বাচ্চা বড় হওয়ার সাথে সাথে লক্ষ্য করবেন তার প্রস্রাব পায়খানা করার পরিমাণ কমে আসছে, ডায়পারও আগের থেকে কম পরিবর্তন করতে হচ্ছে। এমনকি ঘুমের সময় সারারাত সে প্রস্রাব করছে না। অন্যান্য লক্ষণগুলোর সাথে এগুলোও ইঙ্গিত দেয় যে বাচ্চাকে পটি ট্রেনিং দেয়ার সময় হয়েছে।
বাচ্চাকে পটি ট্রেনিং দেয়ার জন্য আপনাকে বেশ ধৈর্য্য ধরতে হবে। সেই সাথে মনে রাখতে হবে প্রত্যেকটি শিশু আলাদা, তারা তাদের মতো করে প্রতিটি মাইলফলকে পৌঁছাবে। ভিন্ন ভিন্ন বাচ্চার ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন কৌশল কাজ করে। আশা করি এই টিপসগুলো আপনাকে পটি ট্রেনিং এ সফল হতে সাহায্য করবে।
কিভাবে বুঝবেন বাচ্চা পটি ট্রেনিং এর জন্য প্রস্তুত
আপনার শিশুর শরীর যদি পটি ট্রেনিং এর জন্য প্রস্তুত না হয়, তাহলে আপনি যত কৌশলই অনুসরণ করেন না কেন তাকে পটি ট্রেনিং দিতে পারবেন না। তাই এই নিশ্চিত লক্ষণগুলোর জন্য অপেক্ষা করুন যা দেখে বুঝবেন বাচ্চা এখন পটি ট্রেনিং এর জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত।
- প্রস্রাব ও পায়খানা ঘন ঘন করছে না। শিশুর বয়স ২০ মাস না হওয়া পর্যন্ত খুব ঘন ঘন প্রস্রাব পায়খানা করে। যখন থেকে তাদের প্রস্রাব পায়খানার পরিমাণ কমে আসবে এবং লম্বা সময় প্রস্রাব না করে থাকতে পারবে তখনই বুঝবেন যে তারা প্রস্রাব নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে এবং পটি ট্রেনিং এর জন্য শারীরিকভাবে প্রস্তুত হচ্ছে।
- পায়খানা একটা নির্দিষ্ট সময়ে করছে। শিশু যখন পায়খানা নিয়মিত একই সময়ে করে তখন খুব অল্প সময়ের মধ্যে শিশুকে সহজে পটি করানো যায়।
- শিশু নিজে থেকেই বাথরুমে যাওয়ার কথা বলতে পারে বা বোঝাতে পারে। যখন থেকে সে নিজের মুখে বলে বা আকার ইঙ্গিত এর মাধ্যমে আপনাকে প্রস্রাব পায়খানা করার কথা বোঝাতে পারবে, তখনই পটি ট্রেনিং দেয়ার যথাযথ সময়।
- শিশু পটি করে দিলে সেটা লক্ষ্য করে এবং ভেজা বা নোংরা ডায়পার/প্যান্ট পছন্দ করে না। আপনি হঠাৎ করেই লক্ষ্য করবেন যে সে আর ভেজা বা নোংরা ডায়পার পরে থাকতে চাচ্ছে না। তার মানে সে এখন ডায়পারের পরিবর্তে পটি ব্যবহার করতে প্রস্তুত।
কখন শিশুকে পটি ট্রেনিং দেয়া শুরু করবেন
বাচ্চারা সাধারণত ২ বছর বয়সের আগে পটি ট্রেনিং এর জন্য প্রস্তুত হয় না। আবার অনেকের সাড়ে তিন বছর সময়ও লেগে যায়।
ধৈর্য্য ধরাটা এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, বাচ্চা পটি ট্রেনিং এর জন্য প্রস্তুত হওয়ার আগে তাকে কোন ভাবেই জোরাজুরি করা যাবে না। সব বাচ্চাই আলাদা। ৩ বছর পার হয়ে যাওয়ার পরেও সে যদি পটি ট্রেনিংয়ের জন্য প্রস্তুত না হয়, তাহলে সে পিছিয়ে আছে এমনটা মনে করার কিছু নেই ।
৩ বছর বয়সী বাচ্চারা পুরস্কার পছন্দ করে, ভালো কাজ করলে তারা পুরস্কার হিসেবে খেলনা, স্টিকার, গাড়ি, পুতুল পেলে বেশ উৎসাহী হয়। তাই পটি ট্রেনিং দেয়ার সময় বাচ্চা যদি বাথরুমে গিয়ে কমোডে বসে পটি করে তাহলে তাকে পুরস্কার দিবেন, এতে সে নিয়মিত বাথরুমে যেতে উৎসাহ পাবে৷
বাচ্চা যদি বাথরুম গিয়ে পটি করতে না চায় তাহলে কখনোই তাকে শাস্তি দিবেন না, এতে করে ভালোর বদলে খারাপটাই বেশি হবে।
কিভাবে বাচ্চাকে পটি ট্রেনিং এর জন্য প্রস্তুত করবেন
একটা নির্দিষ্ট বয়সে যখন বাচ্চারা শারীরিকভাবে প্রস্তুত হয় এবং নিজে থেকে শুস্ক এবং পরিস্কার থাকতে চায়, তখন নিজে নিজেই প্রস্রাব পায়খানার উপর নিয়ন্ত্রণ আনতে পারে। তাছাড়া পটি ট্রেনিং শুরু করার পর শিশুর মধ্যে সবগুলো লক্ষণ দেখা যাবে যা থেকে বোঝা যাবে পটি ট্রেনিং ঠিকভাবে চলছে। আপনাদের পটি ট্রেনিং এর এই যাত্রাটা আরো সহজ করার জন্য এখানে কিছু টিপস দেয়া হল।
পজিটিভ মনোভাব নিয়ে পটি ট্রেনিং দেয়া
বাচ্চাকে পটি ব্যবহার করার সুবিধাগুলো বোঝাতে হবে। যেমন আপনি বলতে পারেন, “বাথরুমে গিয়ে পটি ব্যবহার করলে প্যান্ট নোংরা হয় না” বা “আন্ডারওয়্যার পরা খুবই মজাদার” অথবা “খুব তাড়াতাড়ি তুমি বড়দের মতো কমোড ফ্লাশ করতে পারবে”। এমন ধরনের কথা বলবেন যেন সে পটি ট্রেনিং এর ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ওঠে।
কখনোই বাচ্চার সাথে রাগারাগি করবেন না, বা ডায়পার ভিজিয়ে ফেললে তাকে তিরস্কার করবেন না। এতে হিতে বিপরীত হওয়ার আশংকা থাকে, এমনকি বাচ্চারা পটি ট্রেনিং এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে।
বাথরুমের সাথে জড়িত বিষয়ে লজ্জা দিয়ে কথা বলবেন না
আমরা প্রায় সময়ই বাচ্চা ডায়পারে পায়খানা করে দিলে বলি , “ইসস কি নোংরা” “গন্ধ” “ছিঃ পঁচা”। এমনটা বলি যেন সে আর ডায়পারে পায়খানা না করে, বাথরুমে গিয়ে করে। কিন্তু এগুলো বলা উচিত না। পায়খানা করা খুবই প্রাকৃতিক একটা ব্যাপার, এটা নোংরা বা “ইয়াক! থু!” করার মতো কোনো বিষয় না – বাচ্চাকে এটা বোঝাতে পারলে সে বাথরুমে গিয়ে পটি করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে।
কিছু বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দেন যে, বাচ্চাদেরকে বাথরুমের সাথে জড়িত কথাগুলো ইতিবাচক ভাষায় বলা উচিত। এমন ধরনের শব্দ বলা উচিত না যেগুলোর কারণে বড় হয়ে মানুষের সামনে বিব্রত বোধ করতে পারে। তবে পটি ট্রেনিং দেয়ার জন্য সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো শিশুকে কতটা সুন্দরভাবে বাথরুমে যাওয়ার ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলছেন।
বাচ্চা সঠিক আচরণ করলে তার প্রশংসা করা
শিশু বড় হওয়ার সাথে সাথে অনেক কিছু বুঝতে শেখে এবং বড়দের অনুকরণ করে। যদি সে বড়দের মতো কোনো কাজ করতে পারে তাহলে তার প্রশংসা করবেন।তাকে সমর্থন করবেন। যেমন- একটুও নিচে না ফেলে কাপে বা গ্লাসে যদি পানি খেতে পারে, তাহলে তার প্রশংসা করবেন। আবার ধরুন বন্ধুর সাথে খেলনা শেয়ার করছে, এটাও কিন্তু প্রশংসা করার মত একটা ব্যাপার। তেমনিভাবে পটি ট্রেনিং এর সময় যদি সে নিজে নিজে প্যান্ট খুলতে পারে বা কমোড ব্যবহার করতে পারে তখনো তাকে উৎসাহ দেয়ার জন্য অনেক প্রশংসা করবেন।
কিন্তু কখনোই তার থেকে অতিরিক্ত ম্যাচুরিটি বা পরিপক্কতা আশা করবেন না। তাহলে সে এক ধরনের চাপ অনুভব করবে এবং বড়দের মতো হওয়ার অভিনয় করবে।এতে করে তার শৈশবের সুন্দর দিনগুলো হারিয়ে যাবে।
পটি ট্রেনিং এর উপযোগী পোশাক পরাবেন
বাচ্চাকে পটি ট্রেনিং সময় এর উপযোগী পোশাক পরানোর অভ্যাস করবেন। এমন ধরনের প্যান্ট পরাবেন যেগুলোর কোমরে ইলাস্টিক বা রাবার দেয়া থাকে এবং যেগুলো বোতাম, বাকল, জিপার বা টাই ছাড়াই টেনে নিচে নামানো এবং উপরে ওঠানো যায়। এছাড়াও কাঁধ থেকে শুরু করে পা পর্যন্ত লম্বা এক পিস জামা বা রম্পার পরাবেন না। এগুলো খোলা এবং পরা খুবই ঝামেলার।
পটি ট্রেনিং এর একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হচ্ছে বাচ্চার একা একা প্যান্ট খুলতে এবং পরতে পারা। তাই এই প্যান্ট টেনে নামানো এবং উঠানোর কাজটা বারবার প্র্যাকটিস করাবেন। যখন বাচ্চার ডায়পার পরিবর্তন করবেন তখন তাকে একা একা প্যান্ট টেনে নামাতে বলবেন এবং পরানো হয়ে গেলে আবার টেনে তুলতে বলবেন। শিশুকে ঘরের ভেতর জুতা ছাড়া হাঁটতে দিবেন। যাতে বাথরুমে যাওয়ার সময় প্যান্ট জুতায় আটকে না যায়।যখন আপনার বাচ্চা বাথরুমে গিয়ে পটি করার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে, তখন তাকে সুতি কাপড়ের আরামদায়ক বড় বাচ্চাদের আন্ডারপ্যান্ট কিনে দিবেন। সুন্দর সুন্দর বিভিন্ন কার্টুনের প্রিন্ট আছে এমন ধরনের প্যান্ট কিনবেন যেন সে ওগুলো পরতে মজা পায়। ছোটবেলায় আমাদেরকে এক ধরনের বিড়াল প্যান্ট পরাতো, ওগুলো বাচ্চাদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় ছিল।
কিভাবে পটি ট্রেনিং দিবেন
পটি ট্রেইনিং শিশুর জন্য অনেক বড় একটা মাইলফলক। পটিতে বসে হিসু বা পায়খানা করতে পারা, একটা বিশাল ব্যাপার। আবার অনেক বাবা-মায়ের ক্ষেত্রে এই পটি ট্রেনিং দেয়া রোলারকোস্টার রাইডের মতো, মানে এতটাই কঠিন।
বেল্ট ডায়পার বন্ধ করে প্যান্ট ডায়পার/পুল-আপস পরান
বাচ্চা যখন সবেমাত্র পটি ট্রেনিং শুরু করবে তখন আপনাকে বেশ সতর্ক থাকতে হবে। কারণ এই বয়সী শিশুরা নোংরা পছন্দ করে না। পটি করতে গিয়ে যদি তাদের গায়ে নোংরা লেগে যায় তাহলে হয়তো আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে। তাই পটি ট্রেনিং এর শুরুতে শোষণ করতে সক্ষম এই ধরনের ডিসপোজেবেল প্যান্ট ব্যবহার করতে পারেন। বাচ্চা যদি ভুলে পটি করে দেয় তখন এই ডিজপোজেবেল প্যান্টগুলো হিসু বা পায়খানা ডায়পারের মতো শুষে নিতে পারে। তাছাড়া পটি করা হয়ে গেলে এগুলো পা দিয়ে টেনে না নামিয়ে চাইলে ছিড়েও ফেলতে পারবেন।
যখন বাচ্চা পটিতে বসে হিসু-হাগু করা উপভোগ করা শুরু করবে, তখন ধোয়া যায় এই ধরনের সুতি কাপড়ের প্যান্ট পরাবেন।
শিশুকে উদোম বা ন্যাংটো রাখা
শিশুর যখন হিসু বা হাগু করার চাপ আসে সেটা বোঝাতে এক ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন। তাকে ন্যাংটো করে এমন জায়গায় খেলতে দিন যে জায়গাটা পানি দিয়ে পরিষ্কার যায় এবং তার আশেপাশেই পটি রাখবেন। বাচ্চাদের জন্য হিসু আটকে রাখা কঠিন। তাই কাছেই যদি পটিটা থাকে তখন সে দ্রুত পটিতে বসে হিসু করতে পারবে। এভাবে করে আস্তে আস্তে সে পটি ট্রেনিংয়ে অভ্যস্ত হবে।
বাথরুমে পানি ও বল দিয়ে খেলতে দিয়ে এ কাজটি করতে পারেন।
তাকে মনোযোগের সাথে লক্ষ্য করুন
বাচ্চাকে ভালোভাবে লক্ষ্য করলে তার কখন হিসু বা হাগু করার চাপ আসছে সেটা বুঝতে পারবেন। তার কথা বলার ধরণটা লক্ষ্য করুন,অনেক সময় বাচ্চাদের কথা থেকেও বোঝা যায় তার এখন পটি করা প্রয়োজন যেমন, সে হয়তো বলবে “আমি এখন সিস”। অনেক সময় তাকে দেখে মনে হবে হয়তো তার অস্বস্তি হচ্ছে বা শরীর মোচড়াবে। এগুলো দেখে যদি আপনার সন্দেহ হয় তাহলে তাকে আলতো করে জিজ্ঞেস করুন সে কি পটিতে বসতে চায় কিনা।
যদি আপনি জিজ্ঞেস করার আগেই সে প্যান্টে পটি করে ফেলে তবুও তাকে পটিতে বসাবেন যেন সে পটি ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়।
তাকে উৎসাহ দিন
বাচ্চাকে বোঝাবেন সে পটিতে বসে হিসু-হাগু করতে পারলে সে বড় হয়ে যাবে। পটি ট্রেনিং এর শুরুর দিকে সে যখনই পটি ব্যবহার করবে তার প্রশংসা করবেন। বা এমন কাজ করবেন যেটাতে সে মজা পাবে।
যেমন ধরুন: একটি ক্যালেন্ডার নিবেন, এরপর সে যে তারিখে পটিতে বসে পটি করবে সেই তারিখের উপর তাকে দিয়ে স্টিকার লাগাবেন। এভাবে প্রতিদিন করতে থাকবেন তখন স্টিকার লাগানোর লোভে হলেও সে আগ্রহের সাথে পটিতে বসবে।
তাছাড়া তার জন্য ছোট্ট একটা ব্যাংক কিনতে পারেন। সে পটি ব্যবহার করলেই সেই ব্যাংকে তাকে দিয়ে পয়সা ফেলবেন। এই কাজটাতেও বাচ্চারা অনেক মজা পায়। পটি ট্রেনিংএ উৎসাহ দেয়ার জন্য এটাও অনেক কার্যকরী উপায়।
শিশুকে শুকনো/ভেজা পরীক্ষা করতে শেখান
বাচ্চাকে বলবেন একটু পরপর পরীক্ষা করে দেখতে সে হিসু করে ফেলল কিনা অথবা তার ডায়পার বা প্যান্ট শুকনো আছে কিনা। যখন সে নিজে নিজে পরীক্ষা করা শিখবে তখন নিজে থেকেই সতর্ক হয়ে যাবে এবং হিসু বা হাগুর উপর আরো নিয়ন্ত্রণ আসবে।
যদি সে হিসু না করে ফেলে বা তার প্যান্ট শুকনো থাকে তাহলে পিঠ চাপড়ে তাকে বাহবা দিন এবং জড়িয়ে ধরে আদর করে দিবেন। এতে তার আত্মবিশ্বাস অনেক বাড়বে।
কিন্তু সে যদি তার প্যান্ট ভিজিয়ে ফেলে তাহলে তাকে বকা দিবেন না বা লজ্জা দিবেন না। তাকে সাহস দিবেন যে এমনটা হতেই পারে, পরেরবার যেন আরো সতর্ক থাকে।
ধৈর্য্য ধরুন
সবচেয়ে উৎসাহী বাচ্চারও পটি ট্রেনিংয়ে দক্ষতা অর্জন করতে কয়েক সপ্তাহ সময় নিতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় বাচ্চা দুই ধাপ এগিয়ে গিয়ে আবার একধাপ পিছিয়ে পড়ে। এই সময়টায় আপনাকে অনেক বেশি ধৈর্য্য ধরতে হবে এবং খুব বেশি প্রত্যাশা তার উপর রাখা যাবে না। তার থেকে অতিরিক্ত আশা রাখলে আপনি হয়তো ধৈর্য্য হারিয়ে এমন কিছু করবেন বা বলে বসবেন যেটা তার আত্মবিশ্বাস নষ্ট করতে পারে।
বাচ্চাকে কখনো তিরস্কার করবেন না, শাস্তি দিবেন না এমনকি লজ্জা দিবেন না। বাচ্চা বিছানা বা ফ্লোরে হিসু-হাগু করে দিক এটা কোন অভিভাবকই পছন্দ করে না, তবুও শান্ত থাকার চেষ্টা করবেন। আপনি যদি অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখান, তাহলে ভবিষ্যতে আপনার শিশু হয়তো আরো চেষ্টা করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।
বিরক্তি প্রকাশে বিরত থাকুন
পটি ট্রেনিং এর শুরুতে আপনাকে হয়তো পটি ব্যবহার করার কথা শিশুকে বারবার মনে করিয়ে দিতে হবে, তখন বিরক্তি প্রকাশ করবেন না। বিরক্তি ভালো কিছু বয়ে আনবে না, এটা শুধুমাত্র শিশুকে পটিতে না বসতে চাওয়ার মনোভাবকে উসকে দিবে।
একইভাবে তাকে কখনো পটিতে বসতে বাধ্য করবেন না বা জোর করে দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রাখবেন না। সে যদি পটি থেকে উঠে যেতে চায় তখন তাকে উঠে যেতে দিবেন।
কিভাবে পটি ব্যবহার করতে হয় তা বাচ্চাকে দেখান
বাচ্চারা নকল করতে পছন্দ করে এবং বাথরুমে যাওয়ার ব্যাপারেও তারা একই কাজ করবে। এজন্য পটি ট্রেনিং দেয়ার সময় অবশ্যই তাকে সুন্দর করে বুঝাবেন, কিভাবে পটিতে বসতে হয়, পটি করার পর পরিষ্কার করতে হয় এবং ফ্লাশ করতে হয়। কিন্তু বোঝানোর থেকেও বেশি কার্যকরী হচ্ছে আপনি যদি তাকে সাথে করে বাথরুমে নিয়ে যান এবং সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি করে দেখান।
১৪ মাস বয়স থেকে আমি এমিলকে সঙ্গে নিয়ে বাথরুমে যাই এবং পুরো প্রক্রিয়াটি দেখাই এবং মুখে বলি।
সব বাবা-মা বাচ্চাকে সাথে করে বাথরুমে নিয়ে যেতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ নাও করতে পারে। আপনি যদি বেশি অস্বস্তি বোধ করেন তাহলে এই ধাপটি বাদ দিতে পারেন।
ডায়পার এবং পটির মধ্যে ব্যবধান কমান
যদি সম্ভব হয়, বাচ্চার ডায়পারটি ওই ঘরে পরিবর্তন করুন যেখানে তার পটি আছে। এটা সূক্ষ্মভাবে এই দুই জিনিসের মধ্যে সম্পর্কটা বোঝায়। ডায়পার পরিবর্তনের সময় পটি দেখলে বাচ্চার মনে পড়বে যে এই পটিতে বসে প্রস্রাব পায়খানা করতে হয়। এতে করে ধীরে ধীরে সে মানসিকভাবে পটি ট্রেনিং এর জন্য প্রস্তুত হবে।
আর একটি কাজ করতে পারেন, তার পায়খানা করা ডায়পারসহ বাথরুমে নিয়ে গিয়ে দেখাবেন কিভাবে সে পায়খানাটা কমোডে ফেলে ফ্লাশ করতে পারে। যদি সে ফ্লাশ করার শব্দে ভয় পায় তাহলে পরে ফেলে ফ্লাশ করুন।এমিলের ১৮ মাসে আমি এখন এ কাজটি শুরু করেছি। ডায়পার খোলা, পরা ও পরিস্কারের কাজ বাথরুমে ওকে দেখিয়ে করি।
সঠিক পটি বাছাই করুন
সুন্দর পটি না, এমন ধরনের পটি খুঁজে বের করুন যেটা মজবুত, টেকসই। বাচ্চা যদি উত্তেজিত হয়ে বারবার লাফিয়ে উঠে দেখতে চায় প্রস্রাব বা পায়খানা হলো কিনা তখন যেন তা বাইরে পড়ে না যায়। তাছাড়া তাকে সাথে নিয়েই পটিটি কিনতে পারেন, এটা তার জন্য বেশি আনন্দদায়ক হবে এবং পটি ট্রেনিং এর জন্যেও বেশ আগ্রহী হয়ে উঠবে।
কিছু শিশু ছোটদের পটি আর ব্যবহার করতে চায় না বড়দেরটা দাবি করে। সেক্ষেত্রে টয়লেটের সাথে লাগানো যায় এমন পটি সিট বা টয়লেটের উপরে লাগানোর ঢাকনা কিনুন। টয়লেটে সিটের সাথে যেন শক্তভাবে বসে থাকে এমন পটি সিট কিনবেন। নড়বড়ে হলে বাচ্চা ভয় পাবে এবং আর বসতে চাইবে না, তখন আবার ডায়পার ব্যবহার করতে হতে পারে।
শিশুর পানি খাওয়া কমাবেন না
অনেক অভিভাবক যুক্তি দেন যে শিশুকে তরল জাতীয় খাবার যেমন পানি, ফলের রস ইত্যাদি কম খাওয়ালে তার হিসুর পরিমাণ কমে যাবে। দুর্ঘটনাবশত প্যান্ট ভিজিয়ে ফেলার আশংকাও কমে যাবে। এই পদ্ধতিটি খুবই অনুচিত এবং অস্বাস্থ্যকর।
ভালো কৌশল হলো, বাচ্চাকে বারবার পানি বা তরল খাবার খেতে দিন এতে তার বারবার হিসুর চাপ আসবে এবং পটি ট্রেনিং এর সময় তার পটি ব্যবহার করার সফলতাও বৃদ্ধি পাবে।
বাথরুমে যাওয়া নিয়ে শিশুর সাথে যুদ্ধ করবেন না
পটি ট্রেনিং এর সময় শিশুর সাথে বাথরুমে যাওয়া নিয়ে রাগারাগি বা জোরাজোরি করলে ভালোর থেকে খারাপই বেশি হয়। রাগারাগির ফলে বাচ্চার মনে জেদ চাপে। তাতে পটি ট্রেনিং দেয়া আরো বেশি কঠিন হয়ে পড়ে। যদি দেখেন শিশু কোনভাবেই পটিতে বসতে বা বাথরুমে যেতে চাচ্ছে না, তাহলে কয়েক সপ্তাহের জন্য বিরতি দিন।
ধৈর্য্য ধরুন। পটি ট্রেনিং এর সময় তাকে তার সমবয়সীদের সাথে তুলনা করে কথা বলবেন না। “অমুক তো তোমার সমান সে এখন বাথরুমে গিয়ে পটি করছে, তাহলে তুমি কেন পারো না”। এ ধরনের কথা তাকে নিরুৎসাহিত করতে পারে।
পটি ট্রেনিং সাধারণত খুব সহজে হয় না। পুরোপুরি ডায়পার ব্যবহার করা বন্ধ করে দিতে পারাটা অবশ্যই আনন্দের ঘটনা। তবে সেই পর্যায়ে যাওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধৈর্য্য ধরতে হবে। কখনোই আশা হারাবেন না। বাচ্চাকে পটি ট্রেনিং দেয়া অনেক বেশি কঠিন বলে মনে হলেও খুব শীঘ্রই সে পটি ব্যবহার করা শিখে যাবে। ডায়পার ব্যবহার করাও বন্ধ করে দেবে।
শুভকামনা রইল।
এ লেখাটি আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব পিডিয়াট্রিকস (AAP) এর গাইডলাইনের উপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছে।
তাদের ওয়েবসাইট লিংক:
https://www.aap.org