প্রথম দাঁত ওঠার পর থেকেই যদি সঠিকভাবে দাঁতের যত্ন নেয়া হয় তা শিশুর ভবিষ্যতের জন্য বেশ ভালো হবে। কখন, কিভাবে, কী দিয়ে শিশুর দাঁত ব্রাশ করা শুরু করবেন বিস্তারিত এখানে আলোচনা করা হল।
বাংলাদেশে একটি বহুল প্রচলিত ভুল ধারণা হল শিশুর দুধের দাঁত মাজতে হয় না। কারণ এগুলি এক সময় পড়ে যাবে। এবং আবার স্থায়ী দাঁত উঠবে। তাই এই অস্থায়ী দাঁত ব্রাশ করার জন্য এত পরিশ্রম করার কোনো দরকার নেই! আধুনিক গবেষণা বলে যে, শিশুর প্রথম দাঁত ওঠার সময় থেকেই দাঁতের যত্ন নিতে হয়। এতে করে শিশুর যেমন শৈশবেই স্বাস্থ্যকর অভ্যাস তৈরি হবে, তেমন আজীবন দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।
সঠিকভাবে যত্ন না করলে শিশুর দাঁত ক্ষয় হয়ে যেতে পারে। দাঁত ক্ষয় হয়ে যাওয়াকে আমরা অনেকে দাঁতে পোকা বলে থাকি। দাঁত ক্ষয় হলে শিশু খাবার থেকে পর্যাপ্ত পুষ্টি পায় না। অনেক সময় কথা বলতেও দেরি হয়। ক্ষয়প্রাপ্ত দাঁত যখন পড়ে যায়, তখন সেটা ভবিষ্যতে দাঁত ওঠার জন্য সঠিক স্থান ধরে রাখতে পারে না। যার ফলে স্থায়ী দাঁতগুলোও আঁকাবাঁকা হয়ে উঠতে পারে।
শুধু তাই নয়, শিশুর সব অস্থায়ী দাঁত পড়ে গিয়ে যে নতুন দাঁত উঠবেই এমনটা নাও হতে পারে। এমন কিন্তু বেশ কিছু ঘটনা রয়েছে যেখানে এই অস্থায়ী দাঁতই (দুধ দাঁত) সারাজীবন মানুষের মুখে রয়ে গেছে।
কখন শিশুর দাঁত ব্রাশ শুরু করা উচিত
জন্মের পর থেকেই শিশুর মাড়ি ও জিভ পরিস্কার করতে হয়।শোবার সময় শিশুকে একটি পরিষ্কার ভেজা ওয়াসক্লথ বা গজ প্যাড বা আঙুল দিয়ে শিশুর মাড়ি এবং জিহ্বার সামনের অংশ আলতো করে পরিষ্কার করে দিবেন।
শিশুর প্রথম দাঁত বের হওয়ার সাথে সাথে টুথব্রাশ ব্যবহার শুরু করতে হবে। শিশু দাঁতের ডাক্তাররা নরম বেবি টুথব্রাশ ব্যবহার করার পরামর্শ দেন। যেটা পানিতে ভেজালে বেশ নরম হয়ে যায়। এবং একটি চালের সমান ফ্লোরাইড টুথপেস্ট ব্যবহার করতে বলেন (ব্রাশটিতে তিন লাইনের বেশি ব্রিস্টল থাকা উচিত নয়)।
মাথা ক্ষয় হয়ে যাওয়া, ২ থেকে ৪ মাসের বেশি পুরনো যে কোনো টুথব্রাশ ফেলে দিন। কারণ এটা থেকে মুখে ব্যাকটেরিয়া তৈরি হতে পারে।
শিশুর জন্য আলাদা টুথপেস্ট ও টুথব্রাশ কিনতে পাওয়া যায়। সেগুলি ব্যবহার করুন। বাজারে সিলিকনের তৈরি নরম ফিঙ্গার ব্রাশও পাওয়া যায়। শিশুর মাড়ি পরিস্কারের জন্য এগুলি বেশ ভালো।
শিশুর দাঁতের মাড়ি কিভাবে পরিস্কার করব
খাওয়ার পর শিশুর মাড়ি পরিষ্কার করতে হয়। এটি ব্যাকটেরিয়ার সাথে লড়াই করতে সাহায্য করে এবং শিশুর প্রথম দাঁত ওঠার অনেক আগে থেকেই মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
টুথব্রাশ দিয়ে মাড়ি পরিষ্কার না করে, একটি নরম ভেজা কাপড় অথবা একটি নরম রাবার বা সিলিকনের আঙুলের ব্রাশ ব্যবহার করতে পারেন। কোমল স্পর্শের কারণে দুটি পদ্ধতিই শিশুরা বেশ পছন্দ করে।
শিশুরা কি ফ্লোরাইড টুথপেস্ট ব্যবহার করতে পারে
আমেরিকান একাডেমিক অফ পেডিয়াট্রিক ডেন্টিস্ট (AAPD) আগে শিশুর বয়স ২ বছর না হওয়া পর্যন্ত ফ্লোরাইড টুথপেস্ট ব্যবহার করতে নিষেধ করতেন। কিন্তু এখন শিশুর প্রথম দাঁত বের হওয়ার সাথে সাথে ক্যাভিটি প্রতিরোধকারী ফ্লোরাইড টুথপেস্ট ব্যবহার করার পরামর্শ দেয়।
৩ বছর বয়স পর্যন্ত শিশু বা ছোট বাচ্চার জন্য একটি চালের পরিমাণ টুথপেস্ট ব্যবহার করবেন।
শিশু যদি কিছুটা টুথপেস্ট গিলে ফেলে, চিন্তিত হবেন না। কারণ এ বয়সে সে এই কাজ অবশ্যই করবে । এত অল্প পরিমাণে গিলে ফেললে, তার কোন ক্ষতি হবে না। ২ বছর পর থেকে শিশুকে ব্রাশ করার পর থুতু ফেলা বা কুলি করা শেখাবেন।
শিশুকে কিভাবে ব্রাশ করা শেখাবেন
আপনার শিশু হয়তো নিজের হাত দিয়ে ব্রাশ করার চেষ্টা করবে, তখন তাকে সেটা করতে দিবেন। যদি সে নিজে ব্রাশ করতে পারে এবং হতাশ না হয় তাহলে বেশ ভালো কথা। তবে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে অবশ্যই নিজের হাতে তার দাঁত খুব ভালোভাবে পরিস্কার করে দিবেন।
দাঁত ব্রাশ করার আগ্রহ বাড়াতে, একটি প্রিয় ক্যারেক্টার বা উজ্জ্বল রঙের মজাদার ব্রাশ শিশুর হাতে দিতে পারেন। এছাড়াও তাকে দেখিয়ে আপনি নিজেও বাথরুমের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে খুব ভালোভাবে দাঁতের যত্ন নিবেন, যেন সে শিখে যে, এটি সারাজীবন ধরে রাখার মত একটি অভ্যাস।
শিশুর দাঁত ব্রাশ করা অপছন্দ হলে কি করবেন
সব শিশু দাঁত পরিষ্কার করা পছন্দ করে না। যখন তার দাঁত উঠতে শুরু করে তখন মাড়িতে প্রচন্ড ব্যথা হয় এবং কালশিটে পড়ে, বিশেষ করে ওই সময়টাতে সে একদমই ব্রাশ করতে দিতে চায় না।
দাঁত ব্রাশ করার সময় যদি শিশুর সাথে যুদ্ধ করতে হয় তাহলে কয়েকটি টিপস মেনে দেখতে পারেন।
- সহজভাবে শুরু করুন। শিশুর মাড়ি অনেক সংবেদনশীল। এমনকি যখন দাঁত ওঠে না তখনও। তাই যদি সে সত্যিই ব্রাশ পছন্দ না করে, তাহলে একটি নরম ওয়াশক্লথ ব্যবহার করে মৃদুভাবে স্পর্শ করার চেষ্টা করুন।
- গান গেয়ে চেষ্টা করুন। কোনো কোনো শিশুর দাঁত মাজার জন্য তাদের মন অন্যদিকে সরাতে হয়। দাঁত পরিস্কার করার সময় তার একটি প্রিয় গান গাইতে পারেন। নিজেও গান বানাতে পারেন। যেমন–এমিলের চারটি দাঁত, চারটি দাঁত, চারটি দাঁত, সে করে ব্রাশ-ব্রাশ-ব্রাশ।
- দাঁত ব্রাশ কিভাবে করতে হয় তাকে দেখান। একজন বড় মানুষের দাঁত ব্রাশ করা দেখা এবং সেটা উপভোগ করা, শিশুকে নিজের দাঁত ব্রাশ করতে উৎসাহিত করে। একটা খেলার ছলে তাকে বলতে পারেন, “মা আগে ব্রাশ করবে, এরপর তোমার পালা….
- তাকে খেলতে দিন। শিশুকে ব্রাশ করতে আগ্রহী করে তোলার জন্য তার হাতে টুথব্রাশ দিতে পারেন, এতে করে সে আগ্রহী হবে। তাকে ব্রাশটি ধরে রাখতে এবং নিজস্ব গতিতে দাঁত ব্রাশ করার অনুমতি দিয়ে তার আগ্রহকে আরো বাড়িয়ে তুলতে পারেন। স্টপার সহ একটি শর্ট হ্যান্ডেলের ব্রাশ এক্ষেত্রে ভালো কাজ করবে। যাতে সে মুখের বেশি ভেতরে ঢুকাতে না পারে।
এ লেখাটি আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব পিডিয়াট্রিকস (AAP) এর গাইডলাইনের উপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছে।
তাদের ওয়েবসাইট লিংক:
https://www.aap.org
Meyer boyos 1 year. Sobe 4 te dant utheche .. or dant er care Nebo kivabe??
Apnader online shop er name & link ta plz..kon online page e pabo?
http://www.facebook.com/paromita.baby