শিশু পুুষ্টিকর খাবার খায় না, কী করা যায়

আপনি হয়তো খেয়াল করেছেন, যখন বাচ্চাকে প্রথম সলিড খাবার দিতে শুরু করেছিলেন, তখন যাই খেতে দিতেন বাচ্চা তা আগ্রহ করে খেতো, কিন্তু বয়স দুই বছর হওয়ার পর থেকে হঠাৎ করেই সে কিছু কিছু খাবার খেতে চাইছে না।

শিশুর খাবার

আমার পারমিতার প্রতিদিন পেইজে এই বিষয়ে যে প্রশ্নগুলো বেশি করা হয় এবং সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শগুলো এই লেখায় আলোচনা করা হয়েছে।

আগে সবকিছুই খেতো। কিন্তু এখন তাকে খাওয়াতে খুব কষ্ট হয়।এটা কেন হচ্ছে?

বাচ্চা নতুন খাবার খেতে আগ্রহী না হওয়ার সম্ভাব্য কিছু কারণ:

  • তাদের স্বাদ বদলাচ্ছে। এই বয়সে বাচ্চারা খাবারসহ জীবনের সকল ব্যাপারেই দৃঢ়ভাবে নিজের মতামত দিতে এবং নিজের পছন্দ ও চাওয়ার কথা বলতে শুরু করে। খাবারের স্বাদের ব্যাপারে তাদের ধারণা যত বাড়তে থাকে, তত তারা খাবার বাছতে শুরু করে। তাই দেখা যায় বাচ্চার যদি গাজরের পরিবর্তে আঙুর খেতে ইচ্ছা করে, তবে সে গাজর একেবারে মুখেই নিতে চায় না। 
  • এই বয়সে বাচ্চার নতুন খাবার একেবারেই খেতে না চাওয়ার মাত্রা বেড়ে যায়। এই বয়সটা মূলত খাবার নিওফোবিয়া (neophobia) বা নতুন বা অপরিচিত কোনো খাবার খেতে অনিচ্ছা বা অনীহা কাজ করার মুখ্য সময়। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ছয় বছর বয়সে বেশিরভাগ বাচ্চার খাবার বাছার এই প্রবণতা কমে যায়, যদিও তখনো খাবারের ব্যাপারে তাদের পছন্দ, অপছন্দ থাকতে পারে।
  • ২ বছর বয়সে এসে বাচ্চার বেড়ে ওঠার গতি কিছুটা ধীর হয়ে যায়। সলিড খাবার শুরু করার সময় সে যেমন দ্রুত গতিতে বেড়ে উঠছিল, এখন আর সেটা হচ্ছে না। তাই মনে হতে পারে বাচ্চার হয়তো ক্ষুধা কমে গেছে বা তার হয়তো খাবারে প্রতি আগের মতো আগ্রহ নেই। কিন্তু এমন হতে পারে যে বাচ্চা আসলে তার বেড়ে ওঠার যে নতুন গতি তার সাথে অভ্যস্ত হচ্ছে। মনে রাখতে হবে এ বয়সী বাচ্চারা একেকদিন একেক পরিমাণে খায়, এমনকি তারা এক বেলায় কম খেয়ে অন্য বেলায় বেশি পরিমাণে খেতে পারে। 
বাচ্চা শাক-সবজি খেতে চায় না। এ ব্যাপারে কী করতে পারি?

বাচ্চাদের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট একটা খাবার, অথবা নির্দিষ্ট একটি খাদ্যশ্রেণীর (ফুড গ্রুপ) খাবার একেবারেই খেতে না চাওয়া খুব স্বাভাবিক। সেটা সবজি হতে পারে অথবা মাংস কিংবা দুগ্ধজাতীয় খাবার ও হতে পারে। বাচ্চা যদি দিনে অন্তত ১৫ থেকে ২০ ধরণের খাবার খায়, যার মধ্যে সব খাদ্যশ্রেণী থেকেই কিছু কিছু খাবার থাকে এবং তার বেড়ে ওঠার যে নিজস্ব গতি তা যদি ঠিকঠাক থাকে তাহলে ধরে নেওয়া যায় শিশুর খাদ্যগ্রহণের পরিমাণ স্বাভাবিক আছে। 

তাদের খাদ্যতালিকায় নতুন নতুন খাবার যোগ করতে নিচের পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করতে পারেন:

  • বাচ্চাকে নতুন খাবার এবং যে খাবার সে খেতে চায় না সেগুলো বারবার সাধতে থাকুন। যেহেতু বাচ্চাকে যেভাবে হোক কিছু খাওয়ানো নিয়ে আপনার চিন্তা বেশি থাকে তাই বেশিরভাগ সময় দেখা যায় কোনো একটি খাবার বাচ্চা খেতে না চাইলে আপনি সে যেটা খেতে পছন্দ করে সেটা আলাদা করে বানাতে শুরু করেন অথবা তাকে ঘনঘন নাস্তা বা ‘স্ন্যাক্স’ খেতে দেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে কোনো একটি খাবার খেতে শুরু করার আগে বাচ্চা খাবারটার সাথে পরিচিত হওয়ার সময় নেয়। অনেকবার দেখতে পেলে এবং হাতে ছুঁয়ে দেখলে বাচ্চা ধীরে ধীরে খাবারটার সাথে পরিচিত হতে শুরু করে। তাই না খেতে চাইলেও খাবারটা বারবার বাচ্চার সামনে রাখুন। বাচ্চা খাবারটা কচলাতে কিংবা গন্ধ নিতে শুরু করলে ধীরে ধীরে একসময় সেটা খেয়ে দেখতে আগ্রহী হয়ে উঠতে পারে। সে যদি খাবারটা ছুঁয়ে দেখতে না চায়, তাতেও সমস্যা নেই।
  • বাচ্চাকে সাথে নিয়ে খাবার তৈরি করুন। রান্নাঘরে খাবার তৈরির কাজে বাচ্চার সাহায্য নিলে তার নতুন নতুন খাবারের প্রতি আগ্রহ বাড়ে। খাবার তৈরিতে একসাথে কাজ করার সময় বাচ্চাকে নতুন নতুন খাবারের গন্ধ নিতে, ধরে দেখতে এবং খেয়ে দেখতে উৎসাহ দিন। এই বয়সে বাচ্চারা বাটিতে রান্নার উপকরণগুলো ঢালা, চামচ দিয়ে সেগুলো নাড়াচাড়া করা, ডিমের খোসা ছাড়ানো, অথবা কাটা গাজর কিংবা অন্যান্য সবজি প্লেটে সাজিয়ে রাখার কাজ আনন্দের সাথে করে। 
  • বাচ্চাকে সাথে নিয়ে ফল ও সবজির ছবি আছে এমন বইগুলো পড়ুন। শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও, গবেষণায় দেখা গেছে বাচ্চারা ছবির বইতে যে ফল এবং সবজিগুলোর ছবি বারবার দেখে, সেগুলো বাস্তবে অপরিচিত হলেও তাদের এ খাবারগুলোর দিকে তাকানোর এবং খাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। 
  • খাবারের সময় বাচ্চাকে যতটুকু সম্ভব স্বাধীনতা দিন। বাচ্চাকে তার প্লেট, চামচ ইত্যাদি নিজেই পছন্দ করে নিতে উৎসাহ দিন, খাবারের ব্যাপারে বাচ্চার মতামত ও নিতে পারেন, যেমন জিজ্ঞেস করতে and পারেন “আমরা কি আজ গাজরের হালুয়া খাব নাকি সুজি খাব?” যখন একসাথে খেতে বসবেন, তখন বাচ্চা কী খাবে, কতটুকু খাবে, কোনটা আগে খাবে কোনটা পরে খাবে সেটা তাকেই ঠিক করতে দিন। 
  • তার পছন্দের কোনো খাবারের সাথে নতুন খাবার মিশিয়ে খেতে দিন। যেমন ধরুন বাচ্চা যদি পিজ্জা খেতে ভালোবাসে, তবে পিজ্জার ওপর ফ্রেশ টমেটো দিয়ে তাকে খেতে দিন, একইভাবে সে স্প্যাগেটি খেতে পছন্দ করলে, তার সাথে অল্প কিছু কেটে রান্না করা গাজর মিশিয়ে দিতে পারেন। 

 

খাবার ঠিকমতো খেলে বাচ্চাকে পুরস্কার দেবেন, এমনটা বলবেন না। সবজি খেলে আইসক্রিম খেতে দেওয়া হবে এমন প্রমিস করলে তখন হয়তো ঐসময়ের জন্য বাচ্চা সবজি খেয়ে নেবে কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে এমন করলে বাচ্চার ঐ নির্দিষ্ট খাবারটি খাওয়ার আগ্রহ বাড়ার পরিবর্তে আরো কমে যায়। আর এইভাবে প্রতিবার সবজি খাওয়ার পর আইসক্রিম খেতে দেওয়াও তো আসলে সম্ভব নয়। বরং সব খাবারকেই সমান চোখে দেখুন এবং সব খাবার নিয়ে সমানভাবে কথা বলে বাচ্চাকেও সেভাবে দেখতে সাহায্য করুন। এতে সে একসময় নিজ থেকেই সবজি খেয়ে মজা পেতে শুরু করবে।

বাচ্চা সারাক্ষণ নাস্তা বা ‘স্ন্যাক্স’ খাওয়ার আবদার করলে কী করব?

দুইবেলা খাবারের মাঝখানের সময়টুকু স্ন্যাক্স খেয়ে পেট ভরিয়ে রাখা এড়াতে একটা রুটিন মেনে চলতে পারেন। প্রতিদিন কোন বেলায় কখন খাবার খাওয়া হয় এবং দিন এর কোন সময় স্ন্যাক্স খাওয়া হয় তা নির্ধারিত থাকলে বাচ্চার কাছে সে কখন খাবার পাবে, কখন পাবে না তা স্পষ্ট থাকে। যার ফলে অসময়ে বাচ্চা স্ন্যাকস এর আবদার করলে তাকে বলতে পারেন “এখনতো স্ন্যাকস এর সময় নয়। আমরা বিকালে খেলাধুলার পর যখন বাড়ি ফিরব, তখন নাস্তা খাব।”

কখন বাচ্চার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করব

বাচ্চার ২ বছর বয়সে খাবারের ব্যাপারে নিচের সমস্যাগুলো লক্ষ্য করলে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করবেন:

  • বাচ্চা দিনে ১৫ ধরণের খাবার খায় না, এর চেয়ে কম খায়।
  • কোনো একটি খাদ্যশ্রেণির কোনো খাবার ই খায় না
  • যে খাবারগুলো সে খেতে পছন্দ করে না, সেগুলো দেখলে কিংবা গন্ধ পেলেই বমি বমি ভাব করে, মুখ বিকৃত করে ফেলে
  • ওজন কমতে শুরু করলে অথবা তার বেড়ে ওঠার যে নিজস্ব গতি তা বাধাগ্রস্ত হলে
 
 
 

Learn more about the research

  1. Cardona Cano, S., Tiemeier, H., Van Hoeken, D., Tharner, A., Jaddoe, V. W., Hofman, A., … & Hoek, H. W. (2015). Trajectories of picky eating during childhood: a general population study. International journal of eating disorders, 48(6), 570-579.
  2. Cole, N. C., Wang, A. A., Donovan, S. M., Lee, S. Y., Teran-Garcia, M., & STRONG Kids Team. (2017). Variants in chemosensory genes are associated with picky eating behavior in preschool-age children. Lifestyle Genomics, 10(3-4), 84-92.

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *