বাচ্চার জেদ কমানোর উপায় কী

এ আর্টিকেলে যা থাকছে

আপনি জেনে অবাক হবেন, জেদ করা সব বাচ্চার স্বাভাবিক আচরণ। বাসায় একটি এক বছর+ বাচ্চা থাকা মানে তার চিৎকার-চেঁচামেচি, বাচ্চার জেদ সামলানো বাবা-মায়ের জীবনের একটা অংশ হয়ে পড়ে।

ইংরেজিতে এর একটা বেশ সুন্দর নাম রয়েছে। TODDLER TANTRUM যার মানে হতে পারে বাচ্চার ঘ‍্যানঘ‍্যান। যেসব বাচ্চা হাঁটতে শুরু করেছে তাদেরকে টডলার বলা হয়। 

ট্যানট্রাম হলো শিশু যখন কোনো কারণ ছাড়াই অর্থাৎ তার কোনো অসুবিধা না হলেও নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়ে কান্নাকাটি, চিৎকার-চেঁচামেচি করে, হাত পা ছোঁড়ে।

তাদের ট‍্যানট্রাম বা কোন কারণ ছাড়াই জেদ করা, বায়না করা কিংবা বদমেজাজি আচরণ কিভাবে প্রতিরোধ করা যায় এবং সামলানো যায় তা নিয়েই এই লেখা। লেখার সুবিধার্থে ট‍্যানটার্মকে আমরা ‘জেদ’ বলে অভিহিত করবো। 

বাচ্চার জেদ কোন বয়স থেকে শুরু হয়
বাচ্চার জেদ অনেক সময় নিজের মাথা ঠুকেও প্রকাশ করে

আপনি হয়ত শুনে থাকবেন ২ বছর বয়স বা এরপর থেকে বাচ্চার ‘টেরিবল’ পর্যায় শুরু হয়। এটা কিন্তু সব বাচ্চার ক্ষেত্রে এক নয়। ১২ মাস বয়স থেকেই বাচ্চার জেদ আর চেঁচামেচির প্রবণতা শুরু হতে পারে। যা ৩ থেকে ৪ বছর বয়সের বেশি সময় পর্যন্ত চলতে পারে। আবার জেদ দিন দিন বেড়ে ২ বা ৩ বছর বয়সে সবচেয়ে বেশি হতে পারে।

কেন বাচ্চারা জেদ করে

যে বাচ্চা এইমাত্র হাসিখুশি হয়ে খেলছে, পরমুহূর্তেই হয়তো দেখা যাবে কোনো কারণ ছাড়াই রেগে আগুন হয়ে চেঁচামেচি করতে করতে মাটিতে গড়িয়ে পড়ছে।ঘরে বাচ্চা থাকলে এমন দৃশ‍্য হবেই! 

কিন্তু এমন কেন হয়?একবার নিজেকে ছোট বাচ্চাটার জায়গায় ভাবুন তো। ধরুন আপনি কাউকে কিছু একটা বোঝাতে চান কিন্তু কোনোভাবেই বোঝাতে পারছেন না। বা মনে করুন একটা গান শুনতে আপনার খুব ইচ্ছা করছে কিন্তু সেই গানটা টিভিতেও আসছে না, সাউন্ড বক্সেও চলছে না– চলছে অন‍্য সব গান, আপনার কেমন লাগবে?  

বাচ্চারা জেদ করে বিভিন্ন কারণে। যেমন–

  • শিশুরা শব্দের সাথে শব্দ বসিয়ে গুছিয়ে বলে বোঝাতে পারে না যে তার কেমন লাগছে। মনের কথা বুঝিয়ে বলতে না পেরে তার হতাশ লাগলে।
  • শিশু ক্ষুধার্ত থাকলে,  ক্লান্ত হয়ে পড়লে, অনেক উত্তেজিত হয়ে পড়লে কিংবা বিরক্ত হলে।
  • শিশুরা বেশি নিয়ম মেনে চলা পছন্দ করে না। নিজের স্বাধীনতা জাহির করার জন্যেও মাঝে মাঝে জেদ দেখায়।
  • বাচ্চারা নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। নিজেকে সামলাতে না পেরে অনেক সময়ই ওরা চেঁচামেচি করতে শুরু করে।  
বাচ্চার জেদ করা বন্ধ করা যায় কিভাবে

জেদ করা বাচ্চার বিকাশ বা বড় হয়ে ওঠার অংশ। মনে রাখবেন এটা আপনার ব‍্যর্থতার কারণে হয় না। এবং এটা মোটেও অস্বাভাবিক কিছু নয়। আপনি যত চেষ্টাই করুন না কেন বাচ্চার জেদ পুরোপুরি বন্ধ হবে না। আপনি হয়ত কিছু কৌশল অবলম্বন করে বাচ্চার জেদ কমাতে সাহায‍্য করতে পারেন। 

  • শিশুর মূল চারটি সমস্যা খেয়াল করুন  ক্ষুধা, ক্লান্তি, বিরক্তি এবং অতিরিক্ত উত্তেজনা হলো বাচ্চাদের প্রধান চারটি সমস্যা।  তাই অনেক সময় ধরে করতে হবে এমন কাজ (যেমন বাজার করা)  শিশুর বিশ্রামের সময়ের ঠিক আগে করবেন না। অর্থাৎ শিশুর বিশ্রাম বা ঘুমের সময়ে যেন ব্যাঘাত না ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখবেন। বাসা থেকে বের হওয়ার আগে খেয়াল রাখবেন বাচ্চার পেট যেন ভরা থাকে। এছাড়া বাচ্চার জন্য মজার কোনো নাশতা এবং তার পছন্দের ছোটখাটো কোনো খেলনা অথবা বইও সঙ্গে নিয়ে বের হবেন। 
  • শিশু যেমন, তার জন্য তেমন নিয়ম করুন কোনো কোনো শিশু নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খেতে, ঘুমাতে পছন্দ করে। এতে দিনের বিভিন্ন সময়ে কখন কী করা হবে তা শিশুর জানা থাকার কারণে শিশু নিশ্চিন্ত বোধ করে এবং স্বস্তি পায়। আবার কোনো কোনো বাচ্চা মোটেও রুটিন মানা পছন্দ করে না। কোনো কোনো শিশু এসব কাজ স্বতঃস্ফূর্তভাবে করতে পছন্দ করে। যেমন প্রতিদিন নির্দিষ্ট কোনো সময়ে না খেয়ে, যখন খিদে পায় তখন খেতে চায়। তাই আপনার শিশু যদি প্রতিদিন সবকিছু নির্দিষ্ট সময়ে করতে  বিরক্তবোধ করে তাহলে সময়ের নিয়ন্ত্রণ একটু কমাতে পারেন। যেমন ঘুম থেকে ওঠার দুই ঘণ্টার মধ‍্যে এমিল নাশতা খেতে চায় না। গান শুনে শুনে নাচতে কিংবা  খেলনা নিয়ে খেলতে চায়।ও যা করতে চায় সেটাই করতে দেয়া হয়। 
  • এমন ব্যবস্থা করুন যেন শিশুকে ‘না’ শব্দটা কম বলতে হয়–  

বাচ্চারা স্বভাবগতভাবেই একটু কৌতূহলপ্রবণ হয় বলে যা দেখে তাই ধরতে  চায়৷  তাই বাচ্চাকে বারবার যেন নিষেধ করতে না হয় এমন ব্যবস্থা নিন৷ আপনার বাসা চাইল্ডপ্রুফ করার মাধ্যমে অর্থাৎ বাসার যা যা ধরা বাচ্চার জন্য নিরাপদ নয় সেগুলো যাতে শিশু ধরতে না পারে সে ব্যবস্থা করলে বাচ্চাকে সবসময় “এটা ধরো না/ ওটা ধরো না” বলতে হবেনা।  এছাড়া শিশুকে বুঝিয়ে বলতে পারেন যে কী কী কাজ কখনোই করা যাবেনা। এতে করে তাকে বারবার নিষেধ করতে হওয়া এড়ানো যেতে পারে৷ 

বারবার 'না' শুনলে শিশুর মানসিক বিকাশ ব‍্যাহত হয়
আরো পড়ুন: শিশুকে ‘না’ এর বদলে কী বলা যায়?

 

  • সম্ভব হলে বাচ্চাকে কিছু অপশন দিয়ে তাকে সেগুলো থেকে পছন্দ করে নেওয়ার স্বাধীনতা দিন ( কিন্তু খুব বেশি নয়) – শিশুর যেন মনে না হয় যে সে কী করবে না করবে সব আপনি ঠিক করে দিচ্ছেন। এজন্য  ছোট ছোট সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তাকে কিছু বিকল্প দিন। যেমন ধরুন সকালের নাশতায় দুটি খাবারের নাম বলে তাকে এ দুটোর মধ্য থেকে তার পছন্দ মতো একটি বেছে নিতে দিলে শিশু বুঝতে পারে তার স্বাধীনতা আছে। বল এবং পুতুল দুটোই দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করুন কোনটি নিয়ে সে খেলবে। যেটি সে চাইবে সেটি দিন। এতে ও মনে করবে ওর স্বাধীনতা অটুট রয়েছে। অন‍্যদিকে আসলে আপনি আপনার পছন্দের কাজটিই ওকে দিয়ে করাতে পারলেন। 
  • অনিশ্চিত শব্দ ব্যবহার করবেন না এবং মিথ‍্যা বলবেন না। শিশুরা এরকম শব্দের মানে পুরোপুরি বুঝতে পারেনা। এতে করে সে কিছু একটা করবে কিনা জিজ্ঞেস করলে উত্তরে আপনি যদি “হয়তো” বলেন সে আপনার কথাকে “হ্যাঁ” বলেই বুঝে নেবে।  তাই বাচ্চার সাথে স্পষ্ট শব্দ ব্যবহার করুন।  তাকে উত্তরে “হ্যাঁ”, “না” বলুন অথবা বুঝিয়ে বলুন৷ 

ধরুন আপনার বাচ্চা টিভির রিমোট নিয়ে টিভি ছাড়তে চাইছে। আপনি ওকে মিথ‍্যা করে বলবেন না যে টিভি নষ্ট হয়ে গেছে বা কারেন্ট নেই। আপনি সত‍্যি কথা বলবেন। বলবেন, ‘এখন টিভি দেখার সময় নয়। এখন আমি টিভি দেখতে চাই না। তাই ছাড়বোও না।’ 

মনে রাখবেন আপনি যদি ওকে সামলানোর জন‍্য মিথ‍্যা বলেন ও কিন্তু মিথ‍্যা ঠিকই ধরতে পারবে। এবং এতে দুইটি কাজ হবে।

এক. ও আপনাকে আর বিশ্বাস করবে না।

দুই. ও নিজেও মিথ‍্যা বলা শিখবে।

বাচ্চার জেদ সামলানোর ৯ টি উপায়

আপনি হয়তো এতোদিনে বুঝে গেছেন যে যতই প্রস্তুতি নেয়া হোক না কেন, মাঝেমাঝে সবকিছুই ভেস্তে যায়। বাচ্চারা যে কোনো সময় যে কোনো জায়গায় জেদে ফেটে পড়তে পারে৷ 

তাই যদি স্পষ্ট কোনো কারণ ছাড়াই বাচ্চার মেজাজ বিগড়ে যায় এবং সে কান্নাকাটি, চেঁচামেচি করতে শুরু করে তাহলে নিচের যেকোনো একটি পদ্ধতি হয়তো বাচ্চার জেদ কিছুটা সামলাতে আপনাকে সাহায্য করতে পারে। 

তবে মনে রাখবেন বাচ্চাকে শান্ত করার জন‍্য সময়মতো পদক্ষেপ নিতে হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাচ্চার মেজাজ খিঁচে গেছে বোঝার সাথে সাথেই তার মন ঘুরিয়ে দিতে পারলে বাকিটা সহজ হয়ে যায়। দেরি করে ফেললে দেখা যাবে শিশু চেঁচামেচি, কান্নাকাটি করতে করতে মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে, তখন তাকে শান্ত করা অনেক বেশি কঠিন হয়ে যায়।

বাচ্চার সাথে খেলুন

বাচ্চাকে কোনো খেলায় ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করুন। বিশেষত, লম্বা সময় ধরে অপেক্ষা করতে হবে এমন পরিস্থিতিতে এই পদ্ধতি খুব কার্যকরী। যেমন ধরুন এয়ারপোর্টে বসে অপেক্ষা করতে হলে বাচ্চার সাথে লুকোচুরি খেলা যেতে পারে৷ 

এটা দুইভাবে সাহায্য করে। প্রথমত, এতে করে শিশু কোনো কারণে বিরক্তবোধ করলে ওর মন অন্যদিকে ঘুরে যাবে আর খেলাটা উপভোগও করবে। দ্বিতীয়ত, শুধু বিরক্ত হয়েই নয়,বরং অনেক সময় মনোযোগ পাওয়ার জন্যেও বাচ্চারা জেদ করে। তাই তার সাথে খেললে সে আপনার মনোযোগ পেয়ে খুশি হয়।

হাসানোর চেষ্টা করুন 

হাসলে শিশুর মস্তিষ্কে এমন কিছু কেমিক্যাল নিঃসৃত হয় যার ফলে সে ভালো অনুভব করে। তাই এমন কিছু করার চেষ্টা করুন যাতে শিশু মজা পেয়ে হাসে। 

যেমন- ডায়পার বদলানোর সময় যদি আপনার শিশু স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে না চায়, আপনি পরিষ্কার একটা ডায়পার নিজের মাথায় দিয়ে ওর সাথে মজা করুন 

অথবা, সে যদি দুধ খেতে না চায়, একটি কলা কানে লাগিয়ে এমন ভাব করুন যেন কারো সাথে ফোনে কথা বলছেন- এগুলোতে শিশু মজা পাবে। 

সবচেয়ে ভালো ব্যাপার হলো বাচ্চাদের হাসানো খুব সহজ। তবে এজন‍্য আপনাকেও হাসতে হবে! 

লুকোচুরি খেলুন 

বেশি দূরে যাবেন না অবশ্য,  শিশুর দৃষ্টির কাছাকাছিই থাকুন। হুট করেই কাপড়ের আলনা বা এই জাতীয় কোনো কিছুর পেছনে লুকিয়ে পড়ুন। কিছুক্ষণ পর, সামনে এসে “বুউউউ” বলে হাসুন।  এই খেলায় শিশু শুরুতে চমকে গেলেও পরমুহূর্তেই বুঝতে পারবে এটা খুব মজার খেলা। সে হয়তো চাইবে আপনি আবার লুকিয়ে কিছুক্ষণ পর একইভাবে সামনে আসবেন। 

কিছু একটা খোঁজার ভান করুন

দূরে কিছু খুঁজছেন এমন ভান করুন। আপনি যদি চোখ বাঁকিয়ে কোন কিছু খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছেন এমন একটা ভাব নিয়ে বলেন “ আরে ওটা কী? ওটা কি একটা ঘোড়া?”, তাহলে বাচ্চাও আপনার সাথে ঘোড়া খোঁজা শুরু করবে। কিছুক্ষণ দুজন মিলে খুঁজতে থাকুন। এভাবে বাচ্চার মনোযোগ বিরক্তিকর কোনোকিছু থেকে সরে গিয়ে মন হালকা হয়ে যায়। এটা একটু দুষ্টু পদ্ধতি হলেও খুব কার্যকরী। 

সাধারণত শিশুর ধরতে মানা এমন কিছু জিনিস নিয়ে খেলতে দিন 

সাধারণত শিশুরা বড়দের জিনিস যেমন ওয়ালেট, চাবি এসবের প্রতি খুব আকর্ষণ বোধ করে। তাই যদি এমন কোনো জায়গায় থাকেন যেখানে জিনিস হারিয়ে বা নষ্ট করে ফেলার ভয় নেই, শিশুকে এসব জিনিস নিয়ে খেলতে দিতেই পারেন। যেমন রেস্টুরেন্টের বুথ এ বসে শিশু বিরক্ত হতে থাকলে তাকে সাধারণত এমন “নিষিদ্ধ” কোনো জিনিস দিয়ে খেলতে দিলে এই জিনিসটা ওর জন্য বিশাল আনন্দের একটা ব্যাপার হবে। 

তবে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন, যা নিয়ে খেলতে দিয়েছেন সেটা ফেরত নেওয়ার সময় হয়তো বাচ্চা চেঁচামেচি শুরু করতে পারে, জেদ করতে পারে। তাই কখন, কিভাবে তার কাছ থেকে জিনিসটা ফেরত নেবেন এ ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন। 

এ ব‍্যাপারে আমার টিপস হলো ছোট ছোট বাক্সে ‘বিপদের বন্ধু’ জিনিসগুলিকে রেখে দিন। এমনভাবে রাখবেন যেন হাতের নাগালেই থাকে। আমার কয়েকটি ‘বিপদের বন্ধু’ হলো বাবল, কমলা এবং হেডফোন। কমলার খোসা ছাড়াতে, হেডফোন খুলে মেঝেতে ছড়াতে এবং বাবল ফুলিয়ে সেগুলো হাতে ধরতে এমিল খুব পছন্দ করে। 

শিশুর সাথে আদর করে কথা বলুন 

বাচ্চার জেদ করার সময় আপনিও তার ওপর চেঁচামেচি না করে বরং তার সাথে ফিসফিসিয়ে, নরম সুরে কথা বলুন। তবে এই পদ্ধতি তখনই কাজ করবে যখন শিশু আপনার দিকে তাকিয়ে আছে।  যখনই আপনার শিশু বুঝতে পারবে আপনি কথা বলছেন, সে হয়তো শান্ত হয়ে বোঝার চেষ্টা করবে আপনি কেন এত আস্তে কথা বলছেন।  

শিশুকে শান্তি দেয় এমন কিছু বলার চেষ্টা করুন, যেমন “তোমার মন খারাপ হচ্ছে বলে আমারও খারাপ লাগছে!  চলো আমরা বাইরে থেকে হেঁটে আসি?”। তবে এই পদ্ধতি বারবার ব্যবহার করলে একটা সময়ে এসে আর কাজ নাও করতে পারে।

যে তিনটি জিনিস আমার ক্ষেত্রে প্রায়ই কাজ করে সেগুলো হলো–বাইরে নিয়ে যাওয়া, গোসল করতে নেয়া বা পানিতে খেলতে দেয়া এবং এমিলের কোনো প্রিয় গান জোরে বাজানো।  

আরো পড়ুন: শিশুর সাথে কথা বলব যেভাবে
আরো পড়ুন: শিশুকে কথা বলা শেখাবো যেভাবে

সাড়া দেবেন না

মাঝেমাঝে, অতিরিক্ত জেদ দেখানো শিশুর অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। শিশু বিরক্ত হয়ে চেঁচামেচি করলেও, সে যদি বুঝে ফেলে জেদ দেখালেই আপনি তার প্রতি মনোযোগ দেবেন, তাহলে প্রত্যেকবারই এমন করতে থাকবে। তাই যদি মনে হয় শিশু আসলেই কোনো কিছু নিয়ে বিরক্ত তাহলেই মনোযোগ দিন। না হয় চেঁচামেচিতে সাড়া না দিয়ে আপনি যা করছিলেন সেটাই করতে থাকুন।  

এমনকি আপনি গুনগুন করে বা জোরে জোরে গান গাইতে থাকুন যাতে বাচ্চা বুঝতে পারে আপনি ব্যাপারটাকে খুব একটা পাত্তা দিচ্ছেন না। তবে খেয়াল রাখবেন শিশু যেন নিজের বা আশেপাশের ক্ষতি হয় এমন কিছু করে না ফেলে। 

এটা বাচ্চার জেদ সামলানোর ক্ষেত্রে খুব কার্যকর একটা উপায়। 

নিজের কথায় অটল থাকুন 

কিছু ক্ষেত্রে আপনাকে শক্তভাবে নিজের অবস্থান ধরে রাখতে হবে। আপনি যদি আপনার কথা বারবার বলতে থাকেন একটা সময় শিশু চেঁচামেচি করতে করতে ক্লান্ত হয়ে থেমে যাবে। যেমন,  বাচ্চা যদি বিস্কুটের জন্য জেদ করতে থাকে আপনি হাল না ছেড়ে তাকে বারবার মনে করিয়ে দিন যে “ রাতের খাবারের আগে বিস্কুট খেতে হয় না। রাতের খাবারের আগে বিস্কুট খেতে হয় না” 

আপনাকে শান্ত হয়ে কথা বারবার বলতে হবে। গলার স্বর শান্ত আর চোখমুখ স্থির রাখলে বাচ্চা বুঝবে যে সে যা চাইছে আপনি তা আসলেই করতে দেবেন না। 

শিশুকে ধরে রাখুন 

বাচ্চা জেদ করতে করতে তীব্র পর্যায়ে পৌঁছে গেলে সে হয়তো কান্নাকাটি, চেঁচামেচি করতে করতে গড়াগড়ি দেবে। মাথায় ঠোকাঠুকিও করতে পারে। এসময় আপনি যতই এড়ানোর চেষ্টা করেন, হাসানোর চেষ্টা করেন বা বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করেন কোনো কিছুই কাজে দেবে না। এমনকি এই সময়ে বাচ্চা আপনার দিকে তাকানোর বা কথা শোনার অবস্থায়ও হয়তো থাকবে না। 

কিন্তু আদরের স্পর্শ এসব সময়ে জাদুর মতো কাজ করতে পারে। নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে বাচ্চা নিজেও ভয় পেয়ে যায়। এমন সময়ে আপনি তাকে স্পর্শ করলে বা আদর করে শক্তভাবে জড়িয়ে ধরলে শিশু আস্তে আস্তে শান্ত হয়ে যাবে। কারণ জড়িয়ে ধরলে যে কোনো রাগ, বিরক্তি কমে যায়। 

❌ বাচ্চা জেদ দেখালে যা করবেন না ❌

বাচ্চার জেদ সামলানোর ক্ষেত্রে আপনাকে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে: 

  • আপনি যা-ই করেন না কেন,  বাচ্চার সব ইচ্ছা পূরণে রাজি হয়ে যাবেন না। আপনি যদি বাচ্চাকে শান্ত করার জন্য ওর সব কথায় রাজি হয়ে যান তাহলে সে বুঝবে জেদ করলেই সবকিছু পাওয়া যায়। বাইরে ঘুরতে গেছেন আর তখন শিশু যদি চেঁচামেচি করতে শুরু করে। বেড়ানো বাদ দিয়ে বাসায় ফিরে আসুন।
  • শিশুর অনুভূতিকে ছোট করবেন না। “এতো রাগ করছো কেন” বা “ এর জন্য রাগ করতে হয়!” এ ধরনের কথা বলবেন না। ওর অনুভূতিকে গুরুত্ব দিন।
  • শারীরিক শাস্তি দেবেন না। মারধোর, কান টানা কিংবা থাপ্পড় কোনোটাই না। এগুলো করা কখনোই উচিত না। বাচ্চা অনেক জেদ করলে, কান্নাকাটি বা চেঁচামেচি করলে আপনিও নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলতে পারেন। কারণ আপনিও মানুষ। আর আমরা এসব পরিস্থিতিতে নিজেরা মার খেয়ে অভ‍্যস্ত। তাই আপনাআপনি বাচ্চার গায়ে হাত উঠে যাওয়াই স্বাভাবিক। সবসময় মনে রাখবেন, শারীরিক আঘাত কখনো ভালো ফল বয়ে আনে না। এমন অবস্থায় শারীরিক শাস্তি দিতে গেলে সেটা শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণও হতে পারে।
ক্লিক করে পড়ুন
বাচ্চার জেদ এর সময় যেভাবে নিরাপদ রাখবেন

যদি আপনার বাচ্চা নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়ে হাত-পা ছোঁড়াছুড়ি বা হাতাহাতি করে, মারে তাহলে তাকে একটি সুরক্ষিত জায়গায় নিয়ে যান। টানাটানি অথবা আঘাত না করে তাকে শক্তভাবে কোলে তুলে নিন। যদি বাইরে মানুষের মাঝখানে শিশু এমন করে তাহলে তাকে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে আসুন অথবা গাড়িতে নিয়ে যান। যদি তা সম্ভব না হয় তবে বাচ্চাকে শক্ত করে ধরে রাখুন যেন সে নিজেকে আঘাত করতে না পারে। কিছু কিছু বাচ্চাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরা হলে তারা শান্ত হয়ে যায়।

কখন ডাক্তার দেখাতে হবে

বাচ্চার জেদ সামলাতে পারছেন না মনে হলে কিংবা সামলানোর সময় আপনি নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারলে বাচ্চার ডাক্তার বা আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন। কখন বাচ্চার ডাক্তারের সাথে কথা বলবেন–

  • খুব ঘন ঘন জেদ দেখালে (দিনে দুইবার বা এরচেয়েও বেশি)
  • জেদ দেখানো বা চেঁচামেচির পরেও স্বাভাবিক না হলে। বাচ্চা তীব্র রাগ, মন খারাপ বা অসহায় অনুভব করছে বুঝতে পারলে। 
  • জেদের পরেও আক্রমনাত্মক আচরণ করলে, ঘুমে সমস্যা হলে, খাবার খেতে না চাইলে এবং সবসময় গা ঘেঁষে থাকতে চাইলে।  
  • চার বছর বয়সের পরেও নিয়মিত জেদ, চেঁচামেচি করলে।  
  • শিশু নিজের, আশেপাশের মানুষের বা কোনো জিনিসের ক্ষতি হয় এমন উদ্ধত কাজ করলে। বাচ্চারা রাগ করে নিজের মাথা ঠোকে, তবে এটা খুব বেশি করলে ডাক্তার দেখানোই ভালো।

মনে রাখবেন, সবকিছু আপনার একলা সামলাতে হবেনা। প্রয়োজন হলে অবশ্যই সাহায্য নিন। 

কথায় বলে, একটা বাচ্চা পালতে এক গ্রাম মানুষের দরকার হয়।“it takes a village to raise a child” আসলেও তাই! একা একা সবকিছু সমাধান করতে যাবেন না–বিশেষ করে বাচ্চার ব‍্যাপারে তো নয়ই!

 

 

রেফারেন্স:
​​1. American Academy of Pediatrics, Top Tips for Surviving Tantrums

Comment (01)

  1. Mst.Modina
    March 12, 2024

    Onek onek dhonnobad apnke apu,apnr kotha gulo sotti sotti amader mayeder k vitor theke sokti day ar baccar proti valobasa aro bere jay.

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *