বাজারে ২০০ ধরনের ওটস পাওয়া যায়। সব ওটসই কি ভালো? কোন ওটস খেলে পুষ্টির বদলে উল্টো ক্ষতি হয় তা কি আপনি জানেন? ওটস সম্পর্কে জানতে হলে বুঝতে হবে ওটস কী আর কেনইবা এটা পুষ্টিকর খাদ্য। বাজারে যেসব ওটস পাওয়া যায় তার সবই কিন্তু সমান পুষ্টিকর নয়।
ওটস আসলে কী
ওট এক ধরনের খাদ্যশস্য।এর বৈজ্ঞানিক নাম Avena sativa। প্রচলিত নাম ওটস। যেসব দেশে গ্রীষ্মকালেও তেমন গরম পড়ে না (যেমন রাশিয়া) সেসব দেশে ওটস প্রচুর পরিমাণে হয়। ওটকে আপনি ধানের সাথে তুলনা করতে পারেন। বাংলাদেশের মত যেসব দেশে বেশ গরম পড়ে সেখানে যেমন অনেক ধান হয়, শীতপ্রধান এলাকায় অনেক ওট হয়।
২০২১ সালে পৃথিবীতে ২২.৫ মিলিয়ন টন ওট উৎপাদন করা হয়েছে। বুঝতেই পারছেন চাল বা ভাতের মতই আরেক জনপ্রিয় খাদ্যশস্য এই ওট/ওটস বা ওট দিয়ে বানানো খাবার।
গবাদি পশুর খাবার হিসেবে একসময় বেশি ব্যবহার করা হলেও, অন্য শস্যের তুলনায় এর পুষ্টিগুণ বেশি থাকায় পুরো পৃথিবীতেই ওটস এখন জনপ্রিয় খাবার।
ওটস কত ধরনের হয়?
এ ব্যাপারটা ঠিক চালের মত। বাজারে যেমন নানা জাতের চাল পাওয়া যায়। কোনোটা দিয়ে পায়েস রান্না হয়, কোনোটা দিয়ে বিরিয়ানি। ওটসও ঠিক তেমন। মানুষ যে ওটস খায় তা কমপক্ষে ২০ ধরনের হয়। এ আর্টিকেলে আমি খুব সংক্ষেপে সবচেয়ে পরিচিত ওটসগুলি নিয়ে আলোচনা করব।
ওট গ্রোটস: ওট গাছের যে অংশটি খাওয়া যায় সেটি হল ওট গ্রোটস। আমরা ধান গাছ মাড়াই করে যেভাবে চাল বের করি অর্থাৎ ধান গাছ থেকে যে খাদ্যশস্যটি বের করা হয় সেটি যেমন ধান, ওট গাছের খাদ্যশস্য হল ওট গ্রোটস। এটাই সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর ওটস। কারণ এর সাথে কোনো কিছু মেশানো হয় না এবং কোনোভাবে প্রক্রিয়াজাত করা হয় না। তাহলে এটা কেন তেমন একটা প্রচলিত নয়? কারণ এটি রান্না করতে ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা পর্যন্ত সময় লাগে।
স্টিল কাট ওটস: ওট গ্রোটসকে মেশিনে ছোট করে কাটা ওটকে স্টিল কাট ওটস বলে। ওই যে বললাম না, আমাদের চালের মত! মেশিনে ছোট করে কাটা ছাড়া এ ধরনের ওটসে আর কোনো কিছুই মেশানো হয় না। রান্না করতে ২০-২৫ মিনিট সময় লাগে। এই ওটসও বেশ স্বাস্থ্যকর। যেহেতু রান্না করতে ওট গ্রোটসের চেয়ে কম সময় লাগে তাই ডায়বেটিস রোগীদের জন্য এটা খাওয়াই সবচেয়ে ভালো।
এই দুইটি ওটস ছাড়া বাকি যত ধরনের ওটস আছে সবই প্রক্রিয়াজাত। কিভাবে তা করা হয় এখন সেটা আলোচনা করব।
রোলড ওটস/ওল্ড ফ্যাশনড ওটস: পানির ভাপে অনেকক্ষণ সেদ্ধ করে নরম করে রুটির মত বেলে এই রোলড ওটস তৈরি করা হয়। রোলড মানে এটাকে roll করা বা চ্যাপ্টা করা হয়েছে। তাই এটা দেখতে ছবির মতন হয়। আগেই সেদ্ধ করার ফলে খাবার সময়ে আর ১ ঘণ্টা ধরে সেদ্ধ করতে হয় না। ৫-১০ মিনিটের মধ্যেই রোলড ওটস বা ওল্ড ফ্যাশসড ওটস তৈরি করা যায়। আর এটিই পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় ওটস। শিশুদের জন্যও হোল গ্রেইন রোলড ওটস সবচেয়ে ভালো। কারণ এটি নরম এবং সহজেই হজম হয়।
কুইক ওটস/কুইক রোলড ওটস: এই ওটসকে আরো বেশি সেদ্ধ করে নরম করা হয়। এটা রান্না করতে সময় লাগে ৩-৪ মিনিট।
ইনস্ট্যান্ট ওটস: এ ওটস সম্পর্কে আপনাকে বেশ সতর্ক হতে হবে। ইনস্ট্যান্ট ওটস মানেই খারাপ না। এর মানে এ ওটসকে মেশিনে ভেঙে গুঁড়ো করে একেবারে ছোট করা হয়েছে এবং আরো অনেক বেশি সেদ্ধ করা হয়েছে। ইনস্ট্যান্ট ওটসের প্যাকেট খুলে গরম পানি/দুধে মেশালেই তৈরি হয়ে যায়। ৬-৮ মাস বয়সে শিশুর জন্য এই গুঁড়ো করা ওটস বেশ ভালো।
তাহলে সতর্কতার কথা কেন বললাম?
কারণ বাজারের অধিকাংশ ইনস্ট্যান্ট ওটস ফ্লেভারড! স্বাদ বাড়ানোর জন্য এর সাথে কোনো না কোনো ফল বা সবজির রস ও চিনি/লবণ মেশানো হয় যা ওটসের পুষ্টিগুণ ঠিক রাখে কিন্তু এটা আর স্বাস্থ্যকর কোনো খাবার থাকে না।
নিচে কয়েকটি ফ্লেভারড ওটসের ছবি দেয়া হল। আপনি যদি পুষ্টিকর বা স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার জন্য ওটস বেছে নেন, তাহলে এইসব ওটস কখনোই খাবেন না।
কোন ওটস সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর
ওটসের নামে বাজারে বেশ সুনাম আছে। ওটস খেলে কোলস্টেরল ঠিক থাকে, ডায়বেটিস বা ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং প্রচুর আঁশ বা ফাইবারের পাশাপাশি আছে ভিটামিন ও মিনারেলস। এগুলো আমরা সবাই জানি। যেটা জানি না সেটা হল এ কথা সব ওটসের জন্য প্রযোজ্য না।
উপরে আমি সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর থেকে সবচেয়ে কম স্বাস্থ্যকর ওটস ক্রমান্বয়ে লিখেছি।যে কোনো খাবার যত কম প্রসেসড বা প্রক্রিয়াজাত করা হয় তা তত স্বাস্থ্যকর। কিন্তু কার স্বাস্থ্য কেমন সেটাও কিন্তু এক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হয়। যেমন ধরুন ওট গ্রোটস সবচেয়ে ভালো হলেও এটা খাওয়া বেশ কষ্টের। কারণ এক ঘণ্টা ধরে প্রতিবেলা ওট সেদ্ধ করা আধুনিক কর্মব্যস্ত জীবনে বেশ কঠিন। ডায়বেটিস রোগীর জন্য সবচেয়ে ভালো ওটস স্টিল কাট ওটস। কেন? কারণ এর জিআই। (GI)
জিআই বা (The glycaemic index) হলো কোনো খাবারের শর্করা কত দ্রুত রক্তে মেশে তার একটি সূচক। এটাকে ব্লাড সুগার লেভেলও বলে।
স্টিল কাট ওটসের জিআই সবচেয়ে কম। সুতরাং এটা ডায়বেটিস রোগীদের জন্য ভালো।
আবার শিশু বা অন্যদের ক্ষেত্রে রক্তের সুগারের পরিমাণ নিয়ে অত টেনশন নেই। তাই তাদের জন্য রোলড ওটস সবচেয়ে ভালো। কুইক বা ইনস্ট্যান্ট ওটস খাওয়ালে শিশুর যে ক্ষতি হয় তা কিন্তু না। তবে তাতে সে ওটসের পুরো পুষ্টিটা পায় না।
কোন ওটস খেলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়
যে কোনো ফ্লেভারড ওটস খেলে স্বাস্থ্যের ভালোর বদলে ক্ষতি হয়। কারণ এতে প্রচুর লবণ ও চিনি মেশানো হয় যা কোনোভাবেই শরীরের জন্য ভালো নয়। ফ্লেভারড খাবারে লবণ, চিনি ছাড়াও যে ধরনের রাসায়নিক মেশানো হয় তা কিডনির জন্য যথেষ্ট ক্ষতিকর। তাই যে কোনো ধরনের ফ্লেভারড/মিক্সড ওটস স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
বাজারে ওটমিল কিনতে পাওয়া যায়। ওটমিল মানে ওটসের সাথে দুধ মেশানো যা খাবার আগে পানি মিশিয়ে তৈরি করতে হয়। এগুলি সবচেয়ে অস্বাস্থ্যকর খাবার।
শিশুর জন্য কোন ওটস কিনব?
শিশুর জন্য যে কোনো প্যাকেটের খাবার যখন কিনবেন ভালো করে পড়ে দেখবেন উপকরণ অংশটি। শিশুকে কুইক/ইনস্ট্যান্ট/রোলড যেই ওটসটি দিন না কেন তাতে যেন কোনো ধরনের লবণ, চিনি, ফ্লেভার মেশানো না থাকে।আবারো ভাতের উদাহরণ দেই।
আপনি যদি লবণ, চিনি মাখিয়ে ৬ মাসের শিশুকে ভাত খাওয়ান সেটা ওর কিডনির ক্ষতি করবে, বড় হয়ে হাই ব্লাড প্রেশার সহ কিডনির নানা রোগে ভুগবে। ওটসও ঠিক তেমন।
৬-৭ মাসের শিশুকে গুঁড়ো করা ওটস দুধে মিশিয়ে বা খিচুড়ির মত রান্না করে দিতে পারেন।
৮মাস+ শিশুর জন্য যে রোলড ওটস ভালো। কারণ তাতে ও দানা দানা খাবার খেতে শেখে। রান্না করতে খুব একটা কষ্টও হয় না। আর পুষ্টিটাও ঠিকমত পায়। আপনি লবণ বা চিনি না মিশিয়ে একটা এইমাত্র ছেলা কলা কেটে ওটসের সাথে খেতে দিন। সাথে বাদাম গুঁড়োও দিতে পারেন। যে কোন মিষ্টি ফলের সাথে ওটস খাওয়ার যে পুষ্টি তা কিন্তু বাজার থেকে কেনা মিক্সড ওটসে নেই!
রেফারেন্স:
1. https://en.wikipedia.org/wiki/Oat
2. https://www.quakeroats.com/oats-do-more/why-oats/the-difference-between-our-oats
3.https://recipes.net/articles/types-of-oats