বুকের দুধ ছাড়ানো মা ও বাচ্চা দুজনের জন্যই বিশেষ ঘটনা। কারণ বুকের দুধ বাচ্চার জন্য কেবলমাত্র খাবার নয় এটার সাথে জড়িয়ে আছে মা- শিশুর দুজনেরই শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং আবেগ।
বেশিরভাগ বাচ্চা একটু বড় হয়ে গেলে নিজে থেকেই বুকের দুধ খাওয়া ছেড়ে দেয়। তারা নিজে থেকেই সিদ্ধান্ত নেয় যে এখন আর বুকের দুধ খাবে না। কিন্তু বেশিরভাগ সময়ে বাচ্চাকে বুকের দুধ ছাড়ানো সিদ্ধান্ত মাকে নিতে হয়। অনেক ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। যেমন শরীরে দুধ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়া বা মায়ের সময় না থাকা। হতেই পারে মা আর বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াতে চাচ্ছেন না।
কারণ যেটাই হোক না কেন, সব মা–ই চায় বুকের দুধ ছাড়ানো যথাসম্ভব সহজ ও সুন্দরভাবে করতে।
আপনি এবং বাচ্চা কি বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করতে প্রস্তুত
সবার আগে এ বিষয়টি আপনাকে ভালোভাবে বুঝতে হবে। বুকের দুধ খাওয়া শুধু বাচ্চার জন্য ভালো তা নয়। এটা মায়ের স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। যেসব মা বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ান, তারা স্তন ক্যানসারে কম আক্রান্ত হন।
শিশুকে বুকের দুধ ততক্ষণ পর্যন্ত খাওয়ান যতক্ষণ সেটা মা ও বাচ্চা দুজনের জন্যই আরামদায়ক বা সম্ভব হয়। আপনার বাচ্চা দুধ ছেড়ে দেয়ার আগেই যদি আপনি প্রস্তুত হন বা ছাড়াতে চান তার জন্য নিজেকে অপরাধী ভাববেন না। কারণ আপনি ভালো থাকলে আপনার বাচ্চাও ভালো থাকবে। আপনি যদি নিশ্চিত থাকেন যে আপনি বাচ্চাকে বুকের দুধ ছাড়ানোর জন্য প্রস্তুত, তাহলে এ লেখাটি আপনার কাজে লাগবে।
বুকের দুধ ছাড়ানো নিয়ে বাচ্চার সাথে কথা বলুন
বাচ্চা হয়তো সবেমাত্র অল্প অল্প কথা বলা শুরু করেছে, তাই হয়তো ভাবছেন বুকের দুধ ছাড়ানোর মতো একটা কঠিন বিষয় নিয়ে তাকে কিছু বললে সে তা বুঝবে না। কিন্তু আসলে তেমনটা নয়, আপনি যদি তাকে সহজভাবে বুঝিয়ে বলেন তাহলে সে তা বুঝবে এবং তার প্রতিক্রিয়া জানাতে পারবে। আপনি যে ভাষায় তার সাথে কথা বলেন অর্থাৎ আপনার সন্তান যে ভাষাটা বুঝে, সেই ভাষায় তাকে বুঝিয়ে বলুন কেন এখন দুধ ছাড়ানোর সময় এসেছে। আপনার সন্তানকে আপনিই সবচেয়ে ভালো চেনেন, তাই কিভাবে বললে সে বুঝবে সেটা আপনিই ভাল জানেন। বাচ্চাকে বলতে পারেন যে, “সে এখন বড় হয়ে যাচ্ছে তাই এখন আর বুকের দুধ খাওয়ার প্রয়োজন নেই”।
এই সময়টা একটা বাচ্চার জন্য সবথেকে কঠিন। সে হয়তো মনে করতে পারে ‘মা’ তার থেকে দূরে চলে যাচ্ছে। সেজন্য আপনাকেই বাচ্চাকে আশ্বস্ত করতে হবে যে, মা তার থেকে দূরে যাচ্ছে না। বুকের দুধ ছাড়ানোর এই মুহূর্তে বাচ্চাকে বেশি বেশি সময় দিতে হবে, তার সাথে অনেক খেলতে হবে। আপনি কয়েকটি জিনিসের তালিকা তৈরি করতে পারেন যেগুলো বাচ্চার সাথে এখন বেশি বেশি করবেন যেমন: বল দিয়ে খেলা, বই পড়া, ব্লক দিয়ে বিভিন্ন জিনিস বানানোর খেলা। এইভাবে সে বুঝতে পারবে যে আপনি ওকে ছেড়ে যাচ্ছেন না, শুধু বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করছেন।
আমি এমিলকে বুকের দুধ ছাড়াচ্ছি না। ও যখন ছেড়ে দেবে তার জন্য অপেক্ষা করছি। কিন্তু বিষয়টা যেন সহজ হয়, তাই গল্পে গল্পে ওকে বুকের দুধ খাওয়ার বিষয়টা বুঝিয়েছি। ভিডিও কলে আমার বান্ধবীদের সদ্যজাত বাচ্চা দেখিয়েছি, যাদের দাঁত নেই। বলেছি, দেখো যাদের একটি দাঁতও নেই, তাদের মাম্মির পাফু (মায়ের দুধ) খেতে হয়। যাদের সব দাঁত আছে তারা মুগ্গি, ডিম, কলা, আপেল খায়। তারা দাঁত ব্রাশ করে। তারা কাউ পাফু খায়। আর মাম্মির পাফু খায় না। গল্পে গল্পে বাচ্চাদেরকে অনেক কিছু শেখানো সম্ভব। আপনি যখন বুকের দুধ ছাড়ানোর কথা ভাবছেন তার অনেক আগে থেকেই এমন গল্পে গল্পে বাচ্চাকে ধারণা দিন যে তার খাবারের রুটিনে পরিবর্তন আসবে।
বুকের দুধ ছাড়ানো সহজ করার কিছু কৌশল
- বিকল্প খাবার আগেই অভ্যাস করুন বাচ্চাকে বুকের দুধের বদলে যে খাবারে অভ্যস্ত করতে চান (গরুর দুধ বা ফরমুলা) কমপক্ষে ৬ মাস আগে থেকে ওই খাবারে সাথে ওকে পরিচয় করান। ধীরে ধীরে পরিমাণ বাড়ান। বুকের দুধ খাওয়ানো কমিয়ে দিন।যখন বুকের দুধ ছাড়াতে চাইবেন তখনই ওকে গরুর দুধ দিলে ও হঠাৎ এ পরিবর্তন মেনে নিবে না। বরং ওকে সময় দিলে, ধীরে ধীরে ঘুমানোর আগে গরুর দুধ খেতে দিলে বুকের দুধ ছাড়ানো সহজ হবে।
- সঠিক সময় বেছে নিন। বুকের দুধ ছাড়ানো শুরু করার জন্য বাচ্চার মানসিক অবস্থা বিবেচনা করা খুব জরুরি। সে যখন শারীরিক ও মানসিকভাবে ভালো থাকবে তখন বুকের দুধ ছাড়ানোর কথা ভাবা যাবে। যদি ওর শরীর ভালো না থাকে কিংবা কোন বড় ধরনের পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যায় তখন দুধ ছাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু না করাই ভালো। যেমন ধরুন, তাকে নতুন ডে-কেয়ারে দেয়া হলো, পরিবারে কোনো পরিবর্তন হচ্ছে, হতে পারে একটি নতুন ভাই বোন এসেছে বা আপনি সম্প্রতি কাজে ফিরেছেন। এমন সময় বাচ্চা তার মাকে প্রচন্ড মিস করে। এমন অবস্থায় আপনি যদি তাকে বুকের দুধ ছাড়াতে চান তাহলে তার জন্য সময়টা খুব কষ্টকর হয়ে পড়বে। এত ছোট একটা বাচ্চার পক্ষে একসাথে এতগুলো পরিবর্তন মানিয়ে নেওয়া খুব কঠিন হতে পারে।
১৮ মাস পর থেকে বাচ্চারা বুকের দুধ খাওয়া বেশ কমিয়ে দেয়। হঠাৎ একদিন রাতে দেখবেন ও দুধ না খেয়ে উল্টো হয়ে শুয়ে আছে। তখন ওকে হাতে পায়ে আলতো করে ম্যাসাজ করে দিন। পিঠ চুলকে দিন। মাথায় হাত বুলিয়ে দিন। দুধ খেয়ে খেয়ে ঘুমানোর অভ্যাস ধীরে ধীরে চলে যাবে। আপনি এ সময়ে চেষ্টা করলে খুব সহজে বুকের দুধ ছাড়ানো সম্ভব হবে।
- বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় কমিয়ে আনুন। বাচ্চার বয়স ১৮ মাসের বেশি। তবু সে কি সারাক্ষণ দুধ খেতে চায়? অতিরিক্ত বুকের দুধ খেতে পছন্দ করলে, তাকে দুধ ছাড়ানো কিছুটা কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। প্রথমে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময়টা ধীরে ধীরে কমিয়ে আনবেন। যখন সে তার ইচ্ছামত দীর্ঘ সময় ধরে দুধ খেতে পারবে না, তখন ধীরে ধীরে দুধ খাওয়ার প্রতি অনীহা তৈরি হবে এবং একটা সময়ের পর সে স্বেচ্ছায় দুধ খাওয়া ছেড়ে দিতে পারে। কখনো আশা করবেন না যে শিশুকে রাতারাতি দুধ খাওয়া ছাড়ানো যাবে। প্রতিদিন ধীরে ধীরে দুধ খাওয়ানোর পরিমাণ এবং খাওয়ার সময় কমিয়ে দিন।
- তাড়াহুড়ো করবেন না। দুধ ছাড়ানোর সময় বাচ্চা যদি অতিরিক্ত ক্ষোভ প্রকাশ করে, খিটখিটে মেজাজে থাকে, আপনাকে সারাক্ষণ আঁকড়ে ধরে থাকে তাহলে বুঝবেন দুধ ছাড়ানোর সময়টা সঠিক হয়নি।বাচ্চা যদি অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেখানো শুরু করে, তাহলে একটু ছাড় দিন। শিশুকে ট্রমাটাইজ করে, ভয় বা আতঙ্ক দেখিয়ে দুধ ছাড়ানোর কোন কারণ নেই। সে যদি কিছু অতিরিক্ত দিন বা আরো কিছু সপ্তাহ বেশি দুধ খায় তাহলে কারো কোনো ক্ষতি হবে না।
- বাচ্চাকে স্বেচ্ছায় দুধ অফার করবেন না। বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করার আরেকটি উপায় হলো, সারাদিনে অসংখ্যবার নিজের ইচ্ছায় বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করা। শুধু তখনই খেতে দিবেন যখন সে চাইবে। আপনি যদি ঘন ঘন দুধ দেয়া বন্ধ করেন, তাহলে এই একটি পরিবর্তন অবিলম্বে বাচ্চার দুধের চাহিদা কমিয়ে দিবে এবং বুকের দুধ ছাড়ানো আপনার জন্য সহজ করে দিবে।
- প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করুন। আপনার শিশুর যদি দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে দুধ খাওয়ার অভ্যাস থাকে বা কিছু পরিস্থিতিতে (যেমন, অতিরিক্ত খেলাধুলা করে ক্লান্ত হয়ে গেল) দুধ খেতে চায় তাহলে সেই সময়গুলোতে তাকে দুধ না দিয়ে অন্য খাবার বা কাজ করানোর জন্য প্রস্তুত থাকবেন। সে যদি প্রতিদিন মধ্য-সকাল অর্থাৎ বেলা ১১-১২ টার দিকে দুধ খায় তাহলে ঠিক ওই সময়টায় তাকে নিয়ে ঘুরতে বের হবেন। দূরে কোথাও যেতে হবে বা অনেক প্রস্তুতি নিয়ে বের হতে এমনটা নয়। হতে পারে একদিন পাড়ার মুদি দোকানে গেলেন, পরের দিন কোন স্কুলের মাঠের দোলনায় খেলতে নিলেন, আরেক দিন কোন পার্কে নিয়ে গেলেন। মোট কথা ওই নির্দিষ্ট সময়টায় বাচ্চার মন অন্য দিকে সরাতে হবে। আপনার যদি মনে হয় দুধ না পেয়ে বাচ্চার খিটখিটে মেজাজ এর মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে, তবুও তাকে দুধ দেয়া যাবে না। বরং মন ভালো করার জন্য তাকে বেশি বেশি সময় দিন, তার সাথে খেলা করুন।
এমিলের বেলায় খেয়াল করলাম সে যখন বোর ফিল করে বা খেলার কিছু খুঁজে পায় না, তখনও আমার কাছে এসে বুকের দুধ খেতে চায়। এটা বুঝে আমি ওকে আনন্দের কিছু করতে দেই। যেমন ধরুন টেপ দিয়ে দেয়ালে বল আটকে দিয়ে বলি এগুলো খোলো। স্পন্জ আর পানির বালতি দিয়ে বলি খেলো। - বুকের দুধ ছাড়ানোর অনুভূতিটাকে বিশেষ করে তুলুন। বাচ্চা কোন কিছু ছেড়ে দিচ্ছে বিষয়টা এভাবে না দেখে, তার একটি বিকাশ হচ্ছে এমন ইতিবাচকভাবে প্রেজেন্ট করুন। যদি সে বুকের দুধ ছাড়ার জন্য প্রস্তুত বলে মনে হয়, তাহলে তাকে একটি দিন নির্ধারণ করতে দিন যেদিন সে শেষ বারের মতো বুকের দুধ খাবে। সেই দিনটার জন্য একটা ছোটখাটো পার্টিরও পরিকল্পনা করতে পারেন। অনেক বড় কিছু করতে হবে এমন নয়, বিকালে একটু কেক খেতে দিলেন বা রাতের খাবারের পর একটু আইসক্রিম খাওয়ানোর ছলে রাস্তায় হাঁটতে নিয়ে যেতে পারেন।
- মনোযোগ সরানোর পরিকল্পনা করুন। বুকের দুধ ছাড়ানোর সময় শিশুর মনোযোগ অন্যদিকে ঘোরানো খুব ভালো একটা পদ্ধতি। এ সময়ে সলিড খাবারের উপরে জোর দেয়া অনেক জরুরী। তাছাড়া এতদিনে বাচ্চার সব ধরনের সলিড খাবার খাওয়া শিখে ফেলা উচিত। দিনের যে সময়টায় সে বুকের দুধ খেতে চায় ঠিক সেই সময়টায় তার প্রিয় খাবারগুলো অফার করুন। এছাড়া যখনই সম্ভব বোতল বা গ্লাসে করে তাকে দুধ খেতে দেয়া শুরু করে করবেন। এভাবে সে অন্যভাবে দুধ খেতে অভ্যস্ত হয়ে গেলে বুকের দুধ ছাড়ানো কষ্টকর হবে না।
- বাচ্চাকে প্রচুর আদর দিন। মায়ের বুকের দুধ খাওয়ার সময়েই মূলত শিশুর সাথে মায়ের বন্ধন দৃঢ় হয়। এ সময়ে তারা মায়ের স্পর্শ পায় এবং অনেক বেশি আদর নেয়। অনেক বাচ্চাদের দুধ খাওয়া বন্ধ করতে না চাওয়ার এটাও একটা বড় কারণ। তারা দ্বিধাবোধ করে, মনে করে দুধ খাওয়া ছেড়ে দিলে বুঝি মায়ের এই আদর আর পাবে না। তাই শিশুকে আর আশ্বস্ত করুন যে শুধু বুকের দুধ খাওয়া বন্ধ হচ্ছে মানে এই নয়, সে আর মায়ের কাছাকাছি যেতে পারবেনা বা আদর কম পাবে। দুধ ছাড়ানোর প্রক্রিয়ার সময়, বিশেষ করে দিনের বেলায় যে সময়টায় সে বুকের দুধ খেত সেই সময়ে তাকে বেশি বেশি জড়িয়ে ধরুন, আদর করুন এবং চুমু দিন।
- বাচ্চার বাবার সাহায্য নিন। আপনার বুকের দুধ যদি বাচ্চা চোখের সামনে থাকে তাহলে কখনো কখনো দুধ ছাড়ানোর প্রক্রিয়াটি বেশ কঠিন হয়ে ওঠে, বিশেষ করে ঘুমানোর সময়। সারাদিন দুধ না চাইলেও ঘুমের সময় দুধ খাওয়ার জন্য অনেক বেশি জেদ করে। তাই এ সময়টায় আপনার সঙ্গীর সাহায্য নিতে পারেন। বাচ্চাকে ঘুম পাড়ানোর দায়িত্বটা তার বাবাকে দিন যতদিন না সে পুরোপুরি দুধ ছেড়ে দিচ্ছে।
- বাচ্চা যদি দুধ খেতে চায় তাহলে তাকে ঐ সময়টায় অন্য কোন কাজে ব্যস্ত রাখুন। যেমন তাকে নিয়ে কেক বানাতে পারেন, বেলুন দিয়ে খেলতে পারেন অথবা খেলার মাঠেও নিয়ে যেতে পারেন। সে যে দুধ খেতে চেয়েছিল এটা যেন ভুলে যায়। এভাবে দুধ খাওয়ানোর মধ্যে একটা লম্বা সময়ের বিরতিও নেয়া যায়।
- সীমানা নির্ধারণ করুন। বাচ্চাকে বুঝিয়ে বলুন যে সে শুধুমাত্র বাড়িতে একটি নির্দিষ্ট রুমে, বা চেয়ারে বসে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দুধ খেতে পারবে। বিশেষ করে একটা নির্দিষ্ট পোশাক যদি বানাতে পারেন খুবই ভালো হয়। যখন থেকে দুধ ছাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করবেন তার আগে থেকেই এমনভাবে পোশাক পরা শুরু করবেন যেটা খোলা সহজ নয়। যখন দুধ খেতে চাইবে তখন ওই পোশাক বদলে অন্য পোশাক পরে দুধ খাওয়ান। বাচ্চা ধীরে ধীরে বুঝবে যে কোন পোশাক থাকলে মা দুধ খেতে দিবে না।
আমি এ অভ্যাসটা করেছি এবং খুবই উপকার পেয়েছি। এমিল যদি দুধ খেতে চায় সে বলে, মা পিংকি ড্রেস পরো। কারণ ও জানে গোলাপি গেঞ্জি ছাড়া আমি আর কোনো পোশাক পরলে ওকে দুধ দেব না। রাতে ঘুমানোর সময় ওই গোলাপি পোশাক পরি। সকালে উঠেই লম্বা ঝুল ওয়ালা পোশাক পরে ফেলি যেটা সহজে খোলা যায় না। এটাতেই এমিল বোঝে যে এখন আর দুধ খাবার সময় নাই। - দুধ খাইয়ে ঘুম পাড়ানো বন্ধ করুন। বাচ্চার যদি দুধ খেতে খেতে ঘুমানোর অভ্যাস থাকে তাহলে তা তাড়াতাড়ি বন্ধ করুন। সন্ধ্যার আগে বা বিছানায় যাওয়ার আগে বাচ্চাকে শেষবারের মতো দুধ খাওয়াবেন এবং ঘুমানোর সময় তাকে একটি হালকা নাস্তা বা এক কাপ গরুর দুধ দিতে পারেন। সেই সাথে গল্প বলে, গান গেয়ে তাকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করুন। সব থেকে ভালো হয়, যদি ঘুমানোর দায়িত্বটা বাচ্চার বাবাকে দিয়ে দিতে পারেন।
- দূরে কোথাও যান। যদিও বিষয়টা বেশ কঠোর এবং কঠিন বলে মনে হতে পারে, তবে আপনি যখন বাচ্চাকে দুধ ছাড়ানোর চেষ্টা করবেন তখন কয়েকদিনের জন্য দূরে কোথাও যেতে পারেন। আপনি সামনে না থাকলে তার দুধ খাওয়া বন্ধ করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না। আপনি না থাকার সময়টায় তার সাথে প্রচুর মজার মজার খেলা খেলতে হবে, অনেক বেশি স্নেহ, জড়িয়ে ধরা এবং চুমু দিতে হবে যেন সে দুধ খাওয়াটা মিস না করে। আপনি ফিরে আসার পর তাকে আর দুধ অফার করবেন না, যদি সে নিজে থেকে খেতে চায় তাহলে তার মন অন্যদিকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন।
বুকের দুধ ছাড়ানোর সময় নিজের যত্ন নিন
বুকের দুধ ছাড়ানোর প্রক্রিয়ায় আপনি স্বাভাবিকভাবে বাচ্চাকে নিয়ে অনেক বেশি চিন্তিত থাকবেন কিন্তু নিজের কথাও ভাবতে ভুলবেন না। বাচ্চা দুধ খাওয়া বন্ধ করলে মায়ের বুকে দুধ জমে, শক্ত হয়ে ফুলে যায় এবং ব্যথা হয়। ধীরে ধীরে দুধ ছাড়ালে মায়ের বুকে দুধ জমে ব্যথা হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। তবুও যদি বুকে দুধ জমে শক্ত হয়ে যায়, তাহলে হিটিং প্যাড বা গরম সেঁক অস্বস্তি বা ব্যথা কিছুটা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
দীর্ঘ সময় ধরে যে কাজটি করতে আমরা অভ্যস্ত, হঠাৎ করে সেটা ছেড়ে দেয়ার সময় কষ্ট হওয়াটা খুব স্বাভাবিক। বুকের দুধ ছাড়ানোর প্রক্রিয়াটা ঠিক তেমনি কষ্টদায়ক। শিশুর সাথে দীর্ঘ সময়ের এ বিশেষ বন্ধনটি শেষ করার সময় এসেছে, এটা মেনে নেয়া কঠিন। কিন্তু এটা জীবনেরই একটা স্বাভাবিক পরিবর্তন এবং এই পরিবর্তনটা মানিয়ে নিতে নিজেকে কিছুটা সময় দিন।
বাচ্চা বুকের দুধ খাওয়া বন্ধ করতে না চাইলে কী করবেন
দীর্ঘ সময়ের একটি অভ্যাস হঠাৎ করে ছেড়ে দেয়া বড়দের জন্যই অনেক কঠিন, বাচ্চাদের ক্ষেত্রে তো সেটা আরো বেশি কষ্টদায়ক। কোন কোন ক্ষেত্রে বাচ্চা হয়তো কোনভাবেই বুকের দুধ খাওয়া বন্ধ করতে চাইবে না। তখন নিচের কাজগুলো করবেন-
- শিশুকে অন্য বাচ্চাদের সাথে তুলনা করবেন না। বুকের দুধ ছাড়ানো আপনার জন্য যতই কষ্টের হোক না কেন, শিশুকে কখনোই অন্য বাচ্চার সাথে তুলনা করবেন না যে ইতিমধ্যে বুকের দুধ খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। যদি মনে করেন সবাই বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করতে পেরেছে শুধু আপনিই পারছেন না তবুও এমনটি করবেন না। মনে রাখবেন প্রতিটি মা এবং শিশু অন্যদের থেকে আলাদা। যেটা আপনার বাচ্চার জন্য সঠিক সেটা অন্য বাচ্চার জন্য ঠিক নাও হতে পারে।
- নিজেকে অন্য মায়েদের সাথে তুলনা করবেন না। যদি দেখেন অন্য একজন মা খুব সহজেই আরো অনেক আগেই তার সন্তানকে বুকের দুধ ছাড়িয়ে দিয়েছে কিন্তু আপনি এখনো পারছেন না বা কিছুটা বেশি সময় লাগছে, এর অর্থ এই নয় যে এর জন্য আপনি বিব্রত হবেন বা নিজেকে দোষী মনে করবেন।
- আপনার রাতের রুটিন পরিবর্তন করুন। শিশু মায়ের বুকের দুধ খেতে খেতে ঘুমাতে না পারলে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে, আর এ কারণে বুকের দুধ ছাড়ানো প্রক্রিয়াটা আরো বেশি কঠিন হয়ে পড়ে। পুরোপুরি দুধ ছাড়ানোর আগে বুকের দুধ খেতে খেতে ঘুমানোর অভ্যাসটা পরিবর্তন করুন। ঘুমানোর বেশ খানিক সময় আগে শেষবারের মতো দুধ খেতে দিবেন।
যেমন ধরুন–বুকের দুধ খাওয়াবেন এরপর দাঁত ব্রাশ করাবেন, তার সাথে গল্প করবেন, তাকে ছড়া শোনাবেন এবং একা একা ঘুমিয়ে পড়তে দিবেন। এগুলো করার উদ্দেশ্য হলো বাচ্চাকে বোঝানো যে, সে আপনার বুকের দুধ ছাড়াই একা একা ঘুমিয়ে পড়তে পারে এবং স্বপ্নের দেশে যেতে পারে।
আমি বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করছি না। তবে ২ বছর পার হবার পরে খেয়াল করছি তার বুকের দুধের চাহিদা অনেক কমে শুধুমাত্র ঘুমের সময়ে এসে ঠেকেছে। মাঝে মাঝে বাবার কাছে পিঠ চুলকে বা মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে ঘুমাচ্ছে। মাঝে মাঝে সকালে আর দুধ খাচ্ছে না। উঠেই দৌড়াচ্ছে বা ব্রাশ করছে। আমার বিশ্বাস কোনো চাপাচাপি না করলে নিজে নিজেই এ অভ্যাসটা চলে যায়। কোনো বাচ্চাই চিরদিন বাচ্চা থাকে না। দুধও খায় না।
রেফারেন্স:
- The American Academy of Pediatrics, Ages and Stages, 2019.
- U.S. Department of Health and Human Services, Eunice Kennedy Shriver National Institute of Child Health and Human Development, What is weaning and how do I do it?, January 2017.
- The National Institutes of Health, National Library of Medicine, Feeding patterns and diet – children 6 months to 2 years, September 2017.
- World Health Organization, Breastfeeding, 2018.
- American Academy of Pediatrics, Breastfeeding and solid foods, February 2012.
Maam apner likha pore as a new mother ami onk kichu jante o shikte perechi. Thank you so much for that. Amar ekta question – baccha k buker dud na diye gorur dud and Formula milk thik koto ml pojonto deya thik hobe? Poriman ta kemon thakbe?
Thank you. Apner ai prosesta jenu onek dure niye jai apnake apner bhubishat ujjal hik. Ami dua kuri