শিশুর বুদ্ধি বাড়ায় রান্নাঘরের যেসব কাজ

এ আর্টিকেলে যা থাকছে

রান্নাঘরের প্রতি আপনার বাচ্চার অমোঘ আকর্ষণ? শিশুর বুদ্ধি বাড়ায় এমন অনেক কাজ রান্নাঘরে সম্ভব। সে রান্নাঘরে যেতে এত উদগ্রীব জানতে চান? এটা কিন্তু সব বাচ্চারই থাকে। রান্নার কাজে সাহায‍্য করা শিশুর জন‍্য দারুণ সেনসরি প্লে বা খেলা। 

আপনার বাসা যদি শিশু পার্ক না হয়ে থাকে তাহলে আপনার বাসার যে রুমটি বাচ্চার সবচেয়ে পছন্দ হবে সেটি হলো রান্নাঘর। রান্নাঘরের মত শব্দ, ঘ‍্রাণ আর দর্শনীয় স্থান তার কাছে আর একটিও নেই। সেনসরি প্লে বা যেসব খেলা বাচ্চার বুদ্ধি বিকাশে সাহায‍্য করে সেগুলোর এক বিশেষ খেলাঘর আমাদের রান্নাঘর। 

রান্নাঘরে যেসব খেলা শিশুর বুদ্ধি বাড়ায়
রান্নাঘরে যেসব খেলা শিশুর বুদ্ধি বাড়ায়

রান্নাঘরে বাচ্চার ৫ টি ইন্দ্রিয় কাজে লাগানোর সুযোগ থাকে। যার ফলে রান্নাঘরে কাজ করার মাধ্যমে শিশুর মাসল নড়াচড়া করার দক্ষতা বা ‘গ্রস মোটর স্কিল’ এবং ‘ফাইন মোটর স্কিল’ এর অনুশীলন হয়। 

আপনি যতটুকু জানেন, আপনার বাচ্চা হয়তো তারচেয়েও বেশি কিছু করার ক্ষমতা রাখে এবং সহজ কাজগুলো নিজে নিজে করার চর্চা থাকলে বাচ্চার আত্মবিশ্বাস বাড়ে। 

শিশুকে রান্নাঘরে কাজ করতে দেওয়ার আরেকটা সুবিধা হলো, যে খাবারটা প্রস্তুত করতে বাচ্চা সাহায্য করে সেই খাবারটা তাকে খাওয়ানো তুলনামূলক সহজ হয়।

শিশুকে রান্নাঘরের কাজকর্মে যুক্ত করতে চাইলে, রান্নাঘরে একটা ‘স্টেপ স্টুল’ বা মোড়া এবং বাচ্চাদের উপযোগী কিছু রান্নার কাজের জিনিসপত্র রাখুন। ‘লার্নিং টাওয়ার’ নামে একধরণের টুল পাওয়া যায় যার উচ্চতা শিশুর উচ্চতা অনুযায়ী পরিবর্তন করা যায়। এই টুলের ওপর দাঁড়িয়ে বাচ্চা স্বচ্ছন্দে খাবার তৈরির কাজে সাহায্য করতে পারে। শিশুদের জন্য নিরাপদ কিছু জিনিসপত্র শিশুকে রান্নাঘরের কাজে যুক্ত হতে সাহায্য করতে পারে।
এ লেখাতে ১-৩ বছর বয়সী বাচ্চা বা টডলারদেরকে কিভাবে নিরাপদে রান্নাঘরের কাজের মাধ‍্যমে শিশুর বুদ্ধি বাড়ানোর খেলা সম্ভব তার কয়েকটি আইডিয়া দেবো।

খোসা ছাড়ানো

খোসাসহই কলাকে ছোট ছোট টুকরায় কেটে শিশুকে টুকরোগুলোর খোসা ছাড়াতে দিন। খোসা ছাড়ানোর জন্য শিশুকে এক হাতে কলা ধরে রেখে অন্য হাতে খোসা ছাড়াতে হবে অর্থাৎ শিশুর দুই হাতকে একই সময়ে দুই রকম কাজ করতে হবে এবং দুই হাতের ঠিকঠাক সমন্বয়ের (coordination) দরকার পড়বে। যা শিশুর বুদ্ধি বাড়াতে দারুণ কার্যকর।

কলার বদলে পেঁয়াজ বা রসুনও দিতে পারেন। যদি নিরাপদ মনে করেন।  

রুটি বা পাউরুটিতে মাখন, জেলি, বাটার লাগানো

শিশুকে রুটির ওপর মাখন লাগাতে উৎসাহ দিন। বাচ্চাকে একটি বাটিতে অল্প পরিমাণ মাখন, জেলি অথবা জ্যাম দিন। এগুলো কিভাবে পাউরুটিতে মাখাতে হয় তা শিশুকে করে দেখান এবং খেয়াল করুন বাচ্চা আপনার কাজ অনুকরণ করতে পারছে কিনা। 

বাচ্চার জন্য এই কাজটা কিছুটা কঠিন হতে পারে এবং তার অনেক অনুশীলনের দরকার হতে পারে। এই কাজটি নিজে নিজে শেষ করার জন্য তাদের বেশ সময় এবং সুযোগের দরকার হয়। তাই চেষ্টা করুন তাড়া না দিয়ে শিশুকে সেই ধৈর্য‍্য এবং সময় দিতে। 

এ কাজের মাধ‍্যমে দুই হাত, চামচ, চোখের সমন্বয় (coordination)  যেমন করতে হয়, তেমনি পরিমাণ (কতটুকু রুটি ও জেলি) সম্পর্কেও ধারণা হয়, যা শিশুর বুদ্ধি বাড়াতে সহায়ক।  

চামচ নাড়িয়ে মেশানো

বাচ্চাকে তার নিজের একটি বাটিতে রান্নার কিছু উপকরণ দিয়ে মেশাতে দিন। যদি তরল কিছুতে ময়দা বা পাউডারজাতীয় কিছু মেশানোর প্রয়োজন পড়ে, তবে বাচ্চাকে দেওয়ার আগে দ্রুত  কিছুটা নেড়ে মিশিয়ে নিয়ে তবে বাচ্চাকে দিন, তাহলে পাউডারগুলো এদিক ওদিকে উড়ে যাবেনা বা ছড়িয়ে পড়বেনা।

প‍্যানকেকের ডো, কলা পিঠার ডো বা এরকম জিনিস আটা ময়দা গুলিয়ে আগে আপনি করে দেখান তারপর ওকে করতে দিন। 

নাম শেখানো

এ বয়সে বাচ্চারা আশেপাশের পরিচিত জিনিসগুলোর নাম শিখতে শুরু করে। তারা যতগুলো শব্দ বলতে পারে, তার চেয়ে বেশি শব্দ বুঝতে পারে। তাই খাবার রান্নার সময় কিংবা খাওয়ার সময় খাবারের নাম, রান্নাঘরের বিভিন্ন আসবাবপত্রের নাম, ছুরি, চামচ, বাটি ইত্যাদির নাম শিশুকে বলুন। শিশু বেশি পরিচিত জিনিসপত্র যেমন চামচ, কাপ, বাটি ইত্যাদি শব্দ বুঝে গেলে রান্নাঘরের অন্যান্য জিনিস যেমন রেফ্রিজারেটর, ওভেন, টেবিল ইত্যাদি শব্দের ওপর জোর দিতে শুরু করুন। এগুলো শিশুর বুদ্ধি তথা শব্দভাণ্ডার বাড়াতে সাহায‍্য করে।  

আমি নামের সাথে সাথে রং ও আকৃতিও বলতে থাকি। এমিল ২ বছর বয়সেই শাক সবজির রঙ, আকৃতি ও নাম আলাদা বলতে পারে ও চেনে।

কাটাকুটি করা

বাচ্চাদের সবজি কাটার কিছু নিরাপদ ছুরি পাওয়া যায়, সেই ছুরি দিয়ে বাচ্চাকে কলা, চিজ বা এমন নরম খাবার কাটতে দিন। বাচ্চাকে দেওয়ার আগে ওর কাটতে সহজ হয় এমন ছোট ছোট খন্ড করে নিন। কাটাকুটিতে ওর দক্ষতা বাড়ার সাথে সাথে আরেকটু শক্ত খাবার কাটতে দেওয়া যায়।

এসব খেলার মাধ‍্যমে গণিতের সহজ পাঠ, এক কী করে দুই হয় কিংবা গোল আলু (বৃত্ত) কী করে ত্রিভূজ হয় তা শেখাতে পারেন। শিশুর বুদ্ধি বাড়াতে ১৮ মাস থেকেই গণিতের প্রাথমিক ধারণা ঘরের জিনিসের মাধ‍্যমেই দিতে পারেন। 

স্মুদি বা জুস

বাচ্চার সাথে একসঙ্গে স্মুদি বা জুস বানাতে পারেন। বাচ্চাকে ফল এবং বিভিন্ন উপকরণ ব্লেন্ডারে ঢালতে দিতে পারেন। বাচ্চা যখন এ কাজটি করবে তখন ব্লেন্ডার এ যেন বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখবেন।

দুই হাত ব্যবহার করা

বাচ্চাকে এক হাতে বাটি ধরে রেখে অন্য হাত দিয়ে চামচ দিয়ে নাড়ানো, চামচে করে বাটি থেকে কিছু নেওয়া অথবা বাটিতে কিছু ঢালার কাজ দিন। এভাবে একইসময় দুই হাত ব্যবহার করে দুইরকমের কাজ করা বাচ্চার দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করবে।

খাবার তৈরি করা

আপনি যদি রেসিপি মেনে পুরোপুরি কোনো খাবার তৈরিতে বাচ্চার অংশগ্রহণ চান, সেক্ষেত্রে খাবার তৈরির আগে সময় নিয়ে রান্নার উপকরণগুলো প্রস্তুত করুন। প্রয়োজনীয় সবগুলো উপকরণ নির্ধারিত পরিমাণমতো ছোট ছোট বাটিতে নিয়ে লাইন করে সাজিয়ে রাখুন। এভাবে সবকিছু প্রস্তুত রাখলে রান্নার সময় শেষমুহূর্তে মাপার কোনো ঝামেলা ছাড়াই বাচ্চা আপনাকে উপকরণগুলো এগিয়ে দিতে পারবে।

ভর্তা করা

বাচ্চাদের কাঁটা চামচ দিয়ে কলা অথবা সিদ্ধ আলু ভর্তা করতে দিন।

এগিয়ে দেওয়া

চামচ, সবজি ইত্যাদি এগিয়ে দিয়ে আপনাকে সাহায্য করতে বলুন।বাচ্চারা ফ্রিজ খুলতে খুব পছন্দ করে। ফ্রিজে খাবার এমনভাবে সাজান যেন ভঙ্গুর জিনিস সামনে না থাকে (যেমন ডিম)। শসা কিংবা গাজরের মত জিনিসগুলো এমন জায়গায় রাখুন ও যেন সহজে নিতে পারে। রান্নার সময় ফ্রিজ খুলে ওকে এগুলো আনতে বলুন।

 

পরিস্কার করা

রান্নার পর রান্নাঘর পরিস্কার করার ক্ষেত্রে তাদের সাহায্য নিন। ময়লাগুলো ডাস্টবিন বা রিসাইকেল বিন এ ফেলতে দিন।

একটু কঠিন মনে হলেও বাচ্চার সাথে রান্না করা বেশ মজার, এটি ‘ক্রিয়েটিভ প্লে’ বা সৃষ্টিশীল খেলায় সহায়ক যা শিশুর শারীরিক এবং মানসিক বিকাশে সাহায্য করে।

Comments (03)

  1. Chowa
    November 14, 2024

    Very helpful articlr

    Reply
  2. Jakiya sabnam Chowa
    November 16, 2024

    initiative

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *