বাচ্চাকে প্যাসিফায়ার দেয়া কি ভালো

এ আর্টিকেলে যা থাকছে

প‍্যাসিফায়ার যেমন ভালো, তেমন খারাপ। সব প‍্যাসিফায়ার এক নয়। আবার সব বাচ্চা প‍্যাসিফায়ার নেয়ও না। বাচ্চাকে প‍্যাসিফায়ার দেয়ার আগে কোন কোন বিষয়গুলি জানা দরকার তা এখানে আলোচনা করব।

ইংরেজি pacifier শব্দের মানে pacify করার জিনিস বা শান্ত রাখার জিনিস। আসলেই শিশুকে আরাম ও স্বস্তি দিতে প্যাসিফায়ার বেশ ভালো কাজ করে। তবে সব শিশুর প‍্যাসিফায়ার দরকার হয় না। কোনো শিশুর যদি চোষার প্রবণতা বা প্রয়োজনীয়তা তৈরি হয় এবং সে যদি এখনো তার আঙুল মুখে ঢোকানো না শিখে থাকে, তাহলে তার স্বস্তি এবং আরামের জন্য প্যাসিফায়ারের গুরুত্ব এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু শিশুকে প্যাসিফায়ার এর সাথে পরিচিত করার আগে কিছু সম্ভাব্য ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।

শিশুকে কি প্যাসিফায়ার দেওয়া উচিত

হ্যাঁ, শিশুকে অবশ্যই প্যাসিফায়ার দিয়ে দেখতে পারেন। যেসব শিশু চোষার মাধ‍্যমে নিজেকে শান্ত করতে পারে তাদের জন‍্য এটা বেশ কাজের। শিশু খুব কান্নাকাটি করলে, কিছুতেই থামানো না গেলে অথবা শিশুকে রাতে ঘুমানোর সময় ঘুম পাড়াতে অসুবিধা হলে বাচ্চার অসুবিধার কারণ অর্থাৎ যে কারণে সে কান্নাকাটি করছে বা ঘুমাতে পারছে না তা কমিয়ে এনে শিশুকে স্বস্তি দিতে প্যাসিফায়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

আপনি যখন বাচ্চাকে নিয়ে বিমানে ভ্রমণ করেন তখন তার কানে ব‍্যথা সামলাতে (বাতাসের চাপের কারণে) প্যাসিফায়ার বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে। এছাড়া ডাক্তারের চেম্বারে বা এমন কোনো জায়গায় যেখানে শিশুর স্বস্তিবোধ করে না, এমন পরিবেশে তাকে ভুলিয়ে রাখতে প্যাসিফায়ার বেশ সাহায‍্য করে। 

বাংলাদেশে পাবলিক প্লেসে যেরকম বাচ্চাদেরকে গলা ফাটিয়ে কাঁদতে দেখা যায়, বিদেশে এরকম খুব কমই দেখবেন। এর অনেক কারণ আছে। একটি বড় কারণ প‍্যাসিফায়ারের সঠিক ব‍্যবহার। 

অন্যদিকে, যেসব শিশু প্যাসিফায়ার পাওয়ার আগেই তাদের আঙুল চিনতে শুরু করেছে তারা প্যাসিফায়ারের প্রতি খুব একটা আগ্রহ দেখায় না। আবার প্যাসিফায়ারের কিছু খারাপ দিকও রয়েছে। তাই শিশুর জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে এর ভালো-খারাপ দুটো দিকই বিবেচনায় রাখতে হবে।

শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর পদ্ধতি
আরো পড়ুন: শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর পদ্ধতি
শিশুকে কখন প্যাসিফায়ার দেওয়া যেতে পারে

শিশু কি কাঁদতে শুরু করা মাত্রই তার মুখে প্যাসিফায়ার দিয়ে দেবেন?

শিশুকে প্যাসিফায়ারের সাথে পরিচিত করার আগে নিশ্চিত হয়ে নিন যে শিশু বুকের দুধ খাওয়ার প্রক্রিয়াটি ঠিকঠাক ধরতে পেরেছে। শিশুর বয়স যখন প্রায় তিন থেকে চার সপ্তাহ মানে এক মাসের কাছাকাছি তখন সে বুকের দুধ খাওয়া মোটামুটি শিখে যায়। কারণ দুধ খাওয়ার সময় চোষার পদ্ধতি প্যাসিফায়ার চোষার পদ্ধতি থেকে আলাদা।

তাই জন্মের তিন থেকে চার সপ্তাহ পরে শিশুকে প‍্যাসিফায়ার দিন। সে যদি তখনও বুকের দুধ খাওয়া ভালোভাবে রপ্ত করতে না পারে, অপেক্ষা করুন।

প্যাসিফায়ারের ভালো দিক বা সুবিধা
  • শিশু নিজে নিজে শান্ত হওয়া শেখে। বিশেষ করা ঘুমের সময় প্যাসিফায়ার শিশুকে নিজে নিজে ঘুমিয়ে পড়তে শিখতে সাহায্য করতে পারে। অনেক বাচ্চাই ঘুমের সময় কিছু চুষে ঘুমাতে চায়। তখন মা না থাকলেও প‍্যাসিফায়ার চুষে চুষে সে ঘুমাতে পারে। এজন‍্যই বিদেশে প‍্যাসিফায়ার বেশ জনপ্রিয়। 
  • প্যাসিফায়ারের ব্যবহার ‘সাডেন ইনফ্যান্ট ডেথ সিনড্রোম’ এর ঝুঁকি কমায়। এর আরেক নাম SIDS, এবং পশ্চিমে বাচ্চা একা থাকে বলে ঘুমের মধ‍্যে মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটে থাকে। শিশুর প্যাসিফায়ার চোষা তার মুখের এবং নাকের চারপাশে বাতাস চলাচলে সাহায্য করতে পারে, যা শিশুর পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজন গ্রহণ নিশ্চিত করে।
  • প্যাসিফায়ার আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকে। বাচ্চার মুখে প্যাসিফায়ার দিয়েই বাচ্চাকে শান্ত করে ফেলা সহজ। শিশু প্যাসিফায়ার কতক্ষণ চুষবে বা কখন তার প্যাসিফায়ার চোষা বন্ধ করা উচিত সেটা আপনিই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। যা নিজের বুড়ো আঙুল চুষলে করা সম্ভব হয় না।গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুর আঙুল চোষার অভ্যাস বন্ধ করা প্যাসিফায়ার বন্ধ করার থেকে কঠিন হয়।
  • প্যাসিফায়ার শিশুকে ভুলিয়ে রাখতে ভাল কাজ করে। প্লেনে চড়াকালীন শিশুর যদি ‘ইয়ার পপ’ হয়, কিংবা শিশুকে যদি ডাক্তারের চেম্বারে ইঞ্জেকশন দেয়ার প্রয়োজন পড়ে, সেক্ষেত্রে প্যাসিফায়ার শিশুকে শান্ত রাখার এবং ভুলিয়ে রাখার একটি সহজ উপায়। অনেক বাবা-মা ই শিশু কাঁদলে তাকে দ্রুত শান্ত করার জন্য প্যাসিফায়ারের ওপর নির্ভর করেন।   
 
আরো পড়ুন: শিশু কেন পেটের উপরে ঘুমায়
প্যাসিফায়ারের খারাপ দিক বা অসুবিধা
  • শিশু প্যাসিফায়ারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়তে পারে। বাচ্চা যখন কিছুটা একগুঁয়ে বা জেদী হয়ে ওঠে তখন তার প্যাসিফায়ারের অভ্যাস ছাড়ানো কঠিন হতে পারে। 
  • এটা আপনার জন্যও একটা বদঅভ্যাস হয়ে উঠতে পারে। শিশু একটু বিরক্ত করলে বা কাঁদতে শুরু করলেই শিশুর মুখে প্যাসিফায়ার গুঁজে দিতে গিয়ে আপনি হয়তো কোনো বড় বিষয় মিস করে ফেলছেন। শিশু আসলে কেন কান্না করছে, পেট ব্যথা কিংবা ডায়পারে অস্বস্তি বা অন্য কোনো কারণে তার অসুবিধা হচ্ছে কিনা তাতে মনোযোগ দিচ্ছেন না। যার ফলে, শিশু হয়তো মুখে কিছু পেয়ে খুশি হচ্ছে কিন্তু সে অন্য কোনোভাবে নিজেকে স্বস্তি দিতে পারছেনা। বা আসল সমস‍্যা সমাধান করা হচ্ছে না।
  • এর কারণে সবারই ঘুমের সমস্যা হতে পারে। যেসব শিশু ঘুমানোর জন্য নিয়মিত প্যাসিফায়ার ব্যবহার করে তারা নিজে নিজে ঘুমিয়ে পড়তে নাও শিখতে পারে। মাঝরাতে ঘুমের মধ্যে প্যাসিফায়ারটি পড়ে গেলে বা হারিয়ে ফেললে শিশু কান্নাকাটি শুরু করতে পারে,যার ফলে তার যতবার ঘুম ভাঙবে ততবারই হয়তো আপনাকে উঠে তাকে প্যাসিফায়ার দিতে হবে। এ ব্যাপারটা কিছুটা অসুবিধাজনক হলেও, প্যাসিফায়ার এর একটা গুরুত্বপূর্ণ ভালো দিক হলো প্যাসিফায়ার ব্যবহারকারী শিশুরা আরো নিরাপদে ঘুমায় এবং প্যাসিফায়ার শিশুকে আরো ভালো ঘুমাতে এবং নিজেই নিজেকে শান্ত করতে শিখতে সাহায্য করে যার তুলনায় প্যাসিফায়ারের এই খারাপ দিকটি কিছুটা গৌণ বটে।
  • প্যাসিফায়ার কানের ইনফেকশানের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তবে শিশুর ছয় মাস বয়সের আগে কানের ইনফেকশান হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। ছয় মাস বয়সের পর কিছুটা ঝুঁকি থাকতে পারে।
প্যাসিফায়ার এবং শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো

এ বিষয়ে অনেক মতামত থাকলেও, এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি যে প্যাসিফায়ারের কারণে শিশুর ‘নিপল কনফিউশন’ হয় অর্থাৎ, শিশু মায়ের বুকের দুধ খাওয়ার ঠিক পদ্ধতিটি ধরতে পারে না। ফলে ঠিকঠাক চুষে দুধ খেতে পারে না। এছাড়াও শিশুকে প্যাসিফায়ার দেওয়ার ফলে প্রচলিত দুধ খাওয়ানোর ধরনে পরিবর্তন আসে কিংবা শিশুর দুধ খাওয়া কমে যায় বলে যে মতামত প্রচলিত আছে তার পক্ষেও কোনো তথ্য পাওয়া যায় নি। 

তবুও ঝুঁকি এড়াতে, শিশুর বয়স তিন সপ্তাহ কিংবা এক মাস হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে তারপর প্যাসিফায়ার দেওয়া ভালো। নিশ্চিতভাবেই, মায়ের বুকে কতটুকু দুধ আসবে তা নির্ভর করে বাচ্চা কতটা চুষছে তার ওপর। যার ফলে শিশুর মুখে বেশি সময় ধরে প্যাসিফায়ার থাকার কারণে শিশু হয়তো স্তনে কম সময় দেবে যা মায়ের বুকে পর্যাপ্ত দুধ আসার জন্য যথেষ্ট উদ্দীপনা (স্টিমুলেশন) নাও দিতে পারে। 

প্যাসিফায়ারের বিভিন্ন ধরন

প্যাসিফায়ার অনেক ধরন ও আকারের হয়। ভিন্ন ভিন্ন শিশু ভিন্ন ভিন্ন প্যাসিফায়ারের প্রতি আকৃষ্ট হয়, তাই শিশুকে বিভিন্ন ধরনের প্যাসিফায়ার দিয়ে দেখুন শিশুর কোনটা ভালো লাগে।একবার শিশুর পছন্দের প্যাসিফায়ারটি পেয়ে গেলে কয়েকটা কিনে রাখুন! বাড়তি কয়েকটা হাতের কাছে থাকা ভালো।

প্যাসিফায়ার কেনার সময় যে ব্যাপারগুলো খেয়াল করবেন:

নিপলের আকৃতি : সাধারণ আকৃতির প্যাসিফায়ারের নিপল সোজা আর একটু প্রসারিত হয়। অর্থোডেন্টিক প্যাসিফায়ারের ওপরের দিকটা গোল হয় আর নিচের অংশটা চ্যাপ্টা হয়। অন্যদিকে, “চেরি” নিপল একটু নলের মতো শুরু হয়ে শেষের দিকে এসে ছোট বলের আকৃতির মতো দেখতে হয়। 

 

সব বাচ্চা একই ধরনের প‍্যাসিফায়ার পছন্দ করে না

লেটেক্স নাকি সিলিকন :  শক্ত মজবুত,  দীর্ঘস্থায়ী, দুর্গন্ধ হয় না আর নিশ্চিতে ধোয়া যায় এমন প্যাসিফায়ার হলো সিলিকনের তৈরি প্যাসিফায়ার। কারণ লেটেক্স এর তৈরি প্যাসিফায়ার তুলনামুলক নরম আর নমনীয় হলেও তাড়াতাড়ি পুরোনো হয়ে ক্ষয় হয়ে যায়। এমনকি এগুলো বাচ্চারা সহজেই দাঁত দিয়ে কামড়ে আওয়াজ করতে পারে।পরিস্কারের ক্ষেত্রেও এগুলো খুব একটা নিরাপদ না। তাছাড়া বাচ্চারা বড়দের মতোই লেটেক্স এর প্রতি সংবেদনশীল হতে পারে, অ‍্যালার্জির শিকার হতে পারে। 

শিল্ড: কিছু কিছু প্যাসিফায়ার পুরোটাই লেটেক্স দিয়ে তৈরি করা হয় আর এটার ওপর অন্য কোনো আস্তরণ, বা জোড়া থাকেনা। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্যাসিফায়ারের ওপর প্লাস্টিকের তৈরি শিল্ড অর্থাৎ আস্তরণ থাকে।এসব ক্ষেত্রে অবশ্য বাতাস আসা যাওয়া করার জন্য ছোট ছোট ছিদ্র থাকে। এগুলো বিভিন্ন রঙের হয় আবার রংহীন বা স্বচ্ছও হতে পারে এবং বিভিন্ন আকৃতির হয়। যেমন প্রজাপতি, গোল, ডিম্বাকৃতি ইত্যাদি।  কিছু শিল্ড মুখ নেয়ার সুবিধার জন্য একটু বাঁকানো থাকে।  আবার কিছু শিল্ড চ্যাপ্টা আকৃতির হয়। আপনি শুধু খেয়াল রাখবেন যেন এটি যেন বাচ্চারা  পুরোটা মুখে পুরে নিতে না পারে। এজন্যে শিল্ডটি অবশ্যই অন্তত দেড় ইঞ্চির মতো চওড়া হওয়া জরুরী।

রিং নাকি বাটন:  কিছু প্যাসিফায়ারের পেছনের অংশে রিং থাকে, আবার কিছু ক্ষেত্রে “বাটন” ব্যাবহার করা হয়। রিং হাতলের প্যাসিফায়ারগুলো বাচ্চার কাছ থেকে ফেরত নেয়ার ক্ষেত্রে সুবিধাজনক। অন্যদিকে বাচ্চার ধরার আরামের কথা চিন্তা করলে বাটন হাতলের প্যাসিফায়ারগুলো বেশি সুবিধাজনক।  কিছু প্যাসিফায়ার আবার রাতে খুঁজে পাওয়ার সুবিধার্থে এমনভাবে তৈরি করা হয় যাতে অন্ধকারে জ্বলজ্বল করে। 

নিপল কাভার : কিছু প্যাসিফায়ারের সাথে কভার বা ঢাকনা থাকে। এসব ক্ষেত্রে প্যাসিফায়ারটি নিচে পড়ে গেলে আপনাতেই ঢাকনাটি বন্ধ হয়ে যায়। আবার কিছু ক্ষেত্রে প্যাসিফায়ারের সাথে স্ন্যাপ-অন ক্যাপ থাকে। অর্থাৎ , ঢেকে রাখার জন্য একধরনের ঢাকনা লাগানো থাকে। ঢাকনার কারণে প্যাসিফায়ার পরিষ্কার রাখা সহজ হয় কিন্তু এটার কিছু সমস্যাও আছে। ঢাকনা থাকলে এই দিকেও খেয়াল রাখতে হয় যে সেটা ঠিকঠাক কিনা। এছাড়া বাচ্চারা ঢাকনা গলায় আটকে ফেলার আশঙ্কা তো থাকেই।   

প্যাসিফায়ার কি শিশুর দাঁতের জন্য খারাপ

শিশুর বয়স এক থেকে তিন বছর হলে তারপরই শিশুর দাঁতের স্বাস্থ‍্যের ওপর প্যাসিফায়ারের প্রভাব চিন্তার বিষয় হয়ে উঠতে পারে। যখন নিয়মিত প্যাসিফায়ারের ব্যবহারের কারণে বারবার কানের ইনফেকশান হয় (৬ মাস থেকে দুই বছর বয়সের মধ্যে), দাঁত আঁকাবাঁকা হয়, মুখের ওপরের তালুতে কোনো পরিবর্তন আসে এবং ২ বছর হয়ে যাওয়ার পরেও যদি শিশু প্যাসিফায়ারের ওপর নির্ভরশীল থাকে।

 

 

শিশুর দাঁত কখন উঠবে
আরো পড়ুন: শিশুর দাঁত কখন ব্রাশ করা উচিত?

 

 

প্যাসিফায়ারের কারণে শিশুর দাঁতের ওপর যে সকল প্রভাব পড়ে তার মধ্যে অন্যতম হলো, শিশুর সামনের দিকের ওপরের পাটি এবং নিচের পার্টির দাঁতের মধ্যে ফাঁক থাকা (এন্টেরিওর ওপেন বাইট)। এছাড়াও শিশুর ওপরের চোয়াল সংকুচিত হওয়ার (ম্যাক্সিলারি কন্সট্রিকশান) এবং এর ফলে দাঁত আঁকাবাঁকা হয়ে যাওয়া, একটির ওপর অন্যটি উঠে যাওয়া কিংবা দাঁত উঁচু হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই শিশুর বয়স ২ বছর হয়ে যাওয়ার আগেই প্যাসিফায়ার ছাড়িয়ে দেওয়া সবচেয়ে ভালো।

প্যাসিফায়ার ব্যবহারে সাবধানতা

শিশুর প্যাসিফায়ার ব্যবহারে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যেসব সতর্কতা মাথায় রাখা জরুরি–

  • শিশুকে ঘুমের সময় শুইয়ে দেওয়ার সময় একটি প্যাসিফায়ার দিন। শিশু একবার ঘুমিয়ে পড়ার পর আবার তার মুখে প্যাসিফায়ার ঢোকাবেন না। 
  • শিশুর দোলনা, ‘স্ট্রলার’, প্লে প্যান বা খেলার ঘরের সাথে কোনো প্যাসিফায়ার আটকে বা ঝুলিয়ে দেবেন না অথবা প্যাসিফায়ার ৬ ইঞ্চির চেয়ে লম্বা কোনো ফিতা বা সুতা দিয়ে বেঁধে শিশুর গলায় বা হাতে বেঁধে দেবেন না। এভাবে শিশুর শ্বাসরোধ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। শিশু জেগে থাকলে প্যাসিফায়ারের সাথে ক্লিপ বা প্যাসিফায়ারের জন্য তৈরি ছোট ফিতা ব্যবহার করা যায়, কিন্তু কখনোই বাচ্চা ঘুমন্ত থাকা অবস্থায় এগুলো ব্যবহার করা উচিত নয়।
  • প্যাসিফায়ারের সাথে বাড়তি কিছু লাগানো থাকলে সেই প্যাসিফায়ার ব্যবহার করবেন না ( গ্লু দিয়ে গোঁফ বা বাড়তি কিছু লাগানো ঘরে বানানো প্যাসিফায়ারগুলোতে যেমন থাকে)। এই প্যাসিফায়ারগুলো দেখতে সুন্দর এবং আদুরে লাগলেও জোড়া দেওয়া অংশগুলো যেকোনো সময় খুলে পড়ে শিশুর গলায় আটকে যেতে পারে।
বাংলাদেশে এসব প‍্যাসিফায়ার কিনতে এখানে ক্লিক করুন
  • বারবার প্যাসিফায়ার পরিস্কার করুন। কমপক্ষে দিনে একবার সাবান এবং গরম পানিতে প্যাসিফায়ারটি ভালোভাবে ধুয়ে নিন। প্রয়োজন অনুযায়ী নিয়মিত পুরান প্যাসিফায়ার বদলে নিন।
  • কখনোই চিনিযুক্ত কিছুতে প্যাসিফায়ার ডোবাবেন না।যেমন চিনি বা মধু। ১ বছরের কম বয়সী শিশুদের এমনিতেই চিনি বা মধু খাওয়ানো উচিত নয়। কারণ এগুলো শিশুর মাড়ি এবং উঠতি দাঁতের জন্য ক্ষতিকর।
  • শিশুকে প্যাসিফায়ার দেয়ার আগে নিশ্চিত হয়ে নিন যে শিশু ক্ষুধার্ত নয়। শিশুর খাবারে দেরি করার জন্য কিংবা খাবারের পরিবর্তে কখনোই প্যাসিফায়ার ব্যবহার করা উচিত নয়।
  • কখনোই বোতলের নিপল প্যাসিফায়ার হিসেবে ব্যবহার করবেন না। কারণ নিপলটি রিং থেকে ছুটে গিয়ে শিশুর গলায় আটকে যেতে পারে।
কখন এবং কিভাবে শিশুকে প্যাসিফায়ার ছাড়ানো যায়

শিশুকে ধীরে ধীরে প্যাসিফায়ার ছাড়ানোর একটা পরিকল্পনা শুরু থেকেই থাকা ভালো। শিশুর বয়স যখন প্রায় দুই বছর, তখন থেকে প্যাসিফায়ারের খারাপ দিক এর উপকারিতার চেয়ে বেশি হতে শুরু করে। এ বয়স থেকেই শিশুর নিজেকে স্বস্তি দেওয়ার নতুন পদ্ধতি খুঁজতে শুরু করা ভালো। 

সার কথা হলো, প্যাসিফায়ার ব্যবহারে পরিমিতিবোধ বজায় রাখুন। আপনার এবং শিশুর জন্য যদি প্যাসিফায়ার কাজ করে, তবে এটা ব্যবহার করতে- বিশেষ করে শিশুর ঘুমের সময় এবং শিশু কান্নাকাটি করলে, যখন শিশু এবং আপনার দুজনের স্বস্তির জন্যই প্রয়োজন বোধ হবে তখন শিশুকে প্যাসিফায়ার দিতে দ্বিধা করবেন না।

বাচ্চার যদি চোষার এতটাই তীব্র প্রয়োজনীয়তা তৈরি হয় যে সে আপনার স্তনের নিপলকেই প্যাসিফায়ার হিসেবে ব্যবহার করে কিংবা শুধু নিপল চোষার চাহিদার জন্য যদি শিশু বেশি পরিমাণে ফরমুলা নেয়, তবে তাকে প্যাসিফায়ার দিয়ে দেখতে পারেন।

কিন্তু মনে রাখবেন, শিশুর প্যাসিফায়ার কখনোই প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যবহার করবেন না– বিশেষ করে প্যাসিফায়ার যদি  দুধ খাওয়া কিংবা খেলাধুলা কমে যাওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায় (মুখে প্যাসিফায়ার নিয়ে হাসা কিংবা শব্দ করা শিশুর জন্য কঠিন)। বাবা-মায়ের সন্তানকে যে মনোযোগ এবং সময় দেওয়ার কথা , প্যাসিফায়ারকে কখনোই তার বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।


রেফারেন্স:

  1. American Academy of Pediatrics, Pacifiers: Satisfying Your Baby’s Needs, December 2012.
  2. American Academy of Pediatrics, Pacifiers and Thumb-Sucking, November 2020.
  3. American Academy of Pediatrics, Pacifier Safety, November 2018.
  4. American Academy of Pediatrics, Practical Pacifier Principles, November 2009. 
  5. American Dental Association, Thumb Sucking and Pacifier Use, August 2007.
  6. National Institutes of Health, National Library of Medicine, Should Breastfeeding Babies Be Given Pacifiers? May 2012.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *