এ আর্টিকেলে যা থাকছে
- প্রসব ব্যথা কী
- প্রসব শুরুর ঠিক আগের লক্ষণ
- যেসব লক্ষণ দেখে বুঝবেন যে আপনার প্রসব ব্যথা শুরু হতে চলেছে (প্রি লেবার লক্ষণ)
- প্রসব ব্যথা কি শুরু হয়েছে? আমার কি ডাক্তারের সাথে কথা বলা উচিত?
- অকাল প্রসব বা নির্ধারিত সময়ের আগে শিশুর প্রসব
- নিজের অজান্তে কি প্রসব ব্যথা শুরু হতে পারে?
- প্রসব ব্যথা কি প্রাকৃতিকভাবে শুরু করা যায়?
- কখন দ্রুত হাসপাতালে যাবেন?
আমার গর্ভের শিশু কি ভালো আছে? এই চিন্তার পরে আর যে বিষয়টি বাবা মায়ের সবচেয়ে চিন্তার কারণ সেটি হলো প্রসব বেদনা বা লেবার পেইন উঠলে কিভাবে বোঝা যায়? সিনেমাতে যেমন দেখা যায় যে কোনো কাজের মাঝখানে বা হাসপাতালে যেতে বাচ্চা হয়ে যায়–প্রথম শিশুর ক্ষেত্রে এমন হওয়া অসম্ভব। কারণ বাচ্চা বের হওয়ার অনেক আগে থেকেই প্রসব বেদনা শুরু হয়।
গর্ভবতী মায়েরা সন্তান জন্মানোর সময় কেমন ব্যথা হবে সেটি নিয়ে চিন্তিত থাকেন। প্রসব ব্যথা উঠলে সেটা কতক্ষণ থাকবে, কী দেখে বুঝতে পারবে যে প্রসব ব্যথা নাকি ফলস অ্যালার্ম — এসব প্রশ্নও মনে আসে। একেকজনের সন্তান জন্মদান প্রক্রিয়া একেক রকমের হয়। তাই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর আগে থেকে বলে দেওয়া কঠিন।
কিন্তু প্রসব শুরু হওয়ার কিছু লক্ষণ আগে থেকে জেনে রাখলে আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনার ছোট্ট শিশুটিকে দেখার সময় চলে এসেছে।
- প্রসব শুরুর ঠিক আগের লক্ষণগুলো হলো
- ঘনঘন জরায়ুর সংকোচন অনুভব
- রক্তমিশ্রিত স্রাব নিঃসরণ
- পেট ও পিঠের নিচের দিকে ব্যথা
- পানি ভেঙে যাওয়া
যখন ডেলিভারি তারিখ কাছাকাছি চলে আসে, হয়তো ১ মাস বা তারও কম সময় বাকি। তখন কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। যেমন:
- বাচ্চা নিচের দিকে নামতে থাকে
- সারভিক্সের মুখ বড় হতে থাকে
- পেশিতে টান লাগা (ক্র্যাম্প) ও পিঠে ব্যথা বেড়ে যাওয়া
- হাড়ের জয়েন্ট শিথিল হয়ে যাওয়া
- ডায়রিয়া
- ওজন বৃদ্ধি বন্ধ হওয়া
- ক্লান্তি অনুভব করা বা শিশুকে স্বাগত জানাতে উদ্যমী হয়ে ওঠা (নেস্টিং প্রবৃত্তি)
প্রসব ব্যথা কী
সন্তান জন্ম দেওয়ার একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হলো প্রসব ব্যথা, যেটা শুরু হয় জরায়ুর সংকোচন ও সার্ভিকাল সম্প্রসারণ থেকে আর শেষ হয় সন্তান জন্মানোর মাধ্যমে।
আপনার ডেলিভারি তারিখ যত এগিয়ে আসবে আপনি ততবেশি আপনার শরীরে কিছু পরিবর্তন দেখতে পাবেন। যেগুলো মূলত ডেলিভারি হওয়ার লক্ষণ। এরপর যত সময় যেতে থাকবে আপনার সত্যিকারের প্রসব ব্যথা শুরু হবার লক্ষণগুলো দেখা দিতে থাকবে। শিশু জন্ম নেয়ার কয়েক দিন এমনকি কয়েক ঘণ্টা আগেও এই লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
প্রসব শুরুর ঠিক আগের লক্ষণ
ডেলিভারি তারিখের আগের সময়ে খুব সতর্ক থাকবেন। নির্দিষ্ট কতগুলো লক্ষণ রয়েছে যেটা দেখলে আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনি এই মুহূর্তে প্রসব প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন এবং আপনার সত্যিকারের প্রসব ব্যথা উঠেছে। তবুও নিশ্চিত হওয়ার জন্য সবসময় আপনার ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
ঘনঘন জরায়ুর সংকোচন অনুভব: আপনার যখন সত্যিকারের প্রসব ব্যথা উঠবে তখন প্রচন্ড পেটে ব্যথা করবে এবং ব্যথাটা কিছু সময় পরপর উঠতে থাকবে, বাড়তেও থাকবে। ব্যথা ওঠার জায়গাগুলো লক্ষ্য করলেই আপনি বুঝতে পারবেন সেটা ফলস লেবার পেইন কি না।
প্রসব ব্যথার বিষয়ে নিশ্চিত হতে নিচের এই প্রশ্নগুলো করুন-
- জরায়ু একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর সংকুচিত হচ্ছে কি না? প্রসব ব্যথা শুরু হলে নিয়মিত বিরতিতে জরায়ু সংকোচন হতে থাকে। যেমন ধরুন ১০ মিনিট পরপর ব্যথা উঠবে এবং ধীরে ধীরে ব্যথা আরও বাড়তে থাকবে।
- সংকোচন কতক্ষণ স্থায়ী হয়? প্রসব ব্যথার সময় জরায়ুর সংকোচন ৩০ থেকে ৭০ সেকেন্ডের মতো স্থায়ী হয়। নিয়মিত বিরতি দিয়ে এই সংকোচন চলতে থাকে।
- সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জরায়ুর সংকোচন কি শক্তিশালী হচ্ছে? প্রসব ব্যথা শুরু হলে জরায়ুর সংকোচন সময়ের সাথে সাথে আরও বেশি শক্তিশালী হতে থাকে। যদি ফলস লেবার পেইন হয় তাহলে দেখা যায় যে আপনি যদি একটু নড়াচড়া করেন বা জায়গা পরিবর্তন করেন তাহলে ব্যথাটা চলে যায়। কিন্তু সত্যিকারের প্রসব ব্যথার সময় আপনি জায়গা পরিবর্তন করলেও এই ব্যথা যায় না। যখন এই ব্যথার অনেক তীব্র হয় তখন আপনি হাঁটা-চলা এমনকি কথাও বলতে পারবেন না।
রক্তমিশ্রিত স্রাব নিঃসরণ: মিউকাস প্লাগ (Mucus Plug) জরায়ুর মুখ আটকে রাখতে সাহায্য করে, এটা মূলত জরায়ুর মধ্যে ভ্রুণকে বাইরের জীবাণু থেকে রক্ষা করে। প্রসব ব্যথার সময় আপনি এই মিউকাস প্লাগ বেরিয়ে আসতে দেখবেন। মিউকাস প্লাগ লম্বা আকৃতির হয় এবং প্রসবের সময় পুরোটা একসঙ্গে বেরিয়ে আসে (এটা দেখতে অনেকটা নাকের সর্দির মতো)। অনেক সময় পুরোটা একবারে না বেরিয়ে ছোট ছোট অংশও বের হতে পারে। তবে এটা আপনি নাও বুঝতে পারেন। আবার কিছু কিছু মায়েদের প্রসবের আগে এটা বের হয় না।
প্রসবের আগে শেষ দিনগুলিতে আপনি সম্ভবত বেশি পরিমাণে এবং ঘন রক্তমিশ্রিত স্রাব দেখতে পাবেন। এটি প্রসব ব্যথার একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।
পেট ও পিঠের নিচের দিকে ব্যথা: পিরিয়ড বা মাসিকের সময়ের মতো তীব্র পেটে ব্যথা বা তলপেটে চাপ অনুভব করবেন। আপনার পিঠের নিচের অংশে ব্যথা হতে পারে যা আস্তে আস্তে পায়ে ছড়িয়ে পড়ে। আপনি নড়েচড়ে অন্যভাবে বসার বা শোয়ার চেষ্টা করলেও এই ব্যাথা দূর হবে না।
পানি ভেঙে যাওয়া: বেশিরভাগ মায়েদের, প্রসবের অন্যান্য লক্ষণ শুরু হওয়ার পর ঝিঁল্লি ফেটে যায় (membranes rupture) এবং এ্যামিনিওটিক তরল (amniotic fluid) বের হয়। সবক্ষেত্রেই যে বড় ধরনের ঝাঁকুনি দিয়ে তরল পুরোটা একবারে পড়ে যাবে এমনটা নয়। কিছু কিছু মায়েদের ক্ষেত্রে এই তরল ফোঁটা ফোঁটা করেও পড়ে।
বেশিরভাগ মায়েদের প্রসবের সবচেয়ে বড় লক্ষণ হলো পানি ভেঙে যাওয়া। কিন্তু মাত্র ১৫% বা তারও কম শিশুর জন্মের ক্ষেত্রে এটা প্রাকৃতিকভাবে ঘটে। সুতরাং, পানি ভেঙে যাওয়াকেই প্রসবের একমাত্র চিহ্ন মনে করবেন না।
যেসব লক্ষণ দেখে বুঝবেন যে আপনার প্রসব ব্যথা শুরু হতে পারে (প্রি লেবার লক্ষণ)
প্রসব ব্যথা শুরু হওয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু লক্ষণ দেখা যায। এগুলো ‘প্রি-লেবার লক্ষণ’ হিসেবেও পরিচিত। এই লক্ষণগুলো প্রসব ব্যথা শুরু হওয়ার কয়েক মাস থেকে শুরু করে কয়েক ঘণ্টা আগেও দেখা যেতে পারে।
- বাচ্চা নিচের দিকে নামতে থাকে: আপনি যদি প্রথমবার মা হন, তাহলে প্রসব শুরু হওয়ার কয়েক সপ্তাহ আগে (সাধারণত প্রায় ২ থেকে ৪ সপ্তাহ আগে) বাচ্চা নিচের দিকে বা পেলভিসের দিকে নামতে শুরু করবে। প্রথমবার বাচ্চা হওয়ার সময় সব মায়েদের এমন হয়। আপনার শিশু পেট থেকে বের হওয়ার জন্য তার মাথা নিচের দিকে রেখে নিজের অবস্থান ঠিক করে রাখবে। তবে পরবর্তী বাচ্চা জন্মানোর সময় এমনটা নাও হতে পারে। এই অবস্থায় আর আগের মতো সহজভাবে হাঁটা যায় না, ছোট ছোট পা ফেলে হেলে দুলে হাঁটতে হয়। এসময় আপনি আগের থেকে বেশি প্রস্রাবের চাপ অনুভব করবেন কারণ আপনার শিশু মূত্রাশয়ের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে থাকবে। শিশুর শরীর নিচের দিকে নেমে আসায় ফুসফুস তার আগের জায়গা কিছুটা হলেও ফিরে পায় তাই মায়েদের শ্বাস নিতে কিছুটা সুবিধা হয়।
- সারভিক্সের (Cervix) মুখ বড় হতে থাকে: আপনার সারভিক্সও শিশু জন্মানোর জন্য প্রস্তুতি নেয়। সারভিক্স হলো শিশুর জন্ম নেয়ার পথ। আপনার প্রসবের আগের দিন বা আগের সপ্তাহগুলোতে এর মুখ খুলতে থাকবে এবং পাতলা হতে শুরু করে। আপনার গর্ভাবস্থার শেষের দিকে চেকআপের সময় ডাক্তার পরীক্ষা করে দেখবেন যে সারভিক্সের মুখ কতটা খুলেছে এবং কতটা পাতলা হয়েছে। তবে সবার ক্ষেত্রে এটি একরকম হয় না, একেকজনের প্রসব একেকরকম হয়। আপনার ক্ষেত্রে যদি সারভিক্সের মুখ ধীরে ধীরে খোলে বা এখনও না খোলে তবে নিরুৎসাহিত হবেন না।
- পেশিতে টান লাগা (ক্র্যাম্প) ও পিঠে ব্যথা বেড়ে যাওয়া: প্রসবের সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে আপনার পিঠের নিচের অংশে এবং পশ্চাৎদেশের হাড়ে ব্যথা করবে। বিশেষ করে এটি যদি আপনার প্রথম প্রেগন্যান্সি না হয় তবে এই ব্যথা আরও বেশি অনুভব হবে। আপনার পেশী এবং জয়েন্টগুলো প্রসারিত হবে এবং শিশু জন্ম দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেবে।
- হাড়ের জয়েন্ট শিথিল হয়ে যাওয়া: গর্ভাবস্থার শুরুর সময় থেকে মেয়েদের শরীরের রিলাক্সিন (Relaxin) হরমোনের ক্ষরণ শুরু হয়। এই হরমোন হাড়ের বিভিন্ন জয়েন্টগুলোকে একটু শিথিল করে দেয়। প্রসব ব্যথা শুরু হওয়ার আগে এই হরমোনের ক্ষরণের ফলে আপনি টের পাবেন যে শরীরের জয়েন্টগুলো অনেক বেশি শিথিল হয়ে পড়েছে এবং কম দৃঢ় মনে হচ্ছে। এমন অনুভূতি হলে আপনার শিশুর মুখ দেখার মুহূর্ত কিন্তু আর বেশি দূরে নেই। এটা আপনার পেলভিসের মুখ খুলে যাওয়ার একটি প্রাকৃতিক উপায়, যেটা আপনার শিশুর পৃথিবীতে আসার পথ তৈরি করবে।
- ডায়রিয়া: আপনার শিশু জন্মানোর প্রস্তুতি হিসেবে যেমন আপনার জরায়ুর পেশীগুলো শিথিল হয় তেমনি আপনার শরীরের অন্য পেশীগুলোও শিথিল হতে থাকে। এর মধ্যে মলদ্বারের পেশীও রয়েছে। মলদ্বারের পেশী শিথিল হওয়ার ফলে প্রি-লেবার ডায়রিয়া শুরু হতে পারে। এটা বিরক্তিকর হলেও স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া। এ সময়ে পর্যাপ্ত পানি খাবেন যেন পানিশূন্যতা না হয়। এটি প্রসব হওয়ার খুব ভালো একটা লক্ষণ।
- ওজন বৃদ্ধি বন্ধ হওয়া: গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের ওজন বৃদ্ধি একবারে শেষ সময়ে গিয়ে বন্ধ হয়। অনেক মায়ের ওজন কিছুটা কমেও যেতে পারে। এটা খুবই স্বাভাবিক। এটি বাচ্চার ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। আপনার ওজন কমে গেলেও শিশুর ওজন কমে যাচ্ছে এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। বরং শিশু তার মতোই বেড়ে ওঠে। প্রেগনেন্সির শেষের দিকে মায়েদের শরীরে এ্যামিনিওটিক তরলের পরিমাণ কমে যাওয়া, ঘন ঘন টয়লেটে যাওয়া কিংবা কাজ বা ব্যায়ামের সময় বেড়ে যাওয়ার কারণে আপনার ওজন কমে যেতে পারে।
- ক্লান্তি অনুভব করা বা শিশুকে স্বাগত জানাতে উদ্যমী হয়ে ওঠা (নেস্টিং প্রবৃত্তি): গর্ভধারণের প্রথম ৩ মাস অবসাদ বা ক্লান্তি আপনাকে পুরোপুরি ঘিরে ধরবে এবং শেষের দিকে আবারও এই অবসাদ ও ক্লান্তি আবার ফিরে আসবে। হরমোনের পরিবর্তনের কারণেই মূলত গর্ভকালীন সময়ে অবসাদ বা ক্লান্তি আসে, তবু আরও বেশ কিছু কারণ রয়েছে যেমন: পেট অতিরিক্ত বড় হওয়ার কারণে নড়াচড়া করতে কষ্ট হয়। তার ওপর মূত্রাশয়ের ওপর চাপ পড়ার কারণে আপনার বারবার প্রস্রাব করতে উঠতে হবে যার কারণে আপনার হয়তো তেমন ভালো ঘুম হয় না। আর রাতের বেলা ঘুম ভালো না হলে আপনার সারাটা দিন ক্লান্ত লাগবে, এটা খুবই স্বাভাবিক।
তবে কিছু মায়েদের ক্ষেত্রে ঠিক বিপরীতটা ঘটে। অনেকেই সন্তানের জন্মের তারিখ ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে প্রচুর শক্তি ফিরে পায়। এটা নেস্টিং প্রবৃত্তি (Nesting Instinct) নামেও পরিচিত। এসব মায়েরা তাদের বাসা, চারপাশের সবকিছু সন্তানের জন্য সাজিয়ে গুছিয়ে রাখার চেষ্টা করে, সবকিছু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখে। সন্তানের আগমনের জন্য অধীর আগ্রহে প্রস্তুতি নিতে থাকে ।
প্রসব ব্যথা কি শুরু হয়েছে? আমার কি ডাক্তারের সাথে কথা বলা উচিত?
গর্ভাবস্থার শেষের দিকে আপনার উচিত ঘনঘন ডাক্তার বা স্বাস্থ্যকর্মীর কাছে যাওয়া। তিনি আপনার প্রসব শুরু হওয়ার লক্ষণসহ সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়মিত পরীক্ষা করবেন। আপনার ডেলিভারির তারিখ যদি কাছাকাছি চলে আসে এবং আপনি যদি মনে করেন যে আপনার প্রসব ব্যথা শুরু হয়েছে তবে দ্রুত হাসপাতালে যান।
প্রথমদিকে প্রসব ব্যথার সময়ে জরায়ুর সংকোচন নির্দিষ্ট সময় পরপর হবে না। কিন্তু যদি দেখেন সেগুলো ধীরে ধীরে শক্তিশালী হচ্ছে ও নির্দিষ্ট সময় পরপর ফিরে আসছে এবং ৩০ থেকে ৭০ সেকেন্ডের মতো স্থায়ী হচ্ছে, তাহলে ধরে নিন আপনার প্রকৃত প্রসব ব্যথা শুরু হয়েছে। এমনটা হলে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে যাবেন।
আপনার যদি মনে হয় আপনার ব্যথা হচ্ছে কিন্তু সেটা সত্যিকারের লেবার পেইন নাকি ফলস পেইন সেটা নিশ্চিত হতে পারছেন না, তাহলে ডাক্তারের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করুন। তিনি সব শুনে বলতে পারবেন যে আসলে ঠিক কী ঘটেছে এবং আপনার এখন হাসপাতালে যাওয়া উচিত কি না।
যেসব লক্ষণ দেখা মাত্রই ডাক্তার বা স্বাস্থ্যকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে:
- যদি রক্তপাত হয় বা উজ্জ্বল লাল রঙের স্রাব দেখা যায় (বাদামী বা গোলাপি নয়)
- যদি পানি ভেঙে যায়, বিশেষ করে তরল যদি সবুজ বা বাদামি রঙের হয়। তরলের রঙ যদি সবুজ বা বাদামি হয় তবে হতে পারে আপনার শিশু পেটের ভেতর পায়খানা করে দিয়েছে। শিশুর যদি জন্মের সময় এই পায়খানা খেয়ে ফেলে তাহলে খুব বিপজ্জনক হতে পারে।
- আপনার দৃষ্টি শক্তি যদি ঘোলা হয় বা আপনি যদি একই জিনিস দুটো করে দেখতে পান, প্রচন্ড মাথাব্যথা হয় বা হঠাৎ ফুলে যান। এগুলো সবই প্রিক্ল্যাম্পসিয়ার লক্ষণ, যা গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ হলে তা দেখে বোঝা যায় এবং দ্রুত চিকিৎসা করতে হয়।
অকাল প্রসব বা নির্ধারিত সময়ের আগে শিশুর প্রসব
নবজাতক সাধারণত ৪০ সপ্তাহ বা ২৮০ দিন মায়ের গর্ভে থাকার পর জন্মগ্রহণ করে। প্রায় ৯০% ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থাযর ৩৭ সপ্তাহে একটি শিশু পরিপূর্ণ হয়। ৩৭ সপ্তাহের আগে জন্ম নেওয়া শিশুকে প্রিটার্ম (Preterm) শিশু বলা হয়। আপনার যদি ৩৭ সপ্তাহ শেষ হওয়ার আগেই প্রসবের লক্ষণগুলো দেখতে পান তাহলে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যান।
নিজের অজান্তে কি প্রসব ব্যথা শুরু হতে পারে?
অধিকাংশ মায়েদের ক্ষেত্রে সন্তান জন্ম দেওয়ার প্রক্রিয়া একরকম হয়ে থাকে। লক্ষণ দেখে আগে থেকেই বোঝা যায় বা ব্যথাটা কোন দিকে আগাচ্ছে সেটাও অনুমান করা যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে প্রসব প্রক্রিয়া ভিন্নভাবে এগোয়, আবার অনেক সময় এগোয় না।
প্রসব ব্যথার আগে জরায়ুর সংকোচন দেখে একজন মা নিশ্চিত হতে পারেন যে এটাই প্রকৃত প্রসব ব্যথা। কিন্তু লক্ষণ দেখার পরেও যদি আপনি নিশ্চিত না হন তাহলে আপনার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। তিনি আপনার সারভিক্স পরীক্ষা করে প্রকৃত অবস্থা বুঝতে পারবেন।
যদি আপনার মন বলে যে প্রসব ব্যথা শুরু হয়েছে, তাহলে সবাই ‘না’ করলেও আপনি পরীক্ষা করে নিশ্চিত হবেন যে এটা প্রকৃত প্রসব ব্যথা কি না
প্রসব ব্যথা কি প্রাকৃতিকভাবে শুরু করা যায়?
গর্ভাবস্থার মাস পূর্ণ হয়ে যাওয়ার পরও প্রসব ব্যথা শুরু হচ্ছে না? কিছু প্রাকৃতিক কৌশল রয়েছে যা আপনার প্রসবব্যথা উঠতে সাহায্য করবে। আপনি নিজে এগুলো বাড়িতে চেষ্টা করতে পারেন। যেমন: হাঁটাচলা করা, সহবাস, ঝাল খাবার এবং আকুপাংচার।
যদিও বলা হয়ে থাকে, এই পদ্ধতিগুলো যে প্রসবব্যথা উঠাতে সাহায্য করবে তার কোনো প্রমাণ গবেষণায় পাওয়া যায়নি। প্রসব ব্যথা শুরুর জন্য কিছু করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে কথা বলে নেবেন। গর্ভাবস্থার শেষ দিনগুলো শান্ত থাকতে এবং সবকিছু উপভোগ করতে চেষ্টা করুন।
কখন দ্রুত হাসপাতালে যাবেন?
আমার গাইনি, মিস গ্যাব্রিয়েল স্যান্ডলার আমাকে ৫টি লক্ষণের কথা বলেছিলেন, যা দেখলে সাথে সাথে হাসপাতালে যেতে হবে।
১. তীব্র ব্যথা, এমনই তীব্র যে কথা বলার মত অবস্থাও থাকবে না। এর মানে এ ব্যথা লেবার পেইন।
২. রক্ত বা রক্তরস বের হওয়া।
৩. প্রস্রাবের মত পানি বের হতে থাকা। যদিও সেটা প্রস্রাব না, এবং এর রং কিছুটা লালচে।
৪. বাচ্চার নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যাওয়া। অনেক সময় কোন কারণ ছাড়াও গর্ভস্থ বাচ্চার নড়াচড়া বন্ধ থাকতে পারে। তখন মিষ্টি কিছু খেলে বাচ্চা নড়াচড়া করে। যদি এরপরেও বেশ দীর্ঘ সময় ধরে বাচ্চার নড়াচড়া টের না পান, তাহলে আর দেরি না করে দ্রুত হাসপাতালে যাবেন।
Many many thanks for this valuable post..👍🙏
আপনাকেও ধন্যবাদ।