পটি ট্রেনিং শুরু করার আগে বুঝতে হবে বাচ্চা পটি ট্রেনিং এর জন্য প্রস্তুত কিনা।মনে রাখবেন এর নাম ট্রেইনিং কারণ এটা প্রশিক্ষণের মতই ধাপে ধাপে সম্পন্ন হয়। বিদেশে ১৮ মাস থেকে ২ বছরকে পটি ট্রেইনিং এর উপযুক্ত সময় মনে করা হয়।
আরেকজনকে দেখে নয়, নিজের বাচ্চার সক্ষমতা বুঝে টয়লেট ট্রেনিং শুরু করতে হয়। যেসব লক্ষণ দেখলে বুঝবেন আপনার শিশু এখন পটি ট্রেনিং এর জন্য প্রস্তুত সেগুলি এখানে আলোচনা করব। তবে তার আগে জেনে নিন পটি ট্রেইনিং আসলে কাকে বলে।
পটি ট্রেনিং আসলে কী
পটি ট্রেনিং বা টয়লেট ট্রেইনিং বিষয়টা আমরা অনেকেই বুঝি না। আপনি বাচ্চাকে বাথরুমে নিয়ে শিস দিলেন এবং সে প্রস্রাব করল এটা কিন্তু পটি ট্রেইনিং না।
পটি ট্রেইনিং বলতে বোঝায় বাচ্চা যখন তার শরীরের সংকেত বুঝতে পারে (প্রস্রাবের বেগ পেয়েছে বা পায়খানা আসছে) এবং সে অনুযায়ী বাথরুমে বা পটিতে বসতে পারে। অর্থাৎ শিশু নিজেই বুঝবে কখন পটিতে বসতে হবে। যখন সে এটা করতে সক্ষম হবে তখন তাকে পটি-ট্রেইনড বা বাথরুমের জন্য প্রস্তুত বলতে পারেন।
যেসব লক্ষণ দেখে বোঝা যায় শিশু পটি ট্রেনিং এর জন্য প্রস্তুত
সাধারণত ১৮ থেকে ২ বছর বয়সে বাচ্চা কিছু লক্ষণ দেখানো শুরু করে যা দেখে বাবা-মা বুঝতে পারে যে এখনই সময়। বিদেশে ২ বছরের মধ্যে বাচ্চাকে টয়লেট ট্রেনিং করিয়ে ফেলা সাধারণ ঘটনা। তবে কারো কারো তিন বছর এমনকি আরো বেশি সময় লাগতে পারে।
শিশু দীর্ঘ সময় পরপর প্রস্রাব পায়খানা করে
নির্দিষ্ট বয়স পরে বাচ্চাদের প্রস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যায়, আর বারবার করার অভ্যাস কমে আসে। প্রায় ২০ মাস বয়স পর্যন্ত ওরা খুব ঘনঘন প্রস্রাব করে, মূত্রাশয়ের উপর কোন নিয়ন্ত্রণ থাকেনা। তাই মনে করা হয় এই বয়সের পর থেকে পটি ট্রেনিং শুরু করলে খুব দ্রুত সফল হওয়া যায়।
তবে একেক বাচ্চার শরীর একেক রকম। কেউ কেউ আরো আগে থেকেই দীর্ঘ সময় প্রস্রাব না করে থাকে। এমনকি সারারাত প্রস্রাব না করে থাকতে পারে।
বাচ্চা যদি দিনে কমপক্ষে ২ ঘন্টা হিসু না করে বা ঘুমের মধ্যেও যদি হিসু না করে থাকতে পারে তাহলে ধরে নেয়া যায় পটি ট্রেনিংয়ের জন্য সে শারীরিকভাবে প্রস্তুত।
সহজ নির্দেশনা অনুসরণ করতে পারে
শিশু সহজ নির্দেশনা অনুসরণ করতে পারছে কিনা এটা আমরা কিভাবে বুঝবো? ধরুন আপনি তাকে বলছেন, “আমাকে ঐ বইটি দাও” বা “এই খেলনাটি ধরো” সে যদি আপনার কথা অনুযায়ী কাজটি করতে পারে, তাহলে বুঝবেন শিশু সাধারণ নির্দেশাবলী অনুসরণ করতে পারছে। এটা আরেকটি লক্ষণ যা থেকে বোঝা যায় শিশু পটি ট্রেনিংয়ের জন্য প্রস্তুত।
আপনি তখনই সফল হবেন যখন আপনি ওকে টয়লেট ব্যবহার করা শেখালে সে বুঝতে পারবে। ধরুন আপনি বললেন, “নিজে নিজে প্যান্ট খুলতে হয়,এরপর কমোডে বা পটিতে বসতে হয় এবং তারপর প্রস্রাব পায়খানা করতে হয়” এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি বাচ্চা যখন বুঝতে পারবে তখনই সে প্রস্তুত।
স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারে
পটি ট্রেনিং শিশুর জীবনে একটি বড় মাইলস্টোন। বাচ্চারা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন কাজ করার জন্য বায়না ধরবে৷ সেটা হতে পারে নিজের হাতে খাওয়া, দৌড়ানো ও লাফানো, কিংবা বল বা অন্যান্য জিনিস ছুঁড়ে ফেলার বায়না। স্বাধীনভাবে কাজ করতে চাওয়ার এই আগ্রহ পটি ট্রেনিং এর আরেকটি লক্ষণ হতে পারে।
তাছাড়া সে যদি তার বড় ভাই বোনের মতো নিজে নিজে পটিতে বসতে চায় সেটাও আরেকটি লক্ষণ, যা থেকে বোঝা যায় সে প্রস্তুত।
দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে পায়খানা করে
পটি ট্রেনিং এর জন্য এটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। জন্মের পর শিশুর প্রস্রাব পায়খানা করার ওপর তার কোন নিয়ন্ত্রণ থাকেনা, তাই সে খুব ঘনঘন প্রস্রাব পায়খানা করে। কিন্তু একটু বড় হয়ে যাওয়ার পর তার প্রস্রাব পায়খানা করার পরিমাণ কমে আসে, তাই সে কখন পায়খানা করবে সেই সময়টা অনুমান করা যায়। আর যখনই আপনি অনুমান করতে পারবেন তখনই আপনার শিশু প্রস্তুত বলে ধরা হয়।
অনেক বাচ্চা সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর একবার পটি করে, অনেকে হয়তো খাবারের পরে বা ঘুমের ঠিক আগে করে। মোটকথা একটা নিয়মিত ছন্দ চলে আসে, যা আপনাকে পটি ট্রেনিং দিতে সাহায্য করবে।
পটি ট্রেনিং প্রক্রিয়ায় আগ্রহী
পটি ট্রেনিং যখন থেকে শুরু করবেন ভাবছেন তার আগে থেকেই শিশুকে আপনার সাথে বাথরুমে নিয়ে যান। আপনি যখন বাথরুমে যাবেন বাচ্চাও যদি আপনার সাথে বাথরুমে ঢুকতে চায়, তাহলে সেটা আরো একটি লক্ষণ যে বাচ্চা পটি ট্রেনিংয়ের জন্য প্রস্তুত।
তাছাড়া আপনি গল্পের ছলে শিশুকে বলবেন কিভাবে নিজে নিজে প্যান্ট খুলতে হয়, বাথরুমে ঢুকে কমোডে বসতে হয় এবং তারপর পায়খানা করতে হয়, সে যদি মন দিয়ে সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি শুনে এবং কিভাবে আসল আন্ডারওয়্যার পরতে হয় সে বিষয়ে জানতে চায় অথবা নিজে নিজে টয়লেটে বা মিনি চেয়ারে বসতে চায়, তাহলে বুঝবেন টয়লেট ট্রেনিং এর এটাই সঠিক সময়।
প্রস্রাব বা পায়খানা আসলে তা বলতে পারে
অনেক বাচ্চা দ্রুত কথা বলা শিখে যায়। সম্পূর্ণ বাক্য বলতে না পারলেও হয়তো ২-৩ টা শব্দ দিয়ে তার অভিব্যক্তি প্রকাশ করে বা হয়তো শুধু শিশু-কথা বলে যেমন, “আমি এখন সিস”। এর মানে তার যদি প্রস্রাব বা পায়খানার চাপ আসে তাহলে সে বুঝতে পারে। এটা ওর প্রস্তুতির আরেক লক্ষণ।
অন্য বাচ্চারা হয়তো কম মৌখিক উপায়ে যোগাযোগ করে, অঙ্গভঙ্গি দিয়ে বেশি বোঝায়। সেক্ষেত্রে সে হয়তো রুমের এক কোণায় গিয়ে বসবে (বিড়ালের মত) বা পায়খানা করার জন্য কোঁৎ করে শব্দ করবে।
আপনি যে ধরনের চিহ্নই লক্ষ্য করেন না কেন, যে শিশু তার নিজের শরীরের কার্যাবলী সম্পর্কে সচেতন সে সম্ভবত পটি ট্রেনিং এর জন্যেও প্রস্তুত।
ভেজা বা নোংরা থাকতে পছন্দ করে না
বাচ্চারা যখন একটু বড় হয়, ২-৪ বছর বয়সে, তখন তারা অপরিষ্কার বা ভেজা থাকতে পছন্দ করে না। আশেপাশে খাবারের টুকরো ছড়িয়ে থাকলে বা হাতের আঙুলে আঁঠালো জাতীয় কিছু লাগলে খুব বিরক্ত হয়। তাছাড়া এ বয়সে যদি সে ডায়পার বা প্যান্টে প্রস্রাব বা পায়খানা করে দেয় তাহলে সেটাও দ্রুত পরিবর্তন করতে চায়।
যখন থেকে শিশু ডায়পার এর প্রতি বা ভেজা জিনিসের প্রতি বিরক্তি দেখাবে, তখন থেকেই জোরেসোরে টয়লেট ট্রেনিং দেয়া শুরু করবেন। কারণ এটাই পটি ট্রেনিং এর একটি সুবর্ণ সুযোগ।
বাচ্চা নিজের জামা-কাপড় খুলতে পারে
বাচ্চারা নিজে নিজে কাপড় পরা কিছুটা দ্রুত শিখে। যদি সে তার প্যান্ট নিজে টেনে নামাতে পারে আবার টেনে তুলতে পারে তাহলেই সে প্রস্তুত বলে ধরে নেয়া যায়।
বাচ্চাকে সব সময় ইলাস্টিক বা রাবার দেয়া ঢিলেঢালা প্যান্ট পরাবেন যেন সে সহজে খুলতে ও পরতে পারে এবং কখনোই এমন ধরনের পোশাক পরাবেন না যেটা পরা ও খোলা কষ্টকর।
সে পটি ব্যবহার করতে পারে
পটি ট্রেনিং প্রক্রিয়াটি অনেকটাই শারীরিক, তার মানে হচ্ছে আপনাকে পুরো প্রক্রিয়াটি করে দেখাতে হবে। তাকে বোঝাতে কিভাবে সে একা বাথরুমে হেঁটে যাবে, একা কাপড় খুলবে, কমোডে বসবে, এবং প্রস্রাব বা পায়খানা না হওয়া পর্যন্ত সেখানে বসে থাকবে। বাচ্চার ভিতরে যদি ধৈর্য্য ক্ষমতা বাড়ে এবং একা একা প্যান্ট খোলা থেকে শুরু করে সব কাজ করতে পারে তাহলে এটা পটি ট্রেনিং প্রস্তুতির আরো একটি লক্ষণ।
টয়লেট ট্রেনিং দেয়াটা অনেক ধৈর্য্যের ব্যাপার, অনেক সময় মনে হতে পারে এই ট্রেনিং দিতে বুঝি চিরকাল লাগবে। কিন্তু এটা আসলে বাচ্চার উপর নির্ভর করে, একেক বাচ্চার একেক রকমের সময় লাগে।
আপাতত শিশুর টয়লেটে যাবার প্রস্তুতির লক্ষণগুলোর উপর তীক্ষ্ণ নজর রাখুন যেন সঠিক সময়ে পটি ট্রেনিং শুরু করতে পারেন।
রেফারেন্স:
এ লেখাটি আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব পিডিয়াট্রিকস (AAP) এর গাইডলাইনের উপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছে। তাদের ওয়েবসাইট লিংক: https://www.aap.org
অনেক প্রয়োজন ছিল এমন কোন ইনফরমেশন, ধন্যবাদ