এ আর্টিকেলে যা থাকছে
- এত ছোট শিশুর পেটে গ্যাস হতে পারে?
- শিশুর পেটে গ্যাস হওয়ার লক্ষণগুলো কী?
- শিশুর পেটে গ্যাস হওয়ার কারণ কী?
- শিশুর পেটে গ্যাস হলে কী করব?
- শিশুদের জন্য কোন গ্যাসের ওষুধটি নিরাপদ?
- বুকের দুধ থেকে কি শিশুর পেটে গ্যাস হতে পারে?
- গ্যাসের সমস্যার জন্য সবচেয়ে ভালো ফরমুলা কোনটি?
- শিশুর গ্যাস এবং কলিকের পার্থক্য কিভাবে বুঝবো?
- শিশুর পেটে গ্যাসের সমস্যার জন্য কখন ডাক্তারের কাছে যেতে হতে হবে?
আপনার বাচ্চার পেটে কি গ্যাস হয়? আপনার বাচ্চা কি বারবার শব্দ করে পাদ দেয়? শুধু আপনার শিশুর নয়, শিশুর পেটে গ্যাস হওয়া খুবই সাধারণ ঘটনা।
এত ছোট শিশুর পেটে গ্যাস হতে পারে?
যদি আপনার শিশুর পেটে গ্যাস জমে থাকে, তাহলে আপনি লক্ষ্য করে দেখবেন সে বারবার পাদ দিচ্ছে এবং পাদ দেয়ার পরে সে খুবই আরাম পাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। একটি নবজাতক শিশুর জন্মের পরপরই অথবা কয়েক সপ্তাহ পর থেকে এই গ্যাসের সমস্যা শুরু হতে পারে। সৌভাগ্যবশত ৪-৬ মাসের মধ্যেই বেশিরভাগ শিশুর এই সমস্যা দূর হয়ে যায় । তবে কোনো কোনো শিশুর গ্যাসের সমস্যা কিছুটা দীর্ঘ সময় থাকতে পারে।
সাধারণত ইম্যাচুর বা সুগঠিত নয় এমন পরিপাকতন্ত্রের কারণে এবং খাবারের সাথে বাতাস গিলে নেওয়ার ফলে নবজাতকের পেটে অতিরিক্ত গ্যাস তৈরি হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কৌটার দুধ/ফরমুলা থেকে শিশুর গ্যাস হয়। বুকের দুধ খায় এমন শিশুর মায়ের খাবারের কারণেও গ্যাস হতে পারে।
শিশুর পেটে গ্যাস হওয়ার লক্ষণগুলো কী?
সব শিশুই দিনে কয়েকবার পাদ দেয় বা বায়ুত্যাগ করে। এর মানে এই না যে ওর পেটে গ্যাস হয়েছে। কিছু লক্ষণ দেখে আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনার শিশুর পেটে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি গ্যাস হচ্ছে। লক্ষণগুলো হলো-
* দীর্ঘ সময় ধরে কান্না করা, হতে পারে সেটা কয়েক ঘণ্টা বা পুরো একদিন।
নবজাতকদের (০-৩ মাস বয়সী) পরিপাকতন্ত্র সুগঠিত নয়। অর্থাত ওটা বেশ ছোট এবং এখনো পুরোপুরি ডেভলপ হয়নি। তার ফলে সদ্য জন্ম নেয়া শিশুর পেটে গ্যাস হয়। কিন্তু এমন যদি প্রতিদিন হয় এবং ভালো হওয়ার কোন লক্ষণ দেখা না যায় তবে অবশ্যই শিশু বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
*আপনার শিশুটি বেশিরভাগ সময়ই অখুশি থাকবে। যেটা দেখে আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনার বাচ্চা গ্যাসের সমস্যায় কষ্ট পাচ্ছে। বাচ্চা নিজে যেহেতু মুখ ফুটে কিছু বলতে পারেনা, তাই ওকে আপনাকেই সাহায্য করতে হবে।
*বাচ্চা খেতে এবং ঘুমাতে চাইবে না। যদিও শিশুর না ঘুমানো বা না খাওয়ার আরো হাজারটা কারণ থাকতে পারে, তবে শিশুর গ্যাসও সে কারণগুলোর একটা হতে পারে।যদি গ্যাসের অন্যান্য লক্ষণগুলোও দেখেন, তাহলে ধরে নিতে পারেন গ্যাসের কারণেই শিশু খাচ্ছে না বা ঘুমাতে পারছে না।
* কান্নার সময় পেট মোচড়াবে এবং মুখ লাল হয়ে যাবে
* শিশু পা দুটো উপরের দিকে তুলে রাখবে এবং অনেক বেশি অস্থির থাকবে
শিশুর পেটে গ্যাস হওয়ার কারণ কী?
নবজাতকের পেটে গ্যাস হওয়ার সম্ভাব্য অনেক কারণ থাকতে পারে
*শিশু খাওয়ার সময় ও কান্না করার সময় মুখে বাতাস ঢুকে পেটে চলে যায়। নবজাতক শিশুদের ক্ষেত্রে এটা খুবই সাধারণ ঘটনা।
* শিশুদের পরিপাকতন্ত্র সুগঠিত নয়। খুব বেশি বড়ও নয়।ইম্যাচুর পরিপাকতন্ত্র দ্রুত খাবার গ্রহণ করে কিন্তু হজম করতে পারে না, মানে খাদ্যকণাকে সম্পূর্ণভাবে ভাঙতে পারে না। যেটা পরবর্তীতে গ্যাস তৈরি করে।
*নির্দিষ্ট কিছু ফরমুলা দুধের (Formula Milk) প্রতি বাচ্চার অতিসংবেদনশীলতা শিশুর পেটে গ্যাস সৃষ্টি করতে পারে।
*বুকের দুধ খাওয়ায় এমন মায়ের খাবার থেকে (যেমন বাঁধাকপি বা ব্রকোলি) শিশুর গ্যাস হতে পারে, তবে সেটা খুব কমই হয়। অনেক সময় কোনো খাবারে অ্যালার্জি থেকেও শিশুদের গ্যাস হতে পারে।
গ্যাস হলে কী করব?
শিশুর অতিরিক্ত গ্যাস কমাতে বেশ কিছু কৌশল অনুসরণ করতে পারেন। এখানে সেগুলি আলোচনা করা হলো।
শিশুকে ঢেঁকুর(Burp) তোলানো:
বেশিরভাগ নবজাতক শিশুর দুধ খাওয়ার সময় পেটে বাতাস ঢুকে যায়। তাই দুধ পান করার মাঝেই তার পিঠে আলতো করে চাপড় দিতে থাকতে হবে যেন বাতাস পেটে ঢুকে না যায়। স্তন বা বোতল থেকে দুধ পান করার কয়েক মিনিট পরেই যদি শিশুটি মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে বুঝতে হবে শিশুটির পেট ভরেনি বরং শিশুটির পেটে অতিরিক্ত গ্যাস ঢুকে গেছে। তখন খাওয়ানোর মাঝেই শিশুটির পিঠে আলতো করে চাপড় দিয়ে ঢেঁকুর (Burp) দেওয়াতে হবে।
যদি আপনার শিশুটি বোতল দিয়ে দুধ পান করে থাকে তবে প্রতি দুই থেকে তিন আউন্স (Ounce) বা ৬০ থেকে ১৮০ মিলি দুধ পান করার পর ঢেঁকুর (Burp) দেওয়াতে হবে আর যদি সরাসরি স্তন থেকে দুধ পান করে থাকে তবে প্রতি পাঁচ থেকে দশ মিনিট পর পর ঢেঁকুর (Burp) দেওয়াতে হবে।
শিশুকে বার্প করানোর একটি কৌশল
পেটে বাতাস ঢোকা নিয়ন্ত্রণে আনা :
শিশুকে সঠিক পদ্ধতিতে দুধ খাওয়াতে হবে অর্থাৎ শিশু ও মায়ের দুধ খাওয়ানোর অবস্থান ও সংযুক্তি ঠিকমতো হতে হবে। শিশুর মাথাটা একটু উঁচু রাখতে হবে। শিশুকে শুইয়ে দুধ না খাওয়ানোই ভালো, এতে পেটে বেশি বাতাস ঢুকে গ্যাসের সমস্যা করতে পারে।
বোতলে দুধ পানকারী শিশুদের জন্য গ্যাস-বিরোধী (anti colic) বোতল ও নিপল ব্যবহার করতে হবে যেটা দুধের প্রবাহ পরিবর্তন করতে পারে এবং শিশুর পেটে বাতাস ঢোকার পরিমাণ কমাতে পারে। লক্ষ্য রাখতে হবে বোতলের নিপল যেন সম্পূর্ণটা দুধ দিয়ে পূর্ণ থাকে, যেন আপনার শিশু দুধের সাথে বাতাস গিলে না ফেলে। বোতলটি খুব বেশি ঝাঁকানো এড়ানোর চেষ্টা করুন যেন দুধে অতিরিক্ত বুদবুদ তৈরি না হয়। আপনি পাউডার দুধের পরিবর্তে প্রস্তুতকৃত ফরমুলা ও চেষ্টা করতে পারেন।
অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগার আগেই শিশুকে খাওয়ান
নবজাতক শিশুর ক্ষেত্রে কান্না করাটা অবশ্যই অপ্রত্যাশিত। কিন্তু বাচ্চা যত কান্না করবে তত বেশি বাতাস ওর পেটে প্রবেশ করবে, যা আরও বেশি গ্যাসের সৃষ্টি করে। তাই যতটা সম্ভব ওর ক্ষুধা লাগার লক্ষণগুলো বুঝতে হবে এবং দ্রুত খাওয়াতে হবে।
পেটে ম্যাসাজ করুন
বাচ্চার পেটে গ্যাসের ব্যথা হলে বাচ্চাকে আপনার হাঁটুর উপর শুইয়ে দিন অথবা আপনার হাতের তালু বাচ্চার পেটের নিচে রাখুন। এবার খুব আস্তে আস্তে বাচ্চার পিঠে আলতোভাবে মালিশ করুন। মালিশের ফলে যে চাপ সৃষ্টি হয় তা গ্যাস বের হতে সাহায্য করে এবং বাচ্চাকে আরাম দেয়। অনেক ক্ষেত্রে আপনার হাতের স্পর্শও বাচ্চাকে শান্ত করতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
শিশুদের গ্যাসের ওষুধ দিন
যদিও গ্যাসের ওষুধ সব বাচ্চাদের ক্ষেত্রে কাজ করে না, কিন্তু গ্যাসের ওষুধ বাচ্চাদের জন্য নিরাপদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
ঔষধ খাওয়ানোর পূর্বে অবশ্যই লেবেল চেক করে নিন এবং যতটা সম্ভব কম প্রিজারভেটিভ যুক্ত ফর্মুলেশন বেছে নিন। আর অবশ্যই ঔষধ খাওয়ানোর পূর্বে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিবেন।
আমেরিকার বেস্ট গ্যাসের ওষুধ (শিশুদের জন্য) বাংলাদেশে পাবেন এই লিংকে: www.facebook.com/paromita.baby
বাইসাইকেল চিকিৎসা
শিশুকে চিত করে তার দুই পা ধরে বাইসাইকেল চালানোর ভঙ্গিতে নাড়াচাড়া করতে হবে। এতে তার পেট থেকে গ্যাস দূর হওয়ার সুযোগ পাবে। অথবা শিশুর হাঁটুকে তার পেট পর্যন্ত ঠেলে ১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন তারপর তার পা ছেড়ে দিন এবং সোজা করুন। কয়েকবার এর পুনরাবৃত্তি করুন।
টামি টাইম (Tummy Time) অর্থাৎ শিশুকে পেটের উপর শুয়ে রাখাকে উৎসাহিত করুন:
আপনার শিশুর ঘাড় শক্ত হওয়ার জন্য টামি টাইম (Tummy Time) খুবই উপকারী একটি পন্থা। এর মাধ্যমে বাচ্চার পেশীগুলো শক্তিশালী হয় যা পরবর্তীতে হামাগুড়ি ও হাঁটাতেও খুব সহায়তা করে। এমনকি এই টামি টাইমের (Tummy Time) ফলে পেটে যে আলতো চাপ লাগে তা শিশুর গ্যাস বের হতেও অনেক সাহায্য করে।
বাচ্চাকে খাওয়ানোর অন্তত বিশ থেকে ত্রিশ মিনিট পর টামি টাইম (Tummy Time) দিতে হবে। কারণ অনেক বাচ্চাই খাওয়ানোর সাথে সাথে পেটের উপর শোয়ালে বমি করে দেয়। টামি টাইম দেয়ার সময় বাচ্চাকে সবসময় চোখে চোখে রাখুন। আপনার শিশুকে (০-৪ মাস) কখনোই তার পেটের উপর বিছানায় শুইয়ে রেখে চলে যাবেন না।
টামি টাইম কিভাবে করতে হবে?
শিশুকে আলতো হাতে ম্যাসাজ করুন
শিশুর পেটে আলতো করে ম্যাসাজ করা হলে তার পেট থেকে দ্রুত গ্যাস বেরিয়ে যায়। আলতো হাতে শিশুর পেট থেকে ম্যাসাজ শুরু করুন তারপর ধীরে ধীরে কাঁধ, পিঠ ও পা সহ পুরো শরীর ম্যাসাজ করে দিন। এটা শিশুর গ্যাসের সমস্যা কমাবে ও তাকে আরাম দেবে।
মায়েদের খাবারের বিশেষ সর্তকতা:
নবজাতক শিশু বা দুধ পান করানো শিশুর মায়েদের উচিত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী খাদ্য তালিকা প্রস্তুত করা, যেন কোন খাবার থেকে বাঁচার গ্যাস না হয়ে যায়। কিছু কিছু খাবার বাচ্চার গ্যাস তৈরি হওয়ার জন্য দায়ী, যেমন: দুধের তৈরি খাবার, পেঁয়াজ, রসুন, ঝাল খাবার, বাঁধাকপি, ব্রকোলি এবং ক্যাফিন (Caffeine)।
এক্ষেত্রে একটা কথা মনে রাখা জরুরি যে মায়ের খাবারের কারণে শিশুর কতটুকু গ্যাস হয় তা নিয়ে কোনো ভালো গবেষণা নেই। আমাদের দেশে বেশিরভাগই কুসংস্কার, যেমন মা ডিম খেলে গ্যাস হবে বা আম খেলে গ্যাস হবে। স বাচ্চার ক্ষেত্রে তা সত্য নয়।
খুব কম খাবার থেকেই বাচ্চার গ্যাস হয় আবার কিছু বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এসব খাবার কোন ধরনের সমস্যাই সৃষ্টি করে না। যেমন আমি এমিল হবার এক মাস পর থেকেই কফি খাই, এতে ওর কোনো অসুবিধা হয়নি।
ফরমুলা দুধ বদলান
সব শিশুর পেটে একই ফরমুলা নাও সইতে পারে। কোনো শিশু একটি নির্দিষ্ট ফরমুলা খু্ব সহজে হজম করতে পারে আবার সেই একই ফরমুলা কারো পেটে ভীষণ গ্যাস তৈরি করতে পারে। শিশুদের গ্যাসের সমস্যা কমাতে কিছু ফরমুলা দুধ (Formula Milk) বাজারে পাওয়া যায়। শিশুকে যে ফরমুলা দুধ দিচ্ছেন সেটি বদলে দেখতে পারেন গ্যাস কমে কিনা।
শিশুকে ক্যামোমিল চা/গ্রাইপ ওয়াটার দিন
ডাক্তাররা মাঝে মাঝে আপনার শিশুকে ড্রপারের মাধ্যমে ঠান্ডা বা উষ্ণ (গরম নয়) ক্যামোমিল চা দেয়ার পরামর্শ দেন। কারণ এটা গ্যাসের ব্যথা এবং কলিক উপসর্গ থেকে কিছুটা আরাম দেয়।
শিশুদের গ্রাইপ ওয়াটার (Gripe Water) সাধারণত গ্যাস কমাতে ও অস্বস্তি প্রশমিত করতে সাহায্য করে। এটা মূলত সোডিয়াম বাইকার্বোনেট ( Sodium Bicarbonate) এবং ভেষজ (মৌরি, আদা ও অন্যান্য) এর মিশ্রণ। যদিও এটা কাজ করে কিনা তা নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে।
চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত আপনার শিশুকে কখনোই গ্রাইপ ওয়াটার ( Gripe Water) বা ক্যামোমাইল টি খাওয়াবেন না। চিকিৎসকের কাছ থেকে প্রস্তাবিত ব্র্যান্ডের নাম জেনে নিন।
আমেরিকার যে গ্রাইপ ওয়াটার ডাক্তাররা প্রেসক্রাইব করেন: www.facebook.com/paromita.baby
প্রোবায়োটিক:
প্রবায়োটিক মূলত ব্যাকটেরিয়া যা আপনার জিআই সিস্টেম ( GI System) কে সহায়তা করে। প্রাকৃতিকভাবে কিছু গাঁজনযুক্ত খাবার যেমন দই এবং কিমচির মধ্যে প্রবায়োটিক পাওয়া যায়। এমনকি বাচ্চাদের পেটের সমস্যার জন্য এখন কিছু ফরমুলা ও সম্পূরক বস্তু (Supplements) ও বাজারে পাওয়া যায়।
শিশুদের জন্য কোন গ্যাসের ওষুধটি নিরাপদ ও কার্যকরী?
শিশুদের গ্যাসের ওষুধে সিমেথিকোন (Simethicone) থাকে যা গ্যাসের বুদবুদ ভেঙে দেয়। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সাধারণ অ্যান্টি-গ্যাস ওষুধেরও প্রধান উপাদান হলো সিমেথিকোন (Simethicone)।
গ্যাসের ওষুধ হিসেবে সিমেথিকোন (Simethicone)অনেক নিরাপদ। এবং অনেক অভিভাবকই খুব ভালো ফলাফল পেয়েছেন। যেমন আমি নিজে এমিলের প্রথম আট মাস গ্যাসের ওষুধ দিয়েছি। ধীরে ধীরে ডোজ কমিয়ে ১১ মাসের পরে একেবারেই বন্ধ করে দিয়েছি।
আপনার শিশুর গ্যাসের সমস্যা কমানোর সাহায্যকারী হিসেবে কি গ্যাসের ঔষধ প্রয়োগ করে দেখতে চান?
তাহলে প্রথমত, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলুন। কি ধরনের ঔষধ, কতবার দিতে হবে এবং বোতলের ডোজ নির্দেশনাবলী অনুসরণ করুন।
বেশির ভাগই আপনাকে বলবে আপনি আপনার শিশুকে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১২ বার বা প্রতিবার খাওয়ানোর সময় ঔষধ দিতে পারেন। কিছু অভিভাবক মনে করেন যে প্রতিবার খাওয়ানোর পূর্বে শিশুদের গ্যাসের ঔষধ দেয়া অনেক সহায়ক। কিন্তু অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী দিতে হবে। যদি আপনার কোন বন্ধু বা আত্মীয় অন্য দেশ থেকে বা ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FDA) দ্বারা অনুমোদিত নয় এমন কোন গ্যাসের ঔষধ নিয়ে আসে, তবে আপনার শিশু বিশেষজ্ঞকে না দেখিয়ে আপনার শিশুকে সেটা দিবেন না। লেবেলটি পড়ুন, কারন অনেক সময় এতে অ্যালকোহল (Alcohol), চিনি বা অন্যান্য সম্ভাব্য ক্ষতিকারক উপাদান থাকতে পারে যা প্যাকেজিংয়ে স্পষ্ট ভাবে তালিকাভুক্ত হয়।
আমি যে গ্যাসের ওষুধ ব্যবহার করি বাংলাদেশে সেটি পাবেন: www.facebook.com/paromita.baby
বুকের দুধ থেকে কি শিশুর পেটে গ্যাস হতে পারে?
কোনো কোনো গবেষণায় দেখা গেছে যে, মায়ের খাদ্য তালিকায় থাকা কিছু কিছু খাবার শিশুর পেটে গ্যাস তৈরি করে, তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পাওয়া যায় না। দেখা যায় অনেক মা-ই ঝাল ভর্তা বা খাবার খায় এবং এতে শিশুর উপরে কোনো প্রভাবই পড়ে না।
আপনি খাবার নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন হবার আগে অন্য কারণগুলো নিয়ে বেশি সতর্ক হোন এবং সমাধানগুলি চেষ্টা করুন। যেমন-শিশু ও মায়ের দুধ খাওয়ানোর অবস্থান এবং সংযুক্তি ঠিক রাখা। খাওয়ানোর সময় শিশুকে দুইবার বার্প (Burp) করানো এবং পাম্প করলে বিভিন্ন ধরনের বোতল ও নিপল চেষ্টা করে দেখা, গ্যাসের ওষুধ দেয়া।
যদি আপনার শিশুর গ্যাসের সমস্যা এরপরেও না কমে এবং আপনি যখনই একটি নির্দিষ্ট খাবার খান আপনার শিশুর গ্যাসের সমস্যা বেড়ে যায়– এমনটা লক্ষ্য করে থাকেন তাহলে আপনার খাদ্য তালিকা থেকে সেই খাবারটি বাদ দিয়ে দিতে পারেন।
বুকের দুধ খাওয়ানো শিশুকে গ্যাসযুক্ত করে তুলতে পারে এমন খাবারগুলোকে বাদ দেয়ার জন্য আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।খাবার গুলোর মধ্যে রয়েছে-
* বাঁধাকপি ব্রাসেলস স্প্রাউট (Brussels Sprouts) এবং ফুলকপির মতো ক্রুসিফেরাস (Cruciferous) সবজি।
* দুগ্ধ জাতীয় খাবার ও ডিম।
* অতিরিক্ত মসলাদার পেঁয়াজ বা রসুনযুক্ত খাবার।
এক্ষেত্রে আবারো মনে রাখা প্রয়োজন যে, একেক শিশুর পরিপাকতন্ত্রের ক্ষমতা একেকরকম। ডিম বা দুধ জাতীয় খাবার খেলে সব শিশুর গ্যাস হয় না।
গ্যাসের সমস্যার জন্য সবচেয়ে ভালো ফরমুলা কোনটি?
কোনো কোনো ফরমুলার গায়ে শিশুদের গ্যাস কমানোর কথা বা গ্যাস কম হওয়ার কথা লেখা থাকে, যেমন প্রোটিন হাইড্রলাইসেট (Protein Hydrolysate) ভিত্তিক ফরমুলা বা গরুর দুধের পরিবর্তে ঘোল বা সয়াযুক্ত ফরমুলা যদি হয়। কিন্তু গ্যাস বা কলিক (Colic) কমানোর জন্য একটি ফরমুলার থেকে আরেকটি বেশি ভালো এমন গবেষণা খুব বেশি নেই।
কিছু অভিভাবক তাদের শিশুর ফরমুলা পরিবর্তন করে বেশ উপকার পায়। হাইড্রোলাইসেট ফরমুলা (Hydrolysate Formula) কিছু শিশুর হজম প্রক্রিয়া আরও সহজ করে দেয় বলে মনে করা হয়।
শিশুর গ্যাস এবং কলিকের পার্থক্য কিভাবে বুঝবো?
গ্যাস এবং কলিকের লক্ষণগুলি অনেকখানি এক। এজন্য এটা বোঝা বেশ মুশকিল যে শিশু কি গ্যাসের কারণে কাঁদে, নাকি কলিকের কারণে।
শিশুদের কলিক (Colic) হওয়ার জন্য পরিপাকতন্ত্র ছাড়াও আরো অনেক কারণ থাকে। অতিরিক্ত উদ্দীপনা এবং ইম্যাচুর স্নায়ুতন্ত্রও এর কারণ।
কলিক কী?কলিক হলে কী করবো?
প্রথমেই বলেছি, গ্যাস হলে শিশু পাদ দিয়ে বা পায়খানা করে খুব আরাম পাবে। আর কলিক হলে শিশু কোনকিছুতেই আরাম পায় না। শিশুর নিজে নিজে শান্ত হতে খুব কষ্ট হয়।
আপনার শিশুটি যদি দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে (প্রায়ই সন্ধ্যার আগে) কান্না শুরু করে, তবে গ্যাসের চেয়ে কলিকের আশঙ্কাই বেশি।
বিশেষ করে যদি বাচ্চা প্রতিদিন অন্তত তিন ঘন্টা করে, সপ্তাহে তিনবার, এভাবে অন্তত তিন সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন একই সময়ে কান্নাকাটি করে, তাহলে ধরে নেবেন এটা কলিক।
কলিক হলে বাচ্চার কান্না কিছুতেই থামানো যায় না। তারা খুব জোরে জোরে কাঁদে, আর প্রায়ই তা বিকট চিৎকারে পরিণত হয়। যদিও অন্য সময় তারা সুস্থই থাকে।
গ্যাসের সমস্যার জন্য কখন ডাক্তারের কাছে যেতে হতে হবে?
আপনার শিশুর গ্যাসের সমস্যা প্রকট হবার আগেই ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত। যদি দেখেন-
- আপনার শিশুর ওজন বাড়ছে না
- আপনার শিশু প্রায়ই খেতে চায় না বা খাওয়ানো কঠিন হয় (আপনার শিশুর মধ্যে অ্যাসিড রিফ্লাক্সের লক্ষণ বা হজমে অন্য কোন সমস্যা থাকলে, উভয় ক্ষেত্রেই চিকিৎসা প্রয়োজন)
- যদি মনে করেন আপনার শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য আছে বা মলত্যাগে কষ্ট হচ্ছে (একজন ডাক্তারই পারেন মূল সমস্যা বের করে তার সমাধান করার চেষ্টা করতে)
- আপনি আপনার শিশুর গ্যাসের জন্য নতুন কোন চিকিৎসা করালে বা ফরমুলা দেওয়ার চেষ্টা করলে যদি শিশুটির এলার্জি দেখা যায় (শরীরে চাক চাক দাগ (Hives), বমি, ফুসকুড়ি, ফোলা মুখ, শ্বাসকষ্ট), তবে দ্রুত ডাক্তারের কাছে নেয়া উচিত (যদিও এমন এলার্জি খুব কমই হয়)।
যদি আপনার শিশুর গ্যাস থাকা সত্ত্বেও বয়স অনুযায়ী ঠিকমত ওজন বাড়ে, প্রস্রাব করে এবং পায়খানা করে, তবে সবকিছু সম্ভবত ঠিকই আছে। এবং খুব সম্ভবত এই গ্যাসের সমস্যা শিশুর বয়স বাড়ার সাথে সাথে নিজে নিজেই ঠিক হয়ে যাবে।
আরেকটা কথা, আমি বারবার পাদ দেয়ার কথা বলেছি। বায়ুত্যাগ কিন্তু দৈনন্দিন জীবনের খুবই সাধারণ ঘটনা। সব শিশুই পাদ দেয়। এর মানে এই নয় যে ওর গ্যাসের সমস্যা হচ্ছে। বায়ুত্যাগ করা স্বাস্থ্যকর! শিশু এসব শব্দ করলে টেনশন নয়, প্রাণখুলে হাসুন! 🙂
হ্যালো। আমার বেবির এখন ৫মাস শেষ হয়ে ৬ মাস চলছে। আমি চাচ্ছি তাকে বুকের দুধের পাশাপাশি ফরমূলা দুধ দিতে এবং বাড়তি খাবার দিতে। সেক্ষেত্রে কি কি দিতে পারি কি কি ভাবে?
ফরমূলা কোনটা ভাল হবে? আর সেরেলাক কি দিব?
আর ৬ মাস বয়সী বাচ্চার ওজন কত হওয়া স্বাভাবিক???
Apner article gula ami regularly study kori..new mom hisabe onek helpful information pai..amr baby 16 month..ekhono kono dhoron er kono problem face kori nai.apner article gula sotti onek valo.ami ar amr husband 2 jon ei apnke follow kori..
জেনে খুব ভালো লাগল। সময় করে এত সুন্দর কমেন্টের জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
আপু বাচ্চাদের বুকের দুধ ছাড়ানোর উপায় এবং ঘুম নিয়ে কিছু লিখলে খুব উপকার হতো।বাচ্চা ঘুমাতে চায় না,ঘুম পাড়ানো যায় না সহজে।
অবশ্যই।