বাচ্চার সঠিক বিকাশের জন্য আয়রন খুবই জরুরি। বাচ্চার প্রতিদিনের খাবারে পরিমাণমত আয়রন থাকছে তো? কিভাবে বাচ্চার জন্য প্রতিদিন পর্যাপ্ত আয়রনযুক্ত খাবার নিশ্চিত করবেন তা নিয়ে এ লেখা।
বাংলাদেশের ২-৫ বছর বয়সী বাচ্চাদের মধ্যে প্রায় ৬১ শতাংশ আয়রন ডেফিশিয়েন্সি এনিমিয়া বা রক্তস্বল্পতায় আক্রান্ত। আমেরিকার ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিন এর ২০২৩ সালে প্রকাশ করা এক জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে। বাচ্চার খাবারে পর্যাপ্ত আয়রন থাকা খুবই জরুরি। কিভাবে সেটা নিশ্চিত করা যায় এই আর্টিকেলে তা বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
আয়রন কী
আয়রনের বাংলা লৌহ/ লোহা। এটা এক ধরনের খনিজ পদার্থ বা মিনারেল। লৌহ মানুষের রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে সাহায্য করে। হিমোগ্লোবিন এক ধরনের প্রোটিন যা লোহিত রক্তকণিকায় থাকে এবং ফুসফুসের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে অক্সিজেন পৌঁছাতে সাহায্য করে। শরীরে মায়োগ্লোবিন তৈরি করতেও আয়রনের প্রয়োজন।মায়োগ্লোবিন এক ধরনের প্রোটিন যা শরীরের বিভিন্ন পেশীতে অক্সিজেন পৌঁছাতে সাহায্য করে।
প্রাকৃতিকভাবে শাকসবজি ও মাছ, মাংসে আয়রন থাকে। বাজারে কৃত্রিম আয়রন ট্যাবলেটও পাওয়া যায়।
বাচ্চাদের কেন আয়রন প্রয়োজন
বাচ্চাদের শরীরে যথেষ্ট অক্সিজেন উৎপন্ন হতে আয়রন খুব দরকার।কারণ রক্তের লোহিত রক্ত কণিকা (লাল অংশ) তৈরি করতে আয়রন লাগে।
আয়রনের অভাব হলে বাচ্চার শারীরিক বিকাশ ঠিকমত হয় না।আয়রনের ঘাটতির কারণে নতুন কিছু শিখতে সমস্যা হয়, এমনকি বাচ্চার আচরণেও বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
১ বছরের বেশি বয়সী বাচ্চাদের শরীরে আয়রনের অভাব হলে তাদের এনিমিয়া বা রক্তস্বল্পতায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। রক্তস্বল্পতার কারণে শিশু দুর্বল বোধ করে, বেশি ক্লান্ত হয়ে যায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে বারবার অসুখ হয়। বিশেষ করে বাচ্চারা নানা রকম ইনফেকশনে ভোগে।
কোন বয়সী বাচ্চার কতটুকু আয়রন খাওয়া দরকার
টডলার, অর্থাৎ ১ থেকে ৩ বছর বয়সী বাচ্চাদের প্রতিদিন ৭ মিলিগ্রাম আয়রন দরকার।বাচ্চার শরীরে যথেষ্ট আয়রন যাচ্ছে কিনা এটা বোঝা একটু কঠিন। কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রক্তস্বল্পতায় আক্রান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত আয়রনের অভাবের লক্ষণ চোখে পড়ে না।
আয়রনের অভাব থেকে এনিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা হলে যেসব লক্ষণ দেখা যায়–
১. ত্বক ফ্যাকাশে বা রক্তশূন্য হয়ে যায়
২. হাত পা ঠান্ডা হয়ে থাকে
৩. বাচ্চার গ্রোথ বা শারীরিক বিকাশ খুব ধীরগতিতে হয়
৪. খাবারে অনীহা বা অরুচি থাকে
৫. আচরণগত সমস্যা দেখা যায়
৬. বারবার অসুস্থ হয় (যেমন: ইনফেকশন হওয়া)
৭. অদ্ভুত জিনিস খেতে চায় (বরফ, ময়লা, রঙ ইত্যাদি)। তবে মনে রাখতে হবে ৭-১৫ মাসের শিশুরা এমনিতেই সবকিছু মুখে দেয়। আরো বড় হবার পরেও যদি উল্টাপাল্টা জিনিস খাবার অভ্যাস শিশুর মধ্যে বাড়তেই থাকে তাহলে তার রক্ত পরীক্ষা করে দেখা দরকার।
আমেরিকাতে বাচ্চার নিয়মিত চেকআপে ৬ থেকে ১৮ মাস বয়সের মধ্যেই শরীরে আয়রনের পরিমাণ ঠিক আছে কিনা তা পরীক্ষা করে নেন। আপনার বাচ্চার যদি এই পরীক্ষা এখনো করানো হয়ে না থাকে, ডাক্তারের মাধ্যমে সহজেই রক্ত পরীক্ষা করিয়ে নিতে পারেন।
বাচ্চার যদি রক্তস্বল্পতার লক্ষণগুলো থাকে, তাহলে অবশ্যই পরীক্ষা করিয়ে রক্তে আয়রনের পরিমাণ জেনে নিন। যদি বাচ্চার শরীরে আয়রনের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকে তাহলে খাবারের অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে, নাকি কোনো আয়রন সাপ্লিমেন্ট নিতে হবে এই ব্যাপারে ডাক্তারের পরামর্শ নিন ।
বাচ্চার জন্য সবচেয়ে উপকারি আয়রন সমৃদ্ধ খাবার কোনগুলি
খাবারে দুই ধরনের আয়রন পাওয়া যায়
Heme Iron হিম আয়রন
সাধারণত প্রাণীর মাংসে ও সামুদ্রিক মাছে থাকে। মানুষের শরীরে এ আয়রন খাবার থেকে খুব সহজে শোষিত হয়।
Non-heme Iron নন-হিম আয়রন
উদ্ভিদ জাতীয় খাবার অর্থাৎ শাকসবজিতে নন-হিম আয়রন থাকে। এই আয়রনের জটিল রাসায়নিক গঠনের কারণে খাবার থেকে মানুষের শরীর খুব সহজে গ্রহণ করতে পারে না।
তবে, দুই ধরনের আয়রনই খাওয়া উচিত। হিম আয়রন খেলে নন-হিম আয়রনকে শরীর সহজে শোষণ করে নিতে পারে। তাই যেসব খাবারে দুই ধরনের আয়রনই থাকে (যেমন: গমের রুটি দিয়ে লাল মাংস) এমন খাবার খাওয়াই সবচেয়ে উপকারি।
হিম-আয়রনযুক্ত যে খাবারগুলো বাচ্চাকে খাওয়াতে পারেন-
১. গরুর মাংস
২. শুকরের মাংস
৩. মুরগি
৪. কলিজা
৫. টার্কি
৬. চিংড়ি
৭. স্ক্যালোপ (এক ধরনের সামুদ্রিক প্রাণী)
৮. ডিম
৯. টুনা মাছ (ক্যানের টুনা মাছ কিনলে ‘চাংক-লাইট টুনা’ লেখা দেখে কিনুন। কারণ এগুলো ছোট আকারের টুনা মাছ দিয়ে বানানো হয় তাই অ্যালবাকোর টুনা বা বড় আকারের টুনার তুলনায় মার্কারি বা পারদের পরিমাণ কম থাকে। মার্কারি শরীরে জন্য খুবই খারাপ)
নন হিম-আয়রনযুক্ত যে খাবারগুলো বাচ্চাকে খাওয়াতে পারেন-
১. ডাল
২. ছোলা
৩. কুমড়ার বিচি
৪. পালং শাক
৫. শিমের বিচি
৬. কাঁচ কলা
৭. ডালিম বা আনার
বিদেশে পাওয়া যায় এমন কয়েকটি খাবার–
৮. প্রুন এবং প্রুনের জুস
৯. ফিগস
১০. পিনাট বাটার
১১. বিন (কালো বিন, কিডনি বিন, লিমা বিন, পিন্টো বিন)
১২. টোফু
১৩. শালগমের সবুজ অংশ, কেইল, ব্রকোলি
১৪. গম থেকে তৈরি ক্রিম (হুইট ক্রিম) আর ওটমিল
১৫. আয়রন যোগ করা পাউরুটি, পাস্তা আর সিরিয়াল (প্যাকেটে লেখা থাকে)
আয়রন খেলে পায়খানা শক্ত হয় কেন
বাচ্চাকে নন-হিম আয়রন যুক্ত খাবার আর ভিটামিন সি যুক্ত খাবার একসাথে খাওয়ানো ভালো।
কারণ ভিটামিন সি আয়রন হজমে সাহায্য করে। তাই নন-হিম আয়রনে পূর্ণ খাবারের সাথে ভিটামিন-সি যুক্ত খাবার যেমন সাইট্রাস ফল (লেবু, কমলা, মাল্টা ইত্যাদি টক ফল), টমেটো, বেরি, ব্রকোলি, মিষ্টি আলু খাওয়ালে বাচ্চার আয়রন হজমে অসুবিধা হয় না।
ক্যালসিয়াম সাধারণত খাবার থেকে আয়রন শোষণ করে নেয়ার সময় শরীরকে বাধা দেয়। তাই লক্ষ্য রাখতে হবে ক্যালসিয়াম যুক্ত কোনো খাবারের সাথে আয়রনযুক্ত খাবার যেন মেশানো না হয়।
আয়রন ট্যাবলেট খাওয়াতে হয় কখন
অনেক বাচ্চা মাংস বা কলিজা খেতে চায় না। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তাদেরকে ভালো কোনো আয়রন সাপ্লিমেন্ট দেয়া যেতে পারে। দিনে কতটুকু পরিমাণে আয়রন খাওয়ানো দরকার সেটা ডাক্তারই ঠিক করে দেবেন। অতিরিক্ত আয়রন বাচ্চার জন্য ক্ষতিকর।
আমেরিকাতে আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার সময় পানির বদলে কমলার রস বা কমলা দিয়ে খেতে বলে। এতে আয়রন হজমে সুবিধা হয়।
বেশি গরুর দুধ খাওয়ালে শরীরে আয়রনের ঘাটতি হয় কেন
গরুর দুধ খুব দরকারি খাবার বটে। কিন্তু ভালো জিনিসও বেশি হয়ে গেলে আর ভালো থাকেনা। অনেক সময় বাচ্চাদের বেশি দুধ খাইয়ে ফেললে অন্য কিছু খাওয়ার ক্ষুধা থাকেনা। গরুর দুধে যেহেতু আয়রন থাকে না, তাই দুধ খেয়ে পেট ভরিয়ে ফেললে বাচ্চা আয়রন আর অন্যান্য পুষ্টি পায়না।
বাচ্চাকে আয়রনযুক্ত খাবারের সাথে দুধ খাওয়ানো উচিত না। কারণ দুধে থাকা ক্যালসিয়াম অন্য খাবারে থাকা আয়রন হজমে সমস্যা তৈরি করে।
ভাবছেন বাচ্চারা কেন শুধু দুধই খেতে চায়? ১২ মাস+ শিশু শক্ত খাবার খাওয়া শিখলেও, কিছুদিন আগ পর্যন্ত যে শুধু দুধ খাওয়ার অভ্যাস ছিলো সেটা থেকে সরে আসতে সময় লাগে। এছাড়া কিছু বাচ্চার তরল খাবার থেকে শক্ত খাবার খাওয়ার অভ্যাস হতেও একটু সময় লাগে।
অনেক বাবা মা ভাবে যে অন্য খাবার না খেলেও শুধু গরুর দুধ খেলেই হবে, যেহেতু এটাতে সব পুষ্টি আছে। বাচ্চা যদি শুধু দুধই খেতে থাকে, অথবা শুধু যে কোনো একধরনের খাবারই খেতে চায় তাহলে ওর শরীরে পর্যাপ্ত আয়রন না থাকার আশংকা থাকে। তাই কোনো খাবারই অতিরিক্ত না দিয়ে সব খাবারে সুষম ভারসাম্য রাখা ভালো।
রেফারেন্স:
- Centers for Disease Control and Prevention, Iron, November 2021
- National Institutes of Health, Office of Dietary Supplements, Iron, Fact Sheet for Consumers National Institutes of Health, Office of Dietary Supplements, Iron, Fact Sheet for Health Professionals
- National Eating Disorders Association, Pica
- American Academy of Pediatrics, Recommended Drinks for Young Children Ages 0-5
Thank You Maam.. It’s Really Helpful Information For All Parents.
Thanks for your information apu……eta onek important ekta topic baby er jonno….
But apu r ekta question ❓
Amar chele er age 2years 4 months..goto months a or jor ashe r pura shorir a pani ashe..then dr. Kichu test den amar baccha k ….tar moddey cholesterol test o day…. results ja ashlo…280
Eta kemne possible?
Ow temon kichui kheto na…halka vat, khichuri, biscuits, fruits,r 18 months porjonto Lactogrow formula milk ta diyechi…..(Amar breasts milk production kom chilo.. family issues er jonno timely khawaite pari ni 🥺r family issues gular karone prochur depressed chilam…pryojon mote khaite pari ni 🥺 kaj porto beshi rest near shujok pai ni….24 hours er moddey amake babur take care kora niye 19 or 20 hours er moto jege thakte hoito.. 🥺)
Ekhon amar question bacchar eto high cholesterol howar karon ki?
R ekta kotha baby er jonmer por theke colic disease chilo
আপু এটা বংশগত কারণে হয়ে থাকতে পারে। ডাক্তারের সাথে কথা বলে জেনে নিবেন। এবং অবশ্যই গুড কোলস্টেরল, ব্যাড কোলস্টেরলের খাবার কোনগুলি জেনে নিবেন।
Dhonnobad apu