শিশুর শরীরে পানির চাহিদা মেটাতে বুকের দুধ অথবা ফরমুলা দুধের পাশাপাশি পানিও কি খাওয়ানো উচিত? কোন বয়সে বাচ্চার কতটুকু পানি দরকার হয়? শিশুকে পানি খাওয়ানোর ব্যাপারে আপনার যা জানা দরকার তা বিস্তারিত আলোচনা করা হলো এই আর্টিকেলে।
পানির অপর নাম জীবন। কিন্তু এই পানিই বাচ্চার ক্ষতির কারণ হতে পারে যদি সময় হবার আগেই বাচ্চাকে পানি খাওয়ানো শুরু করেন। এবং যতটুকু দরকার তার চেয়ে বেশি পানি বাচ্চাকে খাওয়ানো হয়।
নবজাতক বাচ্চাকে পানি খাওয়ালে ক্ষতি কী
সাধারণত জন্মের পর থেকে প্রথম কয়েক মাস শিশুর আলাদা করে পানির প্রয়োজন পড়ে না। বাচ্চা সলিড খাবার খেতে শুরু করলে তখন অল্প অল্প পানি খাওয়ানো যেতে পারে। এর আগ পর্যন্ত শরীরে পানির চাহিদা মেটাতে বুকের দুধ বা ফরমুলা খাওয়াতে হবে।
সঠিক বয়সের আগেই শিশুকে পানি খাওয়ানো শুরু করলে যেসব সমস্যা হতে পারে–
- পুষ্টির অভাব: বাচ্চাকে পানি খাইয়ে পেট ভরিয়ে ফেললে বুকের দুধ বা ফরমুলা দুধে যে পুষ্টি উপাদান পেতো সেগুলো পায় না।
- ঠিকমতো ওজন বাড়ে না: ছোট বাচ্চাকে বুকের দুধ আর ফরমুলার পাশাপাশি নিয়মিত পানি খাওয়ালে ঠিকঠাক ওজন বাড়ার জন্য শরীরের যে ক্যালরি দরকার তা পায় না, তাই ওজনও ঠিকমতো বাড়ে না।
- বুকের দুধ কমে যায়: আপনি যদি শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর অভ্যাস থাকে, সেক্ষেত্রে বাচ্চাকে পানি খাওয়ালে বাচ্চা বুকের দুধ কম খায়। এতে করে বুকের দুধ তৈরি হওয়াও কমে যেতে পারে।
- ইলেক্ট্রোলাইটের ব্যালেন্স নষ্ট হয়ে যায়: বাচ্চাকে বেশি পানি খাওয়ালে বাচ্চার বিপদ হতে পারে।বেশি পানি খাওয়ার ফলে বাচ্চার রক্তের উপাদানের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। এর ফলে বাচ্চার খিঁচুনি হতে পারে।
কখন থেকে বাচ্চাকে পানি খাওয়ানো যাবে
একেক বাচ্চা একেক বয়সে সলিড খাবারের জন্য প্রস্তুত হয়। সব বাচ্চাই ৬ মাস বয়সের মধ্যে সলিড খাবার খাওয়া শুরু করে। আর সলিড খাবার হজমের জন্য অল্প পানি তখন থেকেই খাওয়াতে হয়।
শিশুকে পানি খাওয়ানো শুরু করার পর প্রথমদিকে সিপি কাপে অল্প অল্প করে খেতে দিন। প্রথমত, কাপ থেকে পানি খাওয়া একটা ভালো অভ্যাস। তাছাড়া কাপ থেকে খেলে শিশু বেশি পানি খেয়ে ফেলার আশংকাও থাকে না।
ফিলিপস অ্যাভেন্ট সিপি কাপের অ্যামাজন লিংক: https://a.co/d/aAAEP89
কিন্তু আপনার বাচ্চা যদি বোতল থেকেই খেতে চায়, তাহলে আপাতত বোতলেই খেতে দিন। তবে, সে কতটুকু পানি খাচ্ছে এই বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে, প্রয়োজনে পরিমাণ নিয়ন্ত্রণও করতে হবে।
বাচ্চাকে কতটুকু পানি খাওয়াবো
৬ মাস বয়সের পর থেকে বাচ্চাদের প্রতিদিন ৪ থেকে ৬ আউন্স (অর্ধেক কাপের চেয়ে একটু বেশি) পানি প্রয়োজন। কিছু বাচ্চা আরেকটু বেশি খেতে চাইতে পারে, তবে যেসব বাচ্চা নিয়মিত বুকের দুধ খায় তাদের এর বেশি পানি দরকার হয় না। আর পানি খাওয়ানো শুরু করার আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে জেনে নিন আপনার শিশুকে কতটুকু পানি খাওয়াবেন।
যেসব বাচ্চা বুকের দুধ খায় তারা তেমন পানি খেতে চায় না। কারণ বুকের দুধের অধিকাংশই পানি। এতে চিন্তার কিছু নেই।
বাচ্চাকে পানি খাওয়ানোর উপকারিতা
- কোষে পুষ্টি উপাদান এবং অক্সিজেন পৌঁছে দেয়। শরীর থেকে অপ্রয়োজনীয় উপাদান মূত্রের মাধ্যমে বের করে দেয়।
- হাড়ের গিট এবং মাংসের টিস্যুতে প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ করে
- রক্তের ভলিউম ঠিক রাখে
- ফলের রসের প্রয়োজন মেটায় (ডাক্তাররা সাধারণত ১ বছরের চেয়ে ছোট বাচ্চাদের ফলের জুস না খাওয়ানোর পরামর্শ দেন। আর যদি খাওয়াতেই চান, বাসায় বানানো রস খুব অল্প পরিমাণে খাওয়ানো উচিত)
বেশি গরম পড়লে কি পানি বেশি খাওয়ানো উচিত
খুব গরম পড়লে বাচ্চাকে বেশি পানি বা দুধ খাওয়ানো যেতে পারে। এতে করে শিশুর শরীরে পানিস্বল্পতা হওয়ার ঝুঁকি কমে। তবে নবজাতককে পানি দিতে চাইলে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া উচিত।
যেসব বাচ্চা সলিড খাবার খায় না তাদেরকে বেশি করে বুকের দুধ বা ফরমুলা দিলেই হয়।
বাচ্চার শরীরে পানিশূন্যতার লক্ষণ
আপনার যদি মনে হয় বাচ্চা অসুস্থতার কারণে বা অতিরিক্ত গরম আবহাওয়ার ফলে যথেষ্ট পানি পাচ্ছেনা, নিচের লক্ষণগুলো বাচ্চার মধ্যে পাওয়া যায় কি না খেয়াল করুনঃ
- ২৪ ঘণ্টায় ৬ বারের চেয়েও কম প্রস্রাব করে
- ঘন হলুদ প্রস্রাব হয়
- ঠোঁট ফেটে যায়
- কাঁদলে চোখে পানি খুব কম আসে বা একদমই আসে না
- বাচ্চার চামড়া শুকিয়ে যায়। আলতো করে চাপ দিলেও চামড়া উঠে আসে না, দেবে থাকে।
- চোখ গর্তে ঢুকে যায়
- অস্বাভাবিক ঘুমঘুম ভাব
- হাত পা ঠান্ডা হয়ে থাকে
কখন গুরুতর হতে পারে
পাতলা পায়খানা অথবা বমি, অথবা দুটোই যদি একসাথে হয়, সেক্ষেত্রে শিশুর শরীরে পানির চাহিদা পূরণ করার জন্য পরামর্শ নিতে ডাক্তার দেখান। এছাড়া বাচ্চার শরীরে পানিশুন্যতার লক্ষণ দেখা গেলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ
বাচ্চার বয়স ১ বছর হওয়ার আগ পর্যন্ত ফলের জুস খাওয়ানো থেকে বিরত থাকুন। ফলের জুস খেলে শুধু যে শিশুর ছোট্ট পেটে দুধ খাওয়ার জায়গা থাকেনা তা না, জুসের চিনি আপনার ছোট্ট শিশুকে পেট ব্যথা আর ডায়রিয়ায়ও আক্রান্ত করতে পারে।
যদিও আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধবেরা বলবে বাচ্চাকে প্রথম কয়েক মাসের মধ্যেই পানি খাওয়ার অভ্যাস করে ফেলা দরকার, সেসব কথা শোনার দরকার নেই। যতদিন না বাচ্চা সলিড খাবার খেতে শুরু করছে, ওকে পানি না খাওয়ানোই ভালো। এতে বাচ্চার বিভিন্ন স্বাস্থ্যের সমস্যা এড়ানো যায়। তাছাড়া সময় হলে বাচ্চাকে এমনিতেই নিয়মিত পানি খাওয়াতে পারবেন।