আমার শিশু খায় না কেন?

এ আর্টিকেলে যা থাকছে

অনেক বাবা-মায়ের অভিযোগ, তাদের শিশু খেতে চায় না। উল্লেখযোগ‍্য ব‍্যাপার হল এ নিয়ে আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশের বাবা-মা-অভিভাবকের যে আক্ষেপ তা কিন্তু অন‍্যান‍্য জাতির মধ‍্যে অতটা দেখা যায় না। এর কারণ কী হতে পারে?

পাঠকের কাছে আমরা শিশুদের খাওয়ার অভ্যাসের বিষয়ে জানতে চেয়েছিলাম। আমাদের ফেসবুক পেইজে (পারমিতার প্রতিদিন) বাংলাদেশের শিশুরা খেতে চায় না কেন?- এই প্রশ্নের উত্তর জানিয়ে প্রায় ১১০০টিরও বেশি কমেন্ট করেছেন পাঠকরা।

পাঠকদের পাঠানো কয়েকটি উল্লেখযোগ্য উত্তর, পরামর্শ নিয়ে এই লেখা। হতে পারে এ পরামর্শগুলো আপনার কাজে লাগবে। তবে তার আগে জেনে নেয়া দরকার শিশু না খেলে কখন ডাক্তার দেখানো জরুরি।

কখন শিশুকে ডাক্তার দেখাতে হবে

ওজন হ্রাস
শিশুর ওজন ক্রমাগত কমতে থাকা বেশ বিপদজনক লক্ষণ। জন্মের পর প্রথম সপ্তাহ ছাড়া বাকি সময় শিশুর ওজন বাড়বে বই কমার প্রশ্নই আসে না। আপনি যদি শিশুর ওজন সঠিকভাবে মেপে লক্ষ‍্য করেন প্রতি মাসে শিশুর ওজন উল্লেখযোগ‍্যভাবে কমছে, অবশ‍্যই দ্রুত ডাক্তারের কাছে যান। মনে রাখবেন, বাসায় ওজন মাপতে অনেক সময়ই ভুল হয়।
দুর্বল শিশু
শিশু যদি একেবারেই না খায় এবং সারাদিন শুয়ে বসে কাটায় অর্থা দুর্বলবোধ করে তাহলে দ্রুত ওকে ডাক্তার দেখাতে হবে। শিশুর স্বাভাবিক খেলাধুলা, নড়াচড়া কিংবা বাবা মায়ের সাথে কাটানো হাসিখুশি সময় যদি অস্বাভাবিক হারে কমে আসে তার মানে ওর কোনো সম‍স‍্যা হচ্ছে।

বমি বা পায়খানা
খাওয়ার সময় বমি বা পায়খানা প্রস্রাব করা কিন্তু খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু যদি শিশু অস্বাভাবিক হারে বমি করে এবং দিনে ৭ বারেরও বেশি পায়খানা করে (সে অবশ‍্যই দুর্বল হয়ে যাবে), শিশুকে ডাক্তার দেখান।

না খাওয়ার কারণ কী

খাওয়া প্রতিটি জীবের সবচেয়ে সাধারণ জৈবিক কাজ। শিশু যদি না খায় সেটা অস্বাভাবিক। এখানে পাঠকের গুরুত্বপূর্ণ মন্তব‍্যগুলি আলোচনা করব। 


পরিমাণ না বোঝা

রুনা লায়লা লিখেছেন, একবারে বেশি করে খাওয়াতে চায় যেন অনেকক্ষণ ক্ষুধা না লাগে। একই রকম কথা বলেছেন মুমতাহিনা কংকন। তিনি লিখেছেন, ‘আমি অনেক মাকে দেখেছি সারাদিন বাচ্চাকে খাওয়ানোর পেছনে লেগে থাকে। ঘুম থেকে উঠলেই ডিম পোচ, একটু পরে মাংস দিয়ে খিচুড়ি খাইয়ে মুখ মুছেই হাতে একটা কলা খেতে দিয়েছে। তারপর দেখা গেছে বাচ্চা কলায় দুই কামড় দিয়ে বাকি কলা ফেলে দিয়েছে। এখন মায়ের আহাজারি, আমার বাচ্চা খাওয়া নিয়ে কেন এতো জ্বালায়?’ বাচ্চাদের অনেক বেশি জোর করা, পারলে প্রতি ঘণ্টায় খাবার খাওয়াতে চায়। মায়েরা ভাবে বাচ্চার পেট ভরে না– লিখেছেন সুমাইয়া আক্তার। তিনি আরো মনে করেন, আর একই ধরনের খাবার বার বার দেয়। এতে বাচ্চারা বিরক্ত হয়ে আর খেতে চায় না। আবার সাফওয়াত হোসেন মনে করেন, অন্য বাচ্চার সাথে তুলনা করে। পরিবারের লোকজন বুঝতে চায় না যে একেক বাচ্চার একেক রকম চাহিদা, গঠন নিয়ে বাড়ছে।

আসলেই কিন্তু বাবা মায়েরা শিশুর ওপরে তাদের প্রত‍্যাশার চাপ একটু বেশিই চাপিয়ে দেন। শিশুর খাবারের পরিমাণের ক্ষেত্রে মনে রাখবেন, বাচ্চার হাতের তালু যত বড় বা সেখানে যে পরিমাণ খাবার আঁটে, একবেলায় ততটুকু খাবারই যথেষ্ট। 

আরো পড়ুন: শিশুর সলিড খাবার নিয়ে যা জানা প্রয়োজন

পরিশ্রমের অভাব

অনেক বাবা-মা শিশুর সারাক্ষণ মোবাইল দেখাকে খাবারে অরুচির একটা কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।শারমিন ইসলাম লিখেছেন, আমি যেটা মনে করি বাচ্চা না খাওয়ার কারণ হচ্ছে তারা প্রচুর মোবাইল দেখে। ৩ মাস বয়স থেকে মোবাইল দেখা শুরু করে। ওরা মোবাইলের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যায়, খাওয়ার রুচি হারিয়ে ফেলে, স্বাভাবিক খাওয়া দাওয়া শেখেনা। আমার বাচ্চা নিয়ে আমি এই সমস্যাতে ভুগছি, সমাধানটাও জানি। কিন্তু বাচ্চার সাথে পেরে উঠছি না।
 
আরো পড়ুন: মোবাইল, ভিডিও কেন বাচ্চার জন‍্য ক্ষতিকর?

তেমন কোনো অ্যাক্টিভিটিভি করতে দেই না। সাইকেলিং, সুইমিং এসব করলে এমনিতেই ‘খাই-খাই’ করে বেবিরা। লিখেছেন তাপসী বিথী।একই রকম কথা বলছেন অপূর্ব রাজ– বাচ্চারা সারাক্ষণ বাসার ভেতরেই থাকে। বিশেষ করে শহরের বাচ্চারা, খেলার জায়গা নেই বা থাকলেও পরিবারের সবাই যার যার কাজ নিয়ে ব্যস্ততার কারণে কোথাও ঘুরতে নিয়ে যায়না। আবহাওয়া, পরিবেশ চেঞ্জ হলে খাওয়ার রুচিও বাড়ে।
আবার শাফায়তুল আয়রা বলছেন, বাচ্চাদের জোর করে খাওয়ানো, ডিভাইস দিয়ে খাওয়ানো, অতিরিক্ত চিপস চকলেট খাওয়ানো, সঠিক সময়ে মায়েরা বাচ্চাদের সময় না দেওয়া।

লিংক: জোর করে খাওয়ালে ক্ষতি কী?

সঠিক জ্ঞানের অভাব

বাবা মা নিজেই জানেনা কী খেতে হবে, কখন খেতে হবে, কীভাবে বাচ্চাকে খাবার খেতে দিতে হবে–লিখেছেন জেসমিন আক্তার

আফসানা বিনতে আমজাদ মনে করেন, দেশের বাইরে বাচ্চা সংক্রান্ত বিষয়গুলো বাচ্চা জন্মানোর আগে থেকেই অনেক গোছানোভাবে ডাক্তাররা বুঝিয়ে দেন। বাচ্চা হওয়ার পরেও বাবা, মাকে বুঝিয়ে বলেন। বাংলাদেশে এটা হয়না। এটাই আমার মনে হয় প্রধান কারণ।
বাচ্চার বয়স যখন ৬ মাস তখন থেকেই চাল, ডাল সবজি এমনকি ফল ও এমনভাবে ব্লেন্ড করে, বাচ্চা খাবার কী জিনিস বুঝতেও পারে না। বাচ্চার খাবারকে আকর্ষণীয় করতে হবে। উন্নত দেশের মত প‍্যারেন্টিং ক্লাস চালু করা উচিত বলে মনে করেন নাদিয়া মৌ।
জেনিফার করিম বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট তুলে ধরেছেন।তিনি লিখেছেন, ৬ মাস বয়সী বাচ্চাটা সলিড খাওয়া বুঝে না, জানে না। তাকে ধীরে ধীরে শেখাতে হয়। মাসের পর মাস সলিড খাবার কখনো খাবে, কখনো খাবে না, কখনো ১-২ চামচ খাবে, কখনো মুখে তালা দিয়ে রাখবে, কখনো অতিরিক্ত গরমে খাবে না। এই জিনিসটা মা-বাবা বুঝে না। খাবার নিয়ে বাড়াবাড়ি করা, জোর করে খাওয়ানো, সিস্টেমটা না বোঝা, টেকনিকটা না বোঝা। এগুলো সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।

আরো আছে, বাচ্চা মাখামাখি করবে বলে তাকে নিজ হাতে খেতে না দেয়া। খাবার টেবিলে বাচ্চাকে নিয়ে খেতে না বসা। একটা বাচ্চা দেখেই শেখে। সে কাউকে খেতে দেখে না বলে শিখেও না। বাচ্চার খাবারের রুটিন মেইনটেইন না করা। উল্টা পাল্টা খাইয়ে গ্যাস, রুচি নষ্ট করে দেয়। একটা বাচ্চাকে খাবার কী জিনিস, কেন খেতে হবে, না খেলে কী হবে– এসব বোঝাতে কয়েক মাস থেকে বছরও পেরিয়ে যেতে পারে। এগুলো বুঝতে চায় না। আল্টিমেটলি, ফোন ধরিয়ে দেয়। বাচ্চা শুধু গিলতে শেখে। এই আরামের পরিণতি ভবিষ্যতে গিয়ে ফল পায়। শুরুতে কষ্ট করলে পরে আরাম৷ আগে আরাম চাইলে পরে কষ্ট তো বটেই, দুর্ভোগ আর অসুখ-বিসুখ টেনে নিয়ে আসবে। 

নাহিদা আফসানা বিদেশের সাথে তুলনা করেছেন। যদিও সব কথা পুরোপুরি সঠিক না। তিনি লিখেছেন, বিদেশে একজন মেয়ে প্রেগন্যান্ট হওয়ার পর থেকে সে ডক্টরের আন্ডারে চলে এবং সেই ডক্টর তার খাওয়া, ঘুম, ব্যায়াম সব শুধু একটা কাগজে প্রিন্ট করে হাতে ধরায় দেয় না। সময় নিয়ে ব্যায়াম করায়, নিয়মিত সাজেশন আর একটা প্রপার কেয়ারে রাখে। নিজে নিজে এই অবস্থায় নিজের যত্ন নেয়া সম্ভব না।

আমাদের ডক্টররা ডেলিভারির পর ৬ মাসের আগে কিছু দিতে মানা করে আর বিদেশে জন্ম নেয়ার পর ফরমুলা দেয়। সারাক্ষণ বাচ্চার কাছে থাকতে হয়। ঘুম নাই, খাওয়া নাই, গোসল নাই- কী একটা অবস্থা যায় ৬-৮ মাস! ডিপ্রেশনে থাকতে হয়।তারপর ৬ মাস পর সরাসরি খিচুড়ি খাওয়াতে হবে। এইখানেই বড় ঝামেলা হয়। প্রতিটি খাবার সবজি, ফল, ভাত সব আলাদা করে না চেনার কারণে আর টেস্ট না জানার কারণে খাবারের সাথে যে দূরত্ব আসে বাচ্চাদের, তা আমি ৬ বছরেও ঠিক করতে পারছি না। আর আমরা বাচ্চা পালি পুরা এক হাতে। এ দেশের অফিসে ঢুকলে বাসায় আসতে রাত ৯-১০টা। বাবার তো সময় নাই, আর মাও যদি জব করে তাহলে বাচ্চা হয় অস্বাভাবিক। প্রপার ডে-কেয়ার সেন্টার নাই। বিদেশে ৩ বছর হলেই ডে-কেয়ারে বাচ্চা সারাদিন থাকে। সব শিখে আসে– আমাদের বাসার প্রতিদিন নিজেদের রান্নার পর খিচুড়িই রান্না সহজ।

নাহিদা আফসানার কিছু কথা ঠিক। যেমন ডাক্তার নার্স অনেক কিছু শিখিয়ে দেন। আবার ফরমুলা দুধ কিন্তু সব বাচ্চার দরকার হয় না। মায়ের বুকের দুধ পর্যাপ্ত থাকে না থাকলেই ফরমুলা দুধ দিতে হয়। বিদেশে আপনার সব সুবিধা তখনই আছে, যখন আপনার অনেক টাকা আছে। যারা সীমিত আয়ের মানুষ তাদের জন‍্য ন‍্যানি, বেবিসিটার, ডে-কেয়ার এগুলো অত সহজ নয়।প্রবাসী অনেক মায়েরাই একা বাচ্চা লালন পালন করেন। বাচ্চার সংখ‍্যা এক, দুই বা তিন হোক। 

আধুনিক বাবারা শিশু পালনে মায়ের সমান ভূমিকা রাখেন
আধুনিক বাবারা শিশু পালনে মায়ের সমান ভূমিকা রাখেন
সব দায়িত্ব মায়ের

নাহিদা আফসানা ছাড়াও আরো অনেকের মন্তব‍্য থেকে এটা স্পষ্ট যে আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ মনে করেন বাচ্চাকে দুধ হোক আর সলিড– খাওয়ানোর দায়িত্ব শুধু মায়েরই। আসলে যারা রান্না করে বা ঘরের অধিকাংশ কাজ করেন তারা এসব করেই যথেষ্ট ক্লান্ত হবার কথা। খাওয়ানোর মত পরিশ্রমসাধ‍্য কাজ করার মত ধৈর্য‍্য তাদের থাকে না। অনেক সময় দেখবেন খাওয়ানোর লোকটা বদলে দিলে শিশু খাওয়ার আগ্রহ পায়।

এরকমই লিখেছেন ইসমাইল আহমেদ–আমি একজন বাবা আমার বাচ্চাকে আমিও খাওয়াই। অনেক সময় দেখা যায় তার মায়ের হাতে খাচ্ছে না কিন্তু আমার হাতে ঠিকই খাচ্ছে। বাচ্চাকে খাওয়াতে হলে সব চেয়ে বড় ব্যাপার- ধৈর্য‍্য। আর খাবারের ব্যাপারে অনেক সময় দেখা যায় মায়েরা একই রকম খাবার দিচ্ছে যেটা সব বাচ্চারা পছন্দ করে না। বাচ্চাদেরকে ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের খাবার দিতে হবে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার বাচ্চাদের খাওয়ানোর সময় ইলেকট্রিক ডিভাইসের অভ্যাস না করা। যেমন খাওয়ার সময় টিভি দেখানো, মোবাইল বা ট্যাব। এসবে বাচ্চাদের খাওয়ার রুচি কমে যায়।

খাবারে বৈচিত্র‍্য ও মোবাইল ডিভাইস

খাবারে বৈচিত্র‍্য না থাকাকে দায়ী করেছেন অনেক অভিভাবক। সাদিয়া ভূঁইয়া লিখেছেন- প্রতিদিন প্রায় একই রকম খাবার বাচ্চার খাওয়ার প্রতি আগ্রহ নষ্ট করে দেয় যেটা অধিকাংশ মায়েরাই করে থাকেন। আমি আমাদের জন্য যা রান্না করি বাচ্চাকে ঠিক সেটাই দেই। মাঝে মাঝে বেবি ফুড দেই। তাছাড়া খেজুর, বাদাম এগুলো আমার মনে হয় সব বাচ্চারাই ভালোবেসে খায় তাই এ ধরনের খাবার বাচ্চার খাদ্য তালিকায় রাখা দরকার বলে আমি মনে করি।
উমামা পুতুল মনে করেন, বাচ্চাদের টেস্ট খুব ঘন ঘন চেঞ্জ হয়। এইটা বাংলাদেশি মায়েরা বুঝতে চায় না। এখানে ৬ মাস থেকে প্রায় ২-৩ বছর বাচ্চাকে একই খাবার দেওয়া হয়। বাচ্চার নিজে হাতে ধরে খাওয়ানোর অভ্যাস করানো হয় না। খাবার যে একটা উপভোগের জিনিস এটাই বাচ্চা বুঝতে পারে না। ৬-১ বছরের মধ্যে জোরাজুরি অতিরিক্ত খাবার দিয়ে খাবারের প্রতি অনীহা তৈরি করা হয়। আর একটা প্রবণতা খুব দেখা যায়, ভাতই খেতে হবে। অন্য কোনো উপায় খুঁজি না আমরা। 

নুসরাত হাসনিন বিনতে বলছেন খাবারকে ভয়ের বিষয় বানানো যাবে না। তিনি লিখেছেন– বাচ্চাকে বাড়তি খাবার দেয়ার শুরু থেকে সিরিয়াল-সেরেলাক এই সমস্ত বিস্বাদ খাবারগুলা জোর করে খাওয়ানো, কিছুক্ষণ পর পর জোর করে খাওয়াতে থাকা যা বাচ্চাকে খাবারের প্রতি ভীত করে ফেলে। যেসময় থেকে বাচ্চা খাবারের স্বাদ বুঝা শিখবে, সেই সময়ে প্রতিদিন একই খাবার দেওয়া এবং ক্ষুধা লাগার আগেই ফিডারে ভরে দুধ দিতে থাকা যার কারণে বাচ্চার খাবারের প্রতি অনিহা তৈরি হতে থাকে। একসময় সে খাবার খাওয়াটা আতঙ্কের মতো হয়ে যায়।

আমি আমার বাচ্চাকে ৬ মাস থেকে পরিমিত এবং পুষ্টিকর খাবার দিয়েছি, জোরাজুরি করিনি। ভাত, ডাল, সবজি, শাক নিজেরা যা রান্না করেছি টিপে টিপে খাওয়াইছি, সপ্তাহে দুই তিন বেলা খিচুড়ি দিয়েছি, ক্ষুধা লাগলে সে নিজেই বুঝাবে যে তার ক্ষুধা লেগেছে সেই সুযোগ দিয়েছি। খাবারকে ভয়ের কারণ বানাইনি যার কারণে খাবার খাওয়ানোর জন্য কষ্ট করতে হয়না আমার। অল্প অল্প করে ঘরের সব খাবার দেই, বাহিরের কিছুই দেইনা, চিপস খেতে চাইলে ঘরে বানিয়ে দেই। 

সত‍্যি বলতে তার টিপস আমার খুব ভালো লেগেছে। আশা করি আপনাদেরও লাগবে। আবার এটাও সত‍্যি যে সব বাবা-মায়ের পক্ষে খাবার ঘরে তৈরি করা সম্ভব হয় না। তাতে মন খারাপের কিছু নেই।  

প্রচুর বাইরের খাবার খায়। চকলেট, চিপস সহ নানা প্যাকেটজাত খাবার খাওয়ার জন্য রুচি নষ্ট হয়ে যায়।মিত্রা-র এ কথাটিও কিন্তু সত‍্য।

খাবারকে ভয়ের বিষয় বানানোর কথা বলেছেন আরো অনেকে। তেমনই একজন ক্যাথরিনা বৈদ্য। খাবার দেয়ার ৫-১০ মিনিট আগে থেকেই বকা দেওয়া শুরু করে,,, তো খাবে কোন পেটে…!! বকা খেয়েই তো পেট ভরে যায়। আর কিছু কিছু বাবা-মা তো বেবিদের এত এত কেয়ার করে যে ৩০ মিনিট যেতে না যেতেই একটার পর একটা ঠেসে খাওয়ায়। আর কিছু বুড়ো বুড়ী আছে বলে আমার নাতিপুতির স্বাস্থ্য ভালো না পাশের বাড়ির বাবুটা কী সুন্দর গুলোমুলু, আমার নাতিপুতিকে একটু বেশি করে ভাত খাওয়া! কী আর বলব! শিশুর সুস্থতাই যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা কে কাকে বুঝায়! 

বাংলাদেশের মায়েরা ঘর নোংরা হওয়ার ভয়ে বাচ্চাদের হাত দিয়ে খাওয়ার প্র‍্যাকটিস করায় না–এটাকে না খাওয়ার কারণ মনে করেন মৌসুমী মালিহা। 
আবার তাসলিমা মাধবী বলছেন,   প্রতিবেলা সবাই যখন খাবে বাচ্চাকেও সাথে বসিয়ে রাখতে হবে। সবার খাওয়া দেখে বাচ্চা নিজ থেকেই খেতে চাইবে।
এদের দুইজনের কথাই সঠিক। বাচ্চাকে হাতে খেতে দিলে, সবার সঙ্গে খেতে দিলে ওরা খেতে আগ্রহ পায়।

বাচ্চারা একদম খায়না এটা যে কতবড় একটা মিথ্যা। একটা মানুষ কতদিন না খেয়ে বাঁচে। বলতে পারে কম খায় বা মায়ের মনের মতো খায় না। একটা বাচ্চার পেট এর সাইজ কতটুকু? তারমধ্যে একেক বাচ্চার খাদ্য চাহিদা বা মুখের রুচি ভিন্ন। এক্সাক্টলি ২ ঘণ্টা পরে পরে যদি ভাত, মাছ, খিচুড়ি টাইপ খাবার দেয়া হয় তাহলে বাচ্চা খাবেনা। তার ক্ষুধা লাগতে হবে তার জন্য তাকে অ্যাক্টিভ রাখতে হবে। প্রচুর খেলতে হবে, তাকে মুভমেন্ট করাতে হবে। আমাদের দেশে বাচ্চাদের খাওয়ার সময় মোবাইল বা টিভি খাওয়ার পরেই হয় ঘুম নাহয় টিভি, মোবাইল দিয়ে বসিয়ে রাখা হয়। ঘুম থেকে উঠলেই আবার সেই খাওয়া। সিস্টেমই নাই। আর একটা ব্যাপার যেটা অনেকেই মানেন না কিন্তু আমি বিলিভ করি প্রেগন্যান্সির শুরু থেকে একজন মা কীভাবে খাচ্ছে, কী খাচ্ছে সেগুলোর ওপরেও বাচ্চা জন্মানোর পরে তার খাওয়ার ওপরে প্রভাব ফেলে। শাম্মি সারোয়ার বেশ কড়া কথা বললেও কথার পেছনে কিন্তু যুক্তি আছে!

মায়ের থেকে মাসিদের দরদ বেশি। সারাদিন বলবে বাচ্চা এতো শুকনা কেন…. ঠিকমতো খাওয়ায় না, এটা খাওয়ায় না সেটা খাওয়ায় না… অন্যের বাচ্চা কত লম্বা কত মোটা তোমারটা এতো হ্যাংলা কেন.. এসব ফালতু মানুষ দের জন্য বাচ্চাদের জোর করে বেশি বেশি খাওয়ানোর চেষ্টা করে মায়েরা পরে হিতে বিপরীত হয়। লিখেছেন আয়েশা আবেদীন।
আসলেও অন‍্যদের কথায় মায়েদের মধ‍্যে অনেক বেশি প্রভাব পড়ে। তাই নিজেরা যেমন এ ধরনের কথা বলব না, তেমন এরকম কেউ বললে সেগুলো বেশি পাত্তা না দেয়াই ভালো।  


এ লেখাটি যদি আপনার কোনো কাজে এসে থাকে, কমেন্টে আমাদেরকে জানাতে ভুলবেন না!

Comments (02)

  1. Bithi akter
    August 24, 2023

    Italy

    Reply
  2. Nazifa
    September 20, 2023

    অনেক ধন্যবাদ, অনেক কিছু শিখেছি। প্লিজ কমপ্লিমেন্টারি ফুড নিয়ে আরো অনেক লেখা দিবেন, শুভ কামনা।

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *