হেমোরডস বা পাইলস হলে মলদ্বার চুলকায়, ব্যথা করে এবং অস্বস্তি লাগে। পাইলস যদিও কষ্টদায়ক তবে এটা খুবই সাধারণ একটি রোগ। প্রেগনেন্সির সময় অর্ধেকেরও বেশি নারী পাইলসের সমস্যায় ভোগে। তবে ভয়ের কিছু নেই, এই রোগে গর্ভের শিশুর কোনো ক্ষতি হয় না।
আপনি জেনে খুশি হবেন ঘরোয়া উপায়েও এই রোগের চিকিৎসা সম্ভব। এবং অধিকাংশ মেয়ের সন্তান হবার পরে পাইলস আপনাআপনি সেরে যায়।
হেমোরয়েডস বা পাইলস কী
হেমোরয়েড হলো মলদ্বারে ভেরিকোজ ভেইন। এটা দেখতে মার্বেল বা আঙ্গুরের থোকার মতো হওয়ায় একে ‘পাইলস’ নাম দেওয়া হয়েছে। পাইলসে চাপ বাড়লে রক্তপাত ঘটে। এটি সাধারণত মলাশয়ের ভেতরেই থাকে। তবে ক্ষেত্রবিশেষে এটি বেরিয়ে আসতে পারে।
পাইলস যদি বেশি ফুলে যায় এবং মলদ্বারের বাইরে বেরিয়ে আসে তবে তাতে প্রচন্ড ব্যথা হতে পারে।
গর্ভাবস্থার কোন সময়ে পাইলসের সমস্যা শুরু হয়
পাইলস সাধারণত গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় ত্রৈমাসিকের (২৮ সপ্তাহ বা তার আগে) মাঝামাঝি সময়ে হয়ে থাকে, যদিও এটা যেকোনো সময়ই হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় পাইলস কেন হয়
গর্ভাবস্থার ২৫ সপ্তাহের দিকে আপনার বর্ধিত জরায়ু থেকে চাপ আসা শুরু হয়। জরায়ুর চাপে শিরাগুলো সংকুচিত হয়ে যায়, যার ফলে শিরাগুলোতে রক্তপ্রবাহ বেড়ে যায়, ফুলে যায় এবং অনেক সময় এগুলো বেশ চুলকায়।
গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য বা পায়খানা কষা হওয়ার ফলেও পাইলস হতে পারে বা পাইলসের তীব্রতা বেড়ে যেতে পারে। পায়খানা কষা হলে মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত চাপ দিতে হয় যেটা মলদ্বার অঞ্চলের শিরাগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং সেগুলো ফুলে যেতে পারে।
এছাড়া প্রসবের সময় অতিরিক্ত চাপ পড়ার কারণে ডেলিভারির পরেও পাইলস হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় পাইলস হলে করণীয়
নিয়ম মেনে চলুন। গর্ভবস্থায় পাইলসের সবথেকে ভালো চিকিৎসা হলো নিয়ম মেনে চলা। যেমন—প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে, অনেক বেশি ফাইবার বা আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে। ফলমূল ও শাকসবজি আঁশের চাহিদা পূরণ করে। এর ফলে পায়খানা নরম হয়। তখন মলত্যাগের সময় চাপ কম পড়ে।
প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন। এতে শরীরের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে। গর্ভাবস্থায় কেগেল ব্যায়াম খুব উপকারী। এই ব্যায়াম মলদ্বারের আশেপাশের পেশীগুলোকে মজবুত করে এবং এসব স্থানে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি করে যেটা পাইলস প্রতিরোধে সাহায্য করে। এমনকি এই কেগেল ব্যায়াম প্রাকৃতিকভাবে সন্তান প্রসবের জন্য আপনাকে প্রস্তুত করবে। তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যায়াম করবেন।
কাঁত হয়ে শুয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করুন। বেশি সময় ধরে বসে থাকবেন না, এতে পাইলসের ওপর চাপ বেশি পড়বে। তাছাড়া প্রথম ত্রৈমাসিকের পর পিঠে চাপ দিয়ে বেশিক্ষণ বসে থাকাও উচিত না। মলদ্বারের শিরাগুলোর ওপর চাপ কমাতে দিনে কয়েকবার বাম কাত হয়ে শুয়ে থাকার চেষ্টা করুন। এতে আক্রান্ত স্থানে চাপ কম পড়বে এবং রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকবে।
একটানা অনেকক্ষণ বসে বা দাঁড়িয়ে থাকবেন না। কিছুটা চলাচল বা নাড়াচাড়ার মধ্যে থাকুন। মলদ্বারের শিরাগুলোতে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখতে প্রতি ঘণ্টায় অন্তত ৫ মিনিট করে হাঁটার চেষ্টা করুন। তবে আপনার ডাক্তার যদি অনুমতি দেয় তাহলে প্রসবের আগ পর্যন্ত আপনার গর্ভাবস্থার নিরাপদ ব্যায়াম চালিয়ে যেতে পারেন।
পায়খানার চাপ আসলে চেপে রাখবেন না। পায়খানা করার সময় অতিরিক্ত চাপ দেবেন না। তাতে পাইলসের অবস্থা আরও খারাপের দিকে যেতে পারে। টয়লেটে দীর্ঘ সময় বসে থাকবেন না।
নিজেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন। পায়খানা করার পর অতিরিক্ত জোরে মুছবেন না। গরম পানি বা সাদা টিস্যু পেপার দিয়ে হালকাভাবে পরিষ্কার করুন। পাইলস হলে পরিষ্কার থাকা জরুরি। যদি টিস্যু পেপার ব্যবহার করতে চান তবে ভেজা টিস্যু ব্যবহার করা ভালো।
বসতে খুব বেশি সমস্যা হলে বালিশ ব্যবহার করুন। পাইলসের রোগীদের জন্য বিশেষ ধরনের বালিশ কিনতে পাওয়া যায়। এগুলিকে ‘ডোনাট পিলো’ বলে। বসে কাজ করার জন্য এরকম বালিশ ব্যবহার করলে উপকার পাবেন।
উইচ হ্যাজেল প্যাড বা বরফ দিন। পায়খানা করার পরে উইচ হ্যাজেল প্যাড দিয়ে মলদ্বার পরিস্কার করুন। উইচ হ্যাজেল একটি উদ্ভিদ, অ্যালোভেরার মত এরও ভেষজ গুণ অনেক।এর ঠাণ্ডা রস পাইলসের জ্বালাপোড়া কমাতে সাহায্য করে। বিদেশে যে কোনো ফার্মেসিতে উইচ হ্যাজেল প্যাড পাবেন।
বাংলাদেশে কিনতে পারেন: www.facebook.com/paromita.baby
হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করবেন। প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ মিনিট হালকা গরম পানিতে বসে থাকলে অনেকটা আরাম পাবেন। পাশাপাশি আপনি পরিষ্কারও থাকতে পারবেন।
পাইলসের চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের কাছে যান। ডাক্তার চুলকানি ও ব্যথা কমানোর ওষুধ দেবেন। এছাড়া পায়খানা নরম করার ওষুধ এবং ক্রিম বা মলমও দিতে পারেন। পায়খানা নরম করার একটি ঘরোয়া পদ্ধতি হলো ইসবগুলের ভুষি। এক গ্লাস পানিতে এক চামচ ইসবগুলের ভুসি গুলিয়ে সঙ্গে সঙ্গে খেয়ে ফেলুন।
কখন ডাক্তারকে জানাতে হবে
পায়খানার সঙ্গে রক্ত গেলে ডাক্তারকে জানাতে হবে। সম্ভবত পাইলসের জন্য রক্তপাত হতে পারে। তবে ঠিক কী কারণে রক্তপাত হচ্ছে তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা জরুরি। এছাড়া পাইলসের চিকিৎসায় ঘরোয়া পদ্ধতিতে কাজ না হলেও ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত।
আমার অভিজ্ঞতা
এমিল হবার পরে আমি যেখানেই যেতাম আমার সাথে একটা গোল বালিশ থাকত। আমি ওই বালিশের ওপর বসতাম দেখে অনেকেই আমাকে জিজ্ঞাসা করত এটার কাজ কী। নরমাল ডেলিভারির কারণে সেলাই এর ব্যথা, তার উপর পাইলসের কারণে স্বাভাবিকভাবে বসা আমার পক্ষে তখন অসম্ভব ছিল।
প্রেগনেন্সির সময় এবং বাচ্চা হবার পরে এই পাইলস নিয়ে আমার ভয়ংকর অভিজ্ঞতা হয়েছিল। কারণ মলদ্বারের ফোলা বিষয়টি আমি প্রথমে একেবারেই ধরতে পারিনি। বসতে খুব কষ্ট বা ব্যথা হচ্ছিল কিন্তু ব্যথার জায়গাটা কোথায় এটা বোঝা যাচ্ছিল না।
বসতে কষ্ট হয় বা ব্যথা পাই শুনে ডাক্তার আমাকে জিজ্ঞাসা করে পাইলস হতে পারে কিনা। পাইলস শব্দের সঙ্গে আমি পরিচিত হলেও কী যে সেটার লক্ষণ এটা আগে জানতামই না। ডাক্তার দেখে আমাকে নিশ্চিত করে পাইলস হয়েছে এবং আমাকে স্বল্প মাত্রার স্টেরয়েড ক্রিম দেয়।
বাচ্চার স্বাস্থ্য বিবেচনা করে আমি প্রথমে সেই ক্রিম ব্যবহার করিনি। পরে সেটা ব্যবহার করেও কোনো উপকার হয়নি
আপনার যদি পাইলস হয়ে থাকে তাহলে যে জিনিসগুলি অবশ্যই বিবেচনা করবেন সেটা হলো ডোনাট পিলো বা মাঝখানে গর্তওয়ালা বালিশ এবং উইচ হ্যাজেল প্যাড। সবসময় এ বালিশ ব্যবহার করে বসবেন যাতে আপনার মলদ্বারে ঘষা না লাগে, কারণ এতে ব্যথা আরো বাড়ে।
উইচ হ্যাজেল প্যাড দারুণ আরাম দেয়। তবে বেশি বেশি পানি খাওয়া এবং আঁশযুক্ত খাবার খাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। পায়খানা শক্ত করে এমন খাবার একদম এড়িয়ে চলাই ভালো।
আর্টিকেলটি আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব পিডিয়াট্রিকস (AAP) এর গাইডলাইনের ওপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছে।
তাদের ওয়েবসাইট লিংক: www.aap.org
Amr o emon hoyechilo
Baby hobar por 1mas bhishon kharap obosthay chilam
Still eta ache but kono betha ba jalapora kisui nae tahole eta ki kono problem hobe ?
অস্বস্তি লাগা ছাড়া বড় কোন সমস্যা হবার কথা না।
Eta ki ekebr e valo hoye jaina kokhno?