সব শিশুর এক বয়সে দাঁত ওঠে না। ৬ মাস বয়সে বেশিরভাগ শিশুর প্রথম দাঁত ওঠা শুরু হয়। যদিও এর লক্ষণগুলো আরো অনেক আগে থেকেই দেখা দেয়। এসব লক্ষণ নিয়ে আমাদের মনে বেশ ভুল ধারণাও আছে। এই আর্টিকেলে শিশুর দাঁত ওঠার সমস্ত প্রক্রিয়া ও যত্ন সম্পর্কে আলোচনা করা হল।
দাঁত ওঠার সময় শিশুর মুখ দিয়ে হয়তো লালা ঝরবে। কারো বেশি লালা পড়ে, কারো কম। কেউবা আবার স্বাভাবিকের তুলনায় একটু বেশি খিটখিটে থাকবে। শিশু তার মুখে/মাড়িতে ব্যথার কারণ না বুঝলেও আপনি তার মাড়ি দেখে বুঝতে পারবেন যে শিশুর দাঁত উঠবে। দাঁত ওঠার লক্ষণগুলিকে ‘টিথিং’ বলা হয়।
শিশুর প্রথম দাঁত ঠিক কখন উঠবে তা অনুমান করা কঠিন। এসময় শিশুর মধ্যে একাধিক লক্ষণ দেখা দিতে পারে (বা নাও দিতে পারে) যা থেকে আপনি বুঝতে পারবেন যে শিশুর দাঁত ওঠার সময় হয়েছে।
দাঁত ওঠার সময় শিশুর মাড়িতে অনেক ব্যথা হয়, যার জন্য সে খুব অস্বস্তিতে ভোগে।শিশুর প্রথম দাঁত কখন উঠবে এবং এ সময়ে কিভাবে নিরাপদে শিশুর অস্বস্তি কমিয়ে তাকে শান্ত করা যায় সে বিষয় এখান থেকে জানতে পারবেন।
কখন থেকে শিশুর টিথিং শুরু হয়?
প্রতিটি শিশু যেমন আলাদা তেমনি ভাবে তাদের দাঁত ওঠার ধরনও আলাদা। তাই শিশুর প্রথম দাঁত যখন যেভাবেই আসুক না কেন সেটাই স্বাভাবিক।
বেশিরভাগ শিশুর ৬ মাসের দিকে প্রথম দাঁত ওঠে, কিন্তু প্রায় ২-৩ মাস আগে থেকে এর উপসর্গ দেখা দেয়।
কিছু শিশুর ৩ বা ৪ মাস বয়সেই প্রথম দাঁত বেরিয়ে আসে অন্যদিকে কারো হয়তো ১ বছরে বা ১ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরেও দাঁত উঠে না।
দাঁত ওঠার লক্ষণ কোনগুলি
টিথিং এর অনুভূতি একেক শিশুর ক্ষেত্রে একেক রকম। কারো হয়তো কোন উপসর্গই থাকে না,আবার কেউ হয়তো কয়েক মাস ধরে দাঁতের ব্যথা এবং অস্বস্তিতে ভোগে।
দাঁত ওঠার উপসর্গগুলোর দিকে খেয়াল রাখলে, আপনার এবং শিশুর জন্য এই সময়টা পার করা সহজ হবে। দাঁত ওঠার কয়েকটি প্রাথমিক লক্ষণ হলো-
মুখ দিয়ে লালা ফেলা
দাঁত ওঠার সময় শিশুর মুখ থেকে অনেক বেশি লালা পড়তে পারে। বেশিরভাগ শিশুর ১০ সপ্তাহ থেকে ৪ মাস বয়সের মধ্যে লালা পড়া শুরু হয় এবং যতদিন পর্যন্ত দাঁত না ওঠে ততদিন পর্যন্ত লালা পড়ে।
শিশুর মুখ থেকে অতিরিক্ত লালা পড়ে যদি বারবার তার জামা কাপড় ভিজে যায় তাহলে তার গলায় একটি বিব বেঁধে দিন। সারাদিন আলতো করে বারবার তার থুতনি মুছে দিন যেন ঘা না হয়ে যায়।
কামড়ানো
মাড়ির নিচ থেকে দাঁত বের হওয়ার সময় যে চাপ তৈরি হয় তাতে শিশুর অনেক অস্বস্তি হয়, মাড়িতে পাল্টা চাপ দিলে শিশু কিছুটা আরাম পায়। যেমন ধরুন শিশু যদি কিছু কামড়ায় বা চিবায় তখন আরাম বোধ করে।
টিথিং এর সময় শিশু হাতের নাগালে যা পায় তাই মাড়ি দিয়ে কামড়াতে চায় যেমন নিজের হাত, পা কিংবা খেলনা, বুকের দুধ খেলে স্তনের বোটাসহ হাতের কাছে যা পাবে সবই কামড়াবে। এমনটা হলে তাকে একটা পরিষ্কার ঠাণ্ডা শক্ত কাপড় বা রুমাল দিন। একটা নরম সুতির কাপড় ডিপ ফ্রিজে পলিথিন মুড়িয়ে রেখে দিতে পারেন। শিশুর মাড়িতে বেশি ব্যথা হচ্ছে মনে হলে ওর মাড়িতে সে কাপড়টি লাগিয়ে দিন। ঠাণ্ডা বস্তু কামড়ালে এ সময়ে শিশু অনেকটা আরাম পায়।টিথিং এর সহায়ক অনেক ধরনের টিথার বা খেলনা পাওয়া যায়, সেগুলোও শিশুকে বেশ আরাম দেয়।
কান টানা এবং গাল ঘষা
শিশুর দাঁত ওঠার সময় অনেক বেশি কান ধরে টানাটানি বা গাল ও থুতনি ঘষাঘষি করতে পারে। এ সময় শিশু শুধু যে মাড়িতেই ব্যথা অনুভব করবে তেমনটা নয়। যেহেতু মাড়ির সাথে কান ও গলার সংযোগ রয়েছে সেহেতু দাঁত উঠার সময় সে মাড়িতে বেশি ব্যথা না পেয়ে, কান বা গলায়ও ব্যথা অনুভব করতে পারে।
তবে মনে রাখবেন যে, শিশু যখন ক্লান্ত থাকে বা যদি তার কানে ইনফেকশন হয় তখনো সে কান ধরে টানাটানি করতে পারে। তাই ঠিক কোন কারণে সে কান টানছে তা বোঝার চেষ্টা করুন।
খেতে চাইবে না
শিশু যখন খিটখিটে মেজাজে থাকে তখন বোতল বা বুকের দুধ মুখে নিয়ে শান্ত হতে চায়। কিন্তু টিথিং এর সময় দুধ টেনে খাওয়ার ফলে মাড়ির ব্যথা আরো বেড়ে যেতে পারে।
এ কারণে শিশু টিথিং এর সময় খাবার নিয়ে বেশি ঝামেলা করে। আর না খাওয়ার কারণে পেটে ক্ষুধা এবং দাঁত ওঠার সময়ের অস্বস্তি, শিশুকে আরো বেশি খিটখিটে করে তোলে। যেসব শিশুরা সলিড খাবার খায় তারাও টিথিং এর সময় খেতে চায় না।
ফুসকুড়ি বা র্যাশ (Rash)
শিশুর টিথিং এর সময় যদি ক্রমাগত লালা পড়ে তাহলে তার মুখ, থুতনি, ঘাড় এমনকি বুকের চারপাশে রেশ, ঘা, লালাভাব এবং ফুসকুড়ি হতে পারে। কাপড় দিয়ে বারবার আলতো করে মুছে দিলে শিশুর জ্বালাপোড়া কম হবে।
এছাড়াও শিশুর মুখে যেন ভেজা ভাব না থাকে তার জন্য ভ্যাসলিন বা অ্যাকোয়াফোর (Aquaphor) ব্যবহার করতে পারেন এবং প্রয়োজনে হালকা, গন্ধহীন ক্রিম ব্যবহার করে শিশুর ত্বক ময়শ্চারাইজড রাখতে পারেন।
কাশি এবং/অথবা গ্যাগ রিফ্লেক্স
শিশুর মুখে ক্রমাগত থুথু আসলে, গলা আটকে যেতে পারে ও কাশি হতে পারে। আপনার শিশুর সর্দি, ফ্লু বা অ্যালার্জির অন্য কোন লক্ষণ না থাকলে এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারণ নেই ।
কান্না বা ঘ্যান ঘ্যান করা
কোনো কোনো শিশুর ব্যথা ছাড়াই দাঁত উঠে যায়। আবার কেউ কেউ প্রচন্ড মাড়ির ব্যথায় ভোগে। কোমল মাড়ির টিস্যুর প্রদাহের কারণে এই ব্যথার সৃষ্টি হয়। এ কারণে শিশুরা টিথিং এর সময় কান্নাকাটি ও ঘ্যান ঘ্যান করে তাদের অনুভূতি প্রকাশ করে।
প্রথম দাঁত ওঠার সময় সাধারণত সবচেয়ে বেশি ব্যথা হয়। মাড়ির দাঁত ওঠার সময়ও বেশ ব্যথা হয়, যেহেতু সেগুলো বেশ বড় । সৌভাগ্যবশত বাকি দাঁতগুলো ওঠার সময় শিশুরা এই অনুভূতির সাথে অনেকটা অভ্যস্ত হয়ে যায়। তাই পরে আর তেমন বিরক্ত হয় না।
বিরক্তি
মাড়ি ফেটে দাঁত বের হওয়ার কারণে আপনার শিশুর মুখে ব্যথা হবে, এটা তার জন্য খুবই কষ্টদায়ক অনুভূতি।
কিছু শিশু হয়তো কয়েক ঘন্টা খিটখিটে মেজাজে থাকে এরপর ঠিক হয়ে যায়, আর কারো কারো ক্ষেত্রে এই খিটখিটে মেজাজ টানা কয়েক দিন বা সপ্তাহ পর্যন্ত চলতে পারে।
রাতে ঘুম ভাঙা
যখন শিশুর ছোট ছোট দাঁতগুলো মাড়ি ফেটে বেরোতে শুরু করে তখন সে রাতেও ব্যথায় ঘুমাতে পারে না। যে শিশুরা সারা রাত নির্বিঘ্নে ঘুমিয়ে কাটাতো, টিথিং এর সময় তাদের ঘুমেও ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
আরো পড়ুন: শিশুর দাঁতের যত্ন যেভাবে করবেন
মাড়ির হেমাটোমা
শিশুর মাড়ির নিচে যদি নীল রঙের কোন মাংসপিণ্ড দেখা দেয়, তবে হতে পারে সেটা মাড়ির হেমাটোমা বা দাঁত বের হওয়ার কারণে মাড়ির নিচে রক্ত আটকে আছে। এটা উদ্বিগ্ন হওয়ার মত কোন বিষয় নয়।
মাড়িতে ঠাণ্ডা কাপড় ব্যথা কমাতে পারে এবং হেমাটোমা হলে দ্রুত সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। যদি হেমাটোমা বাড়তে থাকে তবে দ্রুত পেডিয়াট্রিক ডেন্টিস্ট এর কাছে যান।
দাঁত ওঠার লক্ষণগুলো একেক শিশুর একেক রকম হতে পারে। যদিও কিছু লক্ষণ আছে যেগুলো সব শিশুর মধ্যেই দেখা যায়। সেগুলো খেয়াল করুন।
শিশুর দাঁত কোন সিরিয়াল অনুসারে ওঠে
শিশুর প্রথম দাঁত কখন উঠবে তা জানা যদিও কঠিন, কিন্তু কোন দাঁত আগে উঠবে আর কোন দাঁত পরে সেটা অনুমান করা যায়। সাধারণত শিশুর প্রথম দাঁত মাঝখানে ওঠে এরপর ধীরে ধীরে আশেপাশেরগুলো উঠতে থাকে। দাঁত ওঠার সিরিয়াল সম্পর্কে কিছু ধারণা নিচের ছবিতে দেয়া হলো।
- মধ্য কর্তন দাঁত। ওপর ও নিচের পাটির সামনের ৪ টি করে ৮টির যে কোনটিকে কর্তন দাঁত বলে।এই দাঁত দিয়ে খাবার কেটে টুকরো করা হয়। মুখের কেন্দ্রের ২টি দাঁত প্রথমে ওঠে, সাধারণত নিচের গুলো আগে ওঠে, উপরের গুলো পরে ওঠে।
- পাশের কর্তন দাঁত। মাঝের ২টি দাঁত ওঠার পর এর পাশেরটা ওঠে।
শিশুর টিথিং এর সময় কিভাবে তাকে শান্ত করবেন
দাঁত ওঠার সময় বাবা মায়েরা শিশুকে শান্ত করার জন্য নানারকম ব্যবস্থা নেন। এখানে কয়েকটি দেশের জনপ্রিয় এবং নিরাপদ পদ্ধতিগুলো আলোচনা করব।
টিথিং খেলনা
টিথিং এর সময় শিশুরা চাবাতে পছন্দ করে, কারণ মাড়ির নিচ থেকে দাঁত বের হওয়ার সময় যে চাপ তৈরি হয় তাতে শিশুর অনেক ব্যথা হয়, মাড়িতে পাল্টা চাপ দিলে শিশু কিছুটা আরাম পায়।
শিশুকে রাবারের তৈরি টিথিং খেলনা দিন যেগুলো টিথিং এর সময় ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও আপনার হাতের আঙুল ও ভেজা টুথব্রাশ দিয়ে (টুথপেস্ট ছাড়া) শিশুর মাড়ি শক্তভাবে ঘষে দিতে পারেন, মাড়িতে পাল্টা চাপ প্রয়োগ করার ফলে শিশু কিছুটা আরাম পাবে।
আপনার শিশু প্রথমে বাধা দিতে পারে কারণ প্রাথমিকভাবে সে কিছুটা ব্যথা পাবে। কিন্তু ধীরে ধীরে শিশুর অস্বস্তি কমে যাবে এবং আরাম বোধ করবে। দাঁতের ব্যথা দূর করার জন্য এটাই সব থেকে সেরা প্রাকৃতিক উপায়।
ঠাণ্ডা তাপমাত্রা
শিশুর জ্বালাপোড়া করা ও কালশিটে মাড়িতে ঠাণ্ডা লাগালে তা ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। এ থেকে শিশুর ঠাণ্ডার অসুখ হবার কোনো আশঙ্কা নেই।
- রেফ্রিজারেটেড খেলনা : ঠাণ্ডা বস্তু শিশুর মাড়ি কিছু সময়ের জন্য আসার করে দেয়, তাই ঠাণ্ডা কিছু চিবালে তারা বেশি আরাম পায়। টিথিং এর জন্য উপযুক্ত খেলনা বা ভেজা ওয়াশক্লথ ফ্রিজে রাখুন। তবে মনে রাখবেন শিশুর সব খেলনা বা চাবানোর রিং বা কাপড় ফ্রিজে রাখা যায় না। ফ্রিজে রাখার টিথারগুলি একদম আলাদা। যেমন–ফ্রিদা বেবি নট টু কোল্ড টিথার।
- ঠাণ্ডা পানীয়: শিশুর বয়স ৬ মাসের বেশি হলে তাকে ঠাণ্ডা পানি দিতে পারেন। ঠাণ্ডা পানি মাড়ির ব্যথা কমাতে অনেক কার্যকরী। যদি সে বোতল থেকে খেতে না চায় তবে একটি কাপে বরফ ছাড়া ঠাণ্ডা পানি তাকে দিতে পারেন।
- ঠাণ্ডা খাবার : শিশুকে সলিড খাবার দেয়া শুরু করে থাকলে তাকে ফ্রিজে রাখা ঠাণ্ডা খাবার খেতে দিতে পারেন যেমন: ঠাণ্ডা দই, আপেল পিউরি।
আরো পড়ুন: শিশুকে কখন সলিড খাবার দেয়া যায়?
নরমাল তাপমাত্রার খাবারের তুলনায় ঠাণ্ডা খাবার খেতে এসময় শিশুরা বেশি পছন্দ করে। বাজারে এখন বিভিন্ন ধরনের ফুড ফিডার পাওয়া যায়। ফ্রিজে রাখা নরম ফল (যেমন: তরমুজ, আঙ্গুর, কলা) শিশুকে ফুড ফিডারে দিলে সে কামড় দিয়ে খেতে আরাম পাবে। শিশুর হাতে বড় খাবারের টুকরো দিলে খাবার গলায় আটকে দম বন্ধ হওয়ার (চোকিং) ঝুঁকি থাকে, তবে যদি সে সোজা হয়ে বসতে পারে তাহলে বড়দের তত্ত্বাবধানে তার হাতে খাবারের বড় টুকরো দেয়া যেতে পারে।
মাড়ির ব্যথা কমানোর জন্য শিশুকে অবশ্যই সারাদিন ঠাণ্ডা খাবার দেয়া যাবে না, কারণ এটা মাড়ি ফেটে বের হওয়া দাঁতের এনামেলকে দুর্বল করে দিতে পারে যা থেকে পরে ক্যাভিটিস বা দাঁতে গর্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ব্যথা উপশমকারী ওষুধ
ঠাণ্ডা খাবার চিবিয়ে, ঘষে বা চুষে খাওয়ার পরেও যদি ব্যথা না কমে এবং বিশেষ করে শিশু যদি দাঁতের ব্যথায় রাতে ঘুমাতে না পারে তাহলে আপনার শিশুর ডাক্তারের সাথে কথা বলুন। শিশুর বয়স যদি ২ মাসের বেশি হয় ব্যথা কমানোর জন্য অ্যাসিটামিনোফেন (Acetaminophen) আর ৬ মাসের বেশি হলে আইবুপ্রোফেন (Ibuprofen) দিতে পারেন। তবে প্যাকেটের গায়ে লিখা ডোজ নির্দেশাবলী সঠিকভাবে অনুসরণ করতে ভুলবেন না। এবং ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কখনোই শিশুকে কোন ওষুধ দেবেন না।
মনে রাখবেন এসময় শিশু আপনার কাছ থেকে অনেক বেশি ধৈর্য্য, আদর ও যত্ন আশা করে। আপনার আদর,যত্ন স্নেহ শিশুকে স্বস্তি দেবে।
শিশুর টিথিং এর সময় কোন প্রতিকারগুলো এড়ানো উচিত
শিশুর দাঁতের ব্যথা কমানোর জন্য আপনি হয়তো যেকোনো কিছু করার জন্য প্রস্তুত, তবে মনে রাখবেন কয়েকটি প্রতিকার আছে যেটা শিশুর জন্য একদমই নিরাপদ নয়। আপনাকে অবশ্যই সেগুলো এড়িয়ে চলতে হবে।
- অবশকারী উপাদান : আপনার শিশুর মাড়িতে কখনোই রাবিং অ্যালকোহল, বেনজোকেন বা লিডোকেন ব্যবহার করবেন না। আমেরিকার ফুড এন্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) অবশকারী উপাদান ব্যবহার করতে নিষেধ করে। কারণ এগুলো ২ বছরের কম বয়সী শিশুদের রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ার ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।
- ওভার-দা-কাউন্টার বা ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া কোন দাঁতের জেল ব্যবহার করা যাবে না। এফডিএ থেকে বলা হয়েছে, বাবা-মার ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া কোন ঔষধ ব্যবহার করা উচিত না, বিশেষ করে ভেষজ বা হোমিওপ্যাথিক দাঁতের জেল। কারণ এগুলো কোন কাজ করে না বলে প্রমাণিত হয়েছে। কিছু ঔষধে বেলাডোনা নামক উপাদান থাকতে পারে, যা থেকে শ্বাসকষ্ট বা খিঁচুনি হতে পারে।
- অ্যাম্বার টিথিং নেকলেস। চিকিৎসা বিজ্ঞানে অ্যাম্বার টিথিং নেকলেস কাজ করে বলে কোনো প্রমাণ নেই। বেশিরভাগ শিশু বিশেষজ্ঞ এই নেকলেস ব্যবহার না করার পরামর্শ দেন। কারণ শিশুরা এই নেকলেস মুখে দিলে এর বিডস বা পুতি গলায় আটকে শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
টিথিং এর সময় শিশুকে কিভাবে রাতে শান্ত করবেন
শিশুর ঘুম কমে যাওয়ার একটি সাধারণ কারণ হলো টিথিং।অন্যান্য সময় আপনার শিশু হয়তো একটানা ঘুমাতো কিন্তু দাঁত ওঠার সময় যদি আপনার মনে হয় সে দাঁতের ব্যথার কারণে রাতে ঘুমাতে পারছে না, তাহলে তাকে কিছুক্ষণ সময় দিয়ে দেখুন যে সে নিজে নিজে ঘুমাতে পারে কিনা।
যদি এরপরেও সে অস্থির থাকে, তাহলে তার পিঠ চাপড়ে তাকে কিছুটা শান্ত করার চেষ্টা করুন। যদি এতেও কাজ না হয় তবে দাঁত ব্যথার প্রতিকারগুলো থেকে কোন একটি চেষ্টা করুন।
রাতে জেগে থাকার অভ্যাস শিশুর ক্ষেত্রে খুবই সাধারণ ঘটনা। তাই দাঁতে ব্যথার কারণে যদি সে কয়েক রাত জেগে থাকে তাহলে পরে এটা অভ্যাসে পরিণত হতে পারে। তাই চেষ্টা করুন শিশুকে তাড়াতাড়ি ঘুম পাড়িয়ে দিতে।
শিশু যদি দাঁতের ব্যথায় অতিরিক্ত কষ্ট পায় তাহলে তার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন যেন শিশুকে ব্যথা কমানোর জন্য অ্যাসিটামিনোফেন বা আইবুপ্রোফেনের ডোজ লিখে দেন। এছাড়াও অসুস্থতার অন্য কোন লক্ষণ আছে কিনা খেয়াল করুন। যেমন: শিশুর কানে ইনফেকশন হলে রাতে ব্যথা বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা থাকে।
কখন ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত
একটা বহুল প্রচলিত ধারণা হল, দাঁত ওঠার সময় শিশুর ডায়রিয়া এবং হালকা জ্বর (১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইটের নিচে) হয়। আবার ডাক্তাররা দাঁত ওঠার সাথে জ্বর ও ডায়রিয়ার সরাসরি সম্পর্ক আছে এমনটা বলতে চান না ।
তাত্ত্বিকভাবে, এটা সম্ভব হলেও হতে পারে। দাঁত ওঠার সময় শিশুর মুখে যে অতিরিক্ত লালা তৈরি হয় তা গিলে ফেলার কারণে পেট কামড়াতে পারে। এটা থেকে ডায়রিয়া হতে পারে। আবার শরীরের যেকোনো জায়গায় ব্যথা হলে শরীরের তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে যেতে পারে।
কিন্তু এই উপসর্গগুলো কোন ভাইরাস সংক্রমণের কারণে হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। কারণ শিশুর যখন দাঁত ওঠার সময় হয় ততোদিনে মায়ের কাছ থেকে পাওয়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে শুরু করে।
৩ দিনের বেশি শরীরের তাপমাত্রা কম থাকলে বা জ্বর বেশি হলে বা অন্যান্য বিপদজনক লক্ষণ থাকলে শিশু বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলুন।
তাছাড়াও শিশুর যদি পানির মতো পাতলা পায়খানা ২ দিনের বেশি থাকে, বা সে যদি বেশ কয়েকদিন ধরে খেতে না চায় সেটাও ডাক্তারকে জানানো প্রয়োজন।
মনে রাখবেন, দাঁতের ব্যথার মতো, কানের সংক্রমণে আক্রান্ত শিশুরাও কান ধরে টানাটানি বা ঘষাঘষি করে।
দ্রুত শিশু বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করবেন যদি শিশু –
- টিথিং এর সময়ের থেকেও বেশি বিরক্ত থাকে
- শরীরে জ্বর থাকে
- শুয়ে থাকার সময় অথবা কিছু চাবানোর সময় বেশি অস্বস্তি বোধ করে
- কানের চারপাশে পুঁজ জমে বা খসখসে থাকে
শিশুর পরবর্তী মাইলফলক কোনটি
দাঁত ওঠা যখন শুরু হয় তখন শিশুর কোনো বড় মাইলফলক শুরুর সময় হয়। তার প্রথম দাঁত ওঠার সময়ে সে হয়তো সলিড খাবার খাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়।
কয়েক মাসের মধ্যে আপনার শিশুর সূক্ষ্ম মোটর দক্ষতার বিকাশ ঘটবে, যার মানে সে খুব শীঘ্রই নিজের আঙ্গুল দিয়ে খাবার তুলে মুখে দিতে পারবে এবং চিবিয়ে খেতে পারবে।
এ লেখাটি আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব পিডিয়াট্রিকস (AAP) এর গাইডলাইনের উপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছে।
তাদের ওয়েবসাইট লিংক: https://www.aap.org