বাচ্চাকে আম কখন থেকে দেয়া যায়

এ আর্টিকেলে যা থাকছে

বাচ্চাকে আম দেয়া কতটা স্বাস্থ‍্যকর? কোন বয়সের বাচ্চাকে কিভাবে আম দিলে ভালো? আমের রস ভালো নাকি আটি– এসব প্রশ্নের উত্তর নিয়েই এ আর্টিকেল।

বাচ্চাকে আম কখন দেয়া যায়
বাচ্চাকে আম কখন দেয়া যায়

গ্রীষ্মের সব ফলই বেশ রসালো ও সুস্বাদু। শুধু তাই নয়, এগুলো দারুণ পুষ্টিকর। জাম কিংবা লিচুর মত ফলে ছোট বিচি থাকায় সেগুলো বাচ্চাকে দেয়া একটু কষ্টকর। কিন্তু আম হলো যে কোনো বয়সী বাচ্চার জন‍্য সহজ, পুষ্টিকর এবং দারুণ সুস্বাদু খাবার!

বাচ্চাকে আম কোন বয়স থেকে দেয়া যায়

বাচ্চা যখন সলিড খাবার উপযুক্ত হয় তখন থেকেই তাকে আম দিতে পারেন। শুধু রস নয়, পাকা আমের পিউরি বানিয়ে ছোট চামচ দিয়ে বাচ্চাকে আমের স্বাদ দিতে পারেন।বাচ্চার প্রথম সলিড খাবার আম হতেই পারে!

 বাচ্চাদের যখন টিথিং বা দাঁত ওঠার ব‍্যথা হয় তখন আমের আটির আম খেয়ে শুধু আটিটা ওকে হাতে ধরে চাবাতে দিলে যে কোনো দামী টিথারের চেয়েও ভালো কাজে লাগে।

বাচ্চাকে আম খাওয়ানো কতটা স্বাস্থ‍্যকর

বাচ্চাকে আম খাওয়ানো খুবই স্বাস্থ‍্যকর। আমে প্রচুর শর্করা, ফাইবার বা আঁশ আর ফ্লুইউডের পাশাপাশি ভিটামিন এ, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই এবং ভিটামিন কে থাকে। এছাড়াও আমে পটাশিয়াম, ফোলেট আর অসংখ‍্য অ‍্যান্টি-অক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। এসব পুষ্টি উপাদান বাচ্চাকে খেলাধুলা করার শক্তি দেয়, বিকাশে সাহায‍্য করে, হজমশক্তি বাড়ায়, শরীরে পানির চাহিদা পূরণে সাহায্য করে। এছাড়াও চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে, খাবার থেকে শক্তি উৎপাদন করতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বাচ্চার জন‍্য আয়রন বেশ জরুরি
আরো পড়ুন: বাচ্চাকে আয়রনযুক্ত খাবার দেয়া জরুরি কেন?
আম খেলে কি অ‍্যালার্জি হয়

না। যদিও ল্যাটেক্স বা পোলেন এ যাদের অ‍্যালার্জি আছে তাদের আমেও অ‍্যালার্জি থাকতে পারে।  তবু আম খেয়ে অ‍্যালার্জি হওয়ার আশঙ্কা খুব কম। দেখা গেছে কারো কাজু বাদাম বা পেস্তা বাদামে অ‍্যালার্জি থাকলে তার আমের বীজেও অ‍্যালার্জি হতে পারে। তবে আমের আটি ছাড়া বাকি অংশ খেলে তাদের কোনো ধরনের অ‍্যালার্জি হওয়ার আশংকা নেই। আপনার বাচ্চার যদি কাজু বা পেস্তা বাদামে অ‍্যালার্জি থাকেও, তাকে নিঃসংকোচে আম খেতে দিন । শুধু খেয়াল রাখবেন যেন বাচ্চা আমের আটি না খায়। 

আমের খোসার রসে একধরনের কেমিক্যাল থাকে যা অ‍্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে। কারো উরুশিওল (urushiol) জাতীয় কেমিক্যালে অ‍্যালার্জি থেকে থাকলে আমের খোসার রস থেকে ত্বকে এক ধরনের র‍্যাশ জাতীয় চুলকানি হতে পারে। আমার এ অ‍্যালার্জি আছে। তবে আমের খোসার অংশ বাদ দিয়ে শুধু আম খেলে এই অ‍্যালার্জি বা চুলকানি হয় না।

যে কোনো নতুন খাবার খাওয়ানোর সময় যেভাবে খেয়াল রাখেন, তেমনই শুরুতে বাচ্চাকে আম খুব অল্প পরিমাণে খাইয়ে বাচ্চার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যদি কোনো ধরনের খারাপ প্রতিক্রিয়া না হয় তাহলে আস্তে আস্তে আম খাওয়ানোর পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারেন।

বাচ্চা আম খাওয়ার সময় গলায় আটকে যেতে পারে

হ্যাঁ৷ আম পিচ্ছিল ও শক্ত হয়, যার ফলে বাচ্চার গলায় আটকে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে৷ এই আশঙ্কা কমাতে বাচ্চাকে খাওয়ানোর আগে তার বয়স অনুযায়ী প্রস্তুত করে নিতে হবে। সবসময়ই বাচ্চাকে খাওয়ানোর সময় নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে হবে। বাচ্চাকে আম দেয়ার সময় অবশ‍্যই প্রাপ্তবয়স্ক কাউকে নজর রাখতে হবে যাতে কিছু হলে সাথে সাথে সামলানো যায়। 

বাচ্চা কখন আমের রস বা জ‍্যুস খেতে পারবে

বাচ্চার বয়স ১ বছর পূর্ণ হওয়ার আগ পর্যন্ত তাকে আমের রস না দেয়াই ভালো। ২ বছরের আগে বাচ্চাকে যে কোনো ধরনের জ‍্যুস বা চিনি যুক্ত পানীয় না খাওয়ালেই সবচেয়ে ভালো হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত জ‍্যুস খেলে বাচ্চার দাঁত ক্ষয় হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। তাছাড়া ফলের রস বাচ্চার ছোট পেটের জায়গা দখল করে রাখে যার ফলে বাচ্চার অন্য খাবারের প্রতি আগ্রহ কমে যেতে পারে। এতে শিশুর বিকাশে বাধা পায়। তবে, বয়স এক বছর পার হলে মাঝে মাঝে অল্প পরিমাণে জ‍্যুস খাওয়ানো হলে তেমন কোনো সমস্যা হয় না।তবে এখানে ঘরে বানানো জ‍্যুসের কথা বলা হচ্ছে। দোকানে ম‍্যাংগো জ‍্যুসের নামে যেগুলো বিক্রি করা হয়, অধিকাংশই মিষ্টি কুমড়ার সাথে চিনির সিরাপ মেশানো জ‍্যুস। এগুলো একদম এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। 

বাচ্চা কাঁচা আম খেতে পারবে

হ্যাঁ। তবে সতর্ক থাকা জরুরী। কাঁচা আমের ডাল বা তরকারি দিয়ে বাচ্চাকে ভাত/ওটস/চিড়া/খই মেখে খাওয়াতে পারেন। তবে শুধু কাঁচা আম দিতে হলে আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে। কারণ কাঁচা আম বেশ শক্ত হয় বলে চারকোণা টুকরা করে দেয়া হলে বাচ্চার গলায় আটকে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। 

কাঁচা আম বাচ্চাকে খাওয়ানোর ক্ষেত্রে আরো নিরাপদ উপায় হলো তাকে পুরো আমটাই দেয়া। বাচ্চা আমে একটু কামড়ে স্বাদটা নিতে পারবে। এছাড়া বাচ্চাকে আম পাতলা স্লাইস করে দেয়া যেতে পারে, আমচুর পাউডার করে দেয়া যেতে পারে এবং চাটনি বা আচারের (চিনি বা মধু ছাড়া)  করে দেয়া যেতে পারে। কাঁচা আমের স্বাদ টক হয় আর এতে প্রচুর ভিটামিন সি থাকে। 

রান্না না করা কাঁচা আমে উচ্চমাত্রায় র-স্টার্চ বা শ্বেতসার থাকায়, কোনো কোনো বাচ্চার পেটে গ্যাস হতে পারে। তাই আপনার বাচ্চাকে কাঁচা আম খাওয়াতে চাইলে আগে অল্প পরিমাণে দিয়ে খেয়াল করুন। 

বাচ্চা কি ড্রাইড আম খেতে পারবে

না। বাচ্চার বয়স ২ বছর হওয়ার আগ পর্যন্ত শুকনো আম না খাওয়ানোই ভালো। তবে বাচ্চার চাবানোর দক্ষতা বাড়ানোর জন্য ফিডিং থেরাপিস্ট আর সোয়ালোইং স্পেশালিস্টরা প্রায়ই  ড্রাইড আম খাইয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে তাদের তত্ত্বাবধায়ন ছাড়া বাচ্চাকে শুকনো আম খাওয়ানো উচিত না। ড্রাইড ফ্রুট খেলে সাধারণতই গলায় আটকে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। এছাড়া এতে সালফাইটসহ অন্যান্য প্রিজারভেটিভ থাকে। তবে হাতের কাছে যদি শুকনো আম ছাড়া আর কিছু না থাকে, তবে বাচ্চাকে খাওয়ানোর আগে অবশ্যই আমের টুকরোগুলো পানি ভিজিয়ে রেখে সেগুলো টুকরো করে তারপরই খেতে দিন।

কোন বয়সের বাচ্চাকে আম কিভাবে খেতে দিব

আপনার বাচ্চা কিভাবে খেতে পছন্দ করে, কতটুকু গিলতে পারে এবং চিবিয়ে খেতে পারে সেটার ওপরে নির্ভর করে আপনি  কিভাবে বাচ্চাকে আম দেবেন।আমি যেভাবে বাচ্চাকে আম দিয়েছি সেটা সংক্ষেপে এখানে শেয়ার করবো। 

৬ মাস পাকা আমের আটির সব আম খেয়ে শুধু আটিটা হাতে ধরে খেতে দিয়েছি। 

৮ মাস পাকা আম বড় বড় টুকরা করে কামড়ে খেতে দিয়েছি। খেয়াল রেখেছি একবারে যেন বেশি কামড় না দেয়।

১০ মাস পাকা আম ছোট ছোট টুকরা (অর্ধেক আঙুলের সাইজ) দিয়েছি। 

১২ মাস পাকা আম ছোট ছোট টুকরা করে সাথে মুড়ি দিয়ে মেখে খেতে দেই। এমিল এটাকে ডাকে আম্মুড়ি।(আম+মুড়ি= আম্মড়ি)

২ বছর বয়স এমিলের। এখনো জ‍্যুস দেইনি। কাঁচা আম দিয়ে রান্না করা ডাল খাওয়াই ৮ মাস থেকে। 

 

রেফারেন্স:

1. Paschke A, Kinder H, Zunker K, Wigotzki M, Steinhart H, Wessbecher R, Vieluf I. (2001). Characterization of cross-reacting allergens in mango fruit. Allergy, 56 (3), 237-42. Retrieved August 31, 2021.

2.Ukleja-Sokołowska, N., Gawrońska-Ukleja, E., Lis, K., Żbikowska-Gotz, M., Sokołowski, Ł., & Bartuzi, Z. (2018). . Allergy, asthma, and clinical immunology : official journal of the Canadian Society of Allergy and Clinical Immunology, 14, 78. DOI: 10.1186/s13223-018-0294-1. Retrieved September 13, 2021.

3.Sareen, R., & Shah, A. (2011). . Asia Pacific allergy, 1(1), 43–49. DOI: 10.5415/apallergy.2011.1.1.43. Retrieved September 13, 2021.

4.Fernandez C, Fiandor A, Martinez-Garate A, Martinez Quesada J. (1995). . Clin Exp Allergy, 25(12), 1254-9. Retrieved August 31, 2021.

5. American College of Allergy, Asthma & Immunology. (n.d.)  Retrieved July 12, 2021.

6. World Health Organization (WHO). (2023).

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *