এ আর্টিকেলে যা থাকছে
- চিয়া সিড কী?
- কখন বাচ্চাদের চিয়া সিড দেওয়া যাবে?
- বাচ্চাকে কিভাবে চিয়া সিড খেতে দেবেন?
- চিয়া সিড কি বাচ্চাদের জন্য স্বাস্থ্যকর?
- চিয়া সিড কি কোষ্ঠকাঠিন্য সমাধানে সহায়ক?
- চিয়া সিড খেলে কি অ্যালার্জি হয়?
- চিয়া সিড কি বাচ্চার ওজন কমাতে পারে
- চিয়া সিড কি বাচ্চাদের গলায় আটকে যেতে পারে?
- চিয়া সিডকে কিভাবে ডিম এর বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়?
চিয়া সিড সারা পৃথিবীতে ‘সুপারফুড’ হিসেবে পরিচিত। এ লেখাতে চিয়াসিড কখন, কিভাবে বাচ্চাকে দেয়া উচিত এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
চিয়া সিড কী
গুল্মজাতীয় ভেষজ ফুলের গাছে চিয়া সিড জন্মায়। মেসোআমেরিকার (উত্তর মেক্সিকো, গুয়াতেমালা এবং হন্ডুরাসের দক্ষিণ অংশকে একসাথে মেসােআমেরিকা বলে) উঁচু মরুভূমি এবং পর্বতমালা থেকে এর উৎপত্তি।
প্রাচীনকালে, এই অঞ্চলগুলোতে চিয়া একটি প্রধান খাবার ছিল। যে ছোট ছোট বীজগুলোকে ‘চিয়ান্তলি’ (chiyantli) বলা হতো সেগুলো শুধুমাত্র যে খাবার হিসেবেই খাওয়া হতো তাই নয়, বরং ওষুধ, বাণিজ্যের পণ্য, এমনকি ধর্মীয় কাজে উৎসর্গের জন্য পবিত্র অঞ্জলি হিসেবেও ব্যবহৃত হতো। স্প্যানিশ উপনিবেশ স্থাপনকারীরা চিয়া এবং ‘অ্যামারান্থ’ (নটে শাক) বাতিল করে দিয়ে তার পরিবর্তে ইউরোপে জনপ্রিয় শস্য যেমন বার্লি, ধান এবং গমকে অগ্রাধিকার দেয়। কিন্তু এই প্রচেষ্টার পরেও, চিয়া টিকে আছে এবং এখনো এই অঞ্চলগুলোর রান্নায় একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ চিয়া।
২০ শতাব্দীর শেষের দিকে চিয়া সারা দুনিয়ায় ‘সুপারফুড’ এর মর্যাদা পায়, যেখানে শিক্ষাবিদ, ক্রীড়াবিদ এবং উদ্যোক্তারা আদিবাসী সংস্কৃতিতে অনেকদিন ধরে মূল্যবান গণ্য হওয়া এই সিডের পুষ্টিগুণ প্রচার করেছে।
কখন বাচ্চাদের চিয়া সিড দেওয়া যাবে
বাচ্চারা সলিড খাবার খেতে শুরু করার সাথে সাথেই অর্থাৎ সাধারণত ৬ মাস বয়সেই বাচ্চাকে চিয়া সিড এর সাথে পরিচয় করানো যায়।
পাকা কলা বা পাকা পেঁপের পিউরির সাথে আগে থেকে ভিজিয়ে রাখা চিয়া মিশিয়ে বাচ্চাকে দিতে পারেন।
তবে শিশুকে খাওয়াতে চাইলে, শুরুতে অল্প পরিমাণে দিন। এতে যেহেতু প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, একবারে বেশি খেলে শিশুর হজম প্রক্রিয়ায় সাময়িক অসুবিধা হতে পারে।
এগুলো একটি ‘এয়ারটাইট কন্টেইনার’ অর্থাৎ বাতাস ঢুকতে পারে না এমন বোতল, বয়াম বা বাটিতে সংরক্ষণ করুন। গোটা সিড হলে তা স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ১৮ মাস পর্যন্ত রাখা যাবে এবং ‘গ্রাইন্ড’ করা বা গুঁড়ো করা সিড ১ বছর পর্যন্ত ফ্রিজে রাখা যাবে।
বাচ্চাকে কিভাবে চিয়া সিড খেতে দেবেন
প্রতিটি বাচ্চা তাদের নিজস্ব গতিতে বড় হয়। একেক পরিবারের খাবার অভ্যাসও একেক রকম। তাই বাচ্চার জন্য একটি নির্দিষ্ট খাবার কিভাবে প্রস্তুত করতে হয় এ ব্যাপারে খুব সাধারণ কয়েকটি রেসিপি আলোচনা করলাম। আপনি হাজারভাবে চিয়া সিড খেতে পারেন।
৬ মাস+ বয়সী শিশু:
আগে থেকে পানিতে ভিজিয়ে রাখা চিয়াসিড যে কোনো পিওরির সাথে,পরিজ অথবা দইয়ের সাথে চামচ দিয়ে মিশিয়ে দিতে পারেন অথবা আপনার পছন্দমতো একটি ফলের ফ্লেভার এর চিয়াসিড পুডিং বানাতে পারেন।
বাচ্চাকে পুরো এক চামচ শুকনা চিয়াসিড দেওয়া যাবে না।
১২ মাস+ বয়সী বাচ্চা:
আগে ভিজিয়ে রাখা চিয়া মেশানো নরম কিন্তু হাত দিয়ে নিয়ে খাওয়া যায় এমন খাবার দিতে থাকুন। ওটমিল, পায়েস, ফলের পুডিং বা দইয়ে ভিজিয়ে রাখা চিয়া দিতে পারেন। কেইক বা পিঠাতেও মেশাতে পারেন। এ বয়সেও বাচ্চাকে পুরো এক চামচ শুকনা সিড দেওয়া যাবেনা তবে খাবারের ওপর কিছু শুকনা সিড ছড়িয়ে দেওয়া যাবে।
১৮ মাস+ বয়সী বাচ্চা:
ফলের স্মুদি বা জুস এ চিয়াসিড দিতে পারেন অথবা ভর্তা করা ফল, ফ্রেশ লেবুর রস, পানি এবং চিয়া সিড মিলিয়ে একটি সহজ ‘আগুয়া ফ্রেসকা’ (agua fresca) বানাতে পারেন। এছাড়া অবশ্যই আগের মতো যে কোনো সিরিয়াল, ওটমিল বা পোরিজ এ মিশিয়েও বাচ্চাকে খেতে দিতে পারেন। বাচ্চাকে পুরো এক চামচ শুকনা সিড দেওয়া যাবে না তবে খাবারের ওপর কিছু শুকনা সিড ছড়িয়ে দেওয়া যাবে।
টক দই+মধু+ চিয়া সিড+ পানি বা ফলের রস+রোলড ওটস+বাদাম+ কলা/ আপেল/আমের টুকরো= সারারাত একটি এয়ারটাইট পাত্রে রেখে সকালের নাশতায় বাচ্চাকে খেতে দিতে পারেন!
চিয়া সিড কি বাচ্চাদের জন্য স্বাস্থ্যকর
হ্যাঁ। চিয়াসিডে ফাইবার, স্নেহ (ফ্যাট) এবং প্রোটিন থাকে। এছাড়াও চিয়াতে ক্যালসিয়াম, আয়রন, উদ্ভিদ-ভিত্তিক ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড (যেমন আলফা –লিনোলেনিক অ্যাসিড), সেলেনিয়াম এবং জিংক পাওয়া যায়।
এ পুষ্টি উপাদান একসাথে হজম প্রক্রিয়া বা পরিপাকতন্ত্র, শক্তি (এনার্জি) এবং বিকাশের (গ্রোথ) উন্নতি সাধনে কাজ করে।
এছাড়াও হাড়ের শক্তি, লোহিত রক্ত কণিকা, মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা এবং বিকাশ, হরমোনজনিত স্বাস্থ্য, রুচি বাড়াতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এগুলো সহায়তা করে।
এগুলো অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর যা শরীরের সহনশীলতা এবং ক্ষত সারানো কিংবা সুস্থ হয়ে ওঠার অর্থাৎ ক্ষতিপূরণের ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
চিয়া সিড কি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা সমাধানে সহায়ক
হ্যাঁ। চিয়াসিড প্রচুর পরিমাণে দ্রবণীয় (সহজে মিশে যায় এমন) ফাইবারে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ যা শরীরের মাইক্রোবায়োম বা সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় অণুজীবের পরিমাণ বাড়ায়। এর মাধ্যমে শিশুর অন্ত্রের কার্যকারিতা বাড়ে। যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
কিন্তু এইজন্য বাচ্চাকে বেশি পরিমাণে দেওয়া যাবে না: চিয়াসিড বেশি খেলে বাচ্চার পেট অতিরিক্ত ভরে যেতে পারে এবং হজমে অস্বস্তি হতে পারে। এমন হলে বাচ্চার এটা খাওয়ার আগ্রহ কমে যাবে ফলে সে অন্যান্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান থেকে বঞ্চিত হবে। তাই শুরুতে শিশুকে অল্প পরিমাণে খেতে দিয়ে পরে ধীরে ধীরে পরিমাণ বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।
চিয়া সিড খেলে কি অ্যালার্জি হয়
না। চিয়াসিড খেলে সাধারণত অ্যালার্জি হয় না। যদিও এমন অল্পকিছু প্রমাণ আছে যে তিল এ যাদের অ্যালার্জি আছে তাদের চিয়াসিডেও ‘ক্রস-রিয়েক্টিভ’ অ্যালার্জি হতে পারে অর্থাৎ, যে কারণে তাদের তিলে অ্যালার্জি হয় ঠিক একই কারণে চিয়া সিডেও অ্যালার্জি হতে পারে।
বাচ্চাকে চিয়াসিডের সাথে পরিচয় করানোর সময়, প্রথম কয়েকবার আগে থেকে পানিতে ভিজিয়ে রাখা সিড অল্প পরিমাণে দিন এবং বাচ্চাকে ভালোভাবে লক্ষ্য করুন। যদি বাচ্চার দিক থেকে কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া না আসে তবে পরবর্তীতে খাওয়ার সময় ধীরে ধীরে পরিমাণ বাড়াতে থাকুন।
চিয়া সিড কি বাচ্চার ওজন কমাতে পারে
না। কোনো খাবারই কারো ওজন কমাতে পারে না। যারা ওজন কমাতে চান তারা অন্যান্য খাবার বাদ দিয়ে চিয়া সিড, শসা, ওটস বেশি করে খান কারণ তারা কম খাবারে শরীরের পুষ্টিগুণ মেটাতে চান।
আপনার বাচ্চা যদি শুধু চিয়াসিডই খায়, তাহলে সেটা তার ওজন কমাবে। কিন্তু কোনো বাচ্চাকেই শুধু একটি খাবার বা এক ধরনের খাবার দেয়া ঠিক নয়।
সুষম খাবার হলো প্রোটিন+শর্করা+ভিটামিন এ তিনের সমন্বয়।
চিয়া সিড কি বাচ্চাদের গলায় আটকে যেতে পারে
হ্যাঁ। এগুলো মুখের লালার আর্দ্রতা পেয়ে আকারে একটু বড় হয়ে যায় এবং দানাগুলো একসাথে লেগেও যেতে পারে, যার ফলে গলায় আটকে যাওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এই ঝুঁকি কমাতে বাচ্চাকে দেওয়ার আগে চিয়াসিড ৩০ মিনিট ধরে পানি বা কোনো তরল খাবারে ভিজিয়ে রাখুন এবং বাচ্চার বয়স অনুযায়ী ঠিকঠাক পরিমাণে দিন- এ ব্যাপারে পরবর্তীতে আরো আলোচনা করা হয়েছে।
পুরো এক চামচ শুকনা সিড বাচ্চাকে দেওয়া ঠিক হবে না (তবে অল্প পরিমাণ শুকনা সিড তার খাবারের ওপর ছড়িয়ে দিলে সমস্যা নেই)। শিশুর জন্য একটি নিরাপদ খাওয়ার পরিবেশ তৈরি করা আবশ্যক এবং বাচ্চা খাওয়ার সময় বাচ্চার সামনে থাকুন।
তাড়াতাড়ি চিয়া সিড গলাতে চাইলে গরম পানি দিতে পারেন। ৫ মিনিটেই নরম হয়ে যাবে।
চিয়া সিডকে কিভাবে ডিম এর বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়
‘বেইক’ করা (baked) খাবারে ডিম এর পরিবর্তে চিয়াসিড ব্যবহার করতে চাইলে, তিন ভাগ উষ্ণ তরলের সাথে এক ভাগ চিয়া মিশিয়ে মিশ্রণটি ঘন হওয়ার জন্য অন্তত ৩০ মিনিট রেখে দিন। একটি বড় ডিম প্রায় ১ টেবিল চামচ (১৫ গ্রাম) চিয়াসিড এবং ৩ টেবিল চামচ (৪৫ মিলিলিটার) তরল এর মিশ্রণের সমান। আপনি চাইলে, এই মিশ্রণটি একসাথে বেশি পরিমাণে বানিয়ে একটি বাতাস ঢুকতে পারে না এমন বোতল, বয়াম বা বাটিতে ১ সপ্তাহ পর্যন্ত ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে পারেন। এই মিশ্রণটিকে কখনো কখনো “চিয়া-ডিম” ও বলা হয়।
রেফারেন্স:
- García Jiménez S, Pastor Vargas C, de las Heras M, Sanz Maroto A, Vivanco F, Sastre J. (2015). Allergen characterization of chia seeds (Salvia hispanica), a new allergenic food. J Investig Allergol Clin Immunol, 25(1):55-6. Retrieved November 3, 2021.
- solid starts https://solidstarts.com/foods/chia-seed/