জোরে শব্দ হলে যদি বাচ্চা ভয় পায়

এ আর্টিকেলে যা থাকছে

বিকট শব্দ শুনলে বাচ্চা ভয় পায়— এটা কি স্বাভাবিক?

এমিল ব্লেন্ডারের আওয়াজ শুনলেই কান্না করে উঠতো। ভয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরতো। হেয়ার ড্রায়ার দেখলে কেঁদে বুক ভাসিয়ে দেয়। এদিকে সাঁতার ক্লাসে সবাই বাচ্চার লম্বা চুল ড্রায়ারে শুকায়। একই রকম কান্না করতো ঘাস কাটার লোকেরা যখন আসতো তখন।

কিভাবে ভয় কাটালাম সেটা এ লেখায় বলবো।

বিকট শব্দে বাচ্চা ভয় পাওয়া স্বাভাবিক

আমি নিজেও একটু ভাবনায় থাকতাম এটা স্বাভাবিক আচরণ কিনা তা নিয়ে।

ডাক্তারকে বলার পরে ডাক্তার বলল তুমি নিজে কি এসব আওয়াজ পছন্দ করো? তুমি জানো যে এটা মেনে নিতে হবে তাই মেনে নাও। বাচ্চা তো আর জানে না! এটা খুব স্বাভাবিক আচরণ। ভয়ের কিছু নেই।

অটিজম নির্ণয় পরীক্ষা
বাচ্চার অটিজম কিভাবে বোঝা যায়
কোন বয়সে কেমন

একদিন ট্রেনের আওয়াজ শুনেও এমিল খুব ভয় পেয়েছিল। এবং কেঁদেছিল। আমরা সাথে সাথে ওই জায়গা থেকে চলে আসি। কারণ হঠাৎ করে এত আওয়াজ ছোট বাচ্চার হার্টের ক্ষতি করতে পারে।

নবজাতক (০-৩ মাস বয়স) বাচ্চার সামনে জোরে কথা বলা, চিৎকার চেঁচামেচি কিংবা অনেক বেশি ভলিউমে গান বাজনা করা ঠিক না। ওদের ক্ষতি হয়।

বাচ্চা বড় হবার সাথে সাথে আশেপাশের যেসব আওয়াজ আবশ্যক (আপনি না চাইলেও করতে হবে) সেগুলোর ভয় দূর করতে আমার এ ৫ টিপস কাজে লাগাতে পারেন।

টিপস ১ঃ আগে থেকে সতর্ক করা

আমাদের বাসায় বেশিরভাগ সময়ে এমিলের দাদী ব্লেন্ডার চালিয়ে কাজ করেন। উনি যখন ব্লেন্ডার চালান তখন আগে থেকে জানিয়ে দেন। রান্নাঘর থেকে এমিলকে ডেকে বলেন— “এমিল, আমি কিন্তু ব্লেন্ডার চালাচ্ছি, শব্দ হবে, ভয় পেও না”।

ঘাস কাটার লোকদের গাড়ি দেখলে আমি ওকে দেখিয়ে বলি যে “দেখ গাড়ি এসে গেছে। ওরা এখন ভু ভু করে ঘাস কাটবে। তোমার কানে ব্যথা লাগলে কানে হাত দিয়ে রাখো। চলো কানে হাত দিয়ে ১ থেকে ১০ গুণি”। ও কখনো কান চাপা দেয়, কখনো দেয় না। কিন্তু সতর্কতাবাণী দিয়ে রাখায় ভয়ে আঁতকে ওঠে না।

টিপস ২ঃ বাচ্চাকে ওই কাজে সম্পৃক্ত করা

এমিলের সাঁতারের ক্লাসে সব বাবা মা যখন হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকায়, আমি তখন ড্রায়ার দেখিয়ে আমার নিজের চুল শুকানোর ভান করি (ভান, কারণ আমার চুল ভেজা না)। মাঝে মাঝে ওকে বলি সুইচটা টিপতে। সকালে কখনো ছোট ব্লেন্ডারে (আওয়াজ কম) কিছু করলে ওকে কোলে নিয়ে করি। বলি সুইচটা অন কর। ও এখনো এত সাহস করে না, তবে কান্নাও আর করে না। ব্লেন্ডারের কাজটা হাঁ করে দেখে। কখনো কখনো যে জিনিসগুলি ব্লেন্ড করবো (ধরুন কলা) সেটা আমি ওকে দিয়ে ব্লেন্ডারে ঢুকাই।

এটার ফলে ওর মন থেকে ভয়টা কমে যায়। ও যখন কাজে সম্পৃক্ত হতে পারে তখন এটার ব্যাপারে ওর মধ্যে যে অজানা ভয় এবং সেনসিটিভিটি কাজ করে সেটা কমে আসে।

টিপস ৩ঃ মজা করে ওই শব্দ করুন

এমিলের দাদী ব্লেন্ডারে কিভাবে পাফু বানায়?

ভু ভু ভু (মুখে দুই ঠোঁট দিয়ে বাতাস করে শব্দ)

আপনি এমিলকে জিজ্ঞাসা করলে ও ঠিক এইভাবে ভু ভু করে আপনাকে শব্দটা শোনাবে। তারপরে চোখ মুখ কুঁচকে উহু উহু করে নকল কান্না করে বোঝাবে সে এটা সে পছন্দ করে না।

এই ভু ভু শব্দ করা, ঘাস কাটা কেমন বোঁ বোঁ শব্দ করে এগুলো আমি ওকে মুখে বিভিন্ন মজার সাউন্ড করে শিখিয়েছি। এর ফলে ও এ জিনিসগুলি নিয়ে মজা করতে করতে ভয়টা কমাতে পেরেছে।

টিপস ৪ঃ ভয় দেখাই না, ব্ল্যাকমেইল করি না

আমাদের একটা সাধারণ অভ্যাস হলো বাচ্চাদেরকে ভয় দেখানো। আমরা মনে করি বাচ্চারা কিছু একটাকে ভয় পেলে সেটা “ভালো”। গবেষণা বলে, ভয় মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। মানুষ ন্যাচারালি কিছু না কিছু ভয় পায়। এটাকে উৎসাহ দেয়া ঠিক নয়।

এমিল ব্লেন্ডারের শব্দ পছন্দ করে না তাই এটা দিয়ে ওকে কখনো আমি ভয় দেখাই না। ব্ল্যাকমেইল করি না, বলি না যে তুমি না খেলে এখন ব্লেন্ডার ছেড়ে দিবো। তুমি ব্রাশ না করলে তোমাকে হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকিয়ে দেব।

কখনো বাচ্চার দুর্বলতাকে/ইমোশনকে নিজের কাজ হাসিলের হাতিয়ার বানাবেন না।

কেন? কারণ এর পরের টিপসে।

টিপস ৫ঃ বোঝাপড়া এবং আত্মবিশ্বাস

এমিল যখন কোনো শব্দ ভয় পায় আমি এটাকে “আরে কিছু না, ভুলে যাও” এটা বলি না।

বলি, হুমম আমারও এটা ভালো লাগে না। কী বিকট আওয়াজ!

কেন? আমি ওকে বোঝাতে চাই যে ওর ভালো না লাগাটা আমি বুঝতে পারছি। যেমন বোঝাই ওর ভালো লাগা আমি বুঝতে পারছি। এর কারণ ওর মধ্যে যেন আত্মবিশ্বাস তৈরি হয় যে না আমি একা না, মাম্মিরও এ শব্দ ভালো লাগে না।

তবে ভালো না লাগা নিয়ে বসে থাকি না। দাদী ব্লেন্ডার চালাবে বললে আমি ওকে জড়িয়ে ধরি। বলি— পাফু পাফু (পাফু মানে দুধ। এমিলের দাদী গরুর দুধ খায় না তাই বাদাম ব্লেন্ড করে দুধ বানিয়ে খায়)

ঘাস কাটার লোকেরা আসলে আমি ওকে বলি, উহ, ওই ঘাস কাটারা তো পঁচা শব্দ নিয়ে আবার এসে গেল, চলো চলো জানালার পাশে দাঁড়িয়ে দেখি।আজকে ভয় পাবো না!!!

এ টিপসগুলি আমার কাজে লেগেছে। এখন ও আগের মত ভয় পায় না। 

কখন গুরুতর হতে পারে

বিকট শব্দের ভয় যদি আপনার বাচ্চার দৈনন্দিন জীবনকে ব্যাহত করে তার মানে ওকে একটা ডাক্তার দেখাতে হবে। সহজ করার জন্য একটা উদাহরণ দেই। ধরুন সকালে ব্লেন্ডারের আওয়াজ শোনার পর থেকে সারাদিন আপনার বাচ্চা রুম থেকে বের হচ্ছে না, খাচ্ছে না কিংবা বাথরুম করছে না, খেলতেও আসছে না— তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ জরুরি।

Comment (01)

  1. Umme
    December 4, 2024

    Same like my child. Its reasuuring to know the info. Really helpful , thanks a lot

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *