ফরমুলা দুধ যেভাবে খাওয়াতে হয়

এ আর্টিকেলে যা থাকছে

মায়ের বুকের দুধ ছাড়াও শিশুকে আলাদাভাবে যে কৌটার দুধ খাওয়ানো হয় সেটাকে ফরমুলা দুধ বা ফরমুলা বলে। ফরমুলা নিয়ে যা যা জানা দরকার– ভালো ফরমুলা কোনটি, প্রতিবার কতটুকু খাওয়াতে হবে এবং অন্যান্য টিপস এখানে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।

শিশুকে ফরমুলা খাওয়ানোর সময় বেশ সতর্কতা পালন করতে হয়

অনেকে মনে করেন শিশুকে বোতলে দুধ খাওয়ানো খুব সহজ। শুধু এক বোতল দুধ বানিয়ে নিয়ে আরাম করে বসে শিশুকে খাওয়ালেই হলো! কিন্তু এই দুধ বানানো এবং খাওয়ানোর আগে অনেক কঠিন কাজ সারতে হয়। যেমন, কোন ফরমুলাটি শিশুকে খাওয়াবেন সেটা বাছাই করা, দোকান থেকে কেনা, দুধ বানানো এবং খাওয়ানোর পর অবশিষ্ট দুধ সংরক্ষণ করা। যার মানে ফরমুলা বানানোর আগে আপনাকে এ নিয়ে বেশ ভালোভাবে জানতে হবে। 

আপনি শিশুকে শুধুই ফরমুলা দুধ খাওয়ান বা মিক্সড ফিডিং করেন (বুকের দুধ ও ফরমুলা দুধ দুটোই খাওয়ানো)– এই আর্টিকেলটি আপনার কাজে লাগবে।

আপনার শিশুর জন্য যেকোনো ফরমুলা পরিবর্তন করার আগে অবশ্যই শিশু ডাক্তারের সাথে কথা বলা উচিত কারণ তিনি আপনাকে সব থেকে ভালো পরামর্শ দিবেন।অন্য ধরনের ফরমুলার ব্র্যান্ড পরিবর্তন করা কোন ব‍্যাপার না, যদি না আপনি শিশুর জন্য বিশেষ ধরনের ফরমুলার প্রয়োজন হয়। 

আপনার শিশু যে ধরনের ফরমুলা খেয়ে অভ‍্যস্ত, সেই ব্র্যান্ড বা টাইপ যদি খুঁজে না পান তাহলে আপনার শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ একটি ভালো বিকল্পের পরামর্শ দিতে পারেন। ব্র্যান্ড পরিবর্তন খারাপ না, তবে শিশুকে সবসময় একটি নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের ফরমুলা খাওয়ানো ভালো। অর্থাৎ আপনার শিশু যদি পাউডার জাতীয় ফরমুলা পান করে তাহলে আপনি একই ধরনের ফরমুলা অন্য কোম্পানিরটা দিতে পারেন।

ফরমুলা দুধ কী

ফরমুলা দুধ হলো শিশুর পুষ্টির একটি উৎস যা মায়ের বুকের দুধের পুষ্টি অনুকরণ করে তৈরি করা হয়েছে। মনে রাখবেন মায়ের দুধের বিকল্প বা তার সমান সমান কিছু নেই। যেসব শিশু মায়ের বুকের দুধ পায় না, তাদেরকে ফরমুলা দুধ খাইয়ে বুকের দুধের পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করা হয়। 

বাজারে এ তিন টাইপের ফরমুলা কিনতে পাওয়া যায়–

  • গুঁড়ো/পাউডার ফরমুলা: এটা সবচেয়ে বেশি ব‍্যবহৃত ফরমুলা কারণ এর দাম সবচেয়ে কম।একে আমরা গুঁড়ো দুধ বা পাউডার দুধ নামেও ডাকি। এ ফরমুলার সাথে পানি মিশিয়ে দুধ প্রস্তুত করে নিতে হয়।
  •  ঘন তরল জাতীয়/ কনসেন্ট্রেটেড লিকুইড ফরমুলা: এটা পাউডারের চেয়ে ঘন তবে এর সাথেও পানি মেশাতে হয়। 
  • প্রিমিক্সড, রেডি-টু-ইউজ ফরমুলা:  এ ফরমুলা একদম প্রস্তুত থাকে। আপনাকে কেবল বোতলের মুখ খুলতে হবে এবং শিশুকে খাওয়াতে হবে। পানি বা আর কিছু মেশানোর দরকার নেই। এবং এটার দাম বেশ চড়া।

দেশী বা বিদেশী– যে ফরমুলাই বেছে নিন না কেন, প্রায় সব ফরমুলাতেই শিশুর জন‍্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ, প্রোটিন, চর্বি, কার্বোহাইড্রেট, ক্যালসিয়াম এবং ইলেকট্রোলাইটসহ কয়েক ডজন গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান যোগ করা হয়। 

বর্তমানে বেশিরভাগ ফরমুলায় ডি এইচ এ (docosahexaenoic acid) , এ আর এ (arachidonic acid), ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-৬ ফ্যাটি এসিড রয়েছে। যা ব্রেইন ডেভেলপমেন্টে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। 

ফরমুলা কত ধরনের হয়

ফরমুলা দুধের কয়েকটি ধরন নিচে তুলে ধরা হলো যেন বাবা-মা সহজে তাদের শিশুর জন্য উপযুক্ত ফরমুলাটি বেছে নিতে পারে –

দুধের তৈরি আয়রনযুক্ত ফরমুলা 

আমেরিকায় যেসব ফরমুলা দুধ বিক্রি হয় তার ৮০ শতাংশই গরুর দুধের তৈরি। এতে থাকে ‘প্রোটিন’ যা শিশু সহজে হজম করতে পারে, দুধের চিনি বা ল্যাকটোজ (যা বুকের দুধেও থাকে), আর থাকে উদ্ভিজ্জ তেল যা বুকের দুধে যে চর্বি থাকে তার পরিপূরক। 

শিশুর বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য আয়রন খুবই প্রয়োজনীয়, তাই আমেরিকান একাডেমি অফ পেডিয়াট্রিকস (AAP) কমপক্ষে ১ বছর বয়স পর্যন্ত আয়রন সমৃদ্ধ ফরমুলা খাওয়ানোর পরামর্শ দেয়। বাজারে গরুর দুধের এমন ফরমুলাও পাওয়া যায় যা ল্যাকটোজ মুক্ত। কারণ অনেক শিশুর পেটে ল‍্যাকটোজ সয় না। 

মনে রাখবেন, ১২ মাসের কম বয়সী শিশুদের সরাসরি গরুর দুধ খাওয়াতে বলা হয় না। কারণ এটি শিশুর বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির সবটা সরবরাহ করে না। ২০২২ সালে আমেরিকায় একবার ফরমুলা দুধের বেশ সংকট দেখা দিয়েছিল। তখন এএপি(AAP) পরামর্শ দিয়েছিল যে, কোথাও যদি ফরমুলা খুঁজে না পাওয়া যায় তাহলে ৬ মাস বা তার বেশি বয়সী শিশুদের গরুর দুধ বিকল্প হিসেবে অল্প কিছুদিন দেওয়া যেতে পারে। যদিও এটা আদর্শ নয় এবং শিশুকে নিয়মিত দেওয়া উচিত নয়। বাজারে ফরমুলা দুধের ঘাটতি পূরণ হওয়ার সাথে সাথে গরুর দুধ পরিবর্তন করে ফরমুলা দুধ দেওয়া শুরু করা উচিত। 

হাইড্রোলাইজড ফরমুলা 

যেসব শিশুর দুধে অ‍্যালার্জি থাকে বা দুধ হজমে বেশ কষ্ট হয় তাদের জন‍্য এ ধরনের ফরমুলা ব‍্যবহার করা হয়। তবে এটা বেশ দামী। 

এ ধরনের ফরমুলায় প্রোটিনের উপাদান ছোট ছোট প্রোটিনে বিভক্ত থাকে, যা শিশু সহজে হজম করতে পারে। যে কারণে এটি ‘প্রিডাইজেস্টেড ফরমুলা’ নামেও পরিচিত। বেশিরভাগ হাইড্রোলাইজড ফরমুলা ল্যাকটোজ মুক্ত এবং বোতলের গায়ে ‘হাইপোঅ্যালার্জেনিক’ লেখা থাকে। 

হাইড্রোলাইজড বা আংশিকভাবে হাইড্রোলাইজড ফরমুলা ব্যবহার করার সময় অনেক কিছু বিবেচনা করতে হয়। আপনার শিশুর যদি অ্যালার্জির প্রবণতা বেশি থাকে তাহলে এই ধরনের ফরমুলা খাওয়াতে হবে। তবে অবশ‍্যই এ বিষয়ে আগে তার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন। 

সয়া-ভিত্তিক ফরমুলা 

সয়া-ভিত্তিক ফরমুলাগুলো সয়াবিন থেকে তৈরি করা হয়। সাথে যোগ করা হয় প্রয়োজনীয় ভিটামিন, মিনারেলস বা পুষ্টি উপাদান। যেহেতু সয়া ফরমুলা বুকের দুধ এবং গরুর দুধের চেয়ে অনেক বেশি আলাদা, তাই বিশেষ পরিস্থিতি ছাড়া শিশুকে এই ফরমুলা খাওয়ানো হয় না। 

ধরুন আপনার শিশুর গরুর দুধে এলার্জি আছে, তখন ডাক্তার হয়তো শিশুকে এই ফরমুলা দিতে সুপারিশ করতে পারে। তবে মনে রাখবেন, যে শিশুর দুধে এলার্জি থাকে, তাদের সয়া প্রোটিনের প্রতিও সংবেদনশীল হওয়ার আশঙ্কা বেশি।

এএপি(AAP) সয়া-ভিত্তিক ফরমুলা শুধু কয়েকটি পরিস্থিতিতে ব্যবহার করা উচিত বলে সুপারিশ করে। যখন কোন শিশু ল্যাকটোজ সহ্য করতে পারে না, তখন তাকে সয়া ফরমুলার মতো ল্যাকটোজমুক্ত ফরমুলা সুপারিশ করা হয়। তবে এই ফরমুলা শুরু করার আগে শিশু বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলে নিন। এমনও হতে পারে আপনার শিশুর সাময়িক সমস্যাগুলো ল্যাকটোজের কারণে না হয়ে, অন্য কোন কারণে হচ্ছে। 

বিশেষ ধরনের ফরমুলা 

কোনো কোনো শিশুর বিশেষ ধরনের ফরমুলা দুধের প্রয়োজন হতে পারে। প্রিম্যাচিউর শিশু, গরুর দুধ ও সয়া ফরমুলাতে এলার্জি আছে এমন শিশু এবং যাদের হজমে সমস্যা বা এ জাতীয় রোগ আছে (যেমন: Phenylketonuria)

এই বিশেষ ধরনের ফরমুলাগুলো প্রয়োজন ছাড়া এবং ডাক্তারের অনুমতি ছাড়া ব‍্যবহার করা হয় না। এগুলো সাধারণত হাইপোঅ্যালার্জেনিক, ল্যাকটোজ-মুক্ত এবং হজম করা সহজ। এবং এগুলো অনেক দামী।   

অরগ‍্যানিক ফরমুলা

অরগ‍্যানিক খাবারের মতই অরগ‍্যানিক ফরমুলা হলো সেসব গরুর দুধ থেকে তৈরি ফরমুলা যাদের লালন পালনে কোনো অ্যান্টিবায়োটিক বা গ্রোথ হরমোন ব্যবহার করা হয় না। কোনো ধরনের কীটনাশক, হার্বিসাইড না দিয়ে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক খাবার ও পরিবেশে বড় করা হয় এসব গাভী।

প্রোবায়োটিক এবং প্রিবায়োটিক ফরমুলা 

আপনারা নিশ্চয়ই অনেক খাবারের গায়ে এখন প্রোবায়োটিক বা প্রিবায়োটিক কথাটা লেখা থাকতে দেখেন। আমাদের পেটে অসংখ‍্য ব‍্যাকটেরিয়া থাকে যেগুলো হজমে আমাদেরকে সাহায‍্য করে। প্রোবায়োটিক হলো সেইসব ব‍্যাকটেরিয়া। (যেমন প্রোবায়োটিক টক দই) আর প্রিবায়োটিক হলো এসব ব‍্যাকটেরিয়া খায় বা পছন্দ করে এমন পুষ্টি। এগুলোকে আপনি প্রোবায়োটিকের সারও বলতে পারেন।  (যেমন রসুন, পেঁয়াজ)

শিশুদের কিছু ফরমুলাতে এখন প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া যুক্ত করা হয়েছে। এগুলো সুস্থ শিশুদের ডায়রিয়া প্রতিরোধ করতে সহায়তা পারে।তবে গুরুতর অসুস্থ শিশুদের প্রোবায়োটিক দেয়া উচিত নয়। এই ফরমুলাটি ডায়রিয়া হয়ে গেলে তার চিকিৎসায় কাজ করে কিনা তা এখনও পরিস্কার নয়। 

প্রিবায়োটিক দিয়ে তৈরি ফরমুলা পুষ্টির আরেক বিকল্প। বুকের দুধে প্রাকৃতিকভাবে যে অলিগোস্যাকারাইড পাওয়া যায়, এ দুধেও সে উপাদান দেয়া হয় তবে এটি প্রাকৃতিকভাবে তৈরি নয়। এই অলিগোস্যাকারাইড শিশুর অন্ত্রে স্বাস্থ্যকর আবরণ তৈরি করতে পারে। সুস্থ শিশুদের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য কিছু ফরমুলায় প্রিবায়োটিক ফরমুলা যোগ করে খাওয়ানো হয়।

তবে যে কোন ফরমুলা খাওয়ানোর আগে শিশুর ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেয়াই সবচেয়ে ভালো। 

ফরমুলা কিভাবে তৈরি করবো

ফরমুলা দুধ প্রস্তুত করার প্রক্রিয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এর পুষ্টিগুণ নির্ভর করে দুধ ও পানির সঠিক পরিমাপের ওপর। আপনি শিশুকে যে ফরমুলা খাওয়াবেন তার প‍্যাকেটে বা কৌটায় যেভাবে নির্দেশনা লেখা আছে সেভাবেই ফরমুলা বানাতে হবে। মনে রাখবেন, অন‍্যের ধারণা বা পদ্ধতি অনুসরণ করে নয়, যেটা আপনি খাওয়াচ্ছেন সেটার নির্দেশনাই অনুসরণ করা জরুরি। তাই দুধ বানানোর আগে কৌটার গায়ে লেখা পরিমাপ ভালো করে বুঝে নেবেন। 

ফরমুলা প্রস্তুত করার জন্য এই ধাপগুলো অনুসরণ করুন–

  • সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিন। ফরমুলা প্রস্তুত করার আগে আপনার হাত সাবান এবং গরম পানি দিয়ে খুব ভালোভাবে ধুয়ে নিন। যে বোতলে ফরমুলা দুধ প্রস্তুত করবেন সেই বোতল, নিপল এবং বোতলের ঢাকনা খুব ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিবেন। এটা খুব জরুরি।
  • ফরমুলার কৌটা ও কৌটা খোলার যন্ত্র পরিস্কার করুন। পাউডার জাতীয় ফরমুলার কৌটা খোলার আগে, এর ওপরের অংশ ভালোভাবে ধুয়ে শুকিয়ে নিন। যেটা দিয়ে কৌটা খুলবেন (ধরা যাক একটি চামচ) সেটিও ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে নিবেন।
    ফরমুলা যদি তরল হয় তাহলে সেটা খুলতে একটি পরিষ্কার, পাঞ্চ-টাইপ ক্যান ওপেনার ব্যবহার করুন। সহজে দুধ ঢালার জন্য একটি বড় এবং একটি ছোট মোট দুটি ছিদ্র করুন। প্রতিবার ব্যবহারের পর ওপেনারটি ধুয়ে ফেলুন। 
  • পানি দিয়ে শুরু করুন। সবসময় বোতলে আগে পানি ঢালবেন। এরপর গুঁড়ো দুধ মেশাবেন। 
  • নিরাপদ পানি ব্যবহার করুন।  দুধ বানানোর জন্য সব সময় নিরাপদ পানি ব্যবহার করা জরুরি। ট্যাপের পানি ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে এরপর ব্যবহার করুন। 
  • সঠিকভাবে পরিমাপ করুন। প্যাকেটের গায়ে লেখা নির্দেশাবলী অনুসারে পানির পরিমাণ এবং গুঁড়ো দুধের পরিমাপ ঠিক করুন। দুধের তুলনায় পানির পরিমাণ বেশি হলে পুষ্টিগুণ কমে যায়। অন্যদিকে দুধ বেশি আর পানি কম হলে, শিশুর কিডনি ও পরিপাকতন্ত্রের ওপর প্রভাব ফেলে, যার ফলে পানিশূন‍্যতা হতে পারে। 
  • ফরমুলা কখনোই পাতলা করে বানাবেন না। টাকা বাঁচানোর জন্য বা ১ কৌটা দুধ বেশি দিন খাওয়ানোর জন্য কখনোই দুধে অতিরিক্ত পানি মিশিয়ে পাতলা করবেন না। এটা খুবই বিপদজনক কারণ অতিরিক্ত পানি মেশানোর ফলে পুষ্টির ঘাটতি অথবা শিশুর খিঁচুনি হতে পারে। 
  • বোতলটি ভালোভাবে ঝাঁকান। পাউডার বা গুঁড়ো দুধ পানিতে ভালোভাবে মেশানোর জন্য বোতলটি শুধু চামচ দিয়ে না নেড়ে ভালোভাবে ঝাঁকাতে হবে ।  
  • মাইক্রোওয়েভ বা চুলায় গরম করবেন না। ফরমুলা কখনো মাইক্রোওয়েভ বা চুলায় গরম করবেন না।অতিরিক্ত গরম হলে শিশুর মুখ পুড়ে যেতে পারে। 
  • প্রয়োজনে পানি ফুটিয়ে নিন। শিশুর বয়স যদি  ৩ মাসের কম হয়, সময়ের আগে জন্ম হয় বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে, তাহলে প্রথমে পানি ফুটিয়ে নিন, এরপর ৫ মিনিট ধরে ঠাণ্ডা হতে দিন। একটি পরিস্কার বোতলে পানি ঢালুন, পরিমাণ মতো গুঁড়ো দুধ দিন, এরপর বোতলের মুখ বন্ধ করে ভালোমতো ঝাঁকান।প্রথমে পানি ফুটিয়ে নিলে ক্রোনোব্যাক্টরের মতো জীবাণু থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। বাংলাদেশের মত দেশে যেখানে কলের পানি নিরাপদ না সেখানে সবসময় পানি আগে ফুটিয়ে ব‍্যবহার করা উচিত।
কোন বয়সে কতটুকু খাওয়াতে হয়?

মাত্র জন্ম নেয়া শিশুর ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে দুধের পরিমাণ বাড়ানো শুরু করবেন। জন্মের কয়েকদিন পরে শিশু প্রতিবেলা ১-৩ আউন্স বা ৩০-৯০ মিলিলিটার দুধ লাগবে। এখানে কয়েকটি বিষয় মনে রাখতে হবে। বাচ্চা সঠিক ওজন এবং সঠিক সময়ে হয়েছে কিনা। বাচ্চা যখন আগেই জন্মায় তখন তার চাহিদা অন‍্যরকম হয়।স্বাভাবিক শিশুর ক্ষেত্রে যতবার যতটুকু খেতে চায় ততটুকুই দিতে পারবেন। কিছু লক্ষণ আছে যা দেখে আপনি বুঝতে পারবেন শিশুর ক্ষুধা লেগেছ। 

  • শিশু নিজের হাত,আপনার জামা বা হাত ক্ষিপ্রগতিতে চুষতে থাকবে। 
  • আপনার বুকে নাক ঘষবে 
  • মুখ হাঁ করবে
  • রুটিং রিফ্লেক্স (মুখ হাঁ করে তার মাথাটা একপাশে কাঁত করে খাবার খুঁজবে)
  • ঠোঁট বা জিভ চুষবে, যা দেখে মনে হতে পারে যে সে জিভ বের করে রেখেছে 
  • ঠোঁট দিয়ে চুক চুক শব্দ করবে
  • অতিরিক্ত ক্ষুধা লেগে গেলে কান্না শুরু করবে

ধীরে ধীরে শিশুর চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে খাওয়ানোর পরিমাণ বাড়ান, কিন্তু শিশুকে কখনোই বেশি খেতে বা বোতল পুরোটা শেষ করতে জোর করবেন না। সে যদি ক্রমাগত বড় হতে থাকে, ওজন বাড়তে থাকে, বেশিরভাগ সময় তাকে দেখে সন্তুষ্ট মনে হয় এবং বেশি পরিমাণ লালা না ফেলে, তাহলে বুঝবেন যে সে সঠিক পরিমাণে খাচ্ছে। 

আরো বেশি জানার প্রয়োজন হলে, শিশুকে কতটুকু দুধ খাওয়াবেন তা জানতে আপনার শিশুর ডাক্তারের সাথে কথা বলতে পারেন।

নবজাতকের ওজন নিয়ে যা যা জানা জরুরি
নবজাতকের ওজন নিয়ে যা যা জানা জরুরি https://www.paromitarprotidin.com/baby-weight/
সবচেয়ে ভালো ফরমুলা কোনটি

এটা বলা বেশ মুশকিল। কারণ একেক শিশুর শরীর একেকরকম। তাই একেক শিশুর পেটে একেক ফরমুলা সয়। প্রথমে যে কোন ফরমুলার ছোট প‍্যাকেট কিনবেন। যদি দেখেন শিশু সেটা খেয়ে সন্তুষ্ট আছে তখনই সেই একই ফরমুলার বড় প‍্যাকেট কিনবেন। 

শিশুর যদি এলার্জি না থাকে, পুরো মাস পূর্ণ হয়ে জন্মগ্রহণ করে, এবং সুস্থ থাকে তাহলে যে ফরমুলাটি আপনার বাসার কাছের দোকানে সহজেই খুঁজে পাওয়া যায় এবং শিশুও পছন্দ করছে বলে মনে হয় সেটাই দিতে পারেন। শিশুর ডাক্তার আপনাকে অবশ্যই একটি ভালো ফরমুলা সুপারিশ করবে। এছাড়াও আপনার শিশু যে হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেছে সেখানে যে ফরমুলাটি তাকে দেয়া হয়েছিল সেটা দিয়েও শুরু করতে পারেন। 

বাজারে ফরমুলা যে ধরনেরই পাওয়া যাক না কেন পুষ্টির দিক থেকে সবগুলো সমান এবং সবগুলোই এফডিএ (FDA) এর অনুমোদিত। (বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ‍্য নয়)

পাউডার ফরমুলা সাধারণত অন্যগুলোর তুলনায় কম দামের হয়। যদিও পাউডার ফরমুলা বানাতে ঝামেলা বেশি।

 

ফরমুলা দুধের দাম কেমন

শিশুর ফরমুলার দাম তুলনামূলক একটু বেশি হয়। শিশুর প্রথম বছরে ফরমুলার জন্য আমেরিকাতে ১২০০ ডলার থেকে ১৫০০ ডলারের মত খরচ হতে পারে, মাসে প্রায় ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকার মতন। আমেরিকার সবচেয়ে জনপ্রিয় ফরমুলা হল এনফোমিল ও সিমিলাক। একই কোম্পানির নানা রকম ও নানা বয়সের ফরমুলা আছে। 

বাংলাদেশে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের যেসব ফরমুলা পাওয়া যায় সেগুলোর দাম মূলত ৬০০ থেকে ১৪০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। কয়েকটি প্রচলিত ফরমুলা ও ২০২৩ সালে এগুলোর দাম নিচে উল্লেখ করা হল।

  • প্রাইমা (PRIMA) ৪০০ গ্রাম  ৭৮০ টাকা 
  • বায়োমিল (BIOMIL) ৪০০ গ্রাম ৬৯০ টাকা 
  • ল্যাক্টোজেন (LACTOGEN) ৩৫০ গ্রাম ৬৫০ টাকা
  • সিমিল্যাক (SIMILAC) ৪০০ গ্রাম ৭৪০ টাকা
  • নান (NAN)৩৫০ গ্রাম ৯০০ টাকা

 

আপনি কোন ধরনের ফরমুলা ব‍্যবহার করবেন তার উপর নির্ভর করে আপনার কত খরচ হবে। 

বিশেষ ধরনের ফরমুলার দাম বেশি। পাউডার জাতীয় ফরমুলার দাম সবথেকে কম, যেটা আপনার নিজেকে প্রস্তুত করতে হয়৷ সবচেয়ে দামি ফরমুলা হলো রেডি-টু-ইট (যেটা প্রস্তুত করাই থাকে, শিশুকে শুধু খাওয়াতে হয়)। 

আপনি যদি খরচ কমাতে চান এবং একই সাথে ফরমুলাও দিতে চান তাহলে এক কাজ করতে পারেন। 

  • শিশুর প্রথম কয়েক সপ্তাহে যখন মায়ের ঘুমানো কঠিন হয়ে পরে তখন রেডি টু ফিড ফরমুলা ব্যবহার করতে পারেন। 
  • রাত ২ টায় ফরমুলা প্রস্তুত না করে রেডি-টু-ফিড ফরমুলা ব্যবহার করতে পারেন। 
  • কুপন এবং রিবেট চেক এর জন্য ফরমুলা প্রস্তুতকারকের ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করার চেষ্টা করুন।(আমেরিকার জন‍্য প্রযোজ‍্য) 
  • ব্র‍্যান্ড বাদ দিয়ে জেনেরিক ফরমুলা কিনলে খরচ কম হবে। 
  • বিভিন্ন হেল্প গ্রুপ, কমিউনিটি গ্রুপে অনেকে ফ্রি ফরমুলা দেয়। সেগুলোতে যুক্ত থাকতে পারেন। ( (আমেরিকার জন‍্য প্রযোজ‍্য) 
ফরমুলা কি সবসময় উষ্ণ খাওয়ানো উচিত

ফরমুলা গরম করা স্বাস্থ্যসম্মত নয়, তবে আপনি যদি ক্লান্ত হয়ে পড়েন বা রাতের মাঝামাঝি সময়ে শিশুকে দুধ খাওয়াতে হয় তাহলে রুমের স্বাভাবিক তাপমাত্রার বোতলে খাওয়ানো যেতে পারে। কিন্তু আপনি যদি বোতল গরম করতে চান তাহলে একটি পাত্রে গরম পানি নিয়ে কাঁচের বোতলে দুধ গরম করে নিন। 

কখনোই ফরমুলার বোতল মাইক্রোওভেন বা চুলায় গরম করবেন না, এতে বোতলটি বেশি গরম হয়ে যেতে পারে যা থেকে শিশুর মুখ বা গাল পুড়ে যেতে পারে।

প্লাস্টিকের বোতল কখনোই গরম করা উচিত নয়। 

শিশুকে খাওয়ানোর আগে অবশ্যই আপনার হাতের কব্জিতে দুধের তাপমাত্রা পরীক্ষা করে নিবেন।

ফরমুলা বানানোর পর কতক্ষণ রেখে দেয়া যায়

শিশুকে ফরমুলা দুধ খাওয়ানোর সবচেয়ে নিরাপদ উপায় হলো একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর খাওয়ানো এবং নিরাপদে সংরক্ষণ করা। 

ফরমুলা বানানোর ২ ঘন্টার মধ্যে শিশুকে খাওয়াতে হবে, প্রথমে যদি অল্প পরিমাণ খেয়ে শিশু রেখে দেয় তাহলে বাকিটা ১ ঘন্টার মধ্যে খাইয়ে ফেলতে হবে (যদি সেটা ঘরের তাপমাত্রায় থাকে)। ফরমুলা বানানোর পর যদি ২ ঘণ্টার মধ্যে শিশুকে না খাওয়ান, সেটা ফ্রিজে রাখুন এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবহার করুন। 

 

খাওয়ানোর শেষে বোতলে যদি সামান্য পরিমাণ দুধ অবশিষ্ট থাকে তাহলে সেটা ফেলে দেয়া সব থেকে নিরাপদ। কারণ শিশুর লালা এবং বোতলের ফরমুলার সংমিশ্রণে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে। এজন‍্য এক বোতলে সব ফরমুলা না বানিয়ে কমপক্ষে তিনটি বোতলে অল্প করে বানান। তাহলে অপচয় রোধ করতে পারবেন। যদিও এতে আপনার বেশি বোতল পরিস্কার করতে হবে।

ফরমুলার কারণে কি শিশুর পায়খানা শক্ত হতে পারে?

সাধারণত ফরমুলা খাওয়া শিশুদের পায়খানায় গন্ধ বেশি হয়। রং গাঢ় হয় (বাদামি-সবুজ ও হতে পারে), এবং বুকের দুধ খাওয়া শিশুর পায়খানার চেয়ে শক্ত হয়। 

একেক শিশুর পায়খানা একেক রকমের এবং বেশিরভাগেরই গন্ধ বা রঙ হয়। এটা খুবই সাধারণ তাই এটা নিয়ে চিন্তা করার কিছু নেই। 

বিপদজনক লক্ষণ যা দেখলে ফরমুলা বদলাতে হবে তা হল শিশুর পায়খানা যদি –

  • শক্ত ও নুড়িযুক্ত মনে হয়
  • পিনাট বাটারের চেয়ে অনেক বেশি ঘন হয়
  • একদম পানির মতো হয়
  • লাল বা কালো রঙের হয়
  • চকের মতো সাদা রঙের হয় 

তাহলে দ্রুত আপনার শিশু বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করুন।

আপনি কি ফরমুলা পরিবর্তন করতে পারেন?

আপনার শিশুর জন্য যেকোনো ফরমুলা পরিবর্তন করার আগে অবশ্যই শিশু ডাক্তারের সাথে কথা বলা উচিত কারণ তিনি আপনাকে সব থেকে ভালো পরামর্শ দিবেন।অন্য ধরনের ফরমুলার ব্র্যান্ড পরিবর্তন করা কোন ব‍্যাপার না, যদি না আপনি শিশুর জন্য বিশেষ ধরনের ফরমুলার প্রয়োজন হয়। 

আপনার শিশু যে ধরনের ফরমুলা খেয়ে অভ‍্যস্ত, সেই ব্র্যান্ড বা টাইপ যদি খুঁজে না পান তাহলে আপনার শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ একটি ভালো বিকল্পের পরামর্শ দিতে পারেন। ব্র্যান্ড পরিবর্তন খারাপ না, তবে শিশুকে সবসময় একটি নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের ফরমুলা খাওয়ানো ভালো। অর্থাৎ আপনার শিশু যদি পাউডার জাতীয় ফরমুলা পান করে তাহলে আপনি একই ধরনের ফরমুলা অন্য কোম্পানিরটা দিতে পারেন।

কখন ফরমুলা বন্ধ করব

বেশিরভাগ শিশুর ১ বছর বয়সে ফরমুলা পরিবর্তন করে গরুর দুধ পান করা উচিত, তার আগে নয়। গরুর দুধ ১ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য সুপারিশ করা হয় না কারণ এতে তাদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি থাকে না এবং তাদের সংবেদনশীল পেটের জন্য হজম করা কঠিন হতে পারে। 

গরুর দুধ ফরমুলা দুধের মত মিষ্টি নয়, তাই শিশুর এই স্বাদে অভ্যস্ত হতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। যদি সে খেতে না চায় তাহলে প্রথম দিকে বোতলে ফরমুলার সাথে গরুর দুধ মিশিয়ে দিতে পারেন। বোতলে ফরমুলা অবশ্যই আগে প্রস্তুত করে নিতে হবে। সেই সময়ে, প্রতিদিন ২ থেকে ৩ কাপ (১৬ থেকে ২৪ আউন্স/ ৪৮০-৭২০ মিলিলিটার)  গরুর দুধ দেয়ার চেষ্টা করবেন। 

এক বছর বয়স, শিশুকে সিপি কাপ বা খোলা কাপের সাথে পরিচয় করানোর জন্য একটি ভালো সময়।

কিছু বাবা-মা শিশুকে সরাসরি খোলা কাপ থেকে গরুর দুধ খেতে দিতে পছন্দ করেন, তবে ধীরে ধীরে আগানোর পদ্ধতিটাও ভালো। আমেরিকার ডাক্তাররা ১২ থেকে ১৫ মাস বয়সের মধ্যে শিশুকে বোতল থেকে দুধ ছাড়ানোর পরামর্শ দেয়।

Philips AVENT Natural Trainer Sippy Cup with Natural Response Nipple and Soft Spout, 5oz,
Philips AVENT Natural Trainer Sippy Cup with Natural Response Nipple and Soft Spout বাংলাদেশে পাবেন www.facebook.com/paromita.baby
ফরমুলা ব্যবহার করার সময় কিছু নিরাপত্তা টিপস

শিশুকে ফরমুলা খাওয়ানো সবথেকে সহজ। তবে এটি কেনা, প্রস্তুত করা এবং সংরক্ষণ করার সময় আপনাকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। 

আপনার শিশুর জন্য ফরমুলা যতটা সম্ভব নিরাপদ করতে এই টিপসগুলো অনুসরণ করুন – 

  • ফরমুলার কৌটাটি পরীক্ষা করুন। ফরমুলা কেনার সময় সব সময় এর মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ পরীক্ষা করুন। যদি এটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়, প্রত্যাহার করা হয় বা কোটাটি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ( ফুঁটো থাকে,ডেন্টেড বা মরিচা পরে) তাহলে এটি কিনবেন না বা ব্যবহার করবেন না। 
  • ঠিকভাবে মেশান। ফরমুলার সাথে পানি মেশানো দরকার কিনা তা দেখতে বোতলের লেবেলটি পরীক্ষা করুন। যদি সেখানে পানি মেশানোর কথা বলা থাকে, তবে লেবেলে দেয়া পরিমাপ অনুসরণ করুন। দুধের তুলনায় পানির পরিমাণ বেশি হলে পুষ্টিগুণ কমে যায়। অন্যদিকে দুধ বেশি এবং পানি কম হলে, শিশুর কিডনি ও পরিপাকতন্ত্রের উপর প্রভাব ফেলতে পারে, যার ফলে ডিহাইড্রেশন হয়। 
  • ফরমুলা নিজে তৈরি করবেন না। বাড়িতে তৈরি ফরমুলা কখনোই নিরাপদ নয় এবং AAP দৃঢ়ভাবে অভিভাবকদের বাড়িতে শিশু ফরমুলা তৈরি না করার জন্য অনুরোধ করে। বাড়িতে ফরমুলা তৈরির জন্য সঠিক পরিমাণে সমস্ত উপাদান নিয়ে আসা অসম্ভব, যার মানে বাড়িতে তৈরি ফরমুলা থেকে শিশু সঠিকভাবে পুষ্টি পাবে না এমনকি প্রাণঘাতীও হতে পারে। 
  • সর্বোচ্চ পরিষ্কার থাকুন। ফরমুলার কোটাটি খোলা অবস্থায় থাকলে সেখানে কিছু নির্দিষ্ট জীবাণু, যেমন ক্রোনোব্যাক্টর, জন্মানোর আশঙ্কা থাকে। দূষণের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য সিঙ্ক, পাত্রের ঢাকনা, নিচের অংশ, বোতল সাবান পানি দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করুন। বোতলে ফরমুলা তৈরি করার আগে, শিশুর মুখ বা প্যাসিফায়ার স্পর্শ করার আগে, বাথরুম ব্যবহার করার পর এবং ডায়পার পরিবর্তন করার পরে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড ধরে আপনার হাত ধুতে হবে। 
  • নিরাপদ পানি ব্যবহার করুন। সুস্থ থাকার জন্য পানি ফুটিয়ে ব্যবহার করা একটি ভালো পদ্ধতি। ফরমুলা মেশানোর জন্য আপনার পানি কতটা নিরাপদ তা জেনে রাখা ভালো। পানি কতটা নিরাপদ তা পরীক্ষা করুন, প্রয়োজনে বিশুদ্ধ করে নিন। অথবা শুধু বোতলজাত পানি ব্যবহার করুন। 
  • অবশিষ্টাংশ ফেলে দিন। শিশুর লালা থেকে বোতলে ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে, তাই সব সময় অবশিষ্টাংশ ফেলে দিবেন। ফরমুলার অপচয় কমাতে অল্প পরিমাণে তৈরি করুন, যেমন প্রথমে ২ আউন্স বা ৬০ মিলি প্রস্তুত করুন। শিশু যদি এরপরও ক্ষুধার্ত থাকে তাহলে তাকে আবার বানিয়ে দিন। 
  • ফরমুলা প্রস্তুতকৃত বোতল ফ্রিজে রাখুন। আপনি যদি দূরে কোথাও ভ্রমণ করেন তাহলে আগে বানিয়ে রাখা বোতলগুলো অনেকক্ষণ ঠাণ্ডা ধরে রাখে এমন পাত্রে একটি ছোট বরফের প্যাক বা এক ডজন আইস কিউব সহ একটি শক্তভাবে সিল করা প্লাস্টিকের ব্যাগে সংরক্ষণ করুন। যতক্ষণ বরফগুলো গলে না যাবে ততক্ষণ বোতলের ফরমুলা ঠিক থাকবে। 
যে ভুলগুলো করা যাবে না

আধুনিক যে ফরমুলা দুধ তা দশ বছর আগেও এমন ছিল না। আগের কৌটার দুধ খাওয়ানোর নিয়ম বা পদ্ধতি ছিল একেবারেই অন‍্যরকম। তাই আমাদের দেশে অনেক বাবা-মা বা প্রবীণেরা ফরমুলা খাওয়ানোর ক্ষেত্রে এমন সব ভুল করে থাকেন যা শিশুর জন‍্য বেশ ক্ষতিকর। এরকমই কয়েকটি বিষয় এখানে আলোচনা করা হল। 

ফরমুলা সাথে অন্য কিছু মেশানো

অনেকে পুষ্টি বাড়ানোর জন‍্য ফরমুলার সাথে চিনি, তাল মিছরি, মধু ইত্যাদি মিশিয়ে শিশুকে খাওয়ান। ফরমুলার প্যাকেটের গায়ে স্পষ্টভাবে লেখা থাকে পানি ছাড়া অন্যকিছু কোনোভাবেই মেশানো যাবে না। মিষ্টি জাতীয় খাবার বা মিষ্টি স্বাদ শিশুর রুচি নষ্ট করে। এবং এতে শিশুর স্বাস্থ‍্যের ক্ষতি ছাড়া কোন লাভ হয় না।    

সময় সীমা না মানা

আপনি যে ফরমুলাই খাওয়ান না কেন, প্রতিটি ফরমুলার প‍্যাকেটে মেয়াদ বা সময়সীমা লেখা থাকে। কোনোটি হয়তো প্যাকেট খোলার পর ২১ দিন পর্যন্ত খাওয়ানো যাবে। আবার কোনটি হয়তো ২৫ দিন। প‍্যাকেট খোলার পরে সেটা সঠিকভাবে মুখ বন্ধ করে রাখা যেমন জরুরি তেমন এ সময়সীমা মেনে চলাও খুব দরকার। অভিভাবকরা অনেক সময় এই নির্ধারিত সময়টি খেয়াল করেন না। যার ফলে সময় পার হয়ে যাওয়ার পরেও শিশুকে সেই ফরমুলা  খাওয়াতে থাকেন। এটা শিশুর জন্য খুবই ক্ষতিকর।

আপনি যেদিন ফরমুলার প‍্যাকেট খুলছেন সে তারিখ ফরমুলার গায়ে সাইনপেন দিয়ে লিখে রাখুন। তাহলে আর ভুলে যাবার আশঙ্কা নেই। চাইলে যতদিন মেয়াদ আছে হিসাব করে সে দিনটিও লিখে রাখতে পারেন।  

বয়স অনুযায়ী ফরমুলা  না দেয়া

বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ফরমুলা শিশুর বয়স অনুযায়ী প্রস্তুত করা হয়। ০-৬ মাস বয়স পর্যন্ত ১ নম্বর ( যেমন ধরুন ল্যাকটোজেন ১), ৬-১২ মাস বয়স পর্যন্ত ২ নম্বর ( ল্যাকটোজেন ২), ১২ – ২৪ মাস বয়স পর্যন্ত ৩ নম্বর (ল্যাকটোজেন ৩) ২-৫ বছর বয়স পর্যন্ত ৪ নম্বর (ল্যাকটোজেন ৪)।

বিদেশী ফরমুলাতে নিউবর্ন, ইনফ‍্যান্ট এবং টডলার লেখা থাকে। 

প্রতিটা ব্র্যান্ডের ফরমুলা শিশুর বয়স অনুযায়ী প্রস্তুত করা হয়। অনেক বাবা-মা ভুল করে শিশুর  নির্দিষ্ট বয়সে যে ফরমুলা প্রয়োজন সেটা না দিয়ে অন্য বয়সের ফরমুলা দিয়ে থাকেন। যেমন ৫ মাস বয়সী শিশুকে ল্যাকটোজেন ১ খাওয়াতে হবে, সেখানে বাবা-মা হয়তো ভুল করে ল্যাকটোজেন ২ খাইয়ে ফেলেন। এতে শিশুর হজমে সমস‍্যা হতে পারে। পায়খানা শক্ত হতে পারে।পেটে ব‍্যথাও হতে পারে।

ওজন বাড়ানোর জন্য ফরমুলা  খাওয়ানো

প্রতিটা ফরমুলার গায়ে লেখা থাকে “মায়ের দুধের বিকল্প বা সমকক্ষ কিছুই নাই “। অর্থাৎ বাবা-মা যদি মনে করেন বুকের দুধ খেয়ে শিশুর ওজন বাড়ছে না বা পুষ্টি কম হচ্ছে তাই শিশুকে ফরমুলা খাওয়াতে হবে– এটা একদমই ভুল ধারণা। যেসব শিশু মায়ের বুকের দুধ পায় না, মূলত তাদের জন্য মায়ের বুকের দুধের পরিপূরকভাবে ফরমুলা  বানানোর চেষ্টা করা হয়। যেন শিশুরা মায়ের বুকের দুধের পুষ্টি ফরমুলা থেকে পায়। ফরমুলা খাইয়ে শিশুর ওজন বা পুষ্টি কোনোটাই বাড়ানো যায় না। যেসব শিশু যথেষ্ট বুকের দুধ খায় তাদের সারা জীবনেও কোনো ফরমুলা খাবার দরকার হয় না।  

ফরমুলার প্রস্তুতি ও সংরক্ষণে ভুল

ফরমুলার প্যাকেটের গায়ে প্রস্তুত করার পদ্ধতি লেখা থাকে। যেমন, ৩০ মিলি পানিতে ১ চামচ, ৬০ মিলিতে ২ চামচ, ৯০ মিলিতে ৩ চামচ এভাবে ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। অনেক অভিভাবক এই পদ্ধতিতে প্রস্তুত না করে নিজেদের ইচ্ছেমতো পানি এবং দুধের অনুপাত নির্ধারণ করেন। যেমন কেউ বেশি করে পানি মিশিয়ে দুধ পাতলা করেন আবার কেউ হয়তো অল্প পানি দিয়ে দুধ ঘন করে খাওয়ান। 

টাকা বাঁচানোর জন্য বা ১ কৌটা দুধ বেশি দিন খাওয়ানোর জন্য কখনোই দুধে অতিরিক্ত পানি মিশিয়ে পাতলা করবেন না। এটা খুবই বিপদজনক, কারণ অতিরিক্ত পানি মেশানোর ফলে পুষ্টির ঘাটতি বা খিঁচুনি হতে পারে। অন্যদিকে, দুধ বেশি এবং পানি কম হলে, শিশুর কিডনি ও পরিপাকতন্ত্রের উপর প্রভাব ফেলতে পারে, যার ফলে ডিহাইড্রেশন হয়। 

ফরমুলা  বানানোর ২ ঘন্টার মধ্যে শিশুকে খাওয়াতে হবে।প্রথমে যদি অল্প পরিমাণ খেয়ে রেখে দেয় তাহলে বাকিটা ১ ঘন্টার মধ্যে খাইয়ে ফেলতে হবে। কিন্তু অনেক বাবা মা এই এই সময়টা অনুসরণ করেন না। অনেক সময় ফরমুলা  বানানোর ৩/৪ ঘন্টা পরেও শিশুকে খাওয়ান। বা একবার খেয়ে যতোটুকু বাকি থাকে সেটা ফেলে না দিয়ে শিশুর ক্ষুধা লাগলে পুনরায় সেই অবশিষ্টাংশ খাইয়ে দেন। এই অবশিষ্ট দুধ টুকু শিশুর জন্য একদমই নিরাপদ নয় কারণ কারণ শিশুর লালা এবং বোতলের ফরমুলা র সংমিশ্রণে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে। 

তাই মনে রাখবেন, ফরমুলা  বানানোর পর যদি তখনই না খাওয়ান তাহলে যত দ্রুত সম্ভব সেটা ফ্রিজে রেখে দিবেন এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শিশুকে খাইয়ে দিবেন। 

শিশুর ফরমুলা দুধ সম্পর্কে বিস্তারিত বোঝা প্রথমে অনেক জটিল মনে হতে পারে। কিন্তু একবার যদি আপনার শিশুর পছন্দের ফরমুলাটি খুঁজে পান, এবং সেটা প্রস্তুত ও নিরাপদে সংরক্ষণ করার পদ্ধতি শিখে যান তখন বিষয়টা আপনার কাছে সহজ হয়ে যাবে। আপনি সময়মতো খাওয়ানোর রুটিনে অভ‍্যস্ত হয়ে যাবেন। 



এ লেখাটি আমেরিকান অ‍্যাকাডেমি অব পিডিয়াট্রিকস (AAP) এর গাইডলাইনের উপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছে। 

তাদের ওয়েবসাইট লিংক: https://www.aap.org
বাংলাদেশের তথ‍্যগুলি দিয়ে সহায়তা করেছেন আমাদের অনুবাদক রায়কা চৌধুরী। 

Comments (02)

  1. Umme habiba
    September 15, 2023

    I love ❤️ this page

    Reply
  2. জেসি
    December 24, 2023

    আমার বেবি বুকের দুধ পায় না,শুরু থেকেই ফরমুলা ফিড করে।টাটকা গরম পানিতে কি ফরমুলা মেশানো নিরাপদ?
    প্লাস্টিকের ফিডারে ফ্রিজড ফরমুলা গরম পানিতে গরম করে খাওয়ানো যাবে কি??
    বোতলে আগে গরম পানি দিয়ে পরে ফর্মুলা মেশানোর সময় স্কুপে ভাপ লেগে যায় সেটা বক্সের বাকি দুধকে ড্যাম করে দিতে পারে,সেক্ষেত্রে কি আগে পাউডার ফর্মুলা আগে ফিডারে ঢালা যাবে?

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *