শিশু প্রিম্যাচিউর কেন হয়

এ আর্টিকেলে যা থাকছে

যে শিশু আগে ভাগে জন্মায় তাকে সাধারণত আমরা প্রিম্যাচুর শিশু নামে ডাকি। আপনারা জানেন যে প্রিম‍্যাচুর শিশুর ওজন ফুল-টার্ম শিশুর চেয়ে বেশ কম হয়। তবে এটাই সব নয়। প্রিম‍্যাচুর বাচ্চার বিকাশ সম্পর্কে যে বিষয়গুলি জানা গুরুত্বপূর্ণ সেগুলি এখানে আলোচনা করব।

সেপারেশন এংজাইটি: কেন শিশু মাকে ছাড়া থাকতে চায় না?

শিশু জন্মানোর পর প্রতিটি বাবা-মাকেই অনেক কিছু সামলাতে হয়। আর শিশু যদি সময়ের আগেই তাড়াতাড়ি জন্ম নেয় তাহলে বাবা-মায়ের কষ্ট বহুগুণ বেড়ে যায়। সৌভাগ্যবশত এখন চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির কারণে ২৮ সপ্তাহের পরে জন্ম নেওয়া প্রিম‍্যাচুর শিশু বেঁচে থাকার এবং ধীরে ধীরে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু আপনাকে মনে রাখতে হবে যে আপনার প্রিম‍্যাচুর শিশুটি,  ৩৭ সপ্তাহের পরে জন্মানো বা ফুল-টার্ম শিশুর থেকে আলাদা হবে। সে দেখতে তো ভিন্ন হবেই এমনকি আচরণগতও অনেক পার্থক্য থাকবে। 

কাদের প্রিম‍্যাচুর শিশু হিসেবে ধরা হয়

সংজ্ঞা অনুসার,  প্রিম‍্যাচুর শিশুরা তাদের আনুমানিক নির্ধারিত তারিখের অনেক আগে জন্মায়। সাধারণত গর্ভাবস্থার ৩৭ তম সপ্তাহ শুরু হওয়ার আগে এবং মায়ের পেটে পরিপূর্ণ বিকাশ হওয়ার আগেই তারা পৃথিবীতে আসে। 

এই প্রিম‍্যাচুর শিশুরা কত তাড়াতাড়ি জন্মায় তার উপর ভিত্তি করে শিশুদের কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে –

  • আর্লি টার্ম (Early term): ৩৭ থেকে ৩৯ সপ্তাহের মধ্যে যেসব শিশু জন্ম নেয়। 
  • লেট প্রিটার্ম (Late preterm): ৩৪ সপ্তাহ থেকে ৩৬ সপ্তাহ ৬ দিনের মধ্যে যেসব শিশু জন্মায়। বেশিরভাগ প্রিম‍্যাচুর শিশুরা এই সময়কালে জন্ম নেয়। 
  • মডারেট বা মাঝারি  প্রিটার্ম (Moderate preterm): ৩২ সপ্তাহ থেকে ৩৪ সপ্তাহের মাঝে যেসব শিশু জন্মায়। 
  • অতিরিক্ত প্রিটার্ম (Very preterm): ২৮ সপ্তাহ থেকে ৩২ সপ্তাহ অথবা ৩২ সপ্তাহের কম বয়সে যেসব শিশু জন্ম নেয়। 
  • মারাত্মক প্রিটার্ম (Extremely preterm): ২৮ সপ্তাহের আগে যেসব শিশু জন্মায়।
একটি প্রিম‍্যাচুর শিশুর কতটুকু বাঁচার সম্ভাবনা থাকে

এই শিশুদের বেঁচে থাকা মূলত নির্ভর করে মায়ের পেটের ভিতরে ভ্রূণের বিকাশ এর উপর। মায়ের পেটে ভ্রুণ যত বেশি বৃদ্ধি পাবে ও শক্তি অর্জন করবে, বাইরের দুনিয়ায় বেঁচে থাকার ক্ষমতা তত বেশি বাড়বে। 

সাধারণত, ডাক্তাররা ২৪ সপ্তাহে একটি ভ্রুণ সুগঠিত হয় বলে মনে করেন। এই সময়টাকে ভ্রুণের কার্যক্ষমতার ‘টিপিং পয়েন্ট’ বলে মনে করেন। তবে এই বয়সে জন্ম নিলেও শিশুটি বেঁচে থাকবে এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। 

মায়ের গর্ভে থাকাকালীন প্রতিটি সপ্তাহ শিশুর জন্য বেশ জরুরী।  শিশু যত বেশিদিন মায়ের পেটে থাকবে তার বিকাশও তত বেশি হবে। 

প্রিম‍্যাচুর শিশুর ওজন কেমন থাকে

একটি শিশু মায়ের পেটে কতদিন থাকে, তার উপর শিশুটির স্বাস্থ্য ও বিকাশ কেমন হবে তা নির্ভর করে না। 

প্রিম‍্যাচুর শিশুর ক্ষেত্রে ওজন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ওজনের উপর নির্ভর করে তার কতটা স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে এবং কতটা যত্নের প্রয়োজন। এছাড়াও,  NICU তে কতদিন থাকা লাগবে এটাও তার ওজনের উপরেই নির্ভর করে। সাধারণত, বাচ্চার ওজন যত কম হবে তত বেশি দিন শিশুকে NICU তে রাখতে হয়।

  • কম জন্ম ওজন: ২ কেজি ওজনের শিশুদের জন্ম ওজন কম বলে মনে করা হয় । 
  • খুব কম জন্ম ওজন: এই বিভাগের শিশুদের ওজন ১ কেজি ৩০০ গ্রামের মত হয়। 
  • মারাত্মক কম জন্ম ওজন : এইশ্রেণীর শিশুদের ওজন ৯০০ গ্রামের মত হয়। 
  • ক্ষুদ্রতম প্রিমি: সবচেয়ে ছোট এবং ক্ষুদ্রতম শিশুরা এই বিভাগে পরে। ৪০০গ্রাম ওজনের শিশুদের সবচেয়ে ছোট এবং ক্ষুদ্রতম শিশু হিসেবে ধরা হয়। এই শিশুরা সাধারণত ২৬ সপ্তাহের আগে জন্মায়।
প্রিমেচিউর শিশুর জন্মের সময় দেখতে কেমন হয়

প্রি-ম্যাচিওর শিশুদের ওজনের কারণে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ফেলা হলেও তাদের কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং তারা দেখতেও অনেকটা একই রকম। যদিও বয়সের সাথে সাথে সব কিছু ঠিক হয়ে যায়, জন্মের সময়ের এই পার্থক্যগুলো আর থাকে না। 

তাদের কিছু সাধারণ শারীরিক পার্থক্য হল-

  • লেট প্রিটার্ম শিশুরা দেখতে একটা ছোট পাখির মত হয়। ফুল-টার্ম শিশুদের একটি ছোট ভার্সন হলো এ প্রিম‍্যাচুর শিশুরা। ৩২ সপ্তাহ বা তার কম সময়ে জন্ম নেওয়া শিশুদের শরীরে বেশি চর্বি থাকেনা। তাদের বুক,  হাত-পা সবই একটি পাখির মত চিকন ও ছোট হয়। দেখলে মনে হতে পারে যেকোন সময় ভেঙে যাবে।  
  • প্রিটার্ম শিশুদের মাথা শরীরের তুলনায় বড় দেখায়।
  • তাদের শরীরের রঙ ফ্যাকাশে বা হালকা হলুদ হয়। অনেক সময় শরীরের রং পরিবর্তন হতে দেখা যায়। কখনো নীল, কখনো ফ্যাকাশে আবার কখনো বিভিন্ন দাগ দেখা যায়। এছাড়াও এসব শিশুদের খুব সাধারন একটি বৈশিষ্ট্য হলো জন্ডিস।জন্ডিস হলে শরীর হলুদ হয়ে যায়। এনআইসিউ (NICU) তে থাকা শিশুদের মধ্যে জন্ডিস হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে।
  • প্রিম‍্যাচুর শিশুদের ত্বক অনেক পাতলা এবং চকচকে থাকে। ফুল টার্ম শিশুর শরীরে যে পরিমাণ চর্বি থাকে তেমনটা প্রিম‍্যাচুর শিশুর শরীরে থাকে না। যে কারণে তাদের ত্বকের নিচেও কোন চর্বি তৈরি হয় না। এই সব শিশুর ত্বক অনেক সময় এতটাই পাতলা হয় যে ত্বকের নিচের রক্তনালী ও দেখা যায়। 

এই শিশুদের শরীরে অনেক বেশি লোম থাকে। অনেক সময় তাদের পিঠ ও কাঁধ লোম দিয়ে ঢাকা থাকে, যা লানুগো (Lanugo) নামে পরিচিত। এগুলো সাধারণত জন্মের আগেই পড়ে যায়। কিন্তু অনেক প্রিম‍্যাচুর এবং ফুল-টার্ম শিশুদেরও এই লোম জন্মানোর সময় থেকে যায়।

আমার প্রিম‍্যাচুর শিশুটির আচরণ কেমন হবে

একটি প্রিটার্ম শিশু দেখতে যেমন অন‍্য শিশুর মত হয়না তেমনি ওদের আচরণ বা কার্যকলাপেও পার্থক্য থাকে-

  • আপনি একটি প্রিম‍্যাচুর শিশুর কান্না শুনবেন না বললেই চলে। তাদের শ্বাসতন্ত্র (যার মাধ্যমে আমরা শ্বাস-প্রশ্বাস ছাড়ি) সুগঠিত থাকেনা। যে কারণে অন‍্য শিশুর মতো তারা কাঁদতে পারেনা।তাদের কান্না অনেকটা হুমকির মতো শোনায়। 
  • এ সব শিশুকে ইনকিউবেটরে রাখা লাগে। তাদের শরীরে চর্বি না থাকার কারণে তাদের শরীর দ্রুত ঠান্ডা হয়ে যায়। শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখার জন্য ইনকিউবেটরের প্রয়োজন হয়, কখনো কখনো একে আইসোলেটও (Isolate) বলা হয়। 
  • প্রিম‍্যাচুর শিশুরা বলতে গেলে প্রায় সময় ঘুমিয়েই থাকে। দিনে প্রায় ২০ ঘণ্টার মতো তারা ঘুমায় বা ঝিমিয়ে থাকে। এত ঘুমানোর জন্য তাদের খাওয়াতেও অনেক সমস্যা হয়। সারাদিনে মাত্র ১ ঘন্টা পাওয়া যায় তাদের খাওয়ানোর জন্য।

ফুল-টার্ম শিশুর মতো ওদের ঘুম ততোটা গভীর হয় না। তারা বেশিরভাগ সময় তন্দ্রাচ্ছন্ন থাকে, মানে পুরোপুরি জেগে থাকে না, আবার গভীর ঘুমেও থাকেনা। 

  • প্রিম‍্যাচুর শিশুর শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। তাদের শরীরের ভেতরের অঙ্গগুলোতে ঠিকমতো অক্সিজেন পৌঁছায় না। যে কারনে তাদের অনেক সময়ই শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়, যাকে প্রিম্যাচুরিটি অ্যাপনিয়া (Apnea of Prematurity) বলা হয়। 

সৌভাগ্যবশত, এসময় শিশুদের ঠিকভাবে শ্বাস নিতে সাহায্য করার জন্য ডাক্তাররা ভেন্টিলেটর বা সিপিএপ (CPAP) এর মতো এক ধরনের বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার করে। এই যন্ত্র ব্যবহার করে শিশুদের অক্সিজেনের মাত্রা স্বাভাবিক রাখা হয়। 

  • এই শিশুদের খাওয়ার পরিমাণ খুবই কম। আপনি বুকের দুধ বা বোতলেও খাওয়াতে পারবেন না। বিশেষ করে, অতিরিক্ত প্রিটার্ম শিশুদের মুখ দিয়ে চুষে খাওয়ার জন্য যে পেশীগুলো কাজ করে সেগুলো ঠিকভাবে সুগঠিত থাকে না। যার কারণে তারা মুখে খেতে পারেনা আবার অনেকে পারলেও খুবই অল্প সময়ের জন্য পারে।তাই ডাক্তাররা শিশুর নাক দিয়ে একটি টিউব ঢোকায় যাকে ন্যাসোগ্যাস্ট্রিক বা এনজি (NG) টিউব বলে। এই টিউবের মাধ্যমে অল্প পরিমাণ ফর্মুলা বা বুকের দুধ খাওয়ানো হয়। 
  • কিন্তু সে ঘনঘন খাবে। প্রিটার্ম শিশু বুকের দুধ খাওয়া শিখে গেলে তাকে অনেক ঘনঘন খাওয়াতে হয় । একটি ফুল-টার্ম শিশু যদি প্রতিদিন ২ ঘণ্টা পরপর খায় তবে আপনার প্রিটার্ম শিশুকে ১ থেকে ১.৫ ঘণ্টা পরপর খাওয়াবেন। সেটা আপনার বুকের দুধ হোক আর বোতলে করে খাওয়ানো হোক। কারণ আপনার শিশু প্রতিবার খুবই অল্প পরিমাণ খায়। সে কারণে বারবার খাওয়ানোর কথা বলা হয়ে থাকে। 
  • প্রিম‍্যাচুর শিশুর মধ্যে অনেক ধরনের রিফ্লেক্স, যেগুলোকে সহজাত প্রতিক্রিয়া বা অভ্যাস বলি সেগুলো থাকেনা । যেমন ধরুন: দুধ খাওয়া, কাঁশি দেওয়া বা হিসু করা এগুলো কোনো শিশুকে শেখানো লাগেনা। যেহেতু প্রিটার্ম শিশুদের পেশী এবং স্নায়ু সুগঠিত থাকে না তাই তাদের মধ্যে অনেক ধরনের সহজাত প্রতিক্রিয়া ফুল-টার্ম শিশুদের মত তৈরি হয় না। যেমন: কোনকিছু চোষার রিফ্লেক্স, রুট রিফ্লেক্স বা কোন উৎসের প্রতি তাকানোর প্রতিক্রিয়া, আঁতকে ওঠার প্রতিক্রিয়া বা স্টার্টল রিফ্লেক্স, গ্রাস্পিং রিফলেক্স (Grasping Reflex) বা কিছু ধরার জন‍্য মুঠো করা এগুলো জন্মের সময় প্রিটার্ম শিশুদের নাও থাকতে পারে।
  • এই শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে।  তাই যেকোনো রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে। এজন‍্য এ শিশুরা প্রায়ই অসুস্থ হয়। ইনফেকশন এড়িয়ে চলার জন্য বাচ্চাকে ধরার আগে হাত ভালো করে পরিষ্কার করতে হবে। শিশু যখন NICU হতে থাকে তখন তাঁদের কিছু নিয়ম মানতে হয়।যেমন: হাতে গ্লাভস পরা, মাস্ক পরা, হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে স্যানিটাইজার দিয়ে হাত জীবাণুমুক্ত করা ইত্যাদি। 

তারপর শিশুকে যখন বাসায় আনবেন তখনও NICU এর সব নিয়ম মেনে চলতে হবে। পাশাপাশি বাসায় বেশি মানুষ আসতে দিবেন না। অসুস্থ ব্যক্তি থেকে দূরে রাখবেন এবং হাত ধোয়া ছাড়া শিশুকে কারো কোলে দিবেন না।

প্রিম‍্যাচুর শিশু স্বাস্থ্যগত কি কি সমস্যা হয়

এই শিশুদের জন্মের সময় অনেক ধরনের জটিলতা থাকে এমনকি পরবর্তী জীবনে ও তাদের কিছু স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে। কিছু সমস্যা জন্মানোর পর দেখা দেয়, আবার কিছু সমস্যা থাকে দীর্ঘমেয়াদি। 

প্রিম‍্যাচুর শিশুর স্বল্পমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা :

  • নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা। এ সকল শিশুদের ফুসফুসের গঠন ঠিকমত না হওয়ার কারণে জন্মের পর এদের শ্বাসকষ্ট হয়। কিছু শিশুর ব্রাঙ্কোপলমোনারি ডিস্প্লাসিয়া নামক ফুসফুস জনিত রোগ হয়। আবার অনেকের শ্বাস-প্রশ্বাসই বন্ধ হয়ে যায় যাকে প্রিম্যাচুরিটি অ্যাপনিয়া (Prematurity Apnea)বলে। তখন তাদের কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র অর্থাৎ CPAP বা ভেন্টিলেটরের সাহায্যে সাময়িকভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস চালু রাখা হয়। 
  • হার্টের সমস্যা। নিম্ন রক্তচাপ শিশুর জন্য আরেকটি চিন্তার বিষয়। নিম্ন রক্তচাপের ফলে মহাধমনী এবং ফুসফুসগত ধমনী ক্রমাগত খোলার ফলে হার্টের সমস্যা দেখা যায়, যাকে ‘পেটেন্ট ডাক্টাস আর্টেরিওসাস’ বলা হয়। 
  • ব্রেনের সমস্যা। প্রিম‍্যাচুর শিশুর মস্তিষ্কে রক্তপাত ঘটতে পারে যা কমও হতে পরে আবার অনেক বেশি ছড়িয়ে যেতে পারে। 
  •  শরীরের তাপমাত্রা কম। এই শিশুদের শরীরে চর্বির পরিমাণ কম থাকায় এরা নিজের তাপমাত্রা নিজের নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনা এবং অনেক তাড়াতাড়ি ঠাণ্ডা হয়ে যায়। যার ফলে হাইপোথার্মিয়া হতে পারে। 
  • জিআই (GI) সমস্যা। জিআই হচ্ছে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্ট। যে অঙ্গগুলোর মধ্য দিয়ে খাদ্য বা তরল জাতীয় খাবার যাতায়াত করে, যখন সেগুলো গিলে ফেলা হয় হজম হয় শোষিত হয় এবং পায়খানা হয়ে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। 

প্রিম‍্যাচুর শিশুর এই গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টটি পুরোপুরি সুগঠিত না হওয়ার ফলে শিশুর অন্ত্রের প্রাচীরের কোষগুলোতে আঘাত লাগতে পার। শিশুকে শুধু বুকের দুধ খাওয়ালে এই ঝুঁকি অনেকটা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 

  • রক্তস্বল্পতা এবং জন্ডিস। শিশুর রক্তে যদি লোহিত রক্ত কণিকার পরিমাণ কম থাকে তাহলে শিশুর রক্তস্বল্পতা হতে পারে। আর রক্তে বিলিরুবিনের পরিমাণ যদি বেশি থাকে তাহলে জন্ডিস হয়। এর ফলে শিশুর ত্বক এবং চোখ হলুদ হয়ে যেতে পারে। 
  • হাইপোগ্লাইসেমিয়া। এটি এমন একটি অবস্থা যার কারণে রক্তে শর্করার পরিমাণ কম থাকে। ফলে শরীরে পর্যাপ্ত গ্লুকোজ জমা হয় না এবং শর্করা গ্লুকোজে রূপান্তরিত হয় না। প্রিম‍্যাচুর শিশুদের বেশি হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে দেখা যায। 
  • ইনফেকশন। প্রিটার্ম শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় যেকোনো কোন রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে। আর এই সংক্রমণ যদি রক্ত প্রবাহে পৌঁছায় তাহলে সেপসিস হয়ে যেতে পার। সেপসিস হলে শরীর তার নিজের টিস্যু এবং অঙ্গগুলোর ক্ষতি করতে শুরু করে । 

প্রিম‍্যাচুর শিশুর দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যা  

  • সেরিব্রাল পালসি। এটা এমন একটি শারীরিক অক্ষমতা যার কারণে শিশুর শরীরের পেশি দুর্বল থাকে এবং চলাফেরা করতে পারে না। 
  • কোনো কিছু শিখতে দেরি হওয়া। প্রিটার্ম শিশুদের ডেভেলপমেন্ট, ফুল-টার্ম শিশুদের তুলনায় দেরিতে হয়। যেমন ধরুন: ওদের বসতে শেখা ,হামাগুড়ি দেওয়া, দাঁড়াতে পারা ,বা হাঁটা সবকিছুই কিছুটা দেরিতে হবে। যখন ওরা স্কুলে ভর্তি হয় তখন পড়ালেখা শিখতেও ওদের সমস্যা হতে পারে। 
  • অন্ধত্ব । প্রিম‍্যাচুর শিশুদের চোখে রেটিনার রোগ হতে পারে যাকে আরওপি (ROP) বলা হয়। রেটিনা ফুলে যাওয়া বা দাগের কারণে রেটিনার ক্ষতি হতে পার। এর ফলে শিশুর চোখে দেখতে সমস্যা হয়। ঠিক সময়ে এটা ধরা না পড়লে এবং চিকিৎসা না হলে শিশু অন্ধও হয়ে যেতে পারে। 
  • এই শিশুদের পরবর্তী জীবনে কানে শুনতে না পারা বা কম শোনা এবং দাঁতের সমস্যা দেখা যায়। প্রিম‍্যাচুর শিশুরা পূর্ণ-মেয়াদী শিশুদের তুলনায় কম শুনতে পারে এবং তাদের দাঁতও পড়ে উঠে। দাঁত আঁকাবাঁকা এবং দাঁতের রং কিছুটা বিবর্ণ হয়।
  • আচরণগত সমস্যা। প্রিটার্ম শিশুদের ডেভলপমেন্ট ডিলে বা বিকাশে দেরি হয়। এমনকি মানসিক সমস্যাও এই শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায় ফুল-টার্ম শিশুদের তুলনায়। 
  • দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা। সাডেন ইনফ্যান্ট ডেথ সিন্ড্রোম (SIDS), কি কারনে হয় তা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি।অনেক সময় স্বাস্থ্যবান শিশুরাও এ ধরনের সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। তবে প্রিম‍্যাচুর শিশুর ক্ষেত্রে ঝুঁকি আরো বেশি থাক। এছাড়াও এ সকল শিশুদের সংক্রমণ, হাঁপানি এবং খাওয়ানোর সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি হয়। 

নবজাতকের পালন ও যত্ন অনেক কঠিন কাজ। তবে প্রিম‍্যাচুর শিশুর বেলায় তা আরো বেশি কঠিন। প্রথমদিকে প্রিম‍্যাচুর শিশুকে অন‍্য শিশুর তুলনায় অনেক ভিন্ন মনে হলেও যত্ন ও পরিচর্যার মাধ‍্যমে এ শিশুরা ধীরে ধীরে সুস্থ ও স্বাভাবিক হয়ে ওঠে।  তাই ভয় না পেয়ে মনকে শক্ত করে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে।

এ লেখাটি আমেরিকান অ‍্যাসোসিয়েশন অব পিডিয়াট্রিকস (AAP) এর গাইডলাইনের উপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছে। তাদের ওয়েবসাইট লিংক: https://www.aap.org

premature baby

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *