বাচ্চার শরীর ম্যাসাজ করা বা মালিশ করা কি ঠিক? অনেক বাবা-মায়ের মনে প্রশ্ন জাগে বাচ্চাকে মালিশ করার উপকারিতা কী। কিভাবে ম্যাসাজ করলে সেটা সত্যিই বাচ্চার উপকারে আসবে এবং কোন সতর্কতাগুলি মাথায় রাখতে হবে তা নিয়েই এ আর্টিকেল।
শিশুর শরীর ম্যাসাজ বা মালিশের সুবিধা কী কী
আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে মালিশ করলে বাচ্চার কী উপকার হবে? মালিশ করলে শিশুর পেটের সমস্যা কমবে, দাঁতের ব্যথা কমাতে সাহায্য করবে, যখন সে অস্থির থাকবে তখন তাকে শান্ত করবে এবং তাকে ঘুমাতে সাহায্য করবে– এমনকিছু নিশ্চিতভাবে বলার মতো পর্যাপ্ত গবেষণা এখন পর্যন্ত নেই।
কিন্তু শিশুর শরীর মালিশের উপকারিতা শুধু এটুকু দিয়ে পরিমাপ করা যাবে না। আপনার হাতের স্পর্শ নবজাতকের সাথে আপনার বন্ধন তৈরি করে। তাছাড়া খেয়াল করে দেখবেন বাচ্চাকে ম্যাসাজ করলে আপনার নিজের মুডও অনেক ভালো থাকবে এবং মা/বাবা হিসেবে নিজেকে অনেক সন্তুষ্ট মনে হবে।
যেদিন শিশুকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে আসবেন সেদিনই আপনি মৃদুভাবে ম্যাসাজ বা মালিশগুলো শুরু করতে পারেন। আপনার সঙ্গী বা অন্যান্য নিকট আত্মীয়রাও চাইলে শিশুকে মালিশ করতে পারে, এতে করে তাদের সাথেও শিশুর বন্ধন দৃঢ় হওয়ার একটি সুযোগ তৈরি হয়। অনেক সময় দেখা যায় বাবারা ব্যস্ততার কারণে হয়তো শিশুকে পর্যাপ্ত সময় দিতে পারে না। তাই বাবা যখন ম্যাসাজ করে তখন শিশুর সাথে বন্ডিংটা খুব ভালো হয়।
শিশুকে কিভাবে ম্যাসাজ বা মালিশ করবেন?
কিভাবে শিশুকে সঠিক উপায়ে নিরাপদে ম্যাসাজ বা মালিশ করবেন সে সম্পর্কে কিছু ধাপে ধাপে নির্দেশাবলী এখানে দেয়া হলো –
- পা ও পা এর পাতা। এক হাত দিয়ে শিশুর গোড়ালি ধরুন, অন্য হাত দিয়ে উড়ুর উপর থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে গোড়ালি পর্যন্ত হাত দিয়ে চেপে চেপে মালিশ করুন।যেভাবে গরুর দুধ বের করা হয় অনেকটা তেমনভাবে। আবার বিপরীত দিক থেকে শুরু করুন, অর্থাৎ গোড়ালি থেকে শুরু করে উরুর দিকে যাবেন। এরপরে বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে পায়ের পাতা ঘষুন।
একইভাবে অন্য পায়ে মালিশ করুন। হাত এবং বাহুতেও এই মালিশ করতে পারেন।
ভিডিওতে দেখে নিতে পারেন!
- মাথা। শিশুর মাথার দুই পাশে আপনার হাত দিয়ে মালিশ করা শুরু করুন। এরপর আপনার হাত তার শরীরে দুইপাশ দিয়ে মাথা থেকে পায়ের আঙ্গুল পর্যন্ত চালান। এরপর আঙুলের ডগা দিয়ে শিশুর মাথায় গোল গোল করে বৃত্তের মতো ঘুরান।
- মুখ। শিশুর কপালে আপনার হাত এমনভাবে রাখুন যেন দেখে মনে হয় আপনি প্রার্থনা করছেন, তারপর আলতো করে মুখের মাঝে থেকে বাইরের দিকে মালিশ করুন। এরপর শিশুর মুখে হাসি আঁকতে পারেন, বুড়ো আঙুল দিয়ে ঠোঁটের উপর দিয়ে এক গাল থেকে অন্য গালে ঘষা দিবেন, আবার একইভাবে নিচের ঠোঁটে করুন।
- বুক। শিশুর বুকের উপর আপনার হাত ভাঁজ করুন, তারপর পাশের দিকে ধাক্কা দিন, যেন দেখে মনে হয় আপনি একটি খোলা বইয়ের পৃষ্ঠাগুলোকে মসৃণ করছেন।
- পেট। আপনার আঙুলের সাহায্যে শিশুর পেটের নাভির নিচে ডিম্বাকৃতি আঁকুন। ঘড়ির কাঁটা অনুসরণ করে হাত ঘুরান এতে হজমশক্তি ভালো হয়। গ্যাসের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে এরপর পেটের একপাশ থেকে অন্য দিকে তীর্যক দিকে আঙুলের ডগা দিয়ে ‘হাঁটার মতো করে’ মালিশ করুন, যেন দেখে মনে হয় পেটের উপর ‘X’ আঁকছেন।
- পিঠ। তার পিঠের একপাশ থেকে অন্য পাশে এবং উপর থেকে নিচে, আবার নিচ থেকে উপরের দিকে মালিশ করুন।
শিশুর ম্যাসাজ বা মালিশের কিছু টিপস
নবজাতককে ম্যাসাজ বা মালিশ দেয়ার আগে কিছু বিষয় মাথায় রাখবেন –
- শিশুকে ম্যাসাজ বা মালিশ করা আপনার প্রতিদিনের রুটিনের একটি অংশ করুন। প্রতিদিন একই সময়ে মালিশ করবেন যেন সে বুঝে এই সময়টায় তাকে মালিশ দেওয়া হয় এবং উপভোগ করতে পারে।
- আপনি যদি ম্যাসাজ তেল ব্যবহার করেন, তাহলে এমন একটি বেছে নিন যেটা খাওয়া যায়, গন্ধহীন এবং ফল বা উদ্ভিজ্জ তেল। যদিও শিশুর শরীর মালিশ করার জন্য তেলের প্রয়োজন নেই, তবে মালিশের সময় আপনার হাতটা যদি পিচ্ছিল থাকে তাহলে মা ও শিশু উভয়ের জন্যই আনন্দদায়ক হবে। গরমের দিনে তেলের চেয়ে লোশনের ব্যবহারই ভালো।
- মালিশ করার সময় লক্ষ রাখবেন রুমটা যেন একটু উষ্ণ/গরম থাকে। বাচ্চাকে কাপড় ছাড়া রাখলে যেন আবার ঠান্ডা লেগে না যায়।
- মালিশ শুরু করার আগে শিশুর মুড খেয়াল করবেন। মেজাজ ভালো না থাকলে কেউ ম্যাসাজ করা পছন্দ করে না, আপনার শিশুর ক্ষেত্রেও তাই।
- মৃদুভাবে ম্যাসাজ করুন৷ খুব বেশি চাপ দিবেন না, এতে হিতে বিপরীত হবে।
- বাচ্চা একটু বড় হলেই আর শুয়ে থাকবে না। এটাই স্বাভাবিক। ওকে জোর করে শুইয়ে মালিশ দেয়ার কোনোই দরকার নেই। যখন মা/বাবা ও বাচ্চা একসাথে শুয়ে আছে, ধরুন ঘুমানোর আগে, বা বই পড়ার সময়, তখন বাচ্চা খুশি মনে চাইলে ম্যাসাজ করতে পারেন।
- বাচ্চা কান্না করে ওঠা মাত্র মালিশ বন্ধ করবেন। এর মানে হচ্ছে ওর কোনো অসুবিধা হচ্ছে বা ম্যাসাজটা ওর ভালো লাগছে না। অন্য কোনো চাহিদা– ক্ষুধা লেগেছে, গরম লাগছে বা খেলতে চায় কিনা খেয়াল করুন।
এ লেখাটি International Association of Infant Massage, FAQs for Parents এর গাইডলাইনের উপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছে।