পায়খানা করা যদি বার বার বমি হয় তখন পায়খানা কম হয়, কিন্তু বমির কারণে পানিশূন্যতা দেখা দেয়।
যদি সাংঘাতিক রকমের পানিশূন্যতা দেখা দেয় তাহলে
- প্রস্রাব করা একদমই কমে যায়(সারাদিনে এক বা দুইবার)
- বাচ্চা অস্থির হয়ে যায় বা ছটফট করে
- চোখ ভেতরের দিকে ঢুকে যায় বা বসে যায়
- চামড়া কুঁচকে যায়
- হাত পা ঠাণ্ডা ও ফ্যাকাশে হয়ে আসে।
১ বছর+ বাচ্চার পানিশূন্যতা থেকে রক্ষা পেতে করণীয়
বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ডিহাইড্রেশন সবসময় ঠেকানো যায় না। বিশেষ করে পাকস্থলীতে কোনো সমস্যা হলে বাচ্চা যখন বার বার বমি করে তখন পানিশূন্যতা হওয়ার আশঙ্কা বেড়েই যায়।
কিন্তু কিছু কিছু সময় আছে যখন বাচ্চাকে পানি খাইয়ে পানির অভাব পূরণ করে রাখতে হয় যেমন বাচ্চা যখন বাইরে খেলাধুলা করে কিংবা দৌড়াদৌড়ি করে।
যেভাবে বাচ্চার শরীরে পানির অভাব পূরণ করতে হবে–
১. পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খাওয়াতে হবে।আমেরিকান শিশু অ্যাকাডেমির মতে, ১ থেকে ৩ বছর বয়সী শিশুর দৈনিক অন্তত চার কাপ পরিমাণ পানি এবং অন্যান্য তরল খেতে হবে।চার বছর বয়সে দিনে অন্তত ৫ কাপ পানি খাওয়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়।খাবার খাওয়ানোর সময় অল্প অল্প পানি খাওয়ালে কিংবা গরমের দিনে বাইরে যাওয়ার সময় বোতলে করে পানি নিয়ে গিয়ে খেলে পানির অভাব অনেকটাই পূরণ হয়ে যায়।গরম যখন বেশি থাকে তখন এর সাথে বাড়তি দুই থেকে তিন কাপ পানি খাওয়াতে হবে।
২. জ্যুস বেশি পরিমাণে খাওয়ানো যাবে না: জ্যুস বা ফলের রসে অতিরিক্ত চিনি থাকে। একটা ফলে যে পরিমাণ পুষ্টি উপাদান থাকে তা রস বা জ্যুসের মধ্যে থাকে না।তাই জ্যুস খাওয়াতে হবে পরিমাণ মতো।
১ থেকে ৬ বছর বয়সী শিশুদের ৪ থেকে ৬ আউন্স পর্যন্ত জ্যুস খাওয়ানো যাবে।অতিরিক্ত জ্যুস খাওয়ালে কিছু সমস্যা হতে পারে– ডায়পার র্যাশ,দাঁতের ক্ষয়,ওজন বেড়ে যাওয়া এবং ডায়রিয়া। তাই এসব সমস্যা এড়ানোর জন্য প্রতিদিন জ্যুস না খাওয়ানোই ভালো।
শিশুর খাবারের মধ্যেও নিয়মিত জ্যুস রাখা উচিত না।যদি বাচ্চা জ্যুস খায় তবে সেটা যেন প্রাকৃতিক বা ঘরে তৈরি।তাতে কোনো কেমিক্যাল বা অন্য কিছু মেশানো থাকবে না।শুধুমাত্র ফলের রস দিয়েই তৈরি করতে হবে আর চিনির ভাগ কমানোর জন্য পানি মেশাতে হবে (অর্ধেক জ্যুস,অর্ধেক পানি)।
আমি আজ পর্যন্ত এমিলকে কোনো জ্যুস খাওয়াইনি। মাঝে মাঝে কমলা না চিবিয়ে ফেলে দিলে সেটার রস চিপে দিয়েছি। দোকানের জ্যুস কখনো দেইনি।
৩. বাইরে না যাওয়া যখন সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা থাকে তখন বাইরে যাওয়া যাবে না।সূর্য যখন একদম মাথার ওপরে থাকে,তখন তাপমাত্রা থাকে সবচেয়ে বেশি।আর ঠিক এই সময়ে শিশুকে বাইরে খেলতে নামতে দেয়া যাবে না কিংবা অন্য কোনো কাজে বাইরে নিয়ে যাওয়া যাবে না,বা বাইরে নামলেও কম কম নামতে হবে।সময়ের আর তাপমাত্রার বিচার বিবেচনা করে বাইরে নামতে দিতে হবে। যেমন পার্কে,সুইমিং পুলে কিংবা বাড়ির পেছনে সকাল ১০ টার আগে কিংবা বিকেল ৪ টার পরে খেলতে যেতে পারবে। গরম যখন খুব বেশি বেড়ে যায় তখন ছায়ার নিচে থাকতে হবে,কিংবা সমুদ্র সৈকতে বা সুইমিং পুলে থাকলে গোসল করা যেতে পারে অথবা ঘরের মধ্যে থাকাও ভালো।প্রচণ্ড গরমের সময়ে দুপুরে বাইরে না গিয়ে খাওয়া আর ঘুমানোই ভালো।
৪. বাচ্চাকে সঠিকভাবে পোশাক পরাতে হবে।প্রচণ্ড গরমের সময় একদম ঢোলাঢালা, পাতলা সুতির কাপড় পরাতে হবে।মাথায় দিতে হবে চওড়া টুপি যাতে মাথার আশপাশে ছায়া পাওয়া যায়।
৫. বেশি পানি আছে এরকম খাবার খাওয়াতে হবে।এক্ষেত্রে ফালি করা তরমুজ/বাঙ্গি খুবই কাজে দেয় কারণ এতে প্রচুর পানি থাকে।স্যুপও শিশুর পানির চাহিদা পূরণ করে আর সতেজ রাখে।গ্রীষ্মের ফল ও সবজি বাচ্চাকে খেতে দিন।
পেটের অসুখ থেকে পানিশূন্যতা হলে তার চিকিৎসা
ডায়রিয়া, আমাশয় বা পেটের অসুখ থেকে বাচ্চাদের খুব সহজেই পানিশূন্যতা হয়।বার বার বমি হলে কিংবা ডায়রিয়া হলে শিশুর শরীর থেকে প্রয়োজনীয় পানি বের হয়ে যায়। বমি যদি অতিরিক্ত পরিমাণে হয় তবে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম, পটাশিয়াম এবং ক্লোরাইড বের হয়ে যায়। এসব উপাদান শরীরে তরলের ভারসাম্য ঠিক রাখে বা শরীরে পানির পরিমাণ ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
পানিশূন্যতার অধিকাংশ সমস্যা ঘরেই সমাধান করা যায়।কিন্তু শিশু যদি পানি বা তরল খাবার ঠিকমতো খেতে না পারে তাহলে ঘরে তা সম্ভব না।বাচ্চা যদি অসুস্থ থাকে আর শরীরে পানি ধরে রাখতে না পারে, অর্থাৎ পানি বা তরল জাতীয় কিছু খেলেই বমি হয়ে যায় তবে এর জন্য কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে যেমন চুমুক দিয়ে বারবার অল্প পরিমাণে পানি খাওয়া,পেডিয়ালাইট(বাচ্চাদের জন্য তৈরি ইলেক্ট্রোলাইট) খাওয়ানো,অথবা ইলেক্ট্রোলাইটের চাহিদা পূরণের জন্য অন্যান্য কিছু পানীয় বারবার খাওয়ানো।ওরস্যালাইন দেবার আগে ডাক্তারের সাথে কথা বলা উচিত।
বাচ্চা বমি করার পর এক ঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে। এক ঘণ্টার মধ্যে কিছু না খাওয়ানোই ভালো। এরপর দশ মিনিট পরপর এক ঘন্টা যাবত এক চামচ করে পেডিয়ালাইট বা পানি খাওয়াতে হবে।যদি এই পানি বাচ্চা ভিতরে ধরে রাখতে পারে তবে আস্তে আস্তে পানি খাওয়ানোর পরিমাণ বাড়াতে হবে।
ডিহাইড্রেশনের যেসব বিপদজনক লক্ষণ দেখলে দ্রুত বাচ্চাকে হাসপাতালে নিবেন–
১. ২৪ ঘন্টার বেশি সময় ধরে বমি থাকলে
২. পায়খানার সাথে রক্ত লেগে থাকলে, পায়খানা সবুজ, সবুজাভ হলে অথবা পায়খানার সাথে কফির দানার মত বিচি বিচি বাদামী কিছু দেখা গেলে
৩. বাচ্চা একেবারেই কোনো তরল বা পানি খেতে না চাইলে
৪. গ্যাসের কারণে কিংবা বেশি পানি খাওয়ার কারণে পেট বড় হয়ে যাওয়ায় শিশুর অস্বস্তি হলে
সারাদিন ধরে ডায়রিয়া বা বমি হতে থাকলে সেই অবস্থায় পরবর্তী ১২ থেকে ২৪ ঘন্টা যাবত ইলেকট্রোলাইট জাতীয় তরল খাওয়াতে হবে।
বাচ্চা আস্তে আস্তে ধীরে ধীরে সুস্থ হতে থাকলে প্রতিদিনের স্বাভাবিক খাবারগুলো আবার খাওয়ানো শুরু করতে হবে।
ডায়রিয়ায় যেসব খাবার বাচ্চাকে সাহায্য করে– জাউ ভাত, কাঁচকলা, আপেল সস, নাশপাতি, কলা, সল্টিন ক্র্যাকার্স নামের পাতলা বিস্কিট। এসব খাবার খাওয়ানোর কারণ হলো যাতে আগের স্বাভাবিক খাবারদাবার আবার শুরু করা যায়।
বাচ্চার যদি ডায়রিয়া হয় তবে ডাক্তার কয়েকদিন পর্যন্ত দুধ এবং দুধ থেকে তৈরি খাবার খাওয়াতে নিষেধ করে।তবে দুধ থেকে তৈরি টকদই ডায়রিয়াতেও খেতে বলে।
আরো একটা বিষয় হলো, যে কোনো খাবার যদি বাচ্চা হজম করতে পারে তবে সেটাই খাওয়ানো উচিত,বিশেষ কোনো খাবারের তালিকা করে খাওয়ানোর দরকার নেই। কারণ ডায়রিয়ার মত পেটের অসুখের সময় পাকস্থলী কিছু হজম করতে চায় না। বাচ্চারা এসময় খাওয়াদাওয়া একেবারেই বন্ধ করে দেয়। একদম কিছু না খাওয়ার চেয়ে যদি প্রিয় (হোক দুধের তৈরি বা সাইট্রাস ফল) কিছু খায়, তা ভালো।
পানিশূন্যতা হলে কখন বাচ্চাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে
এ বয়সী বাচ্চার অল্প বা মাঝারি পানিশূন্যতা ঘরে বসেই সারিয়ে তোলা যায়।এজন্য ডাক্তারের পরামর্শে তরল খাবার ও পানি খাওয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে।
কিন্তু বাচ্চার যদি সাংঘাতিক পানিশূন্যতা হয়, ডাক্তারের কাছে নিয়ে IV (শিরার মাধ্যমে ওষুধ, খাদ্য ইত্যাদি দেয়া) এর মাধ্যমে চিকিৎসা দিতে হবে।
কোন লক্ষণ দেখলে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে–
১. হাত এবং পা অস্বাভাবিক ঠাণ্ডা থাকা
২. চামড়া কুঁচকে যাওয়া
৩. অতিরিক্ত অস্থিরতা, কান্না করা বা ছটফট করা
৪. অতিরিক্ত ঘুমানো বা দুর্বলতা বা আলসেমি (খেলাধুলা না করে শুয়ে থাকা)
৫. ৭ ঘণ্টায় একবারও প্রস্রাব না করা।
৬. মাথার তালুর নরম অংশ বসে যাওয়া বা দেবে যাওয়া
অতিরিক্ত গরম আবহাওয়ায়, অথবা পেটের সমস্যায় বলা কঠিন যে বাচ্চা ঠিকমতো পানি খাচ্ছে কিনা।আগে থেকেই বেশি বেশি পানি খাওয়ালে পানিশূন্যতা হওয়ার আগেই তা ঠেকানো যায়।অবশ্য সেই সাথে খেয়াল রাখতে হবে যে পানিশূন্যতার কোনো লক্ষণ আছে কিনা।
রেফারেন্স:
- American Academy of Pediatrics, Signs of Dehydration in Infants & Children
- KidsHealth From Nemours, Dehydration
- American Academy of Pediatrics, Choose Water for Healthy Hydration
- American Academy of Pediatrics, Where We Stand: Fruit Juice for Children
- American Academy of Pediatrics, Treating Dehydration with Electrolyte Solution
You articles are very helpful….. I’ve no word to thank you….. Sometimes I don’t need to search but I found desired your post in my news feed.
Thanks a lot apu…. Give my cordial love to innocent Emil baby.
Didi amr mayer ai 13 months cholce o kv km prosab krce … Aj jmn skl 8 ti krece akhn bikl 5 ta 28 hlo akhno prosahb krce na