এ আর্টিকেলে যা থাকছে
- কোন বয়স থেকে বাচ্চাকে টক দই দেয়া উচিত?
- খাবার থেকে বাচ্চার অ্যালার্জি হচ্ছে কিনা কিভাবে বোঝা যায়?
- বাচ্চা যদি দুধ হজম করতে না পারে, দই খেতে পারবে?
- টক দইয়ের উপকারিতা কী
- দই এবং ইয়োগার্ট কি একই
- বাচ্চার জন্য কোন দই ভালো?
- কাঁচা দুধ থেকে তৈরি দই কি শিশুর খাওয়ার উপযোগী?
- দই কি বাচ্চার গলায় আটকে যেতে পারে?
- ঘরে দই বানাবো কিভাবে?
টক দই বা ইয়োগার্ট সুপার ফুড হিসেবে পরিচিত। এটি ছোটবড় সবার স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারি। কিন্তু মিষ্টি দই বা চিনি-রং ও ফ্লেভার মেশানো দইতে এই পুষ্টিগুণ নেই। এই আর্টিকেলে বাচ্চাকে কিভাবে টক দই খাওয়ানো যায় এবং স্বাস্থ্যসম্মতভাবে বাসায় দই তৈরি করা যায় সে ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
টক দই প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার।কিন্তু কখন এবং কোন বয়সে দই খাওয়াতে হবে তা শিশুর খাদ্যাভাসের ওপর নির্ভর করে।
কোন বয়স থেকে টক দই দেয়া উচিত
দুধ থেকে তৈরি খাবারে অ্যালার্জি হতে পারে। তবে এটা যে সবার হবে তা কিন্তু নয়। এক সময় ডাক্তারেরা এসব খাবার দেরিতে বা বড় হলে শুরু করতে বলতেন। এখনো বাংলাদেশে অনেক ডাক্তার আগের নিয়ম মেনে চলেন।
কিন্তু বর্তমানে আমেরিকান ডাক্তারেরা উল্টো কথা বলে। এএপি’র নির্দেশনা হলো, দুধের তৈরি খাবার একদম কম বয়সে খাওয়ালেই ভালো। দুধ থেকে তৈরি খাবার (যেমন দই) দেরিতে খাওয়ানো শুরু করলে শিশুর অ্যালার্জি হওয়ার প্রবণতা আরো বেড়ে যায়।
বিদেশে নিয়মিত চেক আপের সময় কোনো ডাক্তার ৬ মাসে, কেউবা আবার ৭ মাসে বাচ্চাকে দই খাওয়ানো শুরু করতে বলে। আপনি যদি নিয়মিত চেকআপে না গিয়ে থাকেন, এবং আপনার বাচ্চার সলিড খাবার শুরু করে থাকেন, তাহলে ৬ মাসেই টক দই খাওয়ানো শুরু করতে পারেন।
শিশু বিশেষজ্ঞ যখন দই খাওয়ানোর অনুমতি দেয় তখন দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব দই খাওয়ানোর পরিকল্পনা করা উচিত।তবে ততোদিনে বাচ্চার সলিড খাওয়ার অভ্যাস থাকতে হবে।
যে কোনো দুধের খাবার বিশেষত দই খাওয়ানোর পরিকল্পনা করে থাকলে প্রথমবার তা ঘরে খাওয়ানোই ভালো (ডে কেয়ার বা রেস্টুরেন্টের তুলনায়)।তাতে শিশুর ওপর নজর রাখা সহজ হবে।দই খাওয়ার এক বা দুই ঘন্টার মধ্যে কোনো অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া হচ্ছে কিনা তাও খেয়াল রাখা যাবে।
এবার জেনে নেই কিভাবে অ্যালার্জি বোঝা যায়।
যেসব লক্ষণ দেখলে বুঝবেন খাবার থেকে বাচ্চার অ্যালার্জি হচ্ছে
ডিম এবং বাদামের মতই, গরুর দুধ বাচ্চাদের জন্য হাই-অ্যালার্জিক খাবার বা এসব খাবার থেকে তাদের সহজেই অ্যালার্জি হয়।
বেশিরভাগ শিশুরই ৩ বছর বয়সের মধ্যে হজমশক্তি বাড়ার সাথে সাথে এসব অ্যালার্জির সমস্যা দূর হয়ে যায়।
টক দই খাওয়ানোর পরপরই কিংবা এক ঘন্টা বা দুই ঘন্টার মধ্যে যদি এসব প্রতিক্রিয়া দেখা যায় তাহলে বুঝতে হবে এই খাবারে তার অ্যালার্জি আছে-
* গায়ে ফুসকুড়ি ওঠা বা চাকা চাকা হওয়া
* শরীর চুলকানো
* চামড়া, ঠোঁট অথবা জিভ ফুলে ওঠা
* বারবার হাঁচি
* শ্বাস নেয়ার সময় বুকের মধ্যে শব্দ হওয়া
* গলায় আটকানো ভাব বা গিলতে অসুবিধা হওয়া
* বমি বমি ভাব হওয়া, বমি হওয়া,পাকস্থলীতে ব্যথা,অথবা ডায়রিয়া হওয়া
* শ্বাসকষ্ট হওয়া
বাচ্চা যদি দুধ হজম করতে না পারে, দই খেতে পারবে
অনেক বাচ্চার ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স থাকে। এর মানে হলো তার শরীর ল্যাকটোজ হজম করতে পারে না। ল্যাকটোজ এক ধরনের সুগার যা দুধে থাকে।
ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স শিশুদের মধ্যে খুব কমই হয়। তবে যদি এই সমস্যা দেখা দেয় তাহলে যেসব লক্ষণ দেখা যায়–
- পেটে গ্যাস হওয়া
- ডায়রিয়া
- পেট ফেঁপে দেয়া
- শরীরে অস্বস্তি হওয়া
- এমনকি ওজন বৃদ্ধিও ব্যাহত হতে পারে
বাচ্চার যদি ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স থাকে তবে টক দই খেলে কিছু সমস্যা হতে পারে।
আবার ল্যাকটোজ ইনটলারেন্ট মানে এই না যে দুধ জাতীয় কোনো খাবারই খেতে পারবেনা।দইয়ে দুধের তুলনায় তুলনামূলক কম ল্যাকটোজ থাকে ।
এমন অনেক শিশু আছে যারা সামান্য দুধও খেতে পারে না কিন্তু দই খেতে পারে।
যদি সন্দেহ হয় যে শিশুর দুধে অ্যালার্জি আছে বা ল্যাকটোজ ইনটলারেন্সি আছে, তবে লক্ষণগুলো নিয়ে ডাক্তারের সাথে আলাপ করতে হবে।সমস্যা যাচাইয়ের জন্য ডাক্তার হয়তো রক্ত এবং স্কিন টেস্ট করতে বলবে।
আমেরিকাতে ডাক্তাররা বলেন যে, কিছু ক্ষেত্রে এনাফিলাক্সিস বা অ্যালার্জির প্রভাব এত বেশি হতে পারে যে তা শিশুর জীবন পর্যন্ত হুমকির মুখে ফেলতে পারে। বিশেষত শরীরের একাধিক জায়গা যদি আক্রান্ত হয়। অ্যালার্জির খাবার (ডিম, বাদাম, দুধ বা দই) খাওয়ার পরে যদি দেখা যায় শিশু শ্বাস নিতে পারছে না এবং কিছু গিলতে অসুবিধা হচ্ছে তাহলে দ্রুত ৯১১ এ কল করতে হবে।যদিও এমনটা সাধারণত হয় না তবু এ সাবধানতা সবাইকে জানানো হয়।
টক দইয়ের উপকারিতা কী
ক্যালসিয়াম এর খুবই ভালো একটা উৎস হলো দই। ক্যালসিয়াম হলো সেই খনিজ পদার্থ (মিনারেল) যা শিশুকে শক্তিশালী হতে,হাড়ের গঠন ভালো করতে, পেশি আর দাঁতকেও মজবুত করতে সাহায্য করে।কিছু কিছু দইয়ে ভিটামিন ডি মেশানো থাকে যা ক্যালসিয়াম শোষণে সহায়তা করে।এমন দই কেনার আগে লেবেল দেখে নিতে হবে।
যেসব বাচ্চা মাংস খেতে চায় না তারা টক দইয়ের মাধ্যমে শরীরে প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করতে পারে। কারণ দই প্রোটিনের চমৎকার উৎস।
দই হলো প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার।আপনারা নিশ্চয়ই অনেক খাবারের গায়ে এখন প্রোবায়োটিক বা প্রিবায়োটিক কথাটা লেখা থাকতে দেখেন। আমাদের পেটে অসংখ্য ব্যাকটেরিয়া থাকে যেগুলো হজমে আমাদেরকে সাহায্য করে। প্রোবায়োটিক হলো সেইসব ব্যাকটেরিয়া।এটা এমন এক ধরণের ব্যাকটেরিয়া যা স্বাভাবিক হজম প্রক্রিয়ার জন্য কাজে লাগে। এবং পাকস্থলীতে যখন ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণের কারণে ডায়রিয়ার ভাব দেখা দেয় তখন এটি ডায়রিয়ার বিরুদ্ধেও লড়াই করে।
এজন্যই পায়খানা শক্ত হলে বা না হলে যেমন টক দই কাজে দেয়, ডায়রিয়া হলেও ডাক্তার টক দই খেতে বলে। যাতে বাচ্চার পাকস্থলীর স্বাস্থ্য ভালো থাকে। মানে হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়।
একজিমা এবং এ্যালার্জির সমস্যা দমনের ক্ষেত্রেও প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবারের ভূমিকার প্রমাণ দেখা যায়।
দই এবং ইয়োগার্ট কি একই
দুধ এবং ব্যাকটেরিয়া– এই হলো দই।
দুধ (হতে পারে গরু, ভেড়া, ছাগল, মহিষ, ষাঁড়, উট বা অন্য কোনো প্রাণীর) ব্যাকটেরিয়ার সাথে মিলিত হয়ে শক্ত হয়ে দইয়ে পরিণত হয়।
দইয়ের ইংরেজি প্রতিশব্দ yogurt তুর্কি (turkish) শব্দ। কিন্তু এই একই মিশ্রণ (দুধ+ব্যাকটেরিয়া) নানান ধরনে ইওরোপ,উত্তর আফ্রিকা এবং এশিয়ায় কয়েক হাজার বছর ধরে তৈরি হয়ে আসছে এবং মানুষ খাচ্ছে।
এই দীর্ঘ সময়ের ইতিহাসে দইয়ের অনেকগুলো আলাদা আলাদা ধরন ও দইয়ের মাধ্যমে আরো কিছু খাবার তৈরি হয়েছে যেমন লাচ্ছি,লাবাং, মাঠা, ফ্রোজেন ইয়োগার্ট।
বাংলা দই আর ইংরেজি ইয়োগার্টের প্রস্তুতপ্রণালীতে পার্থক্য থাকলেও, এগুলোর উপকারিতা একই।
তবে চিনি মেশানো, ফ্লেভার বা অন্য কিছু মেশালে টক দইয়ের উপকারি ব্যাকটেরিয়া মারা যায়। এটা আর তত স্বাস্থ্যকর খাবার থাকে না।
বাচ্চার জন্য কোন দই ভালো
শুধুমাত্র দুধ (পূর্ণ ননীযুক্ত বা হোল মিল্ক) দিয়ে তৈরি এবং অন্য কিছু মেশানো নেই এমন সাদামাটা দই-ই বাচ্চার জন্য উপযুক্ত।
যেসব দইয়ের প্যাকেটে বাচ্চাদের ছবি থাকে বা বেবি লেখা থাকে বা বাচ্চাদের জন্য বিশেষভাবে যেসব দই বাজারজাত করা হয় সেগুলোতে সাধারণত প্রচুর পরিমাণে চিনি আর অন্যান্য স্বাদবৃদ্ধিকারক উপাদান (ফ্লেভার) মেশানো থাকে।সেসব উপাদানের কোনোটিই শিশুর কোনো প্রয়োজন নেই।উল্টো ক্ষতিকর। তাই আমরা বড়দের প্লেইন, হোল মিল্ক ইয়োগার্ট লেখা টিনই বাচ্চার জন্য (এবং আমাদের জন্যও) কিনি।
যদিও সবাই একদম সাদামাটা দই খায় না, আপনি জানলে অবাক হবেন যে শিশুর কাছে এটা মোটেও সাদামাটা না। বেশিরভাগ শিশুই শুধু দই এমনিতে খেতেই পছন্দ করে। তাই প্রথমবার শিশুকে দইয়ের সাথে কিছু না মিশিয়ে দেয়াই ভালো।
এক বছরের কম বয়সী শিশুকে মধু দেয়া যাবে না। আর দুই বছরের আগে অতিরিক্ত চিনি মেশানো খাবার না দেয়াই ভালো।
বাচ্চা যখন নিজে নিজে দই খাওয়া শুরু করবে তখন এতে কিছুটা ফল মিশিয়ে দেয়া যায়। অথবা অন্য কোনো খাবারের সাথেও দই মিশিয়ে দেয়া যায়।
প্লেইন এবং গ্রিক ইয়োগার্ট দুটোই ভালো দই। তবে গ্রিক ইয়োগার্টের ঘনত্ব বেশি, তাই শিশু সহজেই গিলে ফেলতে পারে।গ্রিক ইয়োগার্ট খুব বেশি টক,তাই খেয়াল রাখতে হবে শিশুর শরীরে তা খাপ খায় কিনা।এটা খুবই উচ্চ প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ, কারণ এগুলো ছাঁকা হয় বেশি যার কারণে এতে পানির পরিমাণ খুবই কম।পুষ্টির দিক দিয়ে চিন্তা করলে সাধারণ দইও অবশ্যই সবদিক থেকেই ভালো।
দইয়ের গায়ে দেখবেন পাস্তুরাইজড মিল্ক এবং ফার্মেন্টেড মিল্ক লেখা থাকে। এগুলি খারাপ কিছু নয়।
পাস্তুরাইজড মিল্ক হলো যে দুধ উত্তাপে জ্বাল দিয়ে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দূর করা হয়েছে। সোজা বাংলায় ফোটানো দুধ।
ফার্মেন্টেড মিল্ক হলো হজমে সহজ এমন ব্যাকটেরিয়া দিয়ে দুধকে তৈরি করা। এমন দুধ দিয়ে তৈরি দই সাধারণত ল্যাকটোজ ইনটলারেন্টরাও খেতে পারে বা হজম করতে পারে।
বাচ্চাকে কোন দই দিবেন? বিদেশের সমস্যা হলো এখানে ফ্লেভার ছাড়া ও হোল মিল্ক থেকে তৈরি ইয়োগার্ট পাওয়া সহজ নয়। বাচ্চার ফ্যাট ফ্রি বা ১% ২% ফ্যাট থেকে তৈরি দই দরকার নেই, কারণ তাতে ওরা পুরো পুষ্টি পায় না।
আমরা আমেরিকাতে বেশিরভাগ সময় যেসব দই কিনি তার ছবি এখানে সংযুক্ত করলাম।
বাংলাদেশে ব্র্যাক এর আড়ং এর নানারকম টক দই পাওয়া যায়। দেখুন কোনগুলি বাচ্চাকে দিতে পারবেন।
কাঁচা দুধ থেকে তৈরি দই কি শিশুর খাওয়ার উপযোগী
না। শিশুদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ততোটা শক্তিশালী নয় আর তাদের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা এখনও পুরোপুরি তৈরি হয়নি।কাঁচা দুধের দইয়ে রোগসৃষ্টিকারী জীবাণু থাকতে পারে যা শিশুর জন্য মারাত্মক ভয়াবহ হতে পারে।
পাস্তুরাইজেশন- এই প্রক্রিয়ায় খাবারকে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রা পর্যন্ত উত্তপ্ত করে খাবারে থাকা ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করা হয়।যেমন পানি ফুটিয়ে খেলে সব জীবাণু থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
খাবারের জীবাণু থেকে যেসব রোগ হয় সেগুলো থেকে বাঁচার জন্য এটা করা খুবই জরুরি। পাস্তুরাইজেশনের পর ঐ খাবার খাওয়া একদম নিরাপদ।এই কারণে এবং আরো কিছু বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে মানুষের খাওয়ার মত সব রকমের দুধ পাস্তুরিত হতে হবে।অর্থাৎ ভালো করে জ্বাল দিতে হবে।
দই কি বাচ্চার গলায় আটকে যেতে পারে
দই সাধারণত খাওয়ার সময় শিশুদের গলায় আটকে যায় না।তবুও সতর্কতার সাথে দই প্রস্তুত করতে হবে আর খেয়াল রাখতে হবে বাচ্চা যেন একবারে অনেকখানি দই মুখে না নেয়। বিশেষত ঘন দই,যেমন গ্রিক ইয়োগার্ট। আর যেসব জিনিস দইয়ের সাথে মেশানো হয়েছে (ফল বা বাদাম) সেগুলো শিশুর বয়স অনুযায়ী ঠিকঠাক সাইজের করে কাটা হয়েছে কিনা সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
আর শিশুর খাবার খাওয়ার পুরোটা সময় তাকে সতর্ক পাহারায় রাখতে হবে।খাওয়ার সময় সোজা করে বসাতে হবে, এবং হেলান দিয়ে বসা অবস্থায়, হাঁটা অবস্থায়, গাড়িতে বসে থাকা অবস্থায় এবং শিশু যখন খেলাধুলা করে তখন মুখে খাবার দেয়া যাবেনা।
প্রথম দিকের খাবার হিসেবে দই খুবই অসাধারণ। মায়ের জন্য এটা তৈরি করা যেমন সহজ, তেমনি সহজ শিশুর খাওয়ার জন্য। শুধু খেয়াল রাখতে হবে সাদামাটা দই যেন দেয়া হয় যাতে স্বাদ বাড়ানোর জন্য অন্য কিছু মেশানো হয়নি। কারণ আপনার ছোট্ট শিশু নিজেই অনেক মিষ্টি, সেখানে আলাদা করে চিনি মেশানোর প্রয়োজন নেই।
ঘরে দই বানানোর উপায়
ঘরে টক দই বানানোর জন্য আগে দইয়ের বীজ বানিয়ে নিন। তিন পদ্ধতিতে দইয়ের বীজ বানানো যায়।
১ম পদ্ধতি: আগের যে কোন দই থেকে অল্প কিছু দই পরের দইয়ের বীজ হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
২য় পদ্ধতি: এককাপ দুধের মাঝে ৩/৪ চামচ ভিনেগার দিলে সেটা জমে দইয়ের বীজ হবে।
৩য় পদ্ধতি: এককাপ দুধের মাঝে দশ বারো ফোঁটা লেবুর রস দিলেও সেটা দইয়ের বীজ হিসেবে কাজ করে।
পদ্ধতি
১ লিটার দুধে ১ কাপ পানি মিশিয়ে সাত/আট মিনিট ধরে চুলায় গরম করতে হবে।পাস্তুরাইজ করার প্রয়োজনীয়তা আগেই বলেছি।
দুধে বলক উঠলে বা উথলে উঠলে চুলার জ্বাল কমিয়ে দিতে হবে।
এরপর এই অল্প জ্বালে প্রায় ২০ মিনিট রাখতে হবে। দুধ যাতে হাঁড়ির তলায় লেগে না যায় এজন্য মাঝে মাঝে চামচ দিয়ে নাড়তে হবে।
দুধ যখন ঘন হয়ে আসবে তখন মাটির হাঁড়িতে বা অন্য হাঁড়িতে ঢেলে নিন।
এরপর দইবীজ আধকাপ পানিতে গুলিয়ে মাটির হাঁড়িতে রাখা দুধের মধ্যে ঢেলে দিন।
এরপর হাঁড়িটি ঢেকে রাখুন।
আমেরিকাতে বেশ ঠাণ্ডা তাই আমরা হিটিং প্যাড বা গরম কাপড়, কম্বল ও বস্তা দিয়ে মুড়ে রাখি। তবে বাংলাদেশের গরমকালে মোটা কিছু দিয়ে ঢাকার প্রয়োজন বোধহয় নেই।
মিশ্রণটি ঠাণ্ডা হয়ে গেলে নরমাল ফ্রিজে রাখতে পারেন। ডিপ ফ্রিজ বা ফ্রিজারে দই রাখলে এর গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়। মনে রাখবেন, ঠাণ্ডা কিছু খেলে বাচ্চার ঠাণ্ডা লাগে না। টিথিং বা দাঁত ওঠার সময় ঠাণ্ডা খাবার বাচ্চাকে বেশি আরাম দেয়। তবু আপনি স্বস্তিবোধ না করলে, খাওয়ানোর আগে দই কিছুক্ষণ বাইরে রেখে তারপরে বাচ্চাকে দিতে পারেন।
Reference
1.American Academy of Allergy Asthma & Immunology, Prevention of Allergies and Asthma in Children
2.National Institutes of Health, National Institute of Diabetes and Digestive and Kidney Diseases, Eating, Diet, & Nutrition for Lactose Intolerance
3.Academy of Nutrition and Dietetics, Do’s and Don’ts for Baby’s First Foods
4.American Academy of Pediatrics, Starting Solid Foods
5.American Academy of Pediatrics, Food Allergy Reactions
6.American Academy of Pediatrics, Lactose Intolerance in Infants & Children
Thank you
১৩ মাসের বাচ্চাকে কতটুকু টকদই দেওয়া যাবে?
ধন্যবাদ আপু।।খুব উপকারি একটা আর্টিকেল।। আপু যদি বাচ্চার দুধে এলার্জি থাকে তাহলে কি দইও খাওয়া নিষেধ?